বর্ষায় বই থাকুক সুরক্ষিত

আল খালিদ
প্রকাশ : ০৩ আগস্ট ২০২৫, ১৫: ১৪

আষাঢ় ও শ্রাবণ এই দুই মাস বাংলাদেশে বর্ষাকাল। তবে বাস্তবে বর্ষা মৌসুম আষাঢ় মাস থেকে শুরু হয়ে কার্তিক (জুন থেকে অক্টোবর) মাস পর্যন্ত বিস্তৃত থাকে। এই সময়টিতে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকার কারণে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়।

আর বৃষ্টির দিন মানেই কাদাপানি, স্যাঁতসেঁতে ঘর, আর এক ধরনের ভারী ভ্যাপসা গন্ধ। বিশেষ করে একটু পুরোনো বাড়িঘর ও দালানের ভেতর বর্ষার আর্দ্রতা সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে জামাকাপড় বা দেয়ালে। ঠিক তেমনি এ সময় ঘরের বইয়ের তাকও দুরবস্থায় পড়ে।

বিজ্ঞাপন

পুরোনো বইগুলোয় এক ধরনের সোঁদা গন্ধ হয়, পাতাগুলো ঢেউ খেলানো হয়ে যায়, এমনকি কিছু বই পোকায় ধরে বা ছত্রাকে আক্রান্ত হয়। বই হলো আপনার সবচেয়ে ভালো বন্ধু। আপনার সেই প্রিয় এত শখের বই যদি নষ্ট হয়ে যায়, তা কি সহ্য করা যায়? বর্ষার এই আর্দ্রতা থেকে বইগুলো বাঁচাতে হলে প্রয়োজন একটু বাড়তি যত্ন আর সচেতনতা।

এই সমস্যার কারণ

বর্ষাকালে বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ ৮০ শতাংশের বেশি হয়ে যায়। এই অতিরিক্ত আর্দ্রতা কাগজের শত্রু। কাগজ প্রকৃতিগতভাবে আর্দ্রতা শোষণ করে, ফলে পাতাগুলো ফুলে ওঠে, কোনাগুলো কুঁচকে যায়। তাছাড়া আর্দ্র পরিবেশ ছত্রাক জন্মানোর আদর্শ জায়গা, ফলে পাতায় দাগ পড়ে এবং একসময় তা পচেও যেতে পারে। যদি তাকের আশপাশে পর্যাপ্ত বাতাস চলাচল না থাকে, তাহলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারে।

ক্ষতির ধরন

বইয়ের কাগজ নরম বা ঢেউ খেলানো হয়ে যায়। পাতায় বাদামি দাগ পড়ে, ছত্রাক জন্মায়। বইয়ের মলাট আলগা হয়ে যেতে পারে। পোকা ধরায় পাতা নষ্ট হয়ে যায়। বই থেকে দুর্গন্ধ বের হতে থাকে, যা শ্বাসতন্ত্রের জন্যও ক্ষতিকর হতে পারে।

শখের বইগুলো সুরক্ষায় করণীয়/যেভাবে বাঁচাবেন

১. শুকনো ও বাতাস চলাচল করে এমন জায়গায় রাখুন

বইয়ের তাক এমন ঘরে রাখুন যেখানে বাতাস চলাচল করতে পারে। জানালার পাশে নয়, বরং খোলামেলা ও আলো-বাতাসে ভরা জায়গা নির্বাচন করুন। প্রয়োজনে ছোট ফ্যান বা ভেন্টিলেশন ফ্যান ব্যবহার করতে পারেন।

২. সিলিকা জেল বা কাঠকয়লার ব্যবহার

তাকের কোণে কয়েকটি ছোট প্যাকেট সিলিকা জেল রাখলে আর্দ্রতা শোষিত হয়। এটি একধরনের আর্দ্রতা-নিরোধক উপাদান। সিলিকা জেল না পেলে কাঠকয়লা ছোট পাত্রে রেখে দিলেও একই কাজ করে।

৩. গায়ে গায়ে লাগিয়ে বই রাখবেন না

বইগুলো এমনভাবে রাখুন যেন প্রতিটির মাঝখানে হালকা ফাঁকা জায়গা থাকে। এতে বাতাস চলাচল করতে পারে এবং আর্দ্রতা আটকে থাকে না। বই একটার সঙ্গে আরেকটা চেপে থাকলে ছত্রাক দ্রুত ছড়ায়।

. মাঝে মাঝে বই রোদে দিন

বর্ষাকাল হলেও মাঝে মাঝে রোদ ওঠে। এমন দিনগুলোয় বইগুলো এক থেকে দুই ঘণ্টার জন্য ছায়া-রোদের মধ্যে রেখে দিন। পুরোপুরি রোদে না দিলেও আলোযুক্ত শুকনো ঘরে খোলা অবস্থায় রাখলে বেশ উপকার হয়।

৫. তাক নিয়মিত পরিষ্কার করুন

তাকের ধুলাবালি জমতে দেবেন না। বুকশেলফটি নিয়মিত শুকনো কাপড় দিয়ে মুছে নিন। প্রয়োজনে পাতলা অ্যান্টিসেপটিক দ্রবণে সামান্য ভেজানো কাপড় দিয়েও মুছতে পারেন, তবে বই যেন না ভিজে যায় সেদিকে খেয়াল রাখুন।

বর্ষায় তাকের বইগুলো আর্দ্রতা থেকে বাঁচানোর সহজ উপায়

৬. কীটনাশক সাবধানে ব্যবহার করুন

বইয়ের পোকা প্রতিরোধে কিছু শুকনো নিমপাতা বা কর্পূর ব্যবহার করতে পারেন। তবে কীটনাশক পাউডার বা স্প্রে সরাসরি বইয়ের ওপরে ব্যবহার করা উচিত নয়, বরং আলাদা করে ছোট পাত্রে ভরে পাশে রেখে দিন।

৭. দুর্লভ বা প্রিয় বইগুলোকে প্লাস্টিক কভার দিয়ে মুড়ে রাখুন

বই শুধু জ্ঞান নয়, অনেক সময় আবেগ ও স্মৃতিরও মূর্ত রূপ। একটা পুরোনো বইয়ের পাতায় থাকতে পারে বাবা-মায়ের লেখা, কিংবা ভালোবাসার কথা। তাই বর্ষার মতো অনিয়ন্ত্রিত আবহাওয়ায় বইকে সংরক্ষণ করতে প্রয়োজন একটু সচেতনতা আর যত্ন।

সূত্র : আমেরিকান লাইব্রেরি অ্যাসোসিয়েশন গাইডলাইনস অন বুক স্টোরেজ

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত