আমার দেশ অনলাইন
লিভার ডিটক্স বা ‘পরিষ্কার’-এর জন্য বাজারে নানা ধরনের হারবাল পণ্য পাওয়া যায়। বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ঢুকলেই চোখে পড়ে এসব পণ্যের অসংখ্য বিজ্ঞাপন। বিটরুট, আমলকি কিংবা হলুদের গুঁড়াকে লিভার পরিষ্কার বা ‘ডিটক্স’ করার মহৌষধ হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে। অনলাইনে চলছে এসব পণ্যের হরদম বিক্রি। চিকিৎসা বিজ্ঞানে হারবাল বা প্রাকৃতিক উপাদানের ব্যবহার নতুন কোনো বিষয় নয়। আদিকাল থেকেই ওষুধে নানা প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
কিন্তু যে প্রক্রিয়ায় বর্তমানে এসব পণ্যের বিক্রিবাট্টা চলছে, তাতে চিকিৎসক থেকে শুরু করে পুষ্টিবিদ, এমনকি হারবাল পণ্য বিষয়ে বিশেষজ্ঞরাও এগুলোর কার্যকারিতা নিয়ে সন্দিহান। হারবাল পণ্য কি আসলেই শরীরের টক্সিন ছেঁকে ফেলতে সক্ষম? নাকি এসব হারবাল পণ্য সেবন শরীরের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ? সেগুলোই তুলে ধরা হয়েছে এই প্রতিবেদনে।
নিজেই নিজেকে পরিষ্কার রাখে লিভার!
লিভার ডিটক্সিফিকেশন বলতে বোঝানো হয় এমন একটি প্রক্রিয়া, যেখানে লিভারকে বিভিন্ন খাদ্য, ভেষজ উপাদান বা ডায়েটের মাধ্যমে ‘পরিষ্কার’ করা যায়। অর্থাৎ, নানা হারবাল পণ্য, জুস বা সাপ্লিমেন্ট দ্বারা শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বা টক্সিন বের করে দেওয়া যায়। তবে চিকিৎসা বিজ্ঞান বলছে, লিভার নিজেই প্রতিদিন শরীর থেকে টক্সিন ছেঁকে ফেলে। একজন সুস্থ মানুষদের আলাদাভাবে লিভার ডিটক্স করার প্রয়োজন হয় না। বরং, কিছু ‘ডিটক্স’ পণ্য অতিরিক্ত মাত্রায় সেবনে লিভারে উল্টো ক্ষতি হতে পারে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্স হপকিন্স মেডিসিনের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রবন্ধে জন্স হপকিন্স ইউনিভার্সিটির হেপাটোলজিস্ট ড. টিনস্যে ওরেটা লিখেছেন, ‘লিভার শরীরের টক্সিন বা বিষাক্ত পদার্থকে বর্জ্যে রূপান্তর করে, রক্ত পরিষ্কার করে এবং পুষ্টি উপাদান ও ওষুধকে বিপাকের মাধ্যমে এমন কিছু প্রোটিনে পরিণত করে যা শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।’
তবে “সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাজারে এমন বহু পণ্য এসেছে, যেগুলো লিভার ‘ডিটক্স’ বা ‘পরিষ্কার’ করার দাবি করে। কেউ বলে সপ্তাহান্তে অতিরিক্ত খাওয়াদাওয়ার পর এগুলো লিভার পরিষ্কার করতে পারে। কেউ বলে প্রতিদিনকার লিভার ফাংশন ঠিক রাখতে এবং ক্ষতিগ্রস্ত লিভারকে মেরামত করার জন্য” ওইসব পণ্য উপকারী, বলছিলেন তিনি।
ড. টিনস্যে ওরেটা এ বিষয়টিকে ‘প্রচলিত ভুল ধারণা’ হিসাবে সঙ্গায়িত করেছেন। তার মতে, লিভার ডিটক্সের নামে যেগুলো বিক্রি করা হচ্ছে, সেগুলো আসলে যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ)-এর নিয়ন্ত্রণাধীন নয়। ফলে সেগুলো মানসম্মত নয়।
বাংলাদেশের ল্যাবএইড হাসপাতালের পুষ্টিবিদ সামিয়া তাসনিমও এ বিষয়ে বলেন, ‘লিভার মানবদেহের একটি স্বয়ংক্রিয় ও অত্যন্ত দক্ষ ডিটক্সিফিকেশন অঙ্গ, যা প্রাকৃতিকভাবে শরীর থেকে টক্সিন, ওষুধের উপজাত এবং বিপাকীয় বর্জ্য নিরবিচারে বের করে দেয়।’ ‘সাধারণত লিভার নিজের কাজ নিজেই করতে সক্ষম, যদি না এটি দীর্ঘমেয়াদে অ্যালকোহল গ্রহণ, ভাইরাল সংক্রমণ বা অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাদ্য গ্রহণের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।’
লিভার ডিটক্স পণ্য নিয়ে আপত্তি যেখানে: চিকিৎসা বিজ্ঞানে হারবাল উপাদানের ব্যবহার একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় হয়। তানসিমের ভাষায়, চিকিৎসা বিজ্ঞানে হারবাল উপাদান ব্যবহৃত হয় তখনই, যখন তা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত, নিয়ন্ত্রিত এবং নির্দিষ্ট মাত্রায় কার্যকর ও নিরাপদ বলে প্রমাণিত হয়। ‘অ্যাসপিরিন, মেটফর্মিন ইত্যাদি উদ্ভিজ্জ উৎস থেকে উদ্ভূত হলেও এগুলো গবেষণা ও পরীক্ষিত। তবে বাজারে প্রচলিত হারবাল পণ্যে আপত্তির কারণ বৈজ্ঞানিক প্রমাণের অভাব। অধিকাংশ ডিটক্স পণ্য কেবল লোকজ বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে তৈরি।’
তিনি আরো বলেন, ‘নির্দিষ্ট ডোজ, বিশুদ্ধতা, বা নিরাপত্তা যাচাই ছাড়াই এগুলো বিক্রি হয়। অনেক উপাদান অঙ্গপ্রতঙ্গের ক্ষতি করতে পারে ও ওষুধের সঙ্গে সংঘাত তৈরি করে।’ তার বক্তব্য, হারবাল উপাদানের ব্যবহারে আপত্তি নয়। আপত্তি হলো অবৈজ্ঞানিক, অপ্রমাণিত এবং অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারে। বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণা ও মান নিয়ন্ত্রণ ছাড়া হারবাল পণ্যকে চিকিৎসার সমমানের হিসেবে ধরা নিরাপদ নয় বলে মনে করেন এই পুষ্টিবিদ।
যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের (এনএইচএস) তথ্যও বলছে, হারবাল ওষুধ অন্য ওষুধকে কম কার্যকরী করে দিতে পারে এবং এগুলোর বিভিন্ন নেতিবাচক পার্শ্বপ্রক্রিয়াও থাকতে পারে।
এ বিষয়ে হামদর্দ ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ-এর ইউনানী মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মো. মনিরুজ্জামান খান বলছিলেন, যে যেভাবে লিভার ডিটক্স-এর নামে পণ্য বিক্রি হচ্ছে, তা উদ্বেগজনক। আপনি যখন ওষুধ হিসাবে কোনো হারবাল পণ্য ব্যবহার করবেন, তার নির্দিষ্ট ডোজ থাকতে হবে। সেগুলোর কোয়ালিটি ঠিকঠাক থাকতে হবে। ইচ্ছামতো একটা ভেষজ উপাদান-মেডিসিনের সাবসট্যান্স ব্যবহার করলেই যে কাজ হবে, বিষয়টা তা না। নির্দিষ্ট ডোজের বাইরে যে কোনো কিছু অতিরিক্ত মাত্রায় সেবন ক্ষতিকর।
হারবাল পণ্য কখন উপকারী: জন্স হপকিন্স মেডিসিনের তথ্য অনুযায়ী, লিভার ও পিত্তথলির রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ভেষজ উদ্ভিদ মিল্ক থিসল অনেকসময় লিভারের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে এবং হলুদের নির্যাস লিভারকে ক্ষত থেকে রক্ষা করতে সহায়ক ভূমিকা রাখে। কিন্তু এসব উপাদানের নিয়মিত ব্যবহারকে এখন পর্যন্ত কোনও গবেষণায়ই সুপারিশ করা হয়নি।
পুষ্টিবিদ সামিয়া তাসনিম বলেন, হারবাল পণ্য কিংবা মসলা জাতীয় কিছু খাবার, যেমন— হলুদ, আদা, রসুন, গ্রিন টি ইত্যাদিতে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকার কারণে এগুলো লিভারের কার্যপ্রক্রিয়ায় সহায়ক হতে পারে। তবে এগুলোর প্রভাব সাধারণত মৃদু। যে ওগুলো লিভার সম্পূর্ণ ডিটক্সিফিকেশনের জন্য এককভাবে নির্ভরযোগ্য নয়।
ড. মো. মনিরুজ্জামান খানের মতে, ওষুধি উপাদান সমৃদ্ধ যেকোনো উদ্ভিদ নির্দিষ্ট ডোজ মেনে এবং এই বিষয়ে যারা পড়াশুনা করেছে, তাদের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করা উচিত।
‘বিটরুটে আয়রণ আছে। শরীরের রক্তস্বল্পতা দূর করার জন্য এটা ব্যবহার করে। এনার্জি লেভেল বাড়ানোর জন্যও কাজ করে। কিন্তু এগুলো কি স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে প্রসেস করা হচ্ছে?’ প্রশ্ন তার।
‘এগুলোকে ড্রাই পাউডার করে বাজারে মার্কেটিং করতেছে। যখন এগুলো কাটা হলো, কেটে শুকানো হলো, সঠিক টেম্পারেচারে যদি এগুলোকে না শুকানো হয়, তখন তো এগুলোয় ফাঙ্গাস জন্মাতে পারে। যেখানে পাউডার হচ্ছে, সেখানেও ধুলাবালি থাকতে পারে।’
এসব কারণে কেবল ‘কোয়ালিটি কন্ট্রোলের মাধ্যমেই’ এগুলো ব্যবহার করা উচিৎ। তিনি জানান, সঠিক ডোজে এবং ভালো মানসম্পন্ন কিছু উপাদান লিভারের জন্য ভালো। ‘যেমন— গোলাপ ফুলের পাপড়ি। কালো মেঘ নামক একটি প্লান্ট লিভার ডিটক্সিফিকেশনের জন্য ভালো। ভুঁই আমলা আছে। এগুলোর বিষয়ে গবেষণা আছে। এগুলোর ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালও আছে। এগুলো শুধু লিভার না, সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্যই ভালো,’ বলছিলেন তিনি।
লিভারকে ভালো রাখতে আর যা করণীয়: পুষ্টিবিদ তাসনিম মনে করেন, লিভারকে ভালো রাখতে জীবনধারায় পরিবর্তন আনতে হবে। ‘কারণ অতিরিক্ত ওজন লিভারে চর্বি জমার কারণ হতে পারে, যা লিভারের কার্যক্ষমতা হ্রাস করে এবং বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি করে। তাই, শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ, ক্যালোরি চাহিদা অনুযায়ী পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করা লিভারকে ভালো রাখার জন্য অপরিহার্য। বিশেষ করে যেসব খাবারে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড আছে, সেগুলোর নিয়মিত খাওয়া দরকার।’
‘শুধুমাত্র হারবাল পণ্য বা ডিটক্স ডায়েটের উপর নির্ভর করলে কার্যকর ডিটক্সিফিকেশন সম্ভব নয়’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘দীর্ঘমেয়াদী বা অত্যন্ত সীমিত ক্যালোরিযুক্ত ডায়েট স্বাস্থ্যহানিকর হতে পারে এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি তৈরি করতে পারে।’
তাই, সুষম খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত পানি পান, নিয়মিত ব্যায়াম, অ্যালকোহল থেকে বিরত থাকা এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণই লিভার সুস্থ রাখার সবচেয়ে কার্যকর উপায়। জন্স হপকিন্সের হেপাটোলজিস্ট ড. টিনস্যে ওরেটাও বলেন যে লিভারের সুরক্ষায় অতিরিক্ত অ্যালকোহল পান করা থেকে বিরত থাকতে হবে এবং মাদক ব্যবহার করা যাবে না।
লিভারের সমস্যা থেকে বাঁচতে অতিরিক্ত মদ্যপান বা অতিভোজন না করে ‘কম খাওয়া ও সংযমী জীবনযাপন’ করার পরামর্শ দিয়েছেন ড. টিনস্যে ওরেটা। কারণ, “কোনো গবেষণায় প্রমাণ হয়নি যে এসব ‘ক্লিনজ’ বা ‘ডিটক্স’ পণ্য লিভারের ক্ষতি পূরণ করে দিতে পারে।”
একাধিক সঙ্গীর সঙ্গে অরক্ষিত যৌন সম্পর্ককেও নিরুৎসাহিত করেছেন তিনি, যাতে করে হেপাটাইটিসের সংক্রমণ থেকে লিভারকে সুরক্ষিত রাখা যায়।
সূত্র: বিবিসি বাংলা
লিভার ডিটক্স বা ‘পরিষ্কার’-এর জন্য বাজারে নানা ধরনের হারবাল পণ্য পাওয়া যায়। বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ঢুকলেই চোখে পড়ে এসব পণ্যের অসংখ্য বিজ্ঞাপন। বিটরুট, আমলকি কিংবা হলুদের গুঁড়াকে লিভার পরিষ্কার বা ‘ডিটক্স’ করার মহৌষধ হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে। অনলাইনে চলছে এসব পণ্যের হরদম বিক্রি। চিকিৎসা বিজ্ঞানে হারবাল বা প্রাকৃতিক উপাদানের ব্যবহার নতুন কোনো বিষয় নয়। আদিকাল থেকেই ওষুধে নানা প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
কিন্তু যে প্রক্রিয়ায় বর্তমানে এসব পণ্যের বিক্রিবাট্টা চলছে, তাতে চিকিৎসক থেকে শুরু করে পুষ্টিবিদ, এমনকি হারবাল পণ্য বিষয়ে বিশেষজ্ঞরাও এগুলোর কার্যকারিতা নিয়ে সন্দিহান। হারবাল পণ্য কি আসলেই শরীরের টক্সিন ছেঁকে ফেলতে সক্ষম? নাকি এসব হারবাল পণ্য সেবন শরীরের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ? সেগুলোই তুলে ধরা হয়েছে এই প্রতিবেদনে।
নিজেই নিজেকে পরিষ্কার রাখে লিভার!
লিভার ডিটক্সিফিকেশন বলতে বোঝানো হয় এমন একটি প্রক্রিয়া, যেখানে লিভারকে বিভিন্ন খাদ্য, ভেষজ উপাদান বা ডায়েটের মাধ্যমে ‘পরিষ্কার’ করা যায়। অর্থাৎ, নানা হারবাল পণ্য, জুস বা সাপ্লিমেন্ট দ্বারা শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বা টক্সিন বের করে দেওয়া যায়। তবে চিকিৎসা বিজ্ঞান বলছে, লিভার নিজেই প্রতিদিন শরীর থেকে টক্সিন ছেঁকে ফেলে। একজন সুস্থ মানুষদের আলাদাভাবে লিভার ডিটক্স করার প্রয়োজন হয় না। বরং, কিছু ‘ডিটক্স’ পণ্য অতিরিক্ত মাত্রায় সেবনে লিভারে উল্টো ক্ষতি হতে পারে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্স হপকিন্স মেডিসিনের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রবন্ধে জন্স হপকিন্স ইউনিভার্সিটির হেপাটোলজিস্ট ড. টিনস্যে ওরেটা লিখেছেন, ‘লিভার শরীরের টক্সিন বা বিষাক্ত পদার্থকে বর্জ্যে রূপান্তর করে, রক্ত পরিষ্কার করে এবং পুষ্টি উপাদান ও ওষুধকে বিপাকের মাধ্যমে এমন কিছু প্রোটিনে পরিণত করে যা শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।’
তবে “সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাজারে এমন বহু পণ্য এসেছে, যেগুলো লিভার ‘ডিটক্স’ বা ‘পরিষ্কার’ করার দাবি করে। কেউ বলে সপ্তাহান্তে অতিরিক্ত খাওয়াদাওয়ার পর এগুলো লিভার পরিষ্কার করতে পারে। কেউ বলে প্রতিদিনকার লিভার ফাংশন ঠিক রাখতে এবং ক্ষতিগ্রস্ত লিভারকে মেরামত করার জন্য” ওইসব পণ্য উপকারী, বলছিলেন তিনি।
ড. টিনস্যে ওরেটা এ বিষয়টিকে ‘প্রচলিত ভুল ধারণা’ হিসাবে সঙ্গায়িত করেছেন। তার মতে, লিভার ডিটক্সের নামে যেগুলো বিক্রি করা হচ্ছে, সেগুলো আসলে যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ)-এর নিয়ন্ত্রণাধীন নয়। ফলে সেগুলো মানসম্মত নয়।
বাংলাদেশের ল্যাবএইড হাসপাতালের পুষ্টিবিদ সামিয়া তাসনিমও এ বিষয়ে বলেন, ‘লিভার মানবদেহের একটি স্বয়ংক্রিয় ও অত্যন্ত দক্ষ ডিটক্সিফিকেশন অঙ্গ, যা প্রাকৃতিকভাবে শরীর থেকে টক্সিন, ওষুধের উপজাত এবং বিপাকীয় বর্জ্য নিরবিচারে বের করে দেয়।’ ‘সাধারণত লিভার নিজের কাজ নিজেই করতে সক্ষম, যদি না এটি দীর্ঘমেয়াদে অ্যালকোহল গ্রহণ, ভাইরাল সংক্রমণ বা অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাদ্য গ্রহণের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।’
লিভার ডিটক্স পণ্য নিয়ে আপত্তি যেখানে: চিকিৎসা বিজ্ঞানে হারবাল উপাদানের ব্যবহার একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় হয়। তানসিমের ভাষায়, চিকিৎসা বিজ্ঞানে হারবাল উপাদান ব্যবহৃত হয় তখনই, যখন তা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত, নিয়ন্ত্রিত এবং নির্দিষ্ট মাত্রায় কার্যকর ও নিরাপদ বলে প্রমাণিত হয়। ‘অ্যাসপিরিন, মেটফর্মিন ইত্যাদি উদ্ভিজ্জ উৎস থেকে উদ্ভূত হলেও এগুলো গবেষণা ও পরীক্ষিত। তবে বাজারে প্রচলিত হারবাল পণ্যে আপত্তির কারণ বৈজ্ঞানিক প্রমাণের অভাব। অধিকাংশ ডিটক্স পণ্য কেবল লোকজ বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে তৈরি।’
তিনি আরো বলেন, ‘নির্দিষ্ট ডোজ, বিশুদ্ধতা, বা নিরাপত্তা যাচাই ছাড়াই এগুলো বিক্রি হয়। অনেক উপাদান অঙ্গপ্রতঙ্গের ক্ষতি করতে পারে ও ওষুধের সঙ্গে সংঘাত তৈরি করে।’ তার বক্তব্য, হারবাল উপাদানের ব্যবহারে আপত্তি নয়। আপত্তি হলো অবৈজ্ঞানিক, অপ্রমাণিত এবং অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারে। বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণা ও মান নিয়ন্ত্রণ ছাড়া হারবাল পণ্যকে চিকিৎসার সমমানের হিসেবে ধরা নিরাপদ নয় বলে মনে করেন এই পুষ্টিবিদ।
যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের (এনএইচএস) তথ্যও বলছে, হারবাল ওষুধ অন্য ওষুধকে কম কার্যকরী করে দিতে পারে এবং এগুলোর বিভিন্ন নেতিবাচক পার্শ্বপ্রক্রিয়াও থাকতে পারে।
এ বিষয়ে হামদর্দ ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ-এর ইউনানী মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মো. মনিরুজ্জামান খান বলছিলেন, যে যেভাবে লিভার ডিটক্স-এর নামে পণ্য বিক্রি হচ্ছে, তা উদ্বেগজনক। আপনি যখন ওষুধ হিসাবে কোনো হারবাল পণ্য ব্যবহার করবেন, তার নির্দিষ্ট ডোজ থাকতে হবে। সেগুলোর কোয়ালিটি ঠিকঠাক থাকতে হবে। ইচ্ছামতো একটা ভেষজ উপাদান-মেডিসিনের সাবসট্যান্স ব্যবহার করলেই যে কাজ হবে, বিষয়টা তা না। নির্দিষ্ট ডোজের বাইরে যে কোনো কিছু অতিরিক্ত মাত্রায় সেবন ক্ষতিকর।
হারবাল পণ্য কখন উপকারী: জন্স হপকিন্স মেডিসিনের তথ্য অনুযায়ী, লিভার ও পিত্তথলির রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ভেষজ উদ্ভিদ মিল্ক থিসল অনেকসময় লিভারের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে এবং হলুদের নির্যাস লিভারকে ক্ষত থেকে রক্ষা করতে সহায়ক ভূমিকা রাখে। কিন্তু এসব উপাদানের নিয়মিত ব্যবহারকে এখন পর্যন্ত কোনও গবেষণায়ই সুপারিশ করা হয়নি।
পুষ্টিবিদ সামিয়া তাসনিম বলেন, হারবাল পণ্য কিংবা মসলা জাতীয় কিছু খাবার, যেমন— হলুদ, আদা, রসুন, গ্রিন টি ইত্যাদিতে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকার কারণে এগুলো লিভারের কার্যপ্রক্রিয়ায় সহায়ক হতে পারে। তবে এগুলোর প্রভাব সাধারণত মৃদু। যে ওগুলো লিভার সম্পূর্ণ ডিটক্সিফিকেশনের জন্য এককভাবে নির্ভরযোগ্য নয়।
ড. মো. মনিরুজ্জামান খানের মতে, ওষুধি উপাদান সমৃদ্ধ যেকোনো উদ্ভিদ নির্দিষ্ট ডোজ মেনে এবং এই বিষয়ে যারা পড়াশুনা করেছে, তাদের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করা উচিত।
‘বিটরুটে আয়রণ আছে। শরীরের রক্তস্বল্পতা দূর করার জন্য এটা ব্যবহার করে। এনার্জি লেভেল বাড়ানোর জন্যও কাজ করে। কিন্তু এগুলো কি স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে প্রসেস করা হচ্ছে?’ প্রশ্ন তার।
‘এগুলোকে ড্রাই পাউডার করে বাজারে মার্কেটিং করতেছে। যখন এগুলো কাটা হলো, কেটে শুকানো হলো, সঠিক টেম্পারেচারে যদি এগুলোকে না শুকানো হয়, তখন তো এগুলোয় ফাঙ্গাস জন্মাতে পারে। যেখানে পাউডার হচ্ছে, সেখানেও ধুলাবালি থাকতে পারে।’
এসব কারণে কেবল ‘কোয়ালিটি কন্ট্রোলের মাধ্যমেই’ এগুলো ব্যবহার করা উচিৎ। তিনি জানান, সঠিক ডোজে এবং ভালো মানসম্পন্ন কিছু উপাদান লিভারের জন্য ভালো। ‘যেমন— গোলাপ ফুলের পাপড়ি। কালো মেঘ নামক একটি প্লান্ট লিভার ডিটক্সিফিকেশনের জন্য ভালো। ভুঁই আমলা আছে। এগুলোর বিষয়ে গবেষণা আছে। এগুলোর ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালও আছে। এগুলো শুধু লিভার না, সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্যই ভালো,’ বলছিলেন তিনি।
লিভারকে ভালো রাখতে আর যা করণীয়: পুষ্টিবিদ তাসনিম মনে করেন, লিভারকে ভালো রাখতে জীবনধারায় পরিবর্তন আনতে হবে। ‘কারণ অতিরিক্ত ওজন লিভারে চর্বি জমার কারণ হতে পারে, যা লিভারের কার্যক্ষমতা হ্রাস করে এবং বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি করে। তাই, শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ, ক্যালোরি চাহিদা অনুযায়ী পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করা লিভারকে ভালো রাখার জন্য অপরিহার্য। বিশেষ করে যেসব খাবারে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড আছে, সেগুলোর নিয়মিত খাওয়া দরকার।’
‘শুধুমাত্র হারবাল পণ্য বা ডিটক্স ডায়েটের উপর নির্ভর করলে কার্যকর ডিটক্সিফিকেশন সম্ভব নয়’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘দীর্ঘমেয়াদী বা অত্যন্ত সীমিত ক্যালোরিযুক্ত ডায়েট স্বাস্থ্যহানিকর হতে পারে এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি তৈরি করতে পারে।’
তাই, সুষম খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত পানি পান, নিয়মিত ব্যায়াম, অ্যালকোহল থেকে বিরত থাকা এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণই লিভার সুস্থ রাখার সবচেয়ে কার্যকর উপায়। জন্স হপকিন্সের হেপাটোলজিস্ট ড. টিনস্যে ওরেটাও বলেন যে লিভারের সুরক্ষায় অতিরিক্ত অ্যালকোহল পান করা থেকে বিরত থাকতে হবে এবং মাদক ব্যবহার করা যাবে না।
লিভারের সমস্যা থেকে বাঁচতে অতিরিক্ত মদ্যপান বা অতিভোজন না করে ‘কম খাওয়া ও সংযমী জীবনযাপন’ করার পরামর্শ দিয়েছেন ড. টিনস্যে ওরেটা। কারণ, “কোনো গবেষণায় প্রমাণ হয়নি যে এসব ‘ক্লিনজ’ বা ‘ডিটক্স’ পণ্য লিভারের ক্ষতি পূরণ করে দিতে পারে।”
একাধিক সঙ্গীর সঙ্গে অরক্ষিত যৌন সম্পর্ককেও নিরুৎসাহিত করেছেন তিনি, যাতে করে হেপাটাইটিসের সংক্রমণ থেকে লিভারকে সুরক্ষিত রাখা যায়।
সূত্র: বিবিসি বাংলা
আন্দোলনে অংশ নেওয়া ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী দেলোয়ার হোসেন শিশির বলেন, আমরা স্পষ্টভাবে বলছি, শাকসু বানচালের চেষ্টা চলছে। শিক্ষার্থীরা এটা কোনোভাবেই মেনে নেবে না। যদি আগামী সোমবার ভিসি এসে নির্বাচন কমিশন গঠন করে রোডম্যাপ ঘোষণা না করেন, তাহলে প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের...
২ ঘণ্টা আগেসংগঠনের তথ্য, উপহার প্রদান, অনুভূতি বক্স এবং মেহেদি দেওয়ার জন্য উৎসবের ছাউনিতে চারটি আলাদা বুথ। সেখানে ছিল নারী শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ। আয়োজকরা নতুন সদস্য আহ্বান ও প্রচারপত্র বিলি করেন। ফটকের সামনে একটি ব্যানারে লেখা, ‛প্রিয় ভাইয়েরা, ভেতরে প্রবেশ ও উঁকি মারা থেকে বিরত থাকুন।’
২ ঘণ্টা আগেজগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. রইছ উদ্দীন বলেছেন, ছাত্রদল নেতা ও পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী জোবায়েদ হোসাইন হত্যাকাণ্ডে প্রকৃত অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে—কেউ যেন আইনের ফাঁক দিয়ে কেউ বেরিয়ে না যায়।
৩ ঘণ্টা আগেঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী রিয়াদ হাসানের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বোরকা ও পর্দাশীল নারীদের নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করার অভিযোগ উঠেছে। এই মন্তব্যের নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রীসংস্থা।
৪ ঘণ্টা আগে