কাশফুলের অরণ্যে

বিউটি হাসু
প্রকাশ : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৮: ২৪

শরৎ মানেই নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা। শরৎ মানেই কাশফুলের শুভ্রতা—মাঠজুড়ে কাশফুলের বাতাসে ঢেউ খেলানো নৃত্য। শরৎ এলেই মন হারিয়ে যেতে চায় কাশবনে। বাংলার সবুজ-শ্যামল প্রকৃতিতে শরতের আগমন আমাদের মুগ্ধ করে, করে বিমোহিত। এজন্যই শরৎ ‘ঋতুর রানি’।

ভাদ্র-অশ্বিনজুড়ে শরৎকালের রাজত্ব। শরৎকাল এলেই গ্রামবাংলার ঝোপঝাড়, রাস্তাঘাট ও নদীর দুই ধারসহ আনাচে-কানাচে চোখে পড়ে কাশফুলের মন মাতানো শুভ্র রূপ-মাধুর্য। শরতের কাশফুল প্রকৃতিকে সাজিয়ে তুলেছে অনন্য রূপে। প্রস্ফুটিত সাদা কাশফুলের রূপ-লাবণ্য ও নয়নাভিরাম সৌন্দর্য পর্যটকসহ প্রকৃতিপ্রেমী মানুষদের যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে।

বিজ্ঞাপন

কাশফুলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে উপভোগ করার জন্য শরতকালই হচ্ছে আদর্শ সময়। এই সময়ে সাদা তুলোর মতো নরম কাশফুলের ঢেউ বাতাসে দুলতে থাকে, আর নীল আকাশের নিচে ধবধবে সাদা কাশফুলের সমুদ্র এক রোমাঞ্চকর অনুভূতি এনে দেয়।

kash
kash

কর্মব্যস্ত নগরবাসীর অনেকের দূরে কোথাও যাওয়ার ফুরসত নেই। কারো কারো আবার সাধ থাকলেও সাধ্যই নেই। তবে রাজধানীর ভেতরই রয়েছে এমন অপরূপ সৌন্দর্য দেখার সুযোগ। আর সেজন্য ছুটে যেতে পারেন ঢাকার কাছেই দিয়াবাড়ী। এছাড়া আফতাবনগর, ঢাকা উদ্যান, দক্ষিণখান, ৩০০ ফিট ও কেরানীগঞ্জে রয়েছে সারি সারি কাশফুল। সারিয়াকান্দির অবারিত মাঠজুড়ে নদীর তীর ঘেঁষে বিশাল জায়গা জুড়ে রয়েছে কাশফুলের অরণ্য।

দিয়াবাড়ী: ঢাকার কংক্রিটের শহরে কিছু সময়ের জন্য স্বস্তি পেতে চলে যেতে পারেন প্রকৃতির নিখাদ মাধুর্যে ভরপুর দিয়াবাড়ী। রাজধানীর অদূরে উত্তরা দিয়াবাড়ী এলাকায় ফুটে আছে নজরকাড়া শুভ্র কাশফুল। এই অঞ্চলটি প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে খুবই প্রিয়। বিশেষ করে শরতের সময়, দিয়াবাড়ীর কাশবন যেন এক অনন্য রূপে সেজে ওঠে। সারি সারি কাশফুলে বাতাস লেগে রুপালি ঢেউ বয়ে যায়, দক্ষিণা হাওয়ায় দুলে ওঠে। সেই শুভ্র কাশের কোমল রূপ শুধু প্রকৃতিপ্রেমীদেরই বিমুগ্ধ করে না, সাধারণ মানুষকেও আকৃষ্ট করে। কাশফুলের এমন শুভ্র হাসিতে মানুষের মনও মোহিত হয়। ভ্রমণপিয়াসীদের করে মুগ্ধ ও আন্দোলিত।

আপনি চাইলে নিজে কিংবা প্রিয়জন নিয়ে হারিয়ে যেতে পারেন উত্তরার এই জায়গায়।দিয়াবাড়ীর বিশাল এক লেক ও লেকের বাঁধানো পাড়। এই লেকে উদাস হয়ে বসে থাকা ছাড়াও নৌকায় ঘুরতে পারবেন।

দিয়াবাড়ীর কাশফুল শরতের প্রকৃতির এক অনন্য উপহার। এ সৌন্দর্য শুধু চোখ জুড়ায় না, মানসিক প্রশান্তিও এনে দেয়। প্রকৃতির এই নীরব সৌন্দর্যের মাঝে কিছুটা সময় কাটানো আমাদের শরীর ও মনের জন্য অপরিহার্য। শহরের কোলাহল থেকে মুক্তি পেতে এবং প্রকৃতির সঙ্গে অবাধ সংযোগ স্থাপন করে দিয়াবাড়ী নির্মল আনন্দ দেয়।

দিয়াবাড়ী একটি প্রাকৃতিক এলাকা, যা মূলত নদী ও খোলা প্রান্তর নিয়ে গঠিত। উত্তরা এলাকায় অবস্থিত এই অঞ্চলে নদী বয়ে গেছে। নদীর পাড়ে এবং আশপাশের মাঠগুলোয় প্রচুর কাশফুল ফোটে। কয়েক বছর ধরে এটি একটি জনপ্রিয় ভ্রমণস্থল হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে ছুটির দিনগুলোয় কাশফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য এ স্থান সৌন্দর্যপিয়াসীদের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে।

kassh
kassh

বছরের অন্যান্য সময়েও মানুষ দিয়াবাড়ী ঘুরতে আসে। তবে শরতকালে কাশফুলের অপরূপ সৌন্দর্য এ জায়গাটিকে আরো দৃষ্টিনন্দন ও আকর্ষণীয় করে তোলে। এখানকার মনোরম দৃশ্য, খোলা আকাশ এবং নদীর তীরে বাতাসে দুলতে থাকা কাশফুল প্রকৃতিপ্রেমীদের নজর কাড়ে, হৃদয় হরণ করে।

দিয়াবাড়ীতে কাশফুলের সমুদ্রের মাঝে বসে থাকা মানেই হলো প্রকৃতির সান্নিধ্য পাওয়া। নিস্তব্ধতা ও প্রশান্তিতে যেন কিছুক্ষণের জন্য জীবন পূর্ণতার স্বাদ পায়। কাশফুলের স্নিগ্ধতা ক্লান্তি দূর করে দেয় স্বস্তি। শহুরে জীবনের ক্লান্তি-কোলাহল, যানজট, দৈনন্দিন জীবনের চাপ এবং অবসাদ দূর করে অন্যরকম আনন্দ দেয়। নীল আকাশ আর খোলা প্রান্তর মনে এনে দেয় নতুন এক উদ্যম ও শক্তি।

যারা নিয়মিত ভ্রমণে আগ্রহী, তাদের জন্য দিয়াবাড়ী উপযুক্ত স্থান। ঢাকার খুব কাছেই অবস্থিত হওয়ায় এখানে সহজেই পৌঁছানো যায়। শরতকালে বিশেষ করে এই জায়গায় কাশফুল দেখতে ভ্রমণপিয়াসী এবং প্রকৃতিপ্রেমীদের উপচেপড়া ভিড় হয়। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরে আসার জন্য দিয়াবাড়ী খুবই জনপ্রিয় একটি স্থান। আর মেট্রোরেল থাকায় যাতায়াত অনেক সহজ ও ঝামেলামুক্ত হয়েছে।

দিয়াবাড়ী ভ্রমণে যাওয়ার জন্য বেশ কিছু পরিকল্পনা করা যেতে পারে। সাধারণত সকালের সময়টাই প্রকৃতির স্নিগ্ধতা উপভোগ করার সবচেয়ে ভালো সময়। কাশফুলের প্রান্তরে হাঁটাহাঁটি করা, ছবি তোলা, লেক ও নদীর ধারে বসে প্রকৃতির সান্নিধ্য উপভোগ করা যায়। তবে এ ধরনের প্রাকৃতিক স্থানগুলোকে পরিচ্ছন্ন রাখা এবং পরিবেশের প্রতি যত্নবান হওয়াও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

শরৎকালে (সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর) কাশফুল পুরোপুরি ফোটে। বিকাল বা সকালবেলায় গেলে কাশফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। আর সূর্যাস্তের সময় আলোকচিত্রের জন্য সময়টা অনেক সুন্দর। এভাবে পরিকল্পনা করে গেলে দিয়াবাড়ীর কাশফুলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পুরোপুরি উপভোগ করতে পারবেন।

সাধারণত সকালে বা বিকালে সূর্যের মৃদু আলো যখন কাশফুলের ওপর পড়ে, তখন ছবি তোলার জন্য সঠিক সময়। এই সময়ের সূর্যালোক সুন্দরভাবে কাশফুলকে আলোকিত করে এবং ছবিতে অসাধারণ সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলে।

kaash
kaash

কেরানীগঞ্জের সারিয়াকান্দি : ঢাকার পাশেই রয়েছে মাওয়া ও কেরানীগঞ্জের সারিয়াকান্দি। সময়-সুযোগ থাকলে চলে যেতে পারেন ঢাকার অদূরে সারিয়াকান্দি। সারিয়াকান্দির বিস্তৃত মাঠ জুড়ে রয়েছে নয়নাভিরাম কাশফুলের রাজ্য। বাতাসের আলতো ছোঁয়ায় যখন কাশফুলগুলো হেলেদুলে হাসে, তখন মনে হয় কাশের সমুদ্রে ঢেউ খেলে যাচ্ছে। এই শুভ্র হাসির অনিন্দ্য রূপ ও মোহনীয় সৌন্দর্য বর্ণনাতীত, যা কিছু সময়ের জন্য হলেও আপনাকে স্বপ্নের সাগরে ভাসাবে, আবার ডোবাবে!

এই রূপে মুগ্ধ হয়ে ভাসতে ভাসতে আর ডুবতে ডুবতে হয়তো আনমনে আপনিও গেয়ে উঠতে পারেন—

‘আমার মাঝে নেই এখন আমি

স্বপ্নের সিঁড়ি বেয়ে স্বর্গে নামি

যেন অন্যরকম এক ভালোবাসাতে...।’

দিয়াবাড়ী কীভাবে যাবেন

মেট্রোরেল : মেট্রোরেলে উত্তরা উত্তর স্টেশনে নেমে রিকশা বা অটো সিএনজি নিয়ে দিয়াবাড়ীতে পৌঁছাতে পারবেন।

বাস : উত্তরা বা মিরপুরগামী বিভিন্ন বাসে করে উত্তরার আজমপুর পর্যন্ত গিয়ে সেখান থেকে সিএনজি বা অটোরিকশা নিতে পারেন।

নিজস্ব গাড়ি : নিজের গাড়ি থাকলে গুগল ম্যাপ ব্যবহার করে সহজেই দিয়াবাড়ীর লোকেশন খুঁজে যেতে পারবেন।

আফতাবনগর যেভাবে যাবেন : ঢাকার যেকোনো এলাকা থেকে প্রথমে রামপুরা ব্রিজে আসতে হবে। ব্রিজের পাশে আফতাব নগরের গেট। গেটের কাছে রিকশা পাবেন। রিকশায় ওঠার আগে ভাড়া ঠিক করে নেওয়া ভালো।

জরুরি অবস্থা জারি করলেন পেরুর প্রেসিডেন্ট

এবার ১ টাকায় গরুর মাংস বিতরণের ঘোষণা সেই এমপি প্রার্থীর

অভিযুক্ত সেনা কর্মকর্তাদের বহন করা সেই প্রিজন ভ্যানে কী আছে

অভিযুক্ত সেনা কর্মকর্তাদের নেয়া হয়েছে ক্যান্টনমেন্টের অস্থায়ী কারাগারে

গাজায় স্বাস্থ্য সংকট কয়েক প্রজন্ম থাকবে: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত