আমার দেশ জনপ্রিয় বাংলা নিউজ পেপার

স্বপ্নগুলো ফলবতী হোক

বিউটি হাসু

স্বপ্নগুলো ফলবতী হোক

আর মাত্র তিন দিন পরেই শুরু হবে খ্রিষ্টীয় নতুন বছর। কালের গর্ভে হারিয়ে যাবে আরো একটি বছর। আশা-নিরাশার দোলাচলে, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি আর পাওয়া-না পাওয়ার হিসেব কষতে কষতেই কোথা দিয়ে যেন একটি বছরের সমাপ্তি ঘটল।

আগামী বৃহস্পতিবার ভোরে সূর্য হেসে উঠে জানান দিবে আগামীর নতুন পৃথিবীর কথা। বিশ্বের বয়স আরো এক বছর বেড়েছে। আমাদের বয়স কমেছে এক বছর। স্বাগত অনাগত খ্রিষ্টীয় নববর্ষ ২০২৬! নতুন স্পন্দন, নতুন আশা আর নতুন সম্ভাবনাকে সামনে নিয়ে শুরু হবে নতুন বছর। ঘটা করে আতশবাজির আলোতে নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর প্রয়োজন নেই—এতে পাখি ও অন্যান্য প্রাণীর ক্ষতি হয়। ফানুস ওড়ানো ও আতশবাজি ফোটানো থেকে বিরত থাকাই উত্তম। এতে দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা থাকে। তবুও বাংলাদেশসহ পুরো বিশ্ববাসী আতশবাজির ঝলকানিতেই নতুনকে স্বাগত জানাবে।

বিজ্ঞাপন

নতুন বছর করণীয়

নতুন বছরের শুরুতেই সুন্দর পরিকল্পনা ও কাজের তালিকা করা উচিত। সারা বছর এই পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করতে হবে। এতে কাজগুলো অনেক গুছিয়ে সুন্দরভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।

আর সবার আগে সময়ের মূল্য দিতে হবে। মানুষের জীবন সমুদ্রের বুদবুদের মতোই অকিঞ্চিৎকর; কিন্তু শিক্ষাভান্ডার বিশাল ও অফুরন্ত। কর্মজগতের পরিধি ক্রমবর্ধমান। মানুষের জীবন ক্ষণস্থায়ী। তবে তার গৌরব চিরস্থায়ী। এজন্য সবকিছু উপেক্ষণীয় নয়, আদরণীয়; স্বল্প নয়, প্রচুর; সর্বদা জাগ্রত মন নিয়ে সামনের এই ক্ষুদ্রতম অংশটুকু কাজে লাগাতে হবে। তা যদি না পারি, তাহলে আমাদের জীবন মাত্র কয়েক বছরের সমষ্টিতে পর্যবসিত হয়ে যাবে। আর মৃত্যুতেই তার পরিসমাপ্তি ঘটবে।
তাই আমাদের সর্বদা সময়ের মূল্য দিয়ে কাজে মনোনিবেশ করতে হবে। আজকের কাজ আগামী দিনের জন্য ফেলে রাখা যাবে না। সময়ের কাজ সময়ে সম্পন্ন করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। কারণ জীবনের সার্থকতা আয়ুর দৈর্ঘ্যে নয়, বরং কর্মগুণে বা কর্মের মহত্ত্বেই শ্রেষ্ঠ হয়ে ওঠে। এজন্য কারো কয়েক বছরের জীবনও শতবর্ষী জীবনের চেয়ে বেশি উজ্জ্বল হতে পারে।

২০২৬ সালে ছোট-বড়, সব শ্রেণীর ও ধর্মের মানুষ একসঙ্গে কাজ করে আমাদের জন্মভূমিকে বিশ্বের বুকে আধুনিক রাষ্ট্রের রোল মডেল হিসেবে পরিচিত করে তুলতে পারে। সেজন্য তরুণসমাজকে নতুন বছরে, নতুন উদ্দীপনা নিয়ে যার যার জায়গা থেকে কাজ করতে হবে। স্বপ্নগুলো শুধু কল্পনার ফ্রেমে বন্দি না রেখে বাস্তবায়ন করতে হবে। এই স্বপ্ন বাস্তবায়ন প্রচেষ্টায় আবারও সবাই এক হয়ে নতুনভাবে বছরটি শুরু করি।

পুরোনো বছরের সব আড়ষ্টতা, অলসতা, সংশয়, সংকট আর উদ্বেগ পেছনে ফেলে নব উদ্যমে পথ চলতে হবে। নতুন বছর সবার জীবনে শুভ হয়ে দেখা দেবে, এটাই কামনা। পুরোনো বছর যেমনই কাটুক, নতুন বছর যেন ভালো কাটে—এটাই সবার চাওয়া।

প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির হিসাব মেলানো ও ভুল সংশোধন

বছরের শেষে প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির হিসাব মেলানো মানুষের স্বভাবজাত প্রক্রিয়া। জীবনের সুখ-দুঃখ, জয়-পরাজয় আর প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির এই আত্মবিশ্লেষণ মূলত নতুন বছরের প্রস্তুতির একটি বড় সুযোগ। এখানে অর্জিত সাফল্যগুলো যেমন সামনের পথে চলার শক্তি জোগায়, তেমনি অপ্রাপ্তিগুলো শিক্ষা হয়ে পথ দেখায়, যা আগামী দিনে আরো ভালো থাকার প্রেরণা হয়ে থাকবে।

আত্মতুষ্টি বিষয়: সারা বছরে যা কিছু ভালো হয়েছে, তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা উচিত।

  • শিক্ষণীয় বিষয়: যেসব কাজে ভুল ছিল, যা কিছু খারাপ বা অপূর্ণতা ছিল, তা থেকে শিক্ষা নেওয়া প্রয়োজন। এই অভিজ্ঞতা সামনে কাজে লাগানো প্রয়োজন। ভুলগুলো শুধরে নিয়ে ভবিষ্যতে এগিয়ে যাওয়ার সংকল্প করা জরুরি।
  • লক্ষ্য নির্ধারণ: প্রত্যেকের জীবনে লক্ষ্য নির্ধারণ করা জরুরি। উদ্দেশ্যহীনভাবেগন্তব্যে পৌঁছানো শুধু কঠিন নয়, অসম্ভব। নতুন বছরে কী অর্জন করতে চান, তার সঠিক পরিকল্পনা করা আবশ্যক।

মোটকথা, বিদায়ী বছরের ব্যর্থতাকে সরিয়ে রেখে নতুন বছরে নতুনভাবে পথচলা শুরু করা। বছরের প্রত্যাশা হলো অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে একটি সুন্দর ও উন্নত ভবিষ্যৎ গড়া।

নতুন বছর প্রত্যাশা

নতুন আশা-প্রত্যাশা নিয়ে শুরু হবে ২০২৬ সাল। বিগত বছরের সব দুঃখ-দুর্দশাকে পেছনে ফেলে সামনে এগোবে এই প্রত্যাশা সবার। তবে ২০২৫ সাল অনেক স্মৃতিবিজড়িত ঘটনার জন্ম দিয়েছে, যা মানুষের হৃদয়ের আর্কাইভে জমা থাকবে।

গত বছর জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নানা ঘটনা ঘটেছে। তবুও জীবন যাচ্ছে চলে জীবনের নিয়মে, নিজস্ব গতিতে।

নতুন বছরে নতুন করে আশায় বুক বেঁধেছে বাংলাদেশ—স্বপ্নগুলো পূর্ণতার স্বাদ পাবে। দেশে ফিরবে স্বস্তি, কল্যাণ, শান্তি ও সমৃদ্ধি। সম্প্রীতি ও সমঝোতার সংস্কৃতি রচনায় রাজনৈতিক দলগুলো অগ্রসর হবে। জীবনের নিরাপত্তা, সহনীয় দ্রব্যমূল্য এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাকে আরো এগিয়ে নিতে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় কাজ শুরু হবে—এটাই প্রত্যাশা।

২০২৬ সালে আমাদের দেশের সবার হৃদয় ভরে উঠুক মানবতা, প্রীতি আর ভালোবাসায়, যেন কোনো বৃদ্ধ মাকে পেটের দায়ে ভিক্ষা করতে না হয়; বৃদ্ধ ও কর্মশক্তিহীন মাকে অবহেলা না করা হয়। এ বছর কোনো মাকে যেন বৃদ্ধাশ্রমে গিয়ে নীরবে কাঁদতে না হয়। যুদ্ধ নয়, শান্তি ও সহমর্মিতার বৈশিষ্ট্য নিয়ে বাংলার নারী আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের প্রতিটি ক্ষেত্রে শক্তি, জ্ঞান ও বুদ্ধি দিয়ে এগিয়ে যাক সর্বাগ্রে। নারীরাই পারে একটি মানবিক পৃথিবী গড়ে তুলতে। নতুন বছরে সেই প্রত্যাশা আমাদের সবার।

স্বপ্ন বাস্তবে রূপান্তরিত করতে পূরণ হোক নতুন বছরে শান্তিপ্রিয় মানুষের চাওয়া, বন্ধ হোক দুর্বলের ওপর সবলের অত্যাচার, বন্ধ হোক ফিলিস্তিনে নিরীহ-নিরপরাধ মানুষের ওপর গণহত্যা, বন্ধ হোক প্রাণঘাতী যুদ্ধ, জয় হোক বিশ্বমানবতার!

গত বছরের হিসাবের খাতায় চোখ বুলালে দেখা যাবে, সেখানে জমা হয়েছে অনেক অতৃপ্তি, স্বপ্ন অপূর্ণতার কষ্ট, না পাওয়ার যন্ত্রণা ও স্বজন হারানোর বেদনা-কান্না।

তবুও বরাবরের মতো এবারও নতুন সূর্যালোকে অসীম আশা ও স্বপ্ন নিয়ে নতুন বছরের যে যাত্রা শুরু হবে, তা সার্থক হোক। ফুটুক নবতর জীবনের ফুল। স্বপ্নগুলো ফলবতী হোক।

বিগত সালের সব না পাওয়া পূর্ণতা পাক নতুন বছরে। কানায় কানায় ভরে উঠুক প্রাপ্তির ঝুড়ি। ২০২৫ সালের সব ব্যর্থতা আর গ্লানি মাড়িয়ে সাফল্য ছাড়িয়ে যাক বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তে। সঠিক সময়ে যর্থার্থ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সুবুদ্ধির শুভ প্রয়োগ হোক।

বছরের প্রত্যাশা মানে নতুন বছরে শান্তি, সমৃদ্ধি, সুখ এবং উন্নত জীবনের আশা। নতুন বছরে বিশ্বের সব মানুষের এখন একটাই আশা—পৃথিবী থেকে দূর হোক হিংসা, হানাহানি ও প্রাণঘাতী যুদ্ধ। পৃথিবীতে ছড়িয়ে যাক শান্তির সুবাতাস।

সাধারণ প্রত্যাশা

  • ব্যক্তিগত জীবনে সুখ, সমৃদ্ধি, ভালো স্বাস্থ্য এবং নতুন লক্ষ্য অর্জন।
  • সমাজে শান্তি, নিরাপত্তা এবং সংঘাতমুক্ত পরিবেশ।
  • দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সুনাম বৃদ্ধি।
  • তরুণদের জন্য নতুন সুযোগ, উন্নত শিক্ষা এবং কর্মসংস্থানের আশা।

প্রতিটি নতুন বছর আসে স্বপ্ন ও আশার আলো নিয়ে। নতুন বছর মানেই নতুন প্রত্যাশা ও স্বপ্ন, নতুন ছন্দ, নতুন সুখ। নতুন বছর মানে আতশবাজি পোড়ানো বা ফানুস ওড়ানো নয়; আপনার আনন্দের জন্য অন্য কারো স্বপ্ন না ভাঙুক, কোনো প্রাণের বিনাশ বা কোনো কিছু বিনষ্ট না হোক; নতুন বছর হোক সবার জন্য আনন্দময় ও সুখের। বিগত বছরে ঘটে যাওয়া সব অপ্রীতিকর, অনাকাঙ্ক্ষিত ও অকল্যাণকর ঘটনা ঘুচিয়ে নতুন আঙ্গিকে পথ চলতে হবে। নতুন স্বপ্ন বোনা আর তা বাস্তবায়নে সব ভেদাভেদ ভুলে সবাইকে একসঙ্গে পথ চলার প্রতিজ্ঞা করে এগোতে হবে। তবেই নতুন বছরের স্বপ্ন পূরণ করা সম্ভব হবে; আর ধনী-গরিব, জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব শ্রেণির মানুষের নির্বিঘ্নে বসবাসের উপযোগী দেশ গড়ে উঠবে।

নতুন বছর আমাদের সবার জীবনে বয়ে আনুক অনাবিল শান্তি ও সমৃদ্ধি, আর সবার মুখে ফুটুক তৃপ্তির হাসি—এই আমাদের প্রত্যাশা।

Google News Icon

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ

এলাকার খবর
Loading...