সন্তান হিসেবে কারার ভাবনায় কখনোই ছিল না তার বাবা-মা পক্ষপাতিত্ব করেন। তার ছোট ভাইবোনরা সবসময়ই বাবা-মার কাছ থেকে বেশি মনোযোগ পেয়ে এসেছে। ছোট ভাইবোনদের আবদার বাবা-মা প্রায় সময়ই পূরণ করতেন। এটাকে কারা স্বাভাবিকভাবেই নিয়েছিলেন। বড় সন্তানরা বাবা-মায়ের তদারকি ছাড়া স্বাধীনভাবে বেড়ে উঠবে, এমনটাই মনে করতেন তিনি।
কিন্তু তিনি ও তার ভাইবোনরা বড় হওয়ার পর এখনো আগের মতোই যেন পক্ষপাতিত্ব রয়ে গেছে। দিন দিন তা আরো স্পষ্ট হচ্ছে কারার কাছে। দুই বছর আগে তার বাবা-মা জানিয়েছিলেন, তারা আগের বছরের মতোই ছুটির দিনগুলো কারার বোনদের সঙ্গে কাটাবেন। ফলে কারা ও তার সন্তানদের দেখতে আসতে পারবেন না তারা। ওই মুহূর্তে যেন সারা জীবনের সবকিছু স্পষ্ট হয়ে গেল কারার সামনে।
পারিবারিক নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে নিউ ইয়র্ক টাইমসকে তিনি বলেন, ‘হঠাৎ আমার মনে হলো এটি যুক্তিসংগত নয়। হয়তো তাদের সন্তানদের প্রতিও পক্ষপাতিত্ব থাকবে।’
কারার মতোই তার সন্তানদের প্রতি বাবা-মায়ের উপেক্ষায় ক্ষুব্ধ তিনি। ‘দুই প্রজন্মকে উপেক্ষা’ উল্লেখ করে কারা জানান, যতই তিনি এ ক্ষোভ ও হতাশাকে ভুলে থাকার চেষ্টা করছেন, এ বৈষম্য তার মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলছে।
সাম্প্রতিক দশকগুলোয় গবেষণনায় দেখা যায়, কারার মতোই উপেক্ষিত সন্তানরা একই ধরনের অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। শৈশবে তাদের মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকে না, পরিবারের সঙ্গেও সম্পর্ক দুর্বল থাকে এবং অন্য ভাইবোনদের তুলনায় তাদের শিক্ষাগত সফলতা কম হয়।
অন্য আরো গবেষণায় দেখা যায়, বাবা-মার এ ধরনের পক্ষপাতিত্বের প্রভাব দীর্ঘ সময় ধরে সন্তানের ওপর পড়ে। আমেরিকার নর্থইস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ল্যারি ক্রামার বলেন, ‘আপনি প্রাপ্তবয়স্কদের কাছ থেকে জানতে পারবেন তাদের পাঁচ বছর বয়সে কী হয়েছিল। তারা সেখানেই আটকে থাকে।’
তবে সমাজে সন্তানদের মধ্যে পক্ষপাতিত্বের ধারণার প্রতি নেতিবাচক মনোভাবের কারণে তা খুঁজে পাওয়া খুব সহজ নয়। আমেরিকার পারডি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপক জে জিল সুইটর এ বিষয়ে তার গবেষণার জন্য যখন উদ্যোগ নেন, তখন তার পরিবার সন্দেহ প্রকাশ করেছিল।
তারা বলেছিলেন, ‘কেউ তোমার প্রশ্নের উত্তর দেবে না। আদর্শ বাবা-মা কখনোই তা করেন না।’
এর জন্য সুইটর ও তার সহযোগীরা গবেষণার প্রশ্নগুলোকে আরো বেশি জটিল করেন। তারা জিজ্ঞাসা করেন, কোন সন্তানের ওপর তারা বেশি খরচ করেছেন, কাদের সঙ্গে তারা বেশি অনুভূতিগতভাবে জড়িত, কাদের প্রতি তারা বেশি অসন্তুষ্ট?
২০০১ সালে শুরু হওয়া ওই গবেষণায় একাধিক সন্তান থাকা ৫০০ মাকে বাছাই করেন তারা। তাদের বিষয়ে এখনো গবেষণা করছেন সুইটর।
গবেষণায় দেখা যায়, দুই-তৃতীয়াংশ বাবা-মারই একজন প্রিয় সন্তান থাকে। দশকের পর দশক তা প্রায়ই একই থাকে। প্রিয় সন্তান হওয়ার জন্য কোনো নির্দিষ্ট মাপকাঠি না থাকলেও সাধারণত মেয়ে ও ছোট সন্তানদের প্রতি বাবা-মার পক্ষপাতিত্ব থাকে।
তবে শুধু জন্মের ক্রম বা লিঙ্গই পার্থক্য গড়ে না। ব্রিগহাম ইয়ং বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক অ্যালেক্স জেনসেন বলেন, বাবা-মা অনুগত ও শিষ্টাচারী সন্তানদের বেশি পছন্দ করেন। কেননা, তাদের লালন-পালন করা তুলনামূলকভাবে সহজ।
আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন


সৌদি জোটের কাছে সামরিক সহায়তা চাইল ইয়েমেন
যুদ্ধবিরতি চুক্তি সই করল থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া