সবক্ষেত্রে সম-অধিকার চায় ‘নারীর ডাকে মৈত্রী যাত্রা’

বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৬ মে ২০২৫, ১৯: ০৭

সমাজে নারীর সম-অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে ‘সমতার দাবিতে আমরা’ স্লোগানে রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে ‘নারীর ডাকে মৈত্রী যাত্রা’ ব্যানারে সমাবেশ করেছে প্রগতিশীল নারী সংগঠনের নেত্রীরা।

শুক্রবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে এই কর্মসূচি শুরু হয়। কর্মসূচির শুরুতেই জাতীয় সংগীত পরিবেশ করা হয়। সমাবেশে ঘোষণাপত্র পাঠ করেন জয়ন্তী চাকমা, আরজিমান, রাজিয়া। আয়োজকরা জানায়, মূলত নারী-পুরুষ সম-অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে এই কর্মসূচি করা হচ্ছে। পাশাপাশি নারীদের প্রতি অবহেলা, অবজ্ঞা ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে দীপ্ত প্রতিবাদ জানাতে মূলত এই ধরনের কর্মসূচি করা। এই উপলক্ষ্যে ৩১টি স্লোগানের একটি তালিকা করেছেন আয়োজকেরা। স্লোগানগুলোতে নারীর অধিকার, মর্যাদা, নিরাপত্তা, শ্রমিকের অধিকার, ফ্যাসিবাদের বিরোধিতাসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরা হয়েছে।

কর্মসূচিতে প্রগতিশীল নারী, শ্রমিক, শিক্ষার্থী, শিক্ষক, সংস্কৃতিকর্মী, পেশাজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেয়। বেলা দুইটা থেকে বিভিন্ন ব্যানার-প্ল্যাকার্ড হাতে তাঁদের এই কর্মসূচিতে অংশ নিতে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে আসতে দেখা যায়। বিভিন্ন সংগঠন এই কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, নারী মুক্তি কেন্দ্র, উদীচী শিল্পী-গোষ্ঠী, হিল উইমেন্স ফেডারেশন, আদিবাসী ইউনিয়ন, গার্মেন্টস শ্রমিক মুক্তি আন্দোলন, বিজ্ঞান আন্দোলন মঞ্চ, সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম, বাংলাদেশ নারী জোট, নারী সংহতি, ছাত্রফ্রন্ট (মার্ক্সবাদী), তিরন্দাজ, শ্রমিক অধিকার আন্দোলন প্রভৃতি।

অনুষ্ঠানস্থল ঘুরে দেখা যায়, কর্মসূচি উপলক্ষ্যে ছোট একটি স্টেজ তৈরি করা হয়েছে। মঞ্চের সামনে শতশত নারী অনুষ্ঠানে শামিল হয়েছেন। তাদের হাতে প্লাকার্ড, ব্যানার, ফেস্টুন দেখা গেছে।

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান’-এর সময় নারীদের সরব উপস্থিতি ও সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো। কিন্তু তার পরেও রাষ্ট্রীয় নীতিনির্ধারকরা এবং সামাজিক কাঠামো নারীদের সেই ভূমিকার স্বীকৃতি দিতে ব্যর্থ হয়েছে। নারীরা শুধু রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে নয়, শ্রমক্ষেত্র থেকে শুরু করে শিক্ষাঙ্গণ, সংস্কৃতি এবং প্রতিদিনের জীবনে যেভাবে সংগ্রাম করে যাচ্ছেন, তার মূল্যায়ন এখনো পর্যাপ্ত হয়নি। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নারী শিক্ষার্থী, শ্রমজীবী নারী, যৌনকর্মী ও ক্ষুদ্র জাতিসত্তার নারীদের উপর যে-সব নিপীড়ন চলছে, তার বেশিরভাগই থেকে যাচ্ছে বিচারের বাইরে। পুঁজিবাদী রাষ্ট্রকাঠামো এবং ধর্মীয় প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী যৌথভাবে নারীদের প্রতি সহিংসতা ও বৈষম্যকে আরও শক্তিশালী করছে। নারীদের নিজস্ব স্বরকে দাবিয়ে রাখার অপচেষ্টা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে প্রতিটি ঘটনাতেই।

প্রগতিশীল নেত্রীরা বলেন, এ কর্মসূচি কেবল নারীদের স্বার্থরক্ষা নয় বরং এটি একটি বৃহৎ রাজনৈতিক ও সামাজিক মুক্তির আন্দোলনের অংশ। সমাজের সব স্তরের মানুষকে এই যাত্রায় শামিল হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলা হয় ‘নারীমুক্তি কোনো একক ইস্যু নয়, এটি শ্রমিক-মজুরের মুক্তি, জাতিসত্তার অধিকার, বাকস্বাধীনতা এবং গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সঙ্গেই জড়িত। তাই এই যাত্রা শুধুই নারীর নয়, বরং সকল প্রগতিশীল শক্তির মিলনমঞ্চ।

এমএস

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত