দেশীয় পণ্যের সফল কারিগর সোনম

ওমর শাহেদ
প্রকাশ : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৫: ৩২
আপডেট : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৬: ৩৫

শাহানা মমতাজ সোনম ছিলেন ঢাকার সরকারি হোম ইকোনমিকস কলেজের ছাত্রী। তার বিভাগ ছিল রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড এন্ট্রাপ্রেনারশিপ। এই বিভাগে পড়তে গিয়ে তার ভেতরে দানা বেঁধে উঠল উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন। বিয়ের পর সন্তান এলো। তাকে লালনপালন করতে গিয়ে চাকরি আর করা হয়নি। তবে তিনি ভেবে রেখেছিলেন ব্যবসা করবেন। নিজের পোশাক নিজে ডিজাইন করেন, নিজের গহনা নিজে বানান এভাবেই সাফল্যের পথে যাত্রা শুরু করেছিলেন তিনি। মেয়ের পোশাক বানানোর পর থেকে নিজেই এ ধরনের পোশাক বানিয়ে অনলাইনে বিক্রি করা শুরু করলেন।

সোনমের কাজের বিশেষত্ব হলো তিনি দেশীয় পোশাক নিয়ে কাজ করেন। তিনি বলেন, ‘একেবারে ছোটবেলা থেকে আমি দেশীয় পোশাক পরতে ভালোবাসি। আমাদের এত সুন্দর ও সমৃদ্ধ ঐতিহ্য আছে, সেসব নিয়ে কাজ করতে আমার মতো যে কেউ অনুপ্রাণিত বোধ করবেন। আমাদের উপাদানের বৈচিত্র্যও অবাক করে দেওয়ার মতো।’

বিজ্ঞাপন

তিনি সিলেটের বিখ্যাত মণিপুরী শাড়ি নিয়ে দীর্ঘদিন ব্যবসা করে চলেছেন । তিনি জানালেন, তার অনেক কাজ হয় মণিপুরী শাড়ির ওপর। এই শাড়িগুলোর ওপর হ্যান্ডপেইন্ট করেন আবার নিজের ডিজাইন দিয়েও মণিপুরী তাঁতে শাড়ি বানান। তিনি শাড়িগুলো মৌলভীবাজারের মণিপুরীপাড়া ও মণিপুরী একাডেমি থেকে আনেন। কাজ করতে করতে তাঁতিদের কাছে পরিচিত হয়ে গেছেন। ফলে ফোনে ডিজাইন বলে দিলে তাঁতিরা তাকে শাড়ি পাঠিয়ে দেন। এছাড়া সেখানে তার এক ছোট ভাই আছেন, তার মাধ্যমেও তাঁতিদের সঙ্গে তিনি যোগাযোগ রাখেন। তার কাজের মাধ্যমে তাঁতিদের জীবনমান বদলে যাচ্ছে। তাদের জীবনযাত্রা আরো উন্নত হচ্ছে।

মণিপুরী শাড়িগুলো পরে অনলাইনে বিক্রি হয়। আবার অফলাইনে মানে সরাসরিও বিক্রি করেন। ভালো সাড়া পান। এসব শাড়িতে তিনি হ্যান্ডপেইন্ট, ব্লক, হাতের কাজ, এমব্রয়ডারি করেন। কিছু কাজ নিজে করেন, কিছু তার কর্মীরা করেন। তাদের তিনি কর্মী বলেন না। বলেন ভাই, বোন। এছাড়া কাজের ক্ষেত্রে তার বন্ধুরা সহযোগিতা করেন। পাঞ্জাবির কাপড় সংগ্রহ করে নিজস্ব টেইলর দিয়ে তৈরি করেন। এরপর এগুলোতে তিনি হাতের কাজ, ব্লকের কাজ করেন। তিনি মেয়েদের সালোয়ার-কামিজও বিক্রি করেন । আর পোশাকগুলো বিক্রি করে তার ভালো লাভ হয়। তবে তিনি পোশাক লাভের আশায় বিক্রি করেন না। তার মূল উদ্দেশ্য থাকে দেশীয় পণ্যের প্রচার ও প্রসার।

জামদানি শাড়িরও একজন বড় আকারের বিক্রেতা সোনম। এই শাড়িগুলো তিনি সরাসরি তাঁতিদের কাছ থেকে আনেন । একইভাবে রাজশাহীর তাঁতিদের কাছ থেকে মসলিন কিনে আনেন। সেগুলোতে হ্যান্ডপেইন্ট ও হাতের কাজ করেন। এখন তার ব্যবসার অবস্থা ভালো। সবাই তার কাজ পছন্দ করছেন, যা তাকে নতুনভাবে ও নব উদ্যমে কাজ করতে আরো অনুপ্রাণিত করছে।

সোনমের শাড়ি, পাঞ্জাবি ও সালোয়ার-কামিজের কিছু কারিগর আছে। এছাড়া আছে নিজস্ব ব্লক অ্যান্ড টেইলারিং মাস্টার। তারা ঢাকায় তার কাজে সাহায্য করেন। আর তিনি মোবাইল ফোন, হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুকের মাধ্যমে সারা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কারিগরদের কাছ থেকে কাজ আনেন । সেগুলোতে নিজে কাজ করে বিক্রি করেন।

সোনমের একটি মজার দিক আছে। তিনি তার সব পণ্য ডেলিভারি দেওয়ার সময় ক্রেতাকে কিছু না কিছু গিফট করেন। সেভাবেই হ্যান্ডমেইড চুড়ি, মালা ক্রেতাদের হাতে পৌঁছেছে। এগুলো পাওয়ার পর বিভিন্ন কারণ ও উপলক্ষে ক্রেতারাই আবার কিনে নিতে আগ্রহী হয়েছেন। এভাবেই তার আরেকটি ব্যবসা শুরু হয়েছে। তার এই গহনাগুলো একেবারেই শৌখিন। হাতের কাজ করা মালা, চুড়ি আমাদের দেশীয় উপকরণ ও একেবারে সহজে পাওয়া যায় এমন উপকরণ দিয়ে বানানো হয়। এভাবে দীর্ঘদিন ধরে অনলাইনে ব্যবসা করলেও এই ব্যবসাকে কঠিন বলে মন্তব্য করলেন সোনম। তিনি জানান, ছবি বা ভিডিও দিয়ে ক্রেতাকে মুগ্ধ করা খুব সহজ কাজ নয়। তারপরও তিনি সাফল্য পেয়েছেন ।

সোনম বলেন, ‘আমার স্বামী সবসময় সব বিষয়ে আমাকে সহযোগিতা করে আসছে। এছাড়া পরিবার ও বন্ধুদের কাছ থেকে আমি আলহামদুলিল্লাহ অনেক সহযোগিতা পেয়ে আসছি।’

ভবিষ্যতে তার নিজের একটি আউটলেট দেওয়ার পরিকল্পনা আছে। যেখানে সবাই গল্প করতে করতেই তার বুটিকের শাড়ি কিনতে পারবেন।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত