শামীমা নাসরিন
যেকোনো আন্দোলনে যুগে যুগে নারীর অংশগ্রহণ ছিল অভূতপূর্ব। নারীরা আহত হয়েছেন, প্রাণ দিয়েছেন এবং আন্দোলনের পথ সহজ নয় জেনেও তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে এসেছেন। তেমনই এক নারী কমলা ভট্টাচার্য, যিনি বাংলা ভাষায় কথা বলার অধিকার রক্ষার্থে প্রাণ দিয়েছিলেন।
১৯৪৫ সালে তৎকালীন আসাম প্রদেশের সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন কমলা ভট্টাচার্য। তিন ভাই ও চার বোনের ভেতর তিনি ছিলেন মা-বাবার পঞ্চম সন্তান। ১৯৪৭ সালে, অর্থাৎ তার জন্মের দুবছর পরই দেশভাগ হয়ে গেল। কমলারা পূর্ব পাকিস্তানের অংশে পড়লেন। কিন্তু ১৯৫০ সালে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ও সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন শুরু হলে তারা দেশ ত্যাগ করে আসামের শিলচরে চলে যান।
শৈশবেই বাবাকে হারিয়েছিলেন কমলা। তাই ভীষণ আর্থিক অনটনের মধ্য দিয়ে তাদের দিন কাটতে থাকে। বড় বোন নার্সের চাকরি পেয়ে শিমুলগুড়ি চলে যান প্রশিক্ষণ নিতে। মেজো বোন শিক্ষিকা হিসেবে কাজ শুরু করেন। সেই মেজো বোনের স্বল্প আয়ের ওপরই তাদের পুরো পরিবার নির্ভরশীল ছিল। পাঁচ বছর বয়সে শিলচরের ছোটেলাল শেঠ ইনস্টিটিউটে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার হাতেখড়ি হয় কমলার। স্কুলের পাঠ্যপুস্তক কেনারও ক্ষমতা ছিল না তার। পড়াশোনা চলত মূলত সহপাঠীদের কাছ থেকে বই ধার করে এনে। শিক্ষার্থী হিসেবে তিনি মেধাবী ছিলেন। সেলাইয়ের কাজ করে, পাটি বুনে অভাবের সংসারে সহযোগিতা করতেন। ১৯৬১ সালের এপ্রিল মাসে শুরু হলো ম্যাট্রিক পরীক্ষা। ১৭ মে পরীক্ষা শেষ হয়েছিল। তার পরের দিন শিলচর রেলস্টেশনে মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষার দাবিতে পিকেটিংয়ের ডাক দেওয়া হলো। কমলার কাছে সে খবর পৌঁছাল। ১৯ মে কমলা পিকেটিংয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেন। বাংলা ভাষা আন্দোলনের নেত্রী জ্যোৎস্না চন্দের নেতৃত্বে মেয়েদের ২০-২২ জনের একটি দল কমলাদের বাড়িতে আসে তাকে নেওয়ার জন্য। তার মেজো বোন ও মা মিছিলে যেতে বারণ করলেও তিনি শোনেননি। অগত্যা তার মা তাকে এক টুকরো কাপড় দেন, যাতে কাঁদুনে গ্যাস ছুড়লে নিজেকে রক্ষা করতে পারেন তিনি। কমলার সঙ্গে সেদিন তার ছোট বোন, ছোট ভাই ও বড় বোনের ছেলেও আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন।
১৯৬১ সালের সেই আন্দোলনে আন্দোলনকারীদের স্লোগান ছিল—‘জান দেব, তবু জবান দেব না’, ‘মাতৃভাষা জিন্দাবাদ, বাংলা ভাষা জিন্দাবাদ’ প্রভৃতি। সেদিন সকালে রেল অবরোধ কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবেই হয়েছিল। কিন্তু দুপুরের দিকে আসাম রাইফেলসের জওয়ানরা জায়গাটাকে ঘিরে ফেলতে এবং আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীদের নির্মমভাবে লাঠি ও বন্দুক দিয়ে পেটাতে শুরু করে। তাতে জনতা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে এবং যে যেদিকে পারে পালাতে থাকে। জওয়ানরা পলায়নরত জনতার ওপর তখন গুলিবর্ষণ শুরু করে। কমলার ছোট বোন পুলিশের লাঠির আঘাতে মাটিতে পড়ে যায়। তাকে বাঁচাতে কমলা ছুটে গেলে একটি গুলি তার চোখ ভেদ করে খুলিতে আঘাত করে। তৎক্ষণাৎ মাটিতে লুটিয়ে পড়েন কমলা। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগেই শহীদ হন এই আত্মপ্রত্যয়ী সাহসী নারী।
এদিকে কমলার বোনকে সেদিন আহত ও অজ্ঞান অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হলে পরে এক মাস বাদে তার জ্ঞান ফেরে। কিন্তু বাকি জীবনটা তাকে কাটাতে হয় শারীরিকভাবে পঙ্গু ও মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে।
কমলার মৃত্যুর কয়েক মাস পর তার ম্যাট্রিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছিল। প্রথম বিভাগ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন তিনি। ম্যাট্রিকের পর টাইপ রাইটিংয়ের কাজ শেখার পরিকল্পনা ছিল কমলার। হয়তো অভাবের দিনও ঘুচে যেত, কিন্তু মৃত্যু নস্যাৎ করে দিল তার সব সম্ভাবনা।
নিজের মাতৃভাষাকে রাজ্যের দাপ্তরিক ভাষা না করার প্রতিবাদে ১৬ বছরেই ঝরে যান কমলা। বাংলা ভাষার জন্য তিনি উৎসর্গ করেন নিজের জীবন। পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম নারী ভাষাশহীদ হিসেবে জায়গা করে নেন তিনি। শেষ পর্যন্ত বাংলাকে দাপ্তরিক ভাষা করার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছিল আসাম সরকার, কিন্তু তা দেখে বা জেনে যাওয়ার সৌভাগ্য হয়নি কমলার।
যেকোনো আন্দোলনে যুগে যুগে নারীর অংশগ্রহণ ছিল অভূতপূর্ব। নারীরা আহত হয়েছেন, প্রাণ দিয়েছেন এবং আন্দোলনের পথ সহজ নয় জেনেও তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে এসেছেন। তেমনই এক নারী কমলা ভট্টাচার্য, যিনি বাংলা ভাষায় কথা বলার অধিকার রক্ষার্থে প্রাণ দিয়েছিলেন।
১৯৪৫ সালে তৎকালীন আসাম প্রদেশের সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন কমলা ভট্টাচার্য। তিন ভাই ও চার বোনের ভেতর তিনি ছিলেন মা-বাবার পঞ্চম সন্তান। ১৯৪৭ সালে, অর্থাৎ তার জন্মের দুবছর পরই দেশভাগ হয়ে গেল। কমলারা পূর্ব পাকিস্তানের অংশে পড়লেন। কিন্তু ১৯৫০ সালে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ও সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন শুরু হলে তারা দেশ ত্যাগ করে আসামের শিলচরে চলে যান।
শৈশবেই বাবাকে হারিয়েছিলেন কমলা। তাই ভীষণ আর্থিক অনটনের মধ্য দিয়ে তাদের দিন কাটতে থাকে। বড় বোন নার্সের চাকরি পেয়ে শিমুলগুড়ি চলে যান প্রশিক্ষণ নিতে। মেজো বোন শিক্ষিকা হিসেবে কাজ শুরু করেন। সেই মেজো বোনের স্বল্প আয়ের ওপরই তাদের পুরো পরিবার নির্ভরশীল ছিল। পাঁচ বছর বয়সে শিলচরের ছোটেলাল শেঠ ইনস্টিটিউটে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার হাতেখড়ি হয় কমলার। স্কুলের পাঠ্যপুস্তক কেনারও ক্ষমতা ছিল না তার। পড়াশোনা চলত মূলত সহপাঠীদের কাছ থেকে বই ধার করে এনে। শিক্ষার্থী হিসেবে তিনি মেধাবী ছিলেন। সেলাইয়ের কাজ করে, পাটি বুনে অভাবের সংসারে সহযোগিতা করতেন। ১৯৬১ সালের এপ্রিল মাসে শুরু হলো ম্যাট্রিক পরীক্ষা। ১৭ মে পরীক্ষা শেষ হয়েছিল। তার পরের দিন শিলচর রেলস্টেশনে মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষার দাবিতে পিকেটিংয়ের ডাক দেওয়া হলো। কমলার কাছে সে খবর পৌঁছাল। ১৯ মে কমলা পিকেটিংয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেন। বাংলা ভাষা আন্দোলনের নেত্রী জ্যোৎস্না চন্দের নেতৃত্বে মেয়েদের ২০-২২ জনের একটি দল কমলাদের বাড়িতে আসে তাকে নেওয়ার জন্য। তার মেজো বোন ও মা মিছিলে যেতে বারণ করলেও তিনি শোনেননি। অগত্যা তার মা তাকে এক টুকরো কাপড় দেন, যাতে কাঁদুনে গ্যাস ছুড়লে নিজেকে রক্ষা করতে পারেন তিনি। কমলার সঙ্গে সেদিন তার ছোট বোন, ছোট ভাই ও বড় বোনের ছেলেও আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন।
১৯৬১ সালের সেই আন্দোলনে আন্দোলনকারীদের স্লোগান ছিল—‘জান দেব, তবু জবান দেব না’, ‘মাতৃভাষা জিন্দাবাদ, বাংলা ভাষা জিন্দাবাদ’ প্রভৃতি। সেদিন সকালে রেল অবরোধ কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবেই হয়েছিল। কিন্তু দুপুরের দিকে আসাম রাইফেলসের জওয়ানরা জায়গাটাকে ঘিরে ফেলতে এবং আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীদের নির্মমভাবে লাঠি ও বন্দুক দিয়ে পেটাতে শুরু করে। তাতে জনতা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে এবং যে যেদিকে পারে পালাতে থাকে। জওয়ানরা পলায়নরত জনতার ওপর তখন গুলিবর্ষণ শুরু করে। কমলার ছোট বোন পুলিশের লাঠির আঘাতে মাটিতে পড়ে যায়। তাকে বাঁচাতে কমলা ছুটে গেলে একটি গুলি তার চোখ ভেদ করে খুলিতে আঘাত করে। তৎক্ষণাৎ মাটিতে লুটিয়ে পড়েন কমলা। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগেই শহীদ হন এই আত্মপ্রত্যয়ী সাহসী নারী।
এদিকে কমলার বোনকে সেদিন আহত ও অজ্ঞান অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হলে পরে এক মাস বাদে তার জ্ঞান ফেরে। কিন্তু বাকি জীবনটা তাকে কাটাতে হয় শারীরিকভাবে পঙ্গু ও মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে।
কমলার মৃত্যুর কয়েক মাস পর তার ম্যাট্রিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছিল। প্রথম বিভাগ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন তিনি। ম্যাট্রিকের পর টাইপ রাইটিংয়ের কাজ শেখার পরিকল্পনা ছিল কমলার। হয়তো অভাবের দিনও ঘুচে যেত, কিন্তু মৃত্যু নস্যাৎ করে দিল তার সব সম্ভাবনা।
নিজের মাতৃভাষাকে রাজ্যের দাপ্তরিক ভাষা না করার প্রতিবাদে ১৬ বছরেই ঝরে যান কমলা। বাংলা ভাষার জন্য তিনি উৎসর্গ করেন নিজের জীবন। পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম নারী ভাষাশহীদ হিসেবে জায়গা করে নেন তিনি। শেষ পর্যন্ত বাংলাকে দাপ্তরিক ভাষা করার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছিল আসাম সরকার, কিন্তু তা দেখে বা জেনে যাওয়ার সৌভাগ্য হয়নি কমলার।
সংগঠনের তথ্য, উপহার প্রদান, অনুভূতি বক্স এবং মেহেদি দেওয়ার জন্য উৎসবের ছাউনিতে চারটি আলাদা বুথ। সেখানে ছিল নারী শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ। আয়োজকরা নতুন সদস্য আহ্বান ও প্রচারপত্র বিলি করেন। ফটকের সামনে একটি ব্যানারে লেখা, ‛প্রিয় ভাইয়েরা, ভেতরে প্রবেশ ও উঁকি মারা থেকে বিরত থাকুন।’
১৬ মিনিট আগেজগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. রইছ উদ্দীন বলেছেন, ছাত্রদল নেতা ও পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী জোবায়েদ হোসাইন হত্যাকাণ্ডে প্রকৃত অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে—কেউ যেন আইনের ফাঁক দিয়ে কেউ বেরিয়ে না যায়।
১ ঘণ্টা আগেঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী রিয়াদ হাসানের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বোরকা ও পর্দাশীল নারীদের নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করার অভিযোগ উঠেছে। এই মন্তব্যের নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রীসংস্থা।
২ ঘণ্টা আগেসমাবেশে জোবায়েদের সহপাঠী সজল খান বলেন, “পুলিশ এখনো বর্ষার পরিবারের সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করেনি। শুধু বর্ষা ও মাহির নয়, এই ঘটনায় বর্ষার পরিবারও জড়িত। গতকাল আদালতে আমাদের সঙ্গে পুলিশের আচরণ ছিল অমানবিক। আমাদের এক বান্ধবী ভিডিও করতে গেলে তার ফোন কেড়ে নেওয়া হয়। আমরা পুলিশের এই আচরণের তীব্র নিন্দা জানাই।”
২ ঘণ্টা আগে