জুলাই-বিপ্লব

হাঁটুর ওপরে গুলি লেগে ওপাশ দিয়ে বের হয়ে যায়

মিজানুর রহমান রাঙ্গা, সাঘাটা (গাইবান্ধা)
প্রকাশ : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৪: ৩২

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গাজীপুরের সফিপুরে রাজপথে সক্রিয় ছিলেন গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার কচুয়া ইউনিয়নের রামনগর গ্রামের বাসিন্দা মো. মাসুদ মিয়া। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার দিনও ওই এলাকার রাজপথে মিছিল করছিলেন তিনি। এ সময় স্বৈরাচারের তাঁবেদার পুলিশের গুলিতে গুরুতর আহত হন ।

বিজ্ঞাপন

১১ দিন হাসপাতালের বেডে থাকতে হয়। বাবার সম্বল একটি জমি বন্ধক রেখে ও গরু বিক্রি করে চিকিৎসার খরচ চলে। এখন সংসার চলছে কষ্টে। নিজেদের রক্ত দিয়ে একটি মুক্ত বাংলাদেশ পেয়েছি আমরা। অথচ আমাকে নিয়ে কেউ চিন্তা করে না। খোঁজ-খবরও নেয় না। আমার দেশ-এর এই প্রতিবেদককে এভাবেই আক্ষেপ নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন মাসুদ মিয়া।

তিনি জানান, চিকিৎসার ব্যয় মেটানোর পর তেমন কিছু অবশিষ্ট নেই গবিব বাবার সংসারে। মাসুদের পায়ে আরও একটি অপারেশন করাতে হবে। তাই সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেন তার বাবা-মা।

মাসুদ মিয়া জানান, পুলিশের গুলি আমার বাম পায়ের হাঁটুর ওপরে লেগে হাঁড় ভেঙে আরেক পাশ দিয়ে বের হয়ে যায়। বুকে ও পেটে রাবার বুলেটের আঘাতে অচেতন হয়ে লুটিয়ে পড়ি রাজপথে। গুলির আঘাতে পায়ের হাঁড় গুঁড়ো হয়ে জখমে প্রচণ্ড রক্তক্ষরণ হয়। ভিজে যায় রাজপথ।

সহযোদ্ধারা তাকে উদ্ধার করে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) ভর্তি করান। সে সময় পুলিশের অভিযান চলছিল। ভয়ে বাধ্য হয়ে সেখান থেকে পালিয়ে এসে বগুড়ায় বেসরকারি টিএমএসএস হাসপাতালে ভর্তি হন। তিন দিন পর পায়ে বড় ধরনের অপারেশন করে ইমপ্লান্ট রড প্রতিস্থাপন করা হয়। এখনো পুরোপুরি সুস্থ নন। স্ট্রেচারে ভর করে কোনোমতে চলেন। তারপর দীর্ঘ চিকিৎসায় এখন এই অবস্থা।

মাসুদ বলেন, ভালোভাবে হাঁটতে পারি না। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে কোনোমতে কষ্টে চলি। সরকারিভাবে আর্থিক সাহায্য করলে উন্নত চিকিৎসা সম্ভব। চিন্তা হচ্ছে সামনে আরও একটি অপারেশন নিয়ে।

উপজেলার রামনগর গ্রামে সরেজমিনে মাসুদ মিয়ার বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মাসুদের উপার্জনেই তাদের অভাবের সংসার চলে। সংসারে কষ্ট দেখে অল্প পড়াশোনা করেই ৫ বছর আগে গাজীপুরের সফিপুরে কাজ করতে যান মাসুদ। তিনি সফিপুরের একটি গার্মেন্টে চাকরি করতেন ।

তার মা মোর্শেদা বেগম বলেন, মৃত্যুর দুয়ার থেকে মহান আল্লাহ আমার ছেলেটাকে ফিরিয়ে দিয়েছেন। একমাত্র জমিটি বন্ধক রেখে ও গরু বিক্রি করে ছেলের চিকিৎসায় খরচ করেছি। আরও ঋণ রয়েই গেছে। ছোট ছেলে মাহফুজ সামনে এসএসসি পরীক্ষা দেবে। বড় মেয়ে সাথী আকতারের বিয়ে দিয়েছেন।

মাসুদের বাবা সাহেব মিয়া বলেন, এখন আমাদের সংসার চালানো কষ্টকর হয়ে পড়েছে। চলার মতো তেমন কিছু নেই। অন্যের জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করছি। ছেলের চিকিৎসায় ঋণী হয়েছি প্রচুর। ছেলে সুস্থ হতে আরো টাকার প্রয়োজন। তাই সরকারিভাবে সাহায্য চান তিনি। বাবা-মায়ের মেজ ছেলে মাসুদ মিয়া। মাসুদ মিয়ার দুই মেয়ে। বড় মেয়ে মাইশা তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। ছোট মেয়ে মিমের বয়স ৩ বছর। স্ত্রী শাহিনা আকতারও গার্মেন্টে কাজ করেন। দুই মেয়ে গ্রামে দাদা-দাদির সঙ্গেই থাকে। তাদের লেখাপড়া ও ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত পরিবারটি।

মাসুদ মিয়ার স্ত্রী শাহিনা আকতার বলেন, আমাদের গরিব সংসার। কাজ না করলে সংসার চলে না। এখন সংসার চালাব, না স্বামীর চিকিৎসা করাব। অনেক কষ্টেই দিন পার করছি।

স্থানীয় কচুয়া ইউপি চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী খন্দকার জানান, মাসুদের কষ্টের কথা শুনে আমারও কষ্ট হয়। তাদের অভাবের সংসারে সরকারি সাহায্য প্রয়োজন। সাঘাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইসাহাক আলী বলেন, আহতদের তালিকা ওপরে পাঠিয়েছি। তাদের খোঁজ-খবর রাখছি।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত