বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গত বছরের ১৮ জুলাই ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে রাজধানীর উত্তরায় গুলিবিদ্ধ হন সারোয়ার জাহান শুভ (২৪)। ১৭টি ছররা গুলির যন্ত্রণা নিয়ে সেই অবস্থায়ও আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন, কিন্তু একপর্যায়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। পরে অন্যরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
সারোয়ার জাহান শুভ ঢাকার উত্তরার ইস্ট ওয়েস্ট নার্সিং কলেজের অনার্স চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। তার বাড়ি ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার সালটিয়া ইউনিয়নের সালটিয়া গ্রামে। সাইফুল ইসলাম ও জহুরা খাতুন দম্পতির ৪ ছেলের মধ্যে সবার বড় শুভ।
উত্তাল জুলাইয়ের ১৮ তারিখ দুপুর ১২টার দিকে উত্তরায় পুলিশের গুলিতে আহত হন শুভ। তার শরীরে লাগা ১৭টি ছররা গুলির মধ্যে ১০টি বের করা হয়েছে। ইস্ট ওয়েস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গত বছরের ৩ আগস্ট অস্ত্রোপচার করে গুলি বের করা হয়। এখনো শরীরে গেঁথে থাকা বাকি গুলিগুলোর প্রচণ্ড যন্ত্রণা নিয়ে দিন কাটছে তার।
চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে শুভ জানান, জরুরি ভিত্তিতে তার উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন।
পরিবার ও এলাকাবাসীর সূত্রে জানা গেছে, শুভর বাবা সামান্য মুদি দোকানি, মা একজন গৃহিণী। আর ছোট তিন ভাই এখনো স্কুলে পড়াশোনা করে। তার বাবার সামান্য আয়েই তাদের সংসার চলে। চিকিৎসা করাতে গিয়ে এখন পর্যন্ত তাদের অন্তত ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। শরীরে থাকা গুলির যন্ত্রণায় এখনো তাকে ছটফট করে কাটাতে হয়।
জুলাই বিপ্লবে অংশ নেওয়ার প্রেরণা হিসেবে শুভ বলেন, স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের টানা দুঃশাসনের কারণে আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলাম। যেমন বাংলাদেশ দেখতে আন্দোলন করেছি, তেমন বাংলাদেশই যেন আমরা দেখতে পাই- এটাই প্রত্যাশা।
গফরগাঁও পৌর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক ফজলুল হক বলেন, দেশে নিবর্তনমূলক আইন, হত্যা আর নিপীড়নের মাধ্যমে এমন এক ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করা হয়েছিল যে এই জালিম হাসিনার সরকারের পতন কল্পনা করাও ছিল কঠিন। কিন্তু এখন এটাই সত্য। ভয়ংকর স্বৈরাচারের পতন ঘটেছে এবং তিনি দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন।
পৌর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মিজানুর রহমান পল্টন বলেন, আন্দোলনে অংশ নিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হওয়ার পর থেকে এখনো তার শরীরে গুলি রয়ে গেছে। আন্দোলনে যারা আহত হয়েছেন তাদের সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া আমাদের সবার দায়িত্ব। গুলিবৃদ্ধ হয়েও শুভ বেঁচে থাকায় শুকরিয়া আদায় করেন গফরগাঁও পৌর বিএনপির এই দুই নেতা। পাশাপাশি আহতদের পাশে থাকার অঙ্গীকার করেন তারা।

