সিরিয়া নামটি শুনলে চোখে ভেসে ওঠে ধ্বংসস্তূপ, যুদ্ধবিমান, আর কাঁদতে থাকা শিশুর মুখ। দীর্ঘ এক দশকেরও বেশি সময় ধরে দেশটি সহ্য করেছে গৃহযুদ্ধ, রাজনৈতিক অস্থিরতা, আর মানবাধিকার লঙ্ঘনের করুণ বাস্তবতা। তবে এবার সেই সিরিয়ার রাজধানী দামেস্ক শহরে দেখা গেল এক অন্যরকম দৃশ্য। যুদ্ধবিধ্বস্ত এই নগরে আয়োজন করা হলো এক ব্যতিক্রমী চলচ্চিত্র উৎসব, যার থিমই ছিল সিরীয় বিপ্লব।
এই আয়োজন শুধু সিনেমা দেখানোর জন্য নয়, বরং সিরিয়ার মানুষের কষ্ট, স্বপ্ন, আর লড়াইয়ের গল্পকে রঙিন পর্দায় তুলে ধরার এক সাহসী উদ্যোগ। ‘সিরীয় বিপ্লবের চলচ্চিত্র’ নামে এই আয়োজনটি প্রথমবারের মতো দামাস্কাসে অনুষ্ঠিত হলো এ বছরের ১৫ থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। এর আয়োজক ছিল সিরিয়ার সরকারি চলচ্চিত্র সংস্থা ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। তবে উৎসবের প্রাণ ছিলেন সেইসব নির্মাতা ও শিল্পী, যারা বিগত কয়েক বছরে বিপ্লব নিয়ে নীরবে সাহসী কাজ করে গেছেন।
উৎসবে প্রায় ২০টি সিনেমা দেখানো হয়েছে, যার মধ্যে ছিল ছোট গল্পভিত্তিক চলচ্চিত্র, ডকুমেন্টারি, নাট্যধর্মী কাহিনি ও বাস্তব ঘটনাভিত্তিক চিত্র। এগুলো শুধু শিল্প নয়, ইতিহাসের জীবন্ত দলিল। প্রদর্শিত একটি চলচ্চিত্রের নাম ‘হিমসে ফিরে আসা’, যেখানে দেখানো হয়েছে যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি শহরে কীভাবে সাধারণ মানুষ ফিরে যেতে চায়, আর কীভাবে শহরটি তাদের চেনা জায়গা থেকে এক অচেনা ভয়াবহ স্মৃতিময় স্থানে পরিণত হয়।
আরেকটি সিনেমায় ছিল এমন এক তরুণের গল্প, যে বিপ্লবের সময় ক্যামেরা হাতে তুলে নিয়েছিল। সে সৈনিক ছিল না, কিন্তু নিজের চোখে দেখা ঘটনাগুলো রেকর্ড করেছিল। তার চোখ দিয়েই পৃথিবী দেখেছে সিরীয় জনগণের বিক্ষোভ, ফ্যাসিস্ট সরকারের নির্যাতন, মজলুম মানুষের স্বজন হারানো আর স্বপ্নভঙ্গের করুণ চিত্র। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় এই উৎসব আয়োজিত হওয়ায় অনেকে মনে করছেন, সিরিয়ায় এক নতুন ধারা শুরু হয়েছে, যেখানে জনগণের কণ্ঠ উচ্চকিত হচ্ছে।
এই উৎসব শুধু সিনেমা দেখার জন্য নয়, বরং পুরোনো ক্ষতগুলো মনে করে সেই স্মৃতিকে শিল্পে পরিণত করার একটি প্রয়াস। এই আয়োজনের আরেকটি বড় দিক ছিল তরুণ নির্মাতাদের অংশগ্রহণ। অনেকেই প্রথমবারের মতো তাদের নির্মিত স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র উপস্থাপন করার সুযোগ পেয়েছেন। যুদ্ধের ভেতর বেড়ে ওঠা এই তরুণদের অনেকেই তাদের গল্প বলার ভাষা হিসেবে ক্যামেরাকে বেছে নিয়েছেন।
এক তরুণ নির্মাতা বলছিলেন, ‘আমি কখনোই অস্ত্র ধরিনি। আমার হাতের ক্যামেরাটাই আমার অস্ত্র ছিল। আমি যুদ্ধকে থামাতে পারিনি, কিন্তু আমি তা লিপিবদ্ধ করতে পেরেছি।’
সিরিয়ার এই চলচ্চিত্র উৎসব নতুন বাংলাদেশের জন্যও অনেক বার্তা রেখে যায়।
সূত্র : আল জাজিরা আরবি

