জুলাই গণঅভ্যুত্থান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো অঙ্গরাজ্যের ডেনভারে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ন্যাশনাল কমিউনিকেশন অ্যাসোসিয়েশনের (এনসিএ) এবারের বার্ষিক সম্মেলনে একাধিক গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়েছে। সেখানে জেন-জিনির্ভর ওই আন্দোলন কীভাবে কড়া সেন্সরশিপ ও রাষ্ট্রীয় সহিংসতার মধ্যেও রাজনৈতিক পরিবর্তন ঘটিয়েছে, তা নিয়ে একাডেমিক বিশ্লেষণ করা হয়।
‘ফ্রম রাইটস মুভমেন্ট টু রেজিম চেঞ্জ’ শিরোনামের বিশেষ সেশনটি পরিচালনা করেন সেন্ট মেরিস কলেজ, ইন্ডিয়ানার সহকারী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলা উদ্দিন। যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা এতে অংশ নেন। আন্দোলনকে টিকিয়ে রাখার সাংস্কৃতিক ও যোগাযোগভিত্তিক উপাদানগুলো বিশ্লেষণ করেন তারা।
যুক্তরাষ্ট্রের আলাবামা বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইডি গবেষক শাহ জাহান শুভ দেখিয়েছেন, সরকারি টেলিযোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়ার পরও কীভাবে জুলাইযোদ্ধারা অনলাইন কার্যক্রমকে অফলাইনে রূপ দিয়ে এক ‘পোস্ট-ডিজিটাল’ অ্যাক্টিভিজমের গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক এবং সাদার্ন ইলিনয় ইউনিভার্সিটি কার্বনডেলের ফুলব্রাইট স্কলার ড. মো. হারিছুর রহমান ব্যাখ্যা করেন, ‘শোনো মহাজন’ ও ‘দেশটা তোমার বাপের নাকি’-এর মতো প্রতিবাদী গান কীভাবে দমনপীড়নের সময় আবেগিক শক্তি ও প্রতিরোধের বিকল্প ভাষা হয়ে ওঠে এবং ব্যক্তিগত ক্ষোভকে সামষ্টিক ক্ষোভে রূপান্তর করে।
সেন্ট্রাল নিউ মেক্সিকো কমিউনিটি কলেজের ড. দিদারুল ইসলাম মানিক তার গবেষণায় দেখান, গ্রাফিতি বা দেয়াল লিখন কীভাবে সহিংস রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণের মধ্যে জনপরিসর পুনর্দখল করে প্রতীকী ও ব্যঙ্গাত্মক প্রতিরোধের ভাষা তৈরি করেছিল। একই সঙ্গে এটি কীভাবে আন্দোলনকারীদের সংগঠিত করেছিল, সেটাও এখানে ফুটে ওঠে।
ইউনিভার্সিটি অব নিউ মেক্সিকোর পিএইচডি গবেষক সাইকা শাহজাদি বিশ্লেষণ করেন, পাকিস্তানি গণমাধ্যম কীভাবে জুলাই আন্দোলনকে রাজনৈতিক অস্থিরতা, আঞ্চলিক নিরাপত্তা উদ্বেগ ও নেতৃত্ব সংকটের ফ্রেমে উপস্থাপন করেছে, যেখানে তরুণদের ভূমিকা প্রায়ই আড়ালে থেকে গেছে।
এ সেশনের বাইরে আরো তিনটি গবেষণা উপস্থাপন করা হয়। ইউনিভার্সিটি অব জর্জিয়ার একেএম জমির উদ্দিন দেখান, জনমত ভুলভাবে পড়ার ফলে ১৪ জুলাই শেখ হাসিনার সংবাদ সম্মেলন কীভাবে সংকটকে আরো তীব্র করে তোলে।
অন্যদিকে সাংহাই জিয়াও টং বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাতেমা আমিন প্রদর্শিত তথ্যচিত্রে দেখানো হয়, ‘জুলাই ৩৬’ পরিভাষার মাধ্যমে ওই সময় প্রতীকী বিস্তারণ শেখ হাসিনার পদত্যাগের পরও কীভাবে আন্দোলনের গতি ও স্মৃতিকে ধরে রাখে।

