স্বস্তির বৃষ্টিতেও ক্ষতির শঙ্কায় সবজি চাষিরা

সরদার আনিছ
প্রকাশ : ১৮ জুন ২০২৫, ২৩: ১৯

কয়েকদিনের টানা তাপপ্রবাহের পর গত তিনদিনের বৃষ্টিতে স্বস্তি ফিরেছে জনমনে। ভালো ফলনের জন্য বৃষ্টি আশীর্বাদ হলেও অতিবৃষ্টিতে ক্ষতির আশঙ্কায় রয়েছেন সবজি চাষিরা। তারা বলছেন, এই বৃষ্টিতে কৃষি ফসল বিশেষ করে সবজি ক্ষেতের উপকার হয়েছে, যা ফলন বাড়াতে সহায়ক হবে। তবে টানা বৃষ্টি হলে নিচু জমিতে পানি জমে উল্টো ক্ষতির সম্ভাবনা দেখা দেয়।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, দেশে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয় জুলাই মাসে, গড়ে ৫২৩ মিলিমিটার। এ ছাড়া জুন মাসেও বৃষ্টি পরিমাণ থাকে অনেক। গড়ে ৪৫৯ দশমিক ৪ মিলিমিটার। মে মাসে গড় স্বাভাবিক বৃষ্টি হয় ২৯৮ মিলিমিটার। কিন্তু এবারের চিত্র ছিল ভিন্ন। মে মাসেই বৃষ্টি হয়েছে ৪৮৬ মিলিমিটার।

বিজ্ঞাপন

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, এবার মে মাসে বেশি বৃষ্টি হওয়ার পর খানিকটা বিরতিতে (মুনসুন ব্রেক) জুন মাসের শুরুতে বৃষ্টি তুলনামুলক কম হয়েছে। তবে ১৬ জুন থেকে যে বৃষ্টি শুরু হয়েছে, তা চলতি মাসের শেষ নাগাদ চলতে পারে।

আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়, চলতি মাসের শেষ পর্যন্ত কমবেশি টানা বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। আরো তিন-চারদিন বৃষ্টি হওয়ার পর দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে এলেও দক্ষিণাঞ্চলে বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে। তবে এ মাসে কোনো নিম্নচাপের সম্ভাবনা নেই।

এই বৃষ্টি কৃষি ফসলের জন্য ক্ষতি, না উপকারী এমন প্রশ্নের জবাবে খুলনার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে উপপরিচালক নজরুল ইসলাম বলেন, এ পর্যন্ত যা বৃষ্টি হয়েছে তাতে কৃষি ফসলের জন্য বেশ উপকারী। তবে টানা বৃষ্টি হলে জমিতে জলাবদ্ধতার আশঙ্কা দেখা দেয়। বিশেষ করে কাঁচা মরিচ ক্ষেতে পানি জমে ফসল নষ্টের সম্ভাবনা দেখা দেবে।

কৃষিবিদরা বলছেন, জুন মাস বৃষ্টির মাস। আর এই মাসে প্রায় সব ধরনের সবজি চাষ হয়ে থাকে এবং এ মাসে সবজি চাষ করে কৃষকরাও অন্য সময়ের তুলনায় বেশি লাভবান হন। জুন মাসে চাষ করা শাকসবজির মধ্যে রয়েছে ডাঁটা, গিমাকলমি, পুঁইশাক, চিচিঙ্গা, ধুন্দুল, ঝিঙা, শসা, ঢ্যাঁড়শ, বেগুন অন্যতম। এ ছাড়া এমন আবহাওয়া পাটচাষের জন্যও উপকারী। পাটগাছ পরিপক্ব হওয়া এবং জাগ দিতেও সুবিধা হবে কৃষকদের।

এ ছাড়া জুন মাসে বিভিন্ন ধরনের উপকারী গাছপালা রোপণ করেও লাভবান হওয়া যায়। ফলস, বনজ এবং পরিবেশবান্ধব গাছ রোপণ করা যেতে পারে। বৃষ্টির মাস হওয়ায় এ সময় মাটির উর্বরা শক্তি অনেক বেশি থাকে। তবে এ সময় সবজি চাষ বা বৃক্ষরোপণের জন্য অবশ্যই উঁচু জমি নির্বাচন করতে হবে।

ত্রিশালের বীররামপুরের চাষি মোশারফ হোসেন বলেন, এ বৃষ্টি তাদের কাছে বিশেষ রহমত। এতে সবজি ক্ষেতের উপকার হচ্ছে, উৎপাদন বাড়বে।

মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি অবস্থায় রয়েছে। এ সময়ের শুরুতে ঢাকা, ময়মনসিংহ, সিলেট, রংপুর, চট্টগ্রাম, বরিশাল ও খুলনা বিভাগের অনেক স্থানে অস্থায়ী দমকা-ঝোড়ো হাওয়ার সঙ্গে বিদ্যুৎ চমকানোসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি, বজ্রবৃষ্টি হতে পারে এবং সেই সঙ্গে অবশিষ্ট সময়ে দেশের অধিকাংশ স্থানে ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণ হতে পারে। এ সময়ে সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা ৩৩ এবং রাতের তাপমাত্রা ২৬.৫ কমবেশি আশপাশের মধ্যে থাকতে পারে।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিষয়:

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত