ইসির নিবন্ধন কেন্দ্রে বাদপড়াদের ভিড়

গাজী শাহনেওয়াজ
প্রকাশ : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯: ১৮

ভোটার তালিকা হালনাগাদের তথ্য ফরম পূরণে বাদপড়াদের ভিড় বাড়ছে ছবি তোলার নিবন্ধন কেন্দ্রে। তথ্য সংগ্রহের হার প্রায় ৪ শতাংশ হলেও নিবন্ধন কেন্দ্রে বাদপড়া ভোটারদের কারণে উপস্থিতির হার ৫ শতাংশের ওপর।

পরিস্থিতি সামলাতে রীতিমতো গলদঘর্ম অবস্থা নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ডাটা এন্ট্রি অপারেটরদের। জগাখিঁচুড়ি এ অব্যবস্থাপনার জন্য কয়েকটি ত্রুটির খোঁজ মিলেছে। এগুলোর মধ্যে তথ্য সংগ্রহের সময় কম হওয়া, পুরোনো যন্ত্রপাতি ও নিবন্ধন সামগ্রীর অপ্রতুলতা, যথাযথ পরিকল্পনা ছাড়া মাঠে না নামা এবং প্রচারে ব্যাপক ঘাটতি থাকা। ঢাকাসহ সারাদেশের অবস্থাও বেহাল।

বিজ্ঞাপন

এনআইডির ডিজি ও অতিরিক্ত সচিব এ এস এম হুমায়ুন কবির আমার দেশকে জানান, ছবি তোলার নিবন্ধন কেন্দ্রে ভোটারের প্রচুর সমাগম আমরা দেখতে পারছি। তথ্য সংগ্রহকারীরা যে বাড়ি বাড়ি গিয়ে হালনাগাদ কার্যক্রম চালিয়েছিলেন তার প্রতিফলন এটা। সে সময়ে অনেকেই বাড়িতে পাওয়া যায়নি এবং কাজের প্রয়োজনে বাইরে ছিলেন।

ওইসব ভোটারদের নিবন্ধন কেন্দ্রে উপস্থিতিতে বাড়তি চাপের কারণে দীর্ঘক্ষণ লাইনে অনেককে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। ভোগান্তি শুধু ভোটারের না আমাদেরও। আমাদের পক্ষ থেকে সময় নির্ধারণ করে দেওয়া হলেও তা মানছেন না। ফলে প্রচুর লোকজনের ভিড় লক্ষ করা যাচ্ছে নিবন্ধন কেন্দ্রে। আর যন্ত্রপাতি স্বল্পতাসহ নানা অসুবিধার কথা জানতে চাইলে তিনি জানান, না, এ ধরনের কোনো সমস্যা আমরা অনুভব করছি না। কিংবা সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে অভিযোগ পাচ্ছি না।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নিবন্ধন কেন্দ্রে ভোটারের চাপ বেশি। এ কারণে কাজের গুণগত মান খুবই খারাপ হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। দৈনিক জনপ্রতি একজন ডাটা এন্ট্রি অপারেটরের সর্বোচ্চ ৭০টি নাম অন্তর্ভুক্তির কথা থাকলেও প্রায় দ্বিগুণ কাজ করতে হচ্ছে।

তথ্য ফরম পূরণকারী নাগরিকের পাশাপাশি বাদপড়াদের নিবন্ধন কেন্দ্রে উপস্থিত হওয়ায় কাহিল অবস্থা ডাটা এন্ট্রি অপারেটরদের। অন্যদিকে কাজে ধীরগতির কারণে দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে ছবি তোলার জন্য। অনেক কেন্দ্রে দিন পেরিয়ে রাত হওয়ার কারণে অনেক নারী ভোটার বিরক্ত হয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। এতে নতুন করে বাদপড়া ভোটারের সংখ্যা বাড়তে পারে।

সাভার উপজেলায় চারটি টিমে ভাগ হয়ে পাঁচজন করে ২০ জন ডাটা এন্ট্রি অপারেটর কাজ করছেন। গত মঙ্গলবার এই উপজেলায় একদিনেই নিবন্ধন কেন্দ্রে উপস্থিত হন প্রায় তিন হাজারের বেশি মানুষ। এর মধ্যে বাদপড়া ভোটারও আছে। তাৎক্ষণিক বাদপড়াদের নিবন্ধন করতে গিয়ে এ তালিকায় রোহিঙ্গাসহ অনেকেই ভোটার হয়ে যেতে পারেন।

প্রচুর লোকসমাগমের ভিড়ে ডাটা এন্ট্রি অপারেটররা তথ্য যাচাইয়ের সুযোগ কম পাচ্ছেন। এতে ভুলের সম্ভাবনাও থেকে যাচ্ছে। একইভাবে অনাকাঙ্ক্ষিত নাগরিক ভোটার তালিকায় যুক্ত হতে পারেন। এছাড়া যন্ত্রপাতির স্বল্পতা ও পুরোনো হওয়ার কারণে ঠিকমতো কাজও করতে পারছে না। ফলে কাজে সময়ক্ষেপণ হচ্ছে।

সাভার এলাকার ইসির একজন কর্মকর্তা জানান, মঙ্গলবার তার উপজেলায় তিন হাজার ৬০০ জন উপস্থিত হন। এর মধ্যে বাদপড়া ভোটারই বেশি। আবার এক এক ল্যাপটপে এক এক ধরনের সিস্টেম আপলোড করা। ফলে কাজ করা কঠিন হয়ে পড়ছে। বলতে পারেন জগাখিচুড়ি অবস্থা।

ইসির পাঁচটি আঞ্চলিক (ফরিদপুর, ঢাকা, বরিশাল, রংপুর ও খুলনা) অফিসের ছবি তোলার বিড়ম্বনার চিত্র খুবই নেতিবাচক। ফরিদপুরে ডাটা এন্ট্রি অপারেটরদের সমস্যার অন্যতম কারণগুলো হচ্ছে, ক্যামেরা (পি) মুডে থাকলে সফটওয়্যারের মধ্যে ক্যামেরার স্ক্রিন সাদা হয়ে থাকে, এমনকি বায়ো-এনরোল হ্যাং করে। গত ১৪ জানুয়ারি ইসিতে সরবরাহ করা নতুন ক্যামেরার ব্যাটারিতে চার্জ নিতে সময় বেশি লাগে ও চার্জ কম থাকে এবং সরাসরি চার্জে (এসি) লাগিয়ে কাজ করতে পারছে না।

ঢাকায় সমস্যাও কম নয়। সেখানে সফটওয়্যারে নতুন ও ডিভাইস পুরোনো হওয়ায় মিস ম্যাচ হচ্ছে, নতুন ক্যামেরা হলেও সকালে চার্জ দিলে ব্যাকআপ দুপুরের আগে শেষ হওয়া, পুরোনো ল্যাপটপের পোর্টগুলো সঠিকভাবে না পাওয়া, বারবার ডিভাইস ছেড়ে দেওয়া, নিবন্ধনের কাজ রাত ১০টার পর গড়ানোয় নিরাপত্তাজনিত সমস্যার সৃষ্টি হওয়া, ভোটার বৃদ্ধির কারণে একজন ডাটা এন্ট্রি অপারেটরের ১৫০ থেকে ১৭০ জন ভোটারের ছবি তোলায় সেখানে ভুলের সংখ্যা বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে, প্রিন্টার পুরোনো হওয়ায় প্রুফ কপি প্রিন্ট করতে সমস্যা সৃষ্টি হওয়া, নতুন প্রিন্টার ছাড়া নির্বিঘ্নে কাজ করায় জটিলতা তৈরি হওয়া এবং উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার অনুকূলে বরাদ্দ না দেওয়া।

বরিশালে ভোটারের বায়োমেট্রিক গ্রহণের সময় ল্যাপটপ হ্যাং, স্লো ও দুটি ফরম পূরণের পর বায়ো-এনরোল হতে অটো লগ আউট হয়ে যাওয়া, প্রত্যেকটি ল্যাপটপকে কয়েকটি ভোটারের রেজিস্ট্রেশন করার পরই বিভিআরএস সফটওয়্যার বন্ধ বা হ্যাং হওয়া, পুরোনো ল্যাপটপ হওয়ায় ফিঙ্গার, আইরিশ স্ক্যানার, সিগনেচার প্যাড ও ক্যামেরায় সমস্যা করে এবং বারবার বিভিআরএস কেটে যাওয়া এবং বিদ্যুৎ চলে গেলে ল্যাপটপ রি-স্টার্ট হতে সময় লাগা।

রংপুরে ভোটার নিবন্ধন করার সময় বায়ো-এনরোল সফটওয়্যার হঠাৎ করে নিজে নিজে বন্ধ হয়ে যাওয়া, নতুন ক্যামেরাগুলো পুরোনো ল্যাপটপে ঠিকভাবে কাজ না করা এবং ঢাকা থেকে লাইসেন্স করে আনা ল্যাপটপের কাজের মধ্যে লাইসেন্স নট ফাউন্ড হয়ে যাওয়া ইত্যাদি।

আর ময়মনসিংহে সফটওয়্যার নতুন, কিন্তু ল্যাপটপসহ অন্যান্য ডিভাইস পুরোনো হওয়ায় অনেক সময় ডাটা ক্র্যাশ করছে, যা পুনরুদ্ধারে সময় বেশি লাগা, পুরোনো ল্যাপটপে ডাটা সেভ না হওয়া এবং কিছুক্ষণ পরপর হ্যাং হওয়া, কিছু কিছু নতুন ল্যাপটপে ক্যামেরা ও সিগনেচার প্যাড সাপোর্ট না করা ও নতুন ল্যাপটপে বায়ো-এনরোল ফটো সাপোর্ট না করা।

গত বুধবার পর্যন্ত তথ্য ফরম পূরণকারীর পাশাপাশি বাদপড়ারা নিবন্ধিত হয়েছেন সাত লাখ। এর মধ্যে বাদপড়া ভোটার প্রায় পাঁচ লাখ এবং নতুন ভোটার দুই লাখ। তথ্য ফরম পূরণের তুলনায় দেড় শতাংশের বেশি নিবন্ধিত হচ্ছেন।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত