তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বাছাই কমিটির ‘র‍্যাংকড চয়েজে’ আপত্তি বিএনপি-জামায়াতের

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ : ২৩ জুলাই ২০২৫, ১০: ০৪
আপডেট : ২৩ জুলাই ২০২৫, ১০: ০৭

প্রধানমন্ত্রী দলীয় প্রধান হতে পারবেন না বলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে তিন-চতুর্থাংশ রাজনৈতিক দল মত দিয়েছে। তাদের মতামতের পক্ষে সিদ্ধান্ত দিয়েছে কমিশন। তবে আপত্তি জানানো দল ও জোট জাতীয় সনদে নোট অব ডিসেন্ট দিতে পারবে।

এদিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বাছাই কমিটির ‘র‍্যাংকড চয়েজের’ সুযোগ নিয়ে আপত্তি রয়েছে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর। দল দুটো বাছাই কমিটি সিদ্ধান্ত গ্রহণে ব্যর্থ হলে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীতে ফিরে যাওয়ার পক্ষে। সংবিধান ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের নিয়োগে বাছাই কমিটি গঠনের নতুন প্রস্তাব উত্থাপন করেছে কমিশন।

বিজ্ঞাপন

গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় ধাপের সংলাপের ১৭তম দিনে এমন আলোচনা হয়েছে। কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজের সভাপতিত্বে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সংলাপ শুরু হয়। শুরুতে রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্তে হতাহতের ঘটনায় শোকপ্রস্তাব করা হয়। যা পাঠ করেন কমিশনের সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার।

দিনের আলোচ্য সূচি ছিল প্রধানমন্ত্রীর একাধিক পদে থাকার বিধান (সিদ্ধান্ত গ্রহণ), তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিষয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রস্তাবের ভিত্তিতে একটি সমন্বিত প্রস্তাব (সর্বশেষ আলোচনার পর সিদ্ধান্ত গ্রহণ), নির্বাচন কমিশন, সরকারী কর্ম কমিশন, মহা-হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, দুর্নীতি দমন কমিশন এবং ন্যায়পাল নিয়োগের বিধান সম্পর্কিত বিষয়।

আলোচনার শুরুতে প্রধানমন্ত্রীর একাধিক পদে থাকার বিধানের বিষয়ে কমিশনের সিদ্ধান্ত জানান আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, আলোচনায় সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া গেছে তিন-চতুর্থাংশ দল ও জোট চান প্রধানমন্ত্রী পদে আসীন দলীয় প্রধান হতে পারবেন না। কিছু দল এ বিষয়ে ভিন্নমত ব্যক্ত করেছে। ওইসব দল ও জোট জাতীয় সনদে নোট অব ডিসেন্ট দিতে পারবেন।

আলী রীয়াজ বলেন, যারা নোট অব ডিসেন্ট দিতে উৎসাহী, যদি আপনারা প্রয়োজন মনে করেন সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে পারেন। এটা আমাদের অনুরোধ। তবে এটা সিদ্ধান্ত হিসেবে আপনাদের (দলগুলো) জানানো হলো।

প্রস্তাবটির পক্ষে জামায়াত, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), ইসলামী আন্দোলন, গণসংহতি আন্দোলন, আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি), জেএসডিসহ অধিকাংশ দল দলীয় প্রধানকে প্রধানমন্ত্রী পদে চান না বলে সংলাপে জানায়। অন্যদিকে বিএনপিসহ কয়েকটি দল দলীয় প্রধানকে প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা করার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে।

পরে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করা হয়। দলগুলোর সঙ্গে কয়েক দফা আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে রোববার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা নিয়ে একটি সমন্বিত প্রস্তাব দেয় ঐকমত্য কমিশন। এতে একটি সংসদীয় বাছাই কমিটির মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বাছাইয়ের প্রস্তাব করা হয়। এটি নিয়ে দলগুলোকে মতামত জানাতে বলা হয়েছিল। বিএনপি সোমবার রাতে লিখিতভাবে কমিশনকে তাদের মতামত জানায়।

দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ মঙ্গলবারের আলোচনায় জানান, বিএনপি র‍্যাংকড চয়েজ পদ্ধতির বিপক্ষে। এ ক্ষেত্রে বিএনপির অবস্থান হলো, বাছাই কমিটি প্রধান উপদেষ্টা বাছাই করতে না পারলে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীতে যে রূপরেখা ছিল সেটি হবে সর্বশেষ ধাপ।

জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, র‍্যাংকড চয়েজ পদ্ধতি নিয়ে তাদেরও ভিন্নমত আছে। এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাভেদ রাসিন বলেন, র‍্যাংকড চয়েজ পদ্ধতি ছাড়া কোনো রেজাল্ট আসবে না।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ে এখনো ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়নি বলে জানান আলী রীয়াজ। তিনি জানান, র‍্যাংকড চয়েজ পদ্ধতির ব্যবহার বিষয়ে এখনো একমত হওয়া যায়নি। বৃহস্পতিবার (আগামীকাল) পুনঃআলোচনার মাধ্যমে এ বিষয়ে সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যেতে পারে।

নির্বাচন কমিশন, সরকারী কর্ম কমিশন, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, দুর্নীতি দমন কমিশন এবং ন্যায়পাল নিয়োগের বিষয়ে নতুন প্রস্তাব দিয়েছে ঐকমত্য কমিশন। মঙ্গলবার নতুন প্রস্তাবটি আলোচনায় উত্থাপন করা হয়। এর মধ্যে শুধু নির্বাচন কমিশনে নিয়োগের বিধান নিয়ে আলোচনা হয়। প্রস্তাবিত বিধানে বলা হয়েছে, সংবিধানের ১১৮ (১) অনুচ্ছেদ সংশোধন করা হবে। ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাব হলো, সংসদীয় একটি বাছাই কমিটি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার পদে উপযুক্ত ব্যক্তিদের বাছাই করতে জাতীয় সংসদের স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার (বিরোধী দল থেকে নির্বাচিত), সংসদ নেতা, বিরোধী দলের নেতা, তৃতীয় বৃহত্তম দল বা প্রধান বিরোধী দল ছাড়া অন্য বিরোধী দলগুলোর একজন প্রতিনিধি, রাষ্ট্রপতির একজন প্রতিনিধি (নির্দলীয় ব্যক্তি) এবং প্রধান বিচারপতির প্রতিনিধি হিসেবে আপিল বিভাগের একজন বিচারপতির সমন্বয়ে কমিটি থাকবে।

বিদায়ী নির্বাচন কমিশনের প্রধান ও অন্য কমিশনারদের মেয়াদ শেষ হওয়ার ৯০ দিন আগে এই কমিটি আগ্রহী ব্যক্তিদেরই কাছ থেকে নির্ধারিত পদ্ধতিতে ‘ইচ্ছাপত্র’ ও ‘জীবনবৃত্তান্ত’ আহ্বান এবং উপযুক্ত প্রার্থীর অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনা করবে। বাছাই কমিটি একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং সর্বোচ্চ চারজন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে নাম পাঠাবে।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিষয়:

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত