আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে গণভোট আয়োজনের সিদ্ধান্ত পাওয়ার পর নির্বাচন কমিশন (ইসি) প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও সক্ষমতা পর্যালোচনা শুরু করেছে। নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ এ সংক্রান্ত প্রস্তুতির প্রাথমিক খসড়া প্রস্তুত করছেন। এছাড়া আজ মঙ্গলবার গণভোট সংক্রান্ত আইনটি অনুমোদন এবং এর আলোকে অধ্যাদেশ জারি হতে পারে। এদিকে, চলতি সপ্তাহের মধ্যে ত্রয়োদশ সংসদের তফসিল ঘোষণার কর্মপরিকল্পনাও চূড়ান্ত হওয়ার কথা রয়েছে।
ইসি ও সরকারের নির্ভরযোগ্য সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ আমার দেশকে বলেন, দুই থেকে তিন দিনের মধ্যেই তফসিল ঘোষণার তারিখ নিশ্চিত হবে। আগেই জানানো হয়েছিল, ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে তফসিল ঘোষণার পরিকল্পনা রয়েছে। দুটি ভোটের কারণে কিছু বুথ সংখ্যা বাড়াতে হতে পারে। এটা আমি আগেও বলেছি। আর সময় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে গণভোটের অধ্যাদেশটি হাতে পাওয়ার পর।
ইসির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, এবারই প্রথম একই দিনে নির্বাচন ও গণভোট অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে সিইসি বলেছেন, এটা চ্যালেঞ্জ। এ বিবেচনা করে ভোটারদের দুটি ব্যালট দেওয়ার কারণে বুথ বাড়ানো ও সময় কিছুটা এগিয়ে আনা যুক্তিযুক্ত হতে পারে।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, দুটি ভোটের জন্য আলাদা ব্যালট ব্যবহার করা হবে এবং নির্বাচনি দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারাই গণভোট পরিচালনার দায়িত্বও পালন করবেন।
ইসি সূত্রমতে, সাধারণত জাতীয় নির্বাচনে সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোট হয়। এবার ভোট শুরুর সময় আরো এগিয়ে আনার বিষয়টি বিবেচনাধীন।
ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের জন্য সারাদেশে ৪২ হাজার ৭৬১টি কেন্দ্র এবং ২ লাখ ৪৪ হাজার ৭৩৯টি বুথ নির্ধারণ করেছে ইসি। প্রতি ৩ হাজার ভোটারের জন্য একটি কেন্দ্র এবং প্রতি ৫০০ পুরুষ ও ৪০০ নারী ভোটারের জন্য আলাদা বুথ থাকবে।
ইসি সংশ্লিষ্টরা জানান, এই হিসাব কেবল সংসদ নির্বাচনের জন্য করা হয়েছিল। একই দিনে নির্বাচন ও গণভোট হলে কেন্দ্র না বাড়লেও বুথ বাড়াতে হবে। ভোট গণনা সহজ করতে কিছু কমিশনার অতিরিক্ত ভোটকর্মী নিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছেন। সাধারণত প্রতিটি কেন্দ্রে একজন প্রিসাইডিং অফিসার, একজন সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার এবং প্রতিটি বুথে দুজন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করেন।
গণভোট আয়োজনের আইনি প্রক্রিয়া সম্পর্কে কমিশনার মাছউদ বলেন, আমি গণভোটের ফরম্যাট নিয়ে কাজ করছি।
প্রস্তাবিত সংবিধান সংশোধনী ও প্রয়োজনীয় অধ্যাদেশ তিন থেকে চার কর্মদিবসের মধ্যেই প্রস্তুত হবে বলে জানিয়েছিলেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। এ বিবেচনায় আজ গণভোট আইনটির অনুমোদন এবং এর আলোকে অধ্যাদেশ জারি হতে পারে বলে জানান একজন নির্বাচন কমিশনার।
বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত তিনটি গণভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১৯৭৭ ও ১৯৮৫ সালের গণভোটকে যথাক্রমে তৎকালীন শাসকদের ক্ষমতা বৈধতা দেওয়ার উদ্যোগ হিসেবে দেখা হয়। আর ১৯৯১ সালের গণভোট দেশে সংসদীয় গণতন্ত্রে প্রত্যাবর্তনের ভিত্তি তৈরি করেছিল।

