আরপিও সংশোধন: বিএনপির দাবি ইসিতে নাকচ

গাজী শাহনেওয়াজ
প্রকাশ : ২৯ অক্টোবর ২০২৫, ০৬: ২৩

রাজনৈতিক দল চাইলে জোটের প্রতীকে নির্বাচন করতে পারবে, এ ধরনের সুযোগ চেয়ে সদ্য অনুমোদিত আইনটিতে সংশোধনের জন্য বিএনপির দেওয়া প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এর আগে দীর্ঘদিন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অনুমোদনের জন্য এটি অপেক্ষমাণ ছিল। তখন স্পর্শকাতর এ ধারায় সংশোধনী চেয়ে কোনো রাজনৈতিক দল আবেদন করেনি।

গত বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন উপদেষ্টা পরিষদ আরপিও’র চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়। এরপর বিএনপিসহ কয়েকটি দল এ ধারা পরিবর্তনে আবেদন জানায়।

বিজ্ঞাপন

এ নিয়ে গত সোমবার সন্ধ্যায় অনির্ধারিত সভায় বসেছিলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসিরউদ্দীন, তার রানিংমেট চার নির্বাচন কমিশনার ও ইসির সিনিয়র সচিব। ওই সভায় এ ইস্যুতে ইসির করণীয় কিছু না থাকায় উত্থাপিত প্রস্তাবটি নাকচ করে দেওয়া হয়। সভায় উপস্থিত একাধিক দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

এর আগে গত রোববার গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ-১৯৭২ (আরপিও)-এর ২০ ধারায় সংশোধনে আপত্তি জানিয়ে ইসিকে ৩৬ দফা প্রস্তাব দিয়েছিল বিএনপি। সেখানে জোটবদ্ধ দলগুলোর নিজের ইচ্ছেমতো জোটের প্রতীকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ চাওয়া হয়।

তিনজন নির্বাচন কমিশনার এ প্রসঙ্গে গত সোমবার রাতে আমার দেশকে জানান, জোটবদ্ধ হলেও নিজ প্রতীকে নির্বাচন করতে হবে নতুন প্রণীত এ বিধানে সংশোধনের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আর ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেন, এ আইন কমিশন থেকে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর পর তিনমাস সেখানে তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের মধ্যে ছিল।

গত বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের সভায় তা অনুমোদন হয়। যেহেতু তখন কোনো আপত্তি আসেনি; এখন ইসির করণীয় কিছু নেই। আর আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের একজন যুগ্মসচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে আমার দেশকে বলেন, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদের তফসিলের আগে উপদেষ্টা পরিষদের সর্বোচ্চ তিনটি সভা হতে পারে।

তাই এটি পুনরায় প্রস্তাব আকারে উত্থাপনের পর নিষ্পত্তি করা কঠিন হবে। বিএনপির সঙ্গে উপদেষ্টার বৈঠক হলেও সেখান থেকে আরপিও’র ধারাতে পরিবর্তনে কোনো নির্দেশনা তারা পাননি বলে জানান ওই কর্মকর্তা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ‘না’ ভোটের বিধান ফিরিয়ে আনা, আইন-শৃঙ্খলায় সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যদেরকে সংজ্ঞাতে অন্তর্ভুক্তিকরণ এবং রাজনৈতিক দলের মধ্যে জোট হলেও নির্বাচন করতে হবে নিজ দলীয় প্রতীকে এমন ৪৮টি সংশোধনীসহ আরপিও’র অনুমোদন হয়। এ সংশোধনীর বেশিরভাগ সুপারিশ ছিল ঐকমত্য সংস্কার কমিশনের।

আরপিও অনুমোদন হওয়ার পর গত রোববার ইসিতে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল সাক্ষাৎ করে আইনের ২০ ধারায় সংশোধনীর জন্য আবেদন জানায়। এ নিয়ে রোববার ও সোমবার প্রথমে ইসি অভ্যন্তরীণ আলোচনা করে। এসব আলোচনায় কিছু দোদুল্যমনতার মধ্যে ছিল ইসি।

এদিকে, জুলাই অভ্যুত্থানে অবদান রাখা জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপির শাপলা প্রতীক নিয়ে ইসি ও দলটির মধ্যে টানাপোড়েন চলছে। শাপলা ছাড়া ইসির নিবন্ধন নেবে না এবং নির্বাচনে যাবে না এনসিপির এমন হুঁশিয়ারিতেও অটল ইসি।

এ অবস্থায় বিএনপির দাবি মেনে নিলে ইসির নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে। এনসিপিসহ নানা মহলের সমালোচনার মুখে পড়ে যেতে পারে কমিশন। তাই সোমবার সন্ধ্যায় পুরো কমিশন বসে এ বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়ে বিএনপির প্রস্তাব নাকচ করেন।

এর আগে সিইসির সঙ্গে দেখা করার পর ইসমাইল জবিউল্লাহ সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ইতিপূর্বে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নিজেদের বিবেচনায় জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে।

এই প্রক্রিয়ায় নির্বাচন অনুষ্ঠানে কোনো জটিলতা বা কোনো সমস্যা সৃষ্টি হয়নি, সুন্দরভাবে নির্বাচন হয়েছে। সরকারের উচ্চপর্যায়ে উপদেষ্টা লেভেলে বিএনপির স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে আলোচনাকালে আরপিওর ২০ নম্বর অনুচ্ছেদে কোনো পরিবর্তন আনা হবে না—এই মর্মেও বিএনপিকে আশ্বস্ত করা হয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ করে ভিন্ন খবর জানা গেল। এ সংশোধনী বা পরিবর্তন বিএনপির কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।

আটকে যেতে পারে বাংলাদেশ জাতীয় লীগের নিবন্ধন

এদিকে নানা সমালোচনার পর প্রকৃত তথ্য উদঘাটনে আটকে যেতে পারে বাংলাদেশ জাতীয় লীগের নিবন্ধন। দলটির প্রধান নেতা আতাউর রহমান খান ১৯৭৩ ও ৭৮ সালে নির্বাচন করেন। প্রতীক ছিল ‘লাঙ্গল’। পরে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ জাতীয় পার্টি গঠন করলে দল বিলুপ্ত করে আতাউর রহমান ওই সরকারের মন্ত্রী হন। এমনকি তার দলীয় প্রতীক লাঙ্গল এখন জাতীয় পার্টির প্রতীক হিসেবে স্বীকৃত।

সম্প্রতি বাংলাদেশ জাতীয় লীগের নিবন্ধন দেওয়ার প্রক্রিয়া নিয়ে নানা মহলে সমালোচনার ঝড় ওঠে। পরে তদন্ত করে ইসি জানতে পেরেছে, দলটির রাজনৈতিক ধারাবাহিকতা নেই। দলটির জেলা-উপজেলা পর্যায়ের কমিটির কার্যক্রম ও দলীয় অস্তিত্ব বিলুপ্ত।

ইসি সূত্রমতে, প্রাথমিক নিবন্ধন দেওয়ার ক্ষেত্রে ওই দুটি (৭৩ ও ৭৮) নির্বাচনের ৯ শতাংশ ভোট প্রাপ্তিকে আমলযোগ্য নেওয়ায় বাকি তথ্য যাচাই করেনি কমিশন। তবে বিষয়টি নিয়ে সমালোচনার এক পর্যায়ে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করে কমিশন।

ওই কমিটি দলটির সম্পর্কে তথ্য খুঁজতে গিয়ে নানা অসঙ্গতি পেয়েছে, যা কমিশনকে জানানো হয়েছে। ওই প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আটকে যেতে পারে বাংলাদেশ জাতীয় লীগের নিবন্ধন।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত