বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার বিষয়টি এই মুহূর্তে পুরোপুরিভাবে নির্ভর করছে মেডিকেল বোর্ডের চূড়ান্ত মতামতের ওপর। দীর্ঘ বিমানযাত্রার ধকল সামলানোর মতো শারীরিক সক্ষমতা অর্জনের আগ পর্যন্ত তাকে আপাতত না সরানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন চিকিৎসকরা।
শনিবার রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন।
তিনি বলেন, চিকিৎসকের পরামর্শে খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার ব্যাপারে সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত ছিল। কাতারের এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের কারিগরি ত্রুটি যেমন সত্য, তেমনি মেডিকেল বোর্ড মনে করছে- এই মুহূর্তে দীর্ঘ বিমানযাত্রা তার জন্য নিরাপদ নয়। এ অবস্থায় তার শারীরিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। সেজন্যই বিদেশে নেওয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে।
ডা. জাহিদ হোসেন বলেন, বিদেশে যাওয়ার ব্যাপারে আমাদের সর্বোচ্চ প্রস্তুতি রয়েছে। তবে ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টার বিমানযাত্রায় হাইঅল্টিটিউডে (অতি উচ্চতায়) শরীরে যে পরিবর্তন হয়, তার সঙ্গে খাপ খাওয়ানো একজন অসুস্থ মানুষের পক্ষে সবসময় সম্ভব হয় না। তাই মেডিকেল বোর্ড মনে করছে, নিরাপদে স্থানান্তর করার মতো শারীরিক পরিস্থিতি নিশ্চিত হলেই তাকে বিদেশে নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, ভবিষ্যতেও হয়তো শারীরিক অবস্থাই বলে দেবে কখন তাকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য নেওয়া যাবে অথবা নিয়ে যাওয়া হবে। আমরা প্রস্তুত থাকলেও সর্বোচ্চ পর্যায়ে খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা এবং তার সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি অর্থাৎ চিকিৎসাগত দিক থেকে এটিই সবখানে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পাচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, আমাদের মেডিকেল বোর্ডের সদস্যদের যারা যুক্তরাজ্য, আমেরিকা, বাংলাদেশ ও চীন থেকে অংশ নিচ্ছেন- সবাই কিন্তু তার ফিজিক্যাল কন্ডিশন বা শারীরিক অবস্থার ওপরই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন।
ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও চীনের চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত বোর্ড কাজ করছে। চিকিৎসার সার্বিক সমন্বয়ের জন্য ডা. জোবাইদা রহমান ঢাকায় এসেছেন এবং মেডিকেল বোর্ডের প্রতিটি বৈঠকে সক্রিয়ভাবে অংশ নিচ্ছেন। এছাড়া বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসার খোঁজখবর রাখছেন এবং চিকিৎসকদের মতামতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য না ছড়ানোর আহ্বান জানিয়ে ডা. জাহিদ বলেন, দয়া করে গুজব ছড়িয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করবেন না। দেশনেত্রীর প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার নিদর্শনস্বরূপ সঠিক তথ্যের বাইরে কিছু প্রচার করবেন না।
এছাড়া হাসপাতালে নেতাকর্মীদের ভিড়ের কারণে অন্য রোগী ও তাদের স্বজনদের সাময়িক অসুবিধার জন্য তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন এবং সবার সহযোগিতা কামনা করেন।
ডা. জাহিদ হোসেন খালেদা জিয়ার ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও আল্লাহ তাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। আমরা আশাবাদী, সবার দোয়া ও আল্লাহর রহমতে তিনি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন। বিদেশে নেওয়ার ব্যাপারে আমাদের সর্বোচ্চ প্রস্তুতি রয়েছে। চিকিৎসকরা যখনই সবুজ সংকেত দেবেন, তখনই তাকে নেওয়া হবে।
৭৯ বছর বয়সি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রাইটিস ও ডায়াবেটিসের পাশাপাশি কিডনি, লিভার, ফুসফুস, হৃদযন্ত্র, চোখের সমস্যাসহ বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছেন। ২০২০ সালে কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর দলের কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে তিনি সরাসরি অংশ নেননি। এর মধ্যে গত ২৩ নভেম্বর রাতে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল। ফুসফুসে সংক্রমণ ধরা পড়ায় তাকে সেখানে ভর্তি করা হয়। অবস্থার আরো অবনতি হলে তাকে ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে নেওয়া হয়।
গত শুক্রবার ঢাকায় এসেছেন খালেদা জিয়ার পুত্রবধূ ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সহধর্মিণী ডা. জোবাইদা রহমান। দেশে ফিরেই চিকিৎসকদের সঙ্গে শাশুড়ির চিকিৎসার বিষয়টি সমন্বয় করছেন তিনি।
এর আগে চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি চিকিৎসার জন্য লন্ডনে গিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। সেখানে লন্ডন ক্লিনিকে ভর্তি রেখে কিছুদিন তার চিকিৎসা চলে। পরিস্থিতির উন্নতি হলে লন্ডনে ছেলে তারেক রহমানের বাসায় থেকে কিছুদিন চিকিৎসা নেন। অনেকটা সুস্থ হয়ে গত ৬ মে তিনি দেশে ফেরেন।

