সমালোচনার মুখে শিশু হাসপাতালের ৬৫ চিকিৎসকের নিয়োগ বাতিল

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ : ২০ জুলাই ২০২৫, ১৫: ৪৯
আপডেট : ২০ জুলাই ২০২৫, ১৮: ০৭

সমালোচনার মুখে ৬৫ জন চিকিৎসকের নিয়োগ বাতিল করেছে রাজধানীর বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট। নতুন করে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সব প্রক্রিয়া নিয়ে ৪২ জনকে স্থায়ীভাবে নিয়োগ দেওয়া হবে।

রোববার বিকেল ৩টায় শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মাহবুবুল আলম আমার দেশকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

বিজ্ঞাপন

অধ্যাপক মাহবুবুল আলম বলেন, যেহেতু নিয়োগের ঘটনা নিয়ে নানা দিক থেকে কথা হচ্ছে। তাই, গতকাল শনিবার পরিচালনা বোর্ডের সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হলে সেখানে বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়।

এর আগে গত ৪ জুলাই ‘আওয়ামী স্টাইলে ৬৫ চিকিৎসক নিয়োগ’ শিরোনামে খবর প্রকাশ করে আমার দেশ। নিয়োগ পাওয়া চিকিৎসকরা প্রত্যেকই বিএনপিপন্থি চিকিৎসক বলে পরিচিত। এতে চিকিৎসকসহ সংশ্লিষ্টদের মাঝে আলোচনা, সমালোচনা সৃষ্টি হয়।

গোপনে হওয়া এই নিয়োগ পরে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম তদন্তের নির্দেশ দেন। নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয় নিয়োগ বোর্ডের কাছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠার প্রায় পাঁচ দশকে কয়েক দফায় বড় ধরনের চিকিৎসক নিয়োগ হয়েছে রাজধানীর বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে। তবে এসব নিয়োগ কখনো কখনও আনুষ্ঠানিকভাবে হলেও অধিকাংশ সময়ে হয়েছে অনেকটাই গোপনে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ সরকারের গত ১৬ বছরে দলীয় ক্যাডারদের নিয়োগ দেওয়া হয় অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়ায়। একই প্রক্রিয়ায় গত মাসে ৬৫ জন চিকিৎসক নিয়োগ দেয় প্রতিষ্ঠানটি। যা নিয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বঞ্চিত চিকিৎসক ও চিকিৎসক নেতারা।

চিকিৎসকদের অভিযোগ, হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মাহবুবুল হক এবং নিয়োগ কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. একেএম আজিজুল হক পছন্দের প্রার্থীদের নিয়োগ দিতেই পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেননি। অভ্যন্তরীণ বিজ্ঞপ্তিতে তড়িঘড়ি করে এসব চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হয়। এসব নিয়োগে কোনো ধরনের লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয়নি। ফলে যোগ্য চিকিৎসকরা বঞ্চিত হয়েছেন।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বঞ্চিত চিকিৎসকরা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার দ্বারস্থ হয়েছেন। তাদের দাবি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হলেও শিশু হাসপাতালে মোট ব্যয়ের এক-তৃতীয়াংশ বহন করে সরকার। কাজেই যে কোনো নিয়োগ হলে পত্রিকা ও ওয়েবসাইটে বিজ্ঞপ্তি দেওয়াটাই স্বাভাবিক নিয়মের মধ্যে পড়ে। কিন্তু শিশু হাসপাতালে কোনো নিয়মই মানা হয়নি। নিয়োগের ক্ষেত্রে নিয়ম ভঙ্গ করা হয়েছে প্রতিটি পদে পদে। ফলে এ নিয়োগ সম্পূর্ণ অবৈধ।

যদিও সেসময় শিশু হাসপাতালের পরিচালক এবং নিয়োগ কমিটির প্রধানের দাবি, আইন অনুযায়ী পদাধিকার বলে পরিচালক চাইলে অ্যাডহক ভিত্তিতে (অস্থায়ী) নিয়োগ দিতে পারেন। নিয়োগপ্রাপ্তরা সবাই হাসপাতালে কর্মরত অনারারি চিকিৎসক। এ নিয়োগ সম্পূর্ণ অস্থায়ী। প্রতিষ্ঠানের বোর্ড সদস্যদের মতামত অনুযায়ী নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তবে চিকিৎসকদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্তে অনিয়ম পায় মন্ত্রণালয়।

তবে হাসপাতালে এমন গোপন নিয়োগ এটিই প্রথম নয়। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০২১ সালেও এই প্রতিষ্ঠানে ৬০ জন চিকিৎসক অস্থায়ীভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে তাদের অধিকাংশকে স্থায়ীভাবে নিয়োগ দেয় তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের আস্থাভাজন প্রশাসন। এবারও একই প্রক্রিয়া অনুসরণকে জুলাই বিপ্লবের সঙ্গে প্রতারণা বলে অভিযোগ করেন বঞ্চিত চিকিৎসকরা।

এ প্রসঙ্গে গত ৩ জুলাই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান আমার দেশকে বলেন, সাধারণত স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে আমরা হস্তক্ষেপ করতে চাই না। কিন্তু যে অনিয়মের অভিযোগ এসেছে, তার কিছুটা সত্যতা পাওয়ায় আমরা আমলে নিয়েছি। আনুষ্ঠানিকভাবে কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি জানতে চাওয়া হয়েছে। জবাব পেলে মন্ত্রণালয়ের দিক থেকে যতটুকু ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে তা নেওয়া হবে।

একই বিষয়ে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব সাইদুর রহমান বলেন, বিষয়টি আমরা জানতে পেরেছি। কোন প্রক্রিয়ায় নিয়োগ হয়েছে, সেটি জানতে চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। জবাব পেলে যতটুকু করার আমরা করব। এরপরই একাধিক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নিয়োগ প্রক্রিয়া কথা বলেন। প্রায় এক সপ্তাহ তদন্তের পর অবশেষে সেই নিয়োগ বাতিল করতে বাধ্য হলো শিশু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিষয়:

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত