আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা বাড়ছে। তাই নির্বাচন কমিশন (ইসি) থেকে ভোটকেন্দ্রে গোপন ক্যামেরা (সিসিটিভি) বাড়ানো হচ্ছে। তবে সিসি ক্যামেরা স্থাপনে এক টাকাও ব্যয় হবে না সাংবিধানিক সংস্থা ইসির। এজন্য বিভিন্ন উৎস থেকে অর্থের জোগাড় করছে ইসি। এগুলোর মধ্যে রয়েছে সিটি করপোরেশন, জেলা পরিষদ এবং উপজেলা পরিষদ। এছাড়া বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) তহবিলও কাজে লাগানো হবে। নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ কমিশনের পক্ষে এই কাজে সমন্বয় করছেন।
ইতোমধ্যে ভোটকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার হওয়া প্রায় সাড়ে চার হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রয়েছে সিসিটিভি। এগুলো নির্বাচনের কাজে লাগানোর জন্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মাধ্যমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে গতকাল বুধবার চিঠি দিয়েছে কমিশন। ফলে ইসির নতুন উদ্যোগে রাজনৈতিক দল ও ভোটারদের মধ্যে শঙ্কা কিছু কমে আসবে। ইসির দায়িত্বশীল সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
ভোটকেন্দ্রে সিসিটিভির সংখ্যা বাড়ানোর বিষয়টি স্বীকার করেন ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ। আমার দেশকে তিনি বলেন, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় অনেকগুলোতে ইতিমধ্যে সিসিটিভি বসানো আছে। এগুলোর কিছুটা সচল-অচল রয়েছে। আমরা সেগুলো ব্যবহারের উপযোগী করার জন্য ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সংস্কারের অনুরোধ জানিয়েছি। তবে এ সংখ্যা পাঁচ হাজারের কম। তাই ভোটকেন্দ্রে আরো কিছু সিসিটিভি বাড়ানোর বিষয়ে উদ্যোগ নিয়েছি। এটার কাজে আমি নিজেই সমন্বয় করছি।
সিনিয়র সচিব আরো বলেন, বিভাগীয় পর্যায়ে বিভাগীয় কমিশনারের প্রয়োজনীয় কিছু তহবিল থাকে। অনুরূপভাবে, জেলা পরিষদ ও উপজেলা পরিষদের কিছু তহবিল থাকে। সব কিছুই সমন্বয় করে ওইসব প্রতিষ্ঠান বা কর্মকর্তাদের তহবিল থেকে প্রয়োজনীয় অর্থ দিয়ে কেন্দ্রে সিসিটিভি বাড়ানো হবে। পর্যালোচনা করে দেখেছি, একটি ভোটকেন্দ্রে সিসিক্যামেরা স্থাপনের জন্য সর্বোচ্চ চার থেকে সাড়ে চার হাজার টাকা ব্যয় হতে পারে।
ইসির সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন ইসির সংলাপে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। এছাড়া নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা সব কেন্দ্রে সিসিটিভি রাখার অনুরোধ জানিয়েছিল। কিন্তু এই ক্যামেরা স্থাপন ব্যয়বহুল এবং অর্থের সংস্থান নেই, এ বিবেচনায় এএমএম নাসিরউদ্দিনের কমিশন নাকচ করেছিল। এমনকি গত ৮ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে তাদের করণীয় কিছু নেই বলে সাফ জানিয়ে দেয়।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, গত ৬ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুষ্ঠিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন লজিস্টিক্যাল ইস্যু ও কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন বিষয়ক সভার পরিপ্রেক্ষিতে ইসি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। চিঠিটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বরাবর পাঠানো হয় এবং এর অনুলিপি মন্ত্রিপরিষদ সচিবকেও দেওয়া হয়েছিল।
এরপর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএনএম নাসির উদ্দিন জানিয়েছিলেন, সব ভোটকেন্দ্রে সিসিটিভি বসানোর টাকা নেই। কারণ একটি সিসিটিভির জন্য প্রায় পাঁচ হাজার টাকা ব্যয় হয়। কিন্তু এটি ব্যবহারের পর সংরক্ষণের মতো অবস্থা কমিশনের নেই। তাই একদিনের ভোটের জন্য সব কেন্দ্রে সিসিটিভি বসানো সম্ভব হবে না।
ইসি সূত্রে জানা গেছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীসহ বিভিন্ন বাহিনীর সঙ্গে সভায় চোরাগুপ্তা হামলাসহ নানা শঙ্কা উঠে আসে। এরপর কমিশন ভোটকেন্দ্রে সিসিটিভি বাড়ানোর বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়। এছাড়া গতকাল বুধবার ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটে ভোটকেন্দ্র হিসেবে নির্ধারিত সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিদ্যমান সিসি ক্যামেরা সচল রাখার নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এ লক্ষ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় সরকার বিভাগকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। এতে স্বাক্ষর করেছেন ইসির উপসচিব মোহাম্মদ মনির হোসেন।
নির্দেশনায় বলা হয়, ভোটগ্রহণের আগেই ভোটকেন্দ্রগুলোকে ভোটার চলাচলের উপযোগী করে প্রস্তুত করতে হবে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী অবকাঠামোগত সংস্কার সম্পন্ন করতে হবে। যেসব ভোটকেন্দ্রে বিদ্যুৎ সংযোগ নেই, সেখানে দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগ নিশ্চিত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ভোটকেন্দ্রে বিদ্যমান সিসিটিভি ক্যামেরা অবশ্যই সচল রাখতে হবে। যেসব কেন্দ্রে সিসিটিভি সংযোগ নেই, সেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদ বা কর্তৃপক্ষকে অন্তত ভোটগ্রহণের দিনের জন্য সিসিটিভি সংযোগ স্থাপনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে অনুরোধ জানানো হবে।
নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনায় আরো বলা হয়, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগতভাবে ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করতে হবে। পাশাপাশি প্রতিবন্ধী, বয়স্ক ও গর্ভবতী নারীদের ভোটদানে বিশেষ সহায়তার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। বিশেষ করে যেসব কেন্দ্রে সাইক্লোন শেল্টার ব্যবহার করা হবে, সেখানে এসব বিষয় অগ্রাধিকার পাবে।
ইসির নির্ভরযোগ্য তথ্যমতে, কতগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সিসিটিভি রয়েছে তার একটি তথ্য সংগ্রহ করেছে ইসির ১০টি আঞ্চলিক নির্বাচন অফিস। স্থানীয় শিক্ষা অফিসের সহায়তায় এ তথ্য নেওয়া হয় বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে। ওই তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সারা দেশে চার হাজার ৪৪৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বর্তমানে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সিসিটিভি রয়েছে। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে আসন্ন নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হবে। এবার মোট ভোটকেন্দ্র রয়েছে—৪২ হাজার ৭৬১টি এবং ভোটকক্ষ প্রায় আড়াই লাখ।
আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন


অবৈধভাবে পুলিশ ক্যাডারে আ.লীগ নেতার বোন রাজিয়া
তাইওয়ানকে রেকর্ড ১১ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র
সকালেও হাদির অবস্থা খুবই ক্রিটিক্যাল