সব ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে হবে: রাষ্ট্রদূত মুশফিক

আমার দেশ অনলাইন
প্রকাশ : ০১ আগস্ট ২০২৫, ১৩: ০৭
মেক্সিকোতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজল আনসারী। ফাইল ছবি

মেক্সিকোতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজল আনসারী বলেছেন, পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার শাসনকাল ছিল ইতালির একনায়ক মুসোলিনির শাসনের কার্বন কপি। তিনি বলেন, যেমনভাবে মুসোলিনিকে ঘিরে স্তাবক শ্রেণি তৈরি হয়েছিল, তেমনিভাবে শেখ হাসিনাকে ঘিরেও স্তাবকদের একটি বলয় গড়ে উঠেছিল। মুসোলিনির ‘ব্ল্যাক শার্ট’ বাহিনীর আদলে হাসিনা গড়ে তুলেছিলেন ‘হেলমেট বাহিনী’—ছাত্রলীগ, যাদের মাধ্যমে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা দমন করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার মেক্সিকো সিটিতে বাংলাদেশ দূতাবাসে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান ও গণতন্ত্রের অভিযাত্রা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় রাষ্ট্রদূত এসব মন্তব্য করেন।

রাষ্ট্রদূত মুশফিক বলেন, ‘অনেকে ভাবেন ওরা বিদেশে গিয়ে শুধু সময় কাটাচ্ছে, কিন্তু তারা এখনো ষড়যন্ত্রের জাল বুনছে। এই ষড়যন্ত্র ততক্ষণই বিস্তৃত হবে, যতক্ষণ আমাদের ভেতরে অনৈক্য, বিভেদ আর অবিশ্বাস থাকবে।’ তাই তিনি সবার প্রতি আহ্বান জানান, ব্যক্তিগত মতভেদ দূরে রেখে জাতীয় ঐক্য বজায় রাখতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা ছিলেন সব সমালোচনার ঊর্ধ্বে, ঠিক যেমন ছিলেন মুসোলিনি। ছাত্রলীগ ছিল তার ‘হেলমেট বাহিনী’, যারা ছাত্র ও সাধারণ মানুষের ওপর দমন-পীড়ন চালিয়েছিল। কিছু কথিত বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক ও লেখক এই দুঃশাসনকে প্রশ্রয় দিয়েছেন এবং স্তাবকতায় লিপ্ত ছিলেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘শেখ হাসিনার পতনের পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান বাংলাদেশের কোমলমতি ছাত্রদের। তারা জীবন দিয়ে অধিকার ছিনিয়ে এনেছে। তাদের সঙ্গে ছিল গণতন্ত্র বঞ্চিত বিএনপি, জামায়াত, গণঅধিকার পরিষদসহ বিভিন্ন প্রগতিশীল দল।’

এই আন্দোলনে প্রায় ২ হাজার মানুষ প্রাণ দিয়েছেন বলে জানান রাষ্ট্রদূত। সরকারি বাহিনী ও ছাত্রলীগের গুলিতে বহু তরুণের বুক রক্তে রঞ্জিত হয়েছে।

রাষ্ট্রদূতের মতে, এই বিজয় কোনো একক গোষ্ঠীর নয়, এটি সার্বজনীন। ‘মায়েরা রাস্তায় নেমে ছেলেদের খাইয়ে দিয়েছেন, বাবারা ছেলের সঙ্গে মিছিলে গেছেন—এই সম্মিলিত চেষ্টার ফলেই বিজয় এসেছে,’ বলেন তিনি।

রাষ্ট্রদূত মুশফিক বলেন, ‘শেখ হাসিনা এবং তার বাহিনীর গুলির নির্দেশ ও দমন-পীড়নের জন্য বিচার চাই। বিবিসি, আল-জাজিরা ও দেশের গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যই প্রমাণ করে, শেখ হাসিনা সরাসরি গুলির নির্দেশ দিয়েছেন। এমন নৃশংসতা মানব সভ্যতার জন্য কলঙ্ক।’

রাষ্ট্রদূত আহ্বান জানান, ‘গণতন্ত্র মানেই মতবিনিময়, মতানৈক্য থাকবেই, কিন্তু তা যেন বিভেদ ও বিদ্বেষে পরিণত না হয়। আমাদের ঐক্য অক্ষুণ্ন রাখতে হবে, কারণ ষড়যন্ত্র এখনো চলছে।’

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে নতুন সরকারের চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরে মুশফিক বলেন, ‘আমলাতন্ত্রে রিফর্ম দরকার। যারা ১৫ বছর ধরে শেখ হাসিনার স্তাবকতা করেছে, গান, কবিতা, মূর্তি তৈরি করেছে, তাদের নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে সরিয়ে দিতে হবে।’

অনুষ্ঠানের শুরুতে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন ও মোনাজাত করা হয়। এরপর একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি এবং চিত্র প্রদর্শন করা হয়। পরিবেশিত হয় দেশাত্মবোধক গান। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন দূতাবাসের হেড অব চ্যান্সেরি আব্দুল্লাহ আল ফরহাদ। মেক্সিকোতে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিরাও এতে উপস্থিত ছিলেন।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত