আমার দেশ জনপ্রিয় বাংলা নিউজ পেপার

যত্রতত্র নির্বাচনের প্রচারসামগ্রী

রাজধানীতে কাল থেকে অপসারণ অভিযানে নামবে ইসি

গাজী শাহনেওয়াজ
রাজধানীতে কাল থেকে অপসারণ অভিযানে নামবে ইসি
ফাইল ছবি

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছেন। এরপর থেকে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিজ উদ্যোগে নির্বাচনের প্রচারসামগ্রী অপসারণে রাতেই পরিপত্র জারি করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কিন্তু এসব অবৈধ পোস্টার-বিলবোর্ডসহ প্রচারসামগ্রী সরাতে নির্বাচন কমিশন কিংবা সম্ভাব্য প্রার্থী কাউকে উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি।

গতকাল শুক্রবার রাজধানীর মিরপুর, শেওড়াপাড়া, কাজিপাড়া ও ফার্মগেট-কারওয়ান বাজার এলাকায় সরেজমিন ঘুরে কোথাও প্রচারসামগ্রী সরাতে দেখা যায়নি। বরং রাজধানীর অলিগলিসহ শহরজুড়েই আগের মতো শোভা পেতে দেখা গেছে রঙিন পোস্টার ও ব্যানার-ফেস্টুন।

বিজ্ঞাপন

এদিকে, ইসির ঘোষিত সময় শেষ হবে আজ শনিবার সন্ধ্যায়। এরপর কারো প্রচারসামগ্রী নির্বাচনি এলাকায় দেখা গেলে তার বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যাবে ইসি। সূত্র জানিয়েছে, রোববার থেকে এসব আগাম প্রচার সরাতে মাঠে নামবেন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তারা (আরও)। এতে সহায়তা করবেন নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা। নেওয়া হতে পারে সিটি করপোরেশনের সহযোগিতাও।

ঢাকা-১৩ ও ১৫ আসনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ইউনূস আলী আমার দেশকে জানান, তিনি নির্বাচনি এলাকার অবৈধ প্রচারসামগ্রী অপসারণে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও ঢাকার বিভাগীয় কমিশনারের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ইসির পরিপত্র অনুয়ায়ী শনিবার সন্ধ্যায় ৪৮ ঘণ্টা সময় শেষ হবে। রোববার থেকে ভ্রাম্যমাণ মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে নির্বাচনের আচরণবিধি প্রতিপালনে কাজ শুরু হবে। একই সঙ্গে অবৈধ প্রচারসামগ্রী অপসারণে অভিযান শুরু করা হবে।

এদিকে, গতকাল দুপুরে রাজধানীর বিজয়নগর বক্স কালভার্ট এলাকায় ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী শরীফ ওসমান হাদি গুলিবিদ্ধ হন। ইসি থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, তফসিলের পর নির্বাচনের সম্ভাব্য কোনো প্রার্থীর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী হামলা এই প্রথম। এ বিষয়ে কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। একে কেন্দ্র করে পুরো নির্বাচনের পরিবেশকে বিবেচনা করা যাবে না। অপরাধী খুঁজে বের করার দায়িত্বও সরকারের বলে তাদের পক্ষ থেকে জানানো হয়। তবে তফসিলের শুরুতে সম্ভাব্য প্রার্থীর ওপর সন্ত্রাসী হামলা সুষ্ঠু নির্বাচনের অন্তরায় বলে জানিয়েছেন নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা।

ইসিতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তফসিল ঘোষণার পর প্রথম কর্মদিবস ছিল গতকাল শুক্রবার। নির্বাচন উপলক্ষে আগে থেকেই কর্মকর্তাদের সাপ্তাহিক ছুটি বাতিল করে ইসি। তারপরও এদিন খুব বেশি কর্মকর্তার তৎপরতা লক্ষ করা যায়নি। এদিন সিইসি ও অপর চার নির্বাচন কমিশনার অফিস করেননি। তবে সিনিয়র সচিব কিছু সময়ের জন্য ইসিতে এসেছিলেন বলে জানা গেছে। নির্বাচন ব্যবস্থাপনা-২, জনসংযোগ শাখা ও নির্বাচন ব্যবস্থাপনা-১ শাখার কয়েকজন কর্মকর্তা অফিস করেন।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, তফসিল-পরবর্তী নির্বাচনি কার্যক্রম সুচারুভাবে তদারক করার জন্য আজ শনিবার থেকে পুরোদমে চলবে ইসি কর্মকর্তাদের অফিস। বিকাল ৫টার পরও দায়িত্ব পালন করতে হবে। ভোট শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন সকালে সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদের সভাপতিত্বে ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হবে। সভা থেকে দৈনিক কার কী দায়িত্ব, সে নির্দেশনা দেওয়া হবে।

এদিকে, নির্বাচন উপলক্ষে বেশ কয়েকটি পরিপত্র জারি করেছে নির্বাচন কমিশন। এসব পরিপত্রে নির্বাচনি সময়সূচি জারি, সময়সূচির প্রজ্ঞাপন ও গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ, প্রার্থীর যোগ্যতা-অযোগ্যতা নির্ধারণ, নির্বাচনি ব্যয়, ভোটার তালিকার ব্যবহার ইত্যাদি বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

পরিপত্রে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী আসন্ন নির্বাচনে একজন প্রার্থীর যোগ্যতা ও অযোগ্যতা কীভাবে নিরূপণ করা হবে, সে বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, একজন প্রার্থী আদালত কর্তৃক ফেরারি বা পলাতক আসামি হিসেবে ঘোষিত হয়ে থাকলে বা তিনি প্রজাতন্ত্র বা কোনো সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষের কাজে কোনো লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত থাকলে নির্বাচনে প্রার্থী হতে অযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হবেন। আদালত কর্তৃক অপ্রকৃতিস্থ ঘোষিত কিংবা দেউলিয়া ঘোষিত হওয়ার পর দায় থেকে অব্যাহতি লাভ না করলে এবং বিদেশি রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব নেওয়া ব্যক্তিরা প্রার্থী হতে পারবেন না।

এতে বলা হয়েছে, কেউ কোম্পানির পরিচালক বা ফার্মের অংশীদার হলে, কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে গৃহীত কোনো ঋণ বা তার কোনো কিস্তি মনোনয়নপত্র দাখিলের দিনের আগে পরিশোধে ব্যর্থ হলে নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না। রাষ্ট্রীয় লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত কোনো ব্যক্তি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না। আসন্ন নির্বাচনে কোনো ব্যক্তি একই সময়ে তিনটির অধিক নির্বাচনি এলাকায় প্রার্থী হতে পারবেন না।

এতে আরো বলা হয়েছে, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২-এর ১৩(ক) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি একই সময়ে তিনটির বেশি নির্বাচনি এলাকায় প্রার্থী হলে তার সবগুলো মনোনয়নপত্র বাতিল বলে গণ্য হবে। এছাড়া প্রত্যেক মনোনয়নপত্রের সঙ্গে প্রার্থীর স্বাক্ষরিত একটি হলফনামার পাশাপাশি সর্বশেষ আয়কর রিটার্নের কপি সংযুক্ত করে দাখিল করতে হবে।

প্রার্থীদের নির্বাচনি ব্যয় ব্যবস্থাপনা সম্পর্কেও পরিপত্রে বিস্তারিত নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, প্রত্যেক নির্বাচনি এজেন্টকে (বা এজেন্ট না থাকলে প্রার্থীকে নিজে) তফসিলি ব্যাংকে একটি পৃথক অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। ব্যক্তিগত ব্যয় ব্যতীত নির্বাচনসংক্রান্ত সব ব্যয় ওই অ্যাকাউন্ট থেকেই পরিশোধ করতে হবে।

আরেকটি পরিপত্রে বলা হয়েছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বর্তমানে প্রণীত ছবিসহ ভোটার তালিকাই ব্যবহার করতে হবে। নির্বাচনের দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তা ও ভোটগ্রহণ কর্মকর্তারা ছবিসহ ভোটার তালিকা ব্যবহার করবেন। তবে প্রার্থী, নির্বাচনি এজেন্ট বা পোলিং এজেন্টরা ছবি ছাড়া ভোটার তালিকার সিডি সংগ্রহ করে মুদ্রণ করে ব্যবহার করবেন। সিডি সংগ্রহসহ এ-সংক্রান্ত বিভিন্ন নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে পরিপত্রে।

ভোটগ্রহণকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আইটি সাপোর্টেড পোস্টাল ব্যালট ব্যবস্থার মাধ্যমে ভোট দিতে পারবেন বলে পরিপত্রে জানানো হয়েছে। তফসিল ঘোষণার দিন থেকে ১৫ দিনের মধ্যে পোস্টাল ভোট বিডি অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধন সম্পন্ন করতে হবে। এছাড়া রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তফসিল ঘোষণার পরপরই ভোটগ্রহণকারী কর্মকর্তাদের প্যানেল চূড়ান্ত করে তাদের নিবন্ধন বিষয়ে দ্রুত অবহিত করতে হবে। রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ দিয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা আগেই জারি করেছে ইসি।

পরিপত্রে জানানো হয়, সংশ্লিষ্ট নির্বাচনি এলাকার দর্শনীয় স্থানে গণবিজ্ঞপ্তি টাঙানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রিটার্নিং অফিসারের গণবিজ্ঞপ্তির একটি নমুনা পরিপত্রের সঙ্গে পাঠানো হয়েছে।

Google News Icon

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন