আছাদুজ্জামানের সঙ্গে ব্যবসা, ফেঁসে যাচ্ছেন ঝিনাইদহ বিএনপি নেতা

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ : ১১ অক্টোবর ২০২৫, ১৩: ৪৫

ফ্যাসিবাদের দোসর আওয়ামী পুলিশ কর্মকর্তা সাবেক ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার বিপুল সম্পদের অনুসন্ধান শেষ পর্যায়ে। দুর্নীতি দমন সংস্থা দুদক তাদের তদন্তের প্রতিবেদন শিগগিরই দাখিল করে মামলা রুজু করতে যাচ্ছে। দুদক সূত্রে জানা গেছে, এই পুলিশ কর্মকর্তার পরিবার ও তাদের পাঁচ আত্মীয়ের ২০০ কোটি টাকারও বেশি সম্পদ অর্জনের অভিযোগের আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু হয়েছে। উত্তরা থানা ও খিলগাঁও থানার দুটি পৃথক হত্যা মামলায় আছাদুজ্জামান মিয়া বর্তমানে জেলে রয়েছেন।

দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন আমার দেশকে জানান, সাবেক ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামানের অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধান কার্যক্রম শেষের পথে।

বিজ্ঞাপন

পতিত শেখ হাসিনার শাসনামলে ডিএমপি কমিশনার হিসেবে সবচেয়ে বেশি সময় দায়িত্ব পালন করেন আছাদুজ্জামান মিয়া। বিরোধীদলের আন্দোলন দমনে তিনি লাঠিয়াল হিসেবে কাজ করেন। ২০১৯ সালে অবসরে গেলেও তাকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বিশেষ দায়িত্বে (জাতীয় নিরাপত্তা সেলে) পদায়ন করা হয়। অবসরে যাওয়ার পর সার্ভিস বেনিফিট হিসেবে তিনি পৌনে দুই কোটি টাকা পেলেও তদন্তে ২০০ কোটি টাকারও বেশি অবৈধ সম্পদের খোজ পাওয়া যায়। তার নামে ঢাকা মহানগর, নারায়ণগঞ্জ, সাভার, গাজীপুর ও ফরিদপুরে ফ্ল্যাট, প্লট ও জমিসহ বিপুল অবৈধ সম্পদ পাওয়া গেছে। তিনি উত্তরা, পূর্বাচল, নিকুঞ্জ এলাকায় জমি এবং অ্যাপার্টমেন্ট ব্যবসার সঙ্গেও জড়িত।

এদিকে আওয়ামী দোসর এই পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে ব্যবসা করতে গিয়ে ফেসে যাচ্ছেন ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল মজিদ। পূর্বাচল নতুন শহরের ১৪ নম্বর সেক্টরের ২০২ নম্বর রাস্তার ২৭ নম্বর প্লটটিসহ উত্তরার কয়েকটি প্রাইভেট বার-এ আছাদুজ্জামান মিয়া ও আবদুল মজিদের যৌথ বিনিয়োগ রয়েছে। এছাড়া শ্যামলী এবং খিলক্ষেত এলাকায় তাদের যৌথ নামে একাধিক রেডি ও নির্মিতব্য ফ্ল্যাট রয়েছে। বর্তমানে তাদের এই ব্যবসার দেখাশোনা ও লেনদেনের সঙ্গে আবদুল মজিদের শ্যালক মাহমুদ হাসান সম্পৃক্ত রয়েছেন। তিনি সাবেক ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া ও আবদুল মজিদের অবৈধ অর্থ দুবাই, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে হুন্ডির মাধ্যমে পাচার করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। দুদকসহ বিভিন্ন সংস্থা এই অভিযোগ খতিয়ে দেখছে। ব্যবসায়িক কাজে আবদুল মজিদ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে নিয়মিত যাতায়াত করতেন। শেখ হাসিনার আশ্রয়ন-২ প্রকল্পেও তাদের ব্যবসায়িক সম্পৃক্ততা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্তের ব্যাপারে দুদক সূত্র জানিয়েছে, আছাদুজ্জামান তার স্ত্রী সন্তান এবং সংশ্লিষ্ট বিজনেস পার্টনারদের তথ্য চেয়ে বিভিন্ন দপ্তর ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে চিঠি দেয়া হয়েছে। তাদের ট্যাক্স ফাইল, রাজউকে জমি ও প্লটের দলিল এবং অন্যান্য দাপ্তরিক নথি তলব করা হয়েছে। সম্প্রতি আছাদুজ্জামান মিয়ার আয়কর নথি, জমির দলিল এবং দুটি পরিবহন কোম্পানি, একটি আইটি ফার্ম ও একটি স্বর্ণের দোকানের নথি পর্যালোচনা করে তাদের ৫০ কোটি টাকার সম্পদের হদিস পাওয়া গেছে। আয়কর ফাইলে আছাদুজ্জামান মিয়া তথ্য গোপন করেছেন বলে তদন্তে উঠে এসেছে।

তদন্ত সম্পর্কে দুদকের একটি সূত্র জানায়, আছাদুজ্জামান, তার স্ত্রী আফরোজা জামান ও তিন সন্তান এবং সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী পার্টনারসহ আরো ৫ জনের স্থাবর-অস্থাবর তথ্য চাওয়া হয়েছে। আয়কর ফাইলে তাদের ঘোষিত সম্পদের পরিমাণ ২৩ কোটি টাকা। এই পরিবার আয়কর ফাইলে তাদের সম্পদের বেশির ভাগ তথ্য গোপন করেছেন। সম্পত্তির প্রকৃত মূল্যের চেয়ে অনেক কম মূল্যে দেখানো হয়েছে। আছাদুজ্জামানের স্ত্রী আফরোজা একজন গৃহিনী। কিন্তু ২০২৩-২৪ করবর্ষে তিনি ৮ কোটি ২৪ লাখ টাকার সম্পত্তির মালিক বলে ঘোষণা দেন। তবে তার নামে সম্পত্তির পরিমাণ এর কয়েকগুণ বেশি। আছাদুজ্জামানের ট্রান্সপোর্ট ব্যবসাও তার নামে। আফরোজা মৌমিতা ট্রান্সপোর্টের তিনি চেয়ারম্যান। এই কোম্পানিতে ৪ হাজার (৪০ শতাংশ) শেয়ার রয়েছে। সেখানে ২৫ শতাংশ শেয়ারই তার। কিন্তু এই শেয়ারও ট্যাক্স ফাইলে উল্লেখ করা হয়নি।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিষয়:

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত