সচিবালয়ে আগুন

অপরিকল্পিত সৌন্দর্যবর্ধনকে দায়ী করছেন প্রকৌশলীরা

বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১৪: ১৪

বিভিন্ন সময়ে অপরিকল্পিত সৌন্দর্যবর্ধন, ফলস সিলিং লাগানো, বৈদ্যুতিক লাইন যাচাই-বাছাই না করে এয়ারকন্ডিশন লাগানোকে আগুনের জন্য দায়ী করছেন গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রকৌশলীরা। তাদের মতে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের পছন্দমাফিক সৌন্দর্যবর্ধন করতে গিয়ে সঠিকভাবে বিদ্যুতের লাইন লাগানো সম্ভব হচ্ছে না।

বিজ্ঞাপন

গতকাল বৃহস্পতিবার সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে সংস্কার কাজ পরিদর্শন শেষে আমার দেশকে এ কথা জানিয়েছেন গণপূর্ত অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা। তিনি বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের এ ভবনে সংস্কার কাজ করতে বলা হয়েছে।

সচিবালয়ের আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ৭ নম্বর ভবনে গতকাল থেকে দাপ্তরিক কাজ শুরু করেছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যদের কাছে রেজিস্ট্রারে নাম তালিকাভুক্ত করে তারা ভবনের বিভিন্ন কক্ষে প্রবেশ করেন। ক্ষতিগ্রস্ত কক্ষগুলোতে গণপূর্ত অধিদপ্তরের তদারকিতে চলছে সংস্কার কাজও। নতুন করে বৈদ্যুতিক সংযোগও দেওয়া হয়েছে ভবনটিতে।

গতকাল সচিবালয়ে ৭ নম্বর ভবনের সামনে গিয়ে দেখা যায়, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা লাইন ধরে রেজিস্ট্রারে নাম তালিকাভুক্ত করে ভবনটিতে প্রবেশ করছেন। বেলা ১২টা পর্যন্ত ১৫২ জন ভবনটিতে প্রবেশ করেছেন।

গত ২৫ ডিসেম্বর দিবাগত গভীর রাতে সচিবালয়ের এ ভবনটিতে আগুন লাগে। ‘রহস্যজনক’ এ আগুনে ভবনে থাকা ৫টি মন্ত্রণালয়ের নথি পুড়ে যায়। সরকার গঠিত উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি তিনদিন পর প্রাথমিক প্রতিবেদন পেশ করে। এতে বৈদ্যুতিক স্পার্ক থেকে আগুনের সূত্রপাত বলে জানায় তদন্ত কমিটি।

ওই ভবনে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা আমার দেশকে জানান, আমরা কয়েকদিন নগর ভবনে অফিস করেছি। এখন থেকে এ ভবনে অফিস করব।

৭ নম্বর ভবনে দাপ্তরিক কাজ শুরুর বিষয়ে সচিবালয়ের ইডেন ভবনের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রকৌশলী আবদুল মান্নান ভূঁইয়া আমার দেশকে জানান, তদন্ত কমিটির প্রাথমিক প্রতিবেদন পেশ করার পর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ভবনটিতে সংস্কার কাজ শুরু করার অনুমতি দেন।

তিনি বলেন, আমরা ভবনটির প্রতিটি কক্ষ পরিদর্শন করেছি। যেসব কক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি সেগুলোতে দাপ্তরিক কাজ শুরু করার জন্য বলা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কক্ষগুলো সংস্কারের আওতায় এনেছি। আশা করছি কিছুদিনের মধ্যে পুরো ভবনটি ব্যবহারের উপযোগী করা যাবে।

অপরিকল্পিত সৌন্দর্যবর্ধনের বিষয়ে ইডেন ভবনের অপর একজন প্রকৌশলী আমার দেশকে জানান, ৭ নম্বর ভবনটিসহ সচিবালয়ের অধিকাংশ ভবন বেশ পুরনো। কয়েক বছর ধরে এসব ভবনে অপরিকল্পিত উন্নয়ন কাজ হয়েছে। সৌন্দর্যবর্ধনের নামে এসব কাজ করায় প্রতিটি ভবনই অত্যন্ত ঝুঁকিতে রয়েছে। যেসব কক্ষে এয়ারকন্ডিশনের অনুমোদন নেই, সেগুলোতেও বিকল্প তার ব্যবহার করে তা লাগানো হয়েছে। এছাড়াও অধিকাংশ করিডোরগুলো ফলস সিলিং দিয়ে মুড়ে দেওয়া হয়েছে।

নাশকতার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ওই প্রকৌশলী জানান, সচিবালয়ে আগুনের ঘটনা এটিই প্রথম নয়। এর আগে বিদ্যুতের শর্টসার্কিট থেকে আগুন লাগার বেশ কয়েকটি ঘটনা আমাদের রেকর্ডে আছে। তবে এবারের আগুনের ঘটনা একটু বড় আকারের। বিশেষজ্ঞরা তদন্ত করছে। প্রাথমিক প্রতিবেদন ইতোমধ্যেই দেওয়া হয়েছে। আলামত নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও তদন্ত এখনও চলছে। চূড়ান্ত প্রতিবেদন এলে প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসবে বলেও জানান ওই প্রকৌশলী।

সম্পাদনা : আহমদ মতিউর রহমান

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত