নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে সংলাপে বিএনপি কমিশনের নিজস্ব কর্মকর্তাদের রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ এবং সুষ্ঠু ভোট আয়োজনের ক্ষেত্রে ‘দৃঢ় অবস্থান’ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। অন্যদিকে তফসিল ঘোষণার পর লটারির মাধ্যমে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও ওসিদের বদলির আহ্বান জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। এছাড়া নির্বাচনি পোস্টারে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ছবি ব্যবহারের বিরুদ্ধে মত দিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপে বুধবার ইসির কাছে এসব প্রস্তাব দেয় দলগুলো।
সংলাপে উঠে আসা এসব বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে সবাইকে আশস্ত করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন বলেন, সব দলের মতোই ইসিও একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও সুন্দর নির্বাচন উপহার দিতে ওয়াদাবদ্ধ। তিনি জানান, গণভোট ইস্যুতে সরকারের আইন প্রণয়নের অপেক্ষায় রয়েছে কমিশন।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, বিএনপি ও এনসিপিসহ ১২টি রাজনৈতিক দল বুধবার (সকাল-বিকাল) ইসির সংলাপে অংশ নেয়। পৃথক সংলাপে অংশ নিয়ে দলগুলোর নেতাদের পক্ষ থেকে কমিশনকে এসব সুপারিশ ও পরামর্শ দেওয়া হয়। এ সময় সিইসি, তিন নির্বাচন কমিশনার এবং ইসির জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপির পরামর্শ : sনিজস্ব কর্মকর্তাকে রিটার্নিং কর্মকর্তা করতে হবে
গতকাল বিকালে সংলাপে অংশ নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, রাজনৈতিক দলের প্রার্থীদের একটাই করণীয়, নিয়মনীতি মেনে নির্বাচন করা। আচরণবিধির প্রতিপালন করতেই হবে। এ নিয়ে দ্বিমত নেই। তবে তফসিলের ব্যাপারে কমিশনের তেমন দৃঢ়তা দেখা যাচ্ছে না।
নিয়মনীতি প্রণয়ন প্রসঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করে মঈন খান বলেন, যতই অঙ্গীকারনামা নেওয়া হোক, নিজেদের সংশোধন না করলে তা কোনো কাজে আসবে না। বর্তমান যুগে বাকস্বাধীনতার নতুন ক্ষেত্র হিসেবে এআই (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) এবং অপতথ্যের উত্থান নিয়েও তিনি কথা বলেন।
দেশ ‘ক্রান্তিকাল’ অতিক্রম করছে উল্লেখ করে মঈন খান বলেন, ইসির বিদ্যমান লোকবলের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে ইসির নিজস্ব লোকবল থেকে রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব কর্মকর্তা হলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আসবে।
জামায়াতের দাবি : লটারিতে ডিসি-এসপি বদলি
এর আগে সকালে ইসির সংলাপে অংশ নেয় জামায়াতে ইসলামীসহ ছয়টি দল। এ সময় জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার সাম্প্রতিক সময়ে প্রশাসনের কয়েকটি পদে ঘন ঘন রদবদলের বিষয়টি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, মনে হয় এটার পেছনে কোনো একটি ডিজাইন, একটি উদ্দেশ্য আছে। (ভোটের আগে) লটারির মাধ্যমে ডিসি-এসপি বদলি করা উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সংলাপে তিনি জুলাই সনদ, গণভোট, প্রবাসীদের ভোট, লাউডস্পিকারের সীমা নির্ধারণ ইত্যাদি বিষয় নিয়েও কথা বলেন। তিনি আরো বলেন, সন্ত্রাসী, ভোট ডাকাত, যারা বাধা সৃষ্টি করে, নাশকতা করে- তাদের একটু চাপে রাখতে গেলে, ভোটারদের সাহসী করতে গেলে সেনাবাহিনী দরকার। একজন সেনাসদস্য একটি ভোটকেন্দ্রে দিলে এটা পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে খুব বেশি গুরুত্ব পায় না। সংখ্যাটা বাড়িয়ে অন্তত পাঁচজন সেনাসদস্য দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
এনসিপির আপত্তি : দলীয় প্রধান ছাড়া কারো ছবি নয়
সংলাপে অংশ নিয়ে এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব জহিরুল ইসলাম মূসা বলেন, দলীয় প্রধানের ছবি ছাড়া অন্য কারো ছবি না রাখতে পারার বিধান রাখায় স্বাগত জানাই। বিএনপির ক্ষেত্রে দলীয় প্রধান খালেদা জিয়া ছাড়া অন্য কারো ছবি ব্যবহার হলে ব্যবস্থা নিতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। এ সময় দলের মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, নির্বাচনি জোট করলেও যাতে নিজ দলের প্রতীকেই ভোট করতে পারে- এ সিদ্ধান্তে অটল থাকার অনুরোধ জানাব নির্বাচন কমিশনকে। এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপব্যবহার রোধে মেটা ও টিকটকের সঙ্গে সমন্বয়ের পরামর্শ দেন।
সিইসি: আচরণবিধি মেনে চলাই সুষ্ঠু নির্বাচনের শর্ত
সিইসি নাসির উদ্দিন জোর দিয়ে বলেন, নির্বাচনি আচরণবিধি প্রতিপালন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কমিশনের প্রত্যাশা, সব রাজনৈতিক দল নির্বাচনি আচরণবিধি পরিপালনে তাদের প্রতিশ্রুতি বজায় রাখবে। শান্তিপূর্ণ ভোটের জন্য আইনের শাসন প্রতিষ্ঠাকে অপরিহার্য বলেও মন্তব্য করেন তিনি, যার প্রধান শর্ত আচরণবিধি মেনে চলা।

