নতুন প্রশাসক নিয়োগ

অবশেষে ফ্যাসিবাদমুক্ত হলো মুদ্রণ শিল্প সমিতি

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ : ১৩ জুলাই ২০২৫, ১৯: ৫৪
আপডেট : ১৩ জুলাই ২০২৫, ২০: ৩৪

সদস্যদের দীর্ঘদিনের চাওয়া ও নানা আইনি তৎপরতার পর অবশেষে বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতিতে প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছে সরকার। রোববার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব সন্দ্বীপ কুমার সরকারকে এই প্রশাসক নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

এরমধ্য দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে পতিত আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসরদের সিন্ডিকেট ও নিয়ন্ত্রণমুক্ত হলো দেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রকাশনার কাজে নিয়োজিত প্রেস মালিকদের এই সংগঠনটি। নতুন প্রশাসক তার নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিগত দিনের অনিয়ম-দুর্নীতির তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান করবেন বলে তারা প্রত্যাশা করছেন দীর্ঘদিনের বঞ্চিত সদস্যরা।

বিজ্ঞাপন

রোববার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের (বাণিজ্য সংগঠন-২ শাখা) বাণিজ্য সংগঠন অনুবিভাগের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মুহাম্মদ রেহান উদ্দিন স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে মুদ্রণ শিল্প সমিতিতে প্রশাসক নিয়োগের কথা জানানো হয়।

এতে বলা হয়, যেহেতু, বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের লাইসেন্সপ্রাপ্ত একটি নিবন্ধিত বাণিজ্য সংগঠন; যেহেতু বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতি এর কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার স্বার্থে কার্যনির্বাহী কমিটি বিলুপ্ত করে প্রশাসক নিয়োগের আবেদন পাওয়া গেছে; যেহেতু বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতি এর বর্তমান কমিটি কারণ দর্শানোর যথাযথ জবাব উপস্থাপন করতে পারেনি; যেহেতু বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতির বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটি বিভিন্ন অনিয়মের সাথে জড়িত; সেহেতু, বাণিজ্য সংগঠন আইন, ২০২২ এর ১৭ ধারা মোতাবেক সংগঠনটির পরিচালনা পর্ষদ বাতিলপূর্বক সরকারের অনুমোদনক্রমে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব সন্দ্বীপ কুমার সরকারকে বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতির প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ করা হলো। তিনি ১২০ দিনের মধ্যে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্পন্ন করত: নির্বাচিত কমিটির নিকট দায়িত্ব হস্তান্তর করে এ মন্ত্রণালয়কে অবহিত করবেন।

সূত্রমতে, গত আগস্ট বিপ্লবের মধ্য দিয়ে দেশে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের পতন হলেও এতদিন ধরে মুদ্রণশিল্প সমিতির নিয়ন্ত্রণে ছিলেন আওয়ামীপন্থিরা। সর্বশেষ বিতর্কিত নির্বাচনে সভাপতি হওয়া পতিত আওয়ামী সরকারের সাবেক মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের ছোট ভাই, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান রাব্বানী জব্বার সহ অন্য গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতেও ছিলেন আওয়ামীপন্থিরা।

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সময়েও এসব ফ্যাসিবাদী দোসর চলতি বছরের বিনামূল্যের পাঠ্যবই মুদ্রণে বিলম্বের মাধ্যমে সরকারকে বিপাকে ফেলাসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতি চালিয়ে যাচ্ছিলেন। আগামী বছরের পাঠ্যবই ছাপার কাজ নিয়ন্ত্রণের জন্যও সক্রিয় আছে। তাদের সিন্ডিকেট। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহলে চরম অস্থিরতা বিরাজ করছিল।

এদিকে নানা অস্থিরতার মধ্যে গত ফেব্রয়ারিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর একটি আবেদন করেন সমিতির সদস্য ও রিমিনি ইন্টারন্যাশনালের সত্ত্বাধিকারী মোহাম্মদ আলী। সমিতির বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটি বিলুপ্ত করে প্রশাসক নিয়োগ চেয়ে ওই আবেদনে তিনি বলেন, বিগত সরকারের আমলে জাতীয় নির্বাচন থেকে শুরু করে বিভিন্ন সংঘ-সমিতিসহ দেশের প্রতিটি নির্বাচন সরাসরি সরকার বা সরকারি এজেন্ট দ্বারা প্রভাবিত ও নিয়ন্ত্রিত ছিল।

নির্বাচনের নামে তামাশা করে প্রভাব খাটিয়ে গায়ের জোরে নিজেদের পছন্দের লোকদের জিতিয়ে এনে দেশের সংঘ-সমিতিগুলো নিজেদের কুক্ষিগত করেছিল। বাংলাদেশ মুদ্রণশিল্প সমিতিও এদের কালো থাবা থেকে রেহাই পায়নি। বিগত ২০২৩-২০২৫ কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচন ১৭ নভেম্বর-২০২৩ সালে অনুষ্ঠিত হয়।

পতিত ফ্যাসিবাদী সরকারের প্রশাসনকে অবৈধভাবে ব্যবহার করে গুন্ডাবাহিনী নিয়ে ভোট কেন্দ্র ও এর আশেপাশে অবস্থান নিয়ে ভোটারদেরকে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শনপূর্বক নির্বাচনের ফলাফল অন্যায়ভাবে তাদের অনুকূলে পুরোপুরি নিশ্চিত করে।

তিনি বলেন, সমিতির বর্তমান অযোগ্য নেতৃত্বের ব্যর্থতার কারণে ১৪ ডিসেম্বর ২০২৩ সালে বর্তমান কমিটি ক্ষমতা গ্রহণ করার পর এক বছরের মধ্যে বার্ষিক সাধারণ সভা করতে ব্যর্থ হন। তারা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে বার্ষিক সাধারণ সভা বিলম্ব মওকুফের জন্য আবেদন করেন এবং বহু দেনদরবার করে বিলম্ব মওকুফের চেষ্টা করেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নিয়মনীতির প্রতি অবহেলা ও অবজ্ঞার কারণে তাদের আবেদনটি নাকচ করে দিয়েছেন।

বিগত সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় বর্তমান এই কমিটি নিয়মনীতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলনা বলেই নিজেদের অযোগ্যতা ঢাকতে মাহামান্য হাইকোর্ট ডিভিশনে বার্ষিক সাধারণ সভা বিলম্ব মওকুফের আবেদন করেন। এমনই পরিস্থিতিতে গত ৫ মার্চ সমিতির সভাপতিকে শোকজ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সমিতির ফ্যাসিবাদি নেতারা নিজেদের রক্ষা করতে ওই শোকজের জবাবের পাশাপাশি হাইকোর্টে রিট করেন। এর বিরুদ্ধে রিট পিটিশন করেন মোহাম্মদ আলী। এক পর্যায়ে তারা এজিএম করার বিষয়ে পক্ষে রায় পান। এমনই পরিস্থিতিতে প্রশাসক নিয়োগের খবরে সমিতির বঞ্চিত সদস্যদের মাঝে উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে।

নবনিযুক্ত প্রশাসককে অভিনন্দন জানিয়ে তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়ায় মোহাম্মদ আলী আমার দেশকে বলেন, মুদ্রণ শিল্প সমিতিতে দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষিত প্রশাসক নিয়োগ কার্যকর হয়েছে-যা আমাদের সকলের একান্ত চেষ্টার ফসল। এর মাধ্যমে সমিতি মাফিয়া ও সিন্ডিকেটের করাল গ্রাস থেকে মুক্তি পেয়েছে।এখন সময় এসেছে ঐক্যবদ্ধভাবে মুদ্রণ শিল্প সমিতিকে একটি স্বচ্ছ, আধুনিক ও গতিশীল সংগঠন হিসেবে নতুনভাবে গড়ে তোলার।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা সমিতির নেতাদের সব অনিয়ম-দুর্নীতির বিচার চাই। নতুন প্রশাসক দায়িত্বগ্রহণের পর সব অনিয়মের তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবেন এবং একটি সুন্দর নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন বলেও আমরা প্রত্যাশা করি।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত