গুম–খুনের বিচার নিশ্চিতের দাবি
আমার দেশ অনলাইন
ছাত্রজনতার আন্দোলনের মুখে গত বছরের পাঁচ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা। এর মাধ্যমে ১৫ বছরের বেশি ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতার মসনদ হারায়।
এদিকে চলতি বছরের ১০মে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও তার নেতাদের বিচার কার্যসম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দলটির যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে অন্তর্বর্তী সরকার। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের সংশোধনী প্রস্তাবও অনুমোদন দেয়। যাতে ট্রাইব্যুনাল কোনো রাজনৈতিক দল, তার অঙ্গসংগঠন বা সমর্থক গোষ্ঠীকে শাস্তি দিতে পারে।
অন্যদিকে বাংলাদেশে মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে সংস্কারপ্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি নতুন করে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা রোধে একগুচ্ছ ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে চিঠি দিয়েছে ছয়টি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা।
রোববার যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ) ওয়েবসাইটে ওই চিঠি প্রকাশ করা হয়েছে।
ড. ইউনূসের উদ্দেশে চিঠিতে বলা হয়—আওয়ামী লীগের সদস্যদের বিরুদ্ধে দায়ের করা যেসব মামলা রয়েছে, যেগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে হয় এবং গ্রহণযোগ্য তথ্য–প্রমাণের ঘাটতি রয়েছে।
জাতিসংঘে রোহিঙ্গা বিষয়ে উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনে আপনি ড. (ইউনূস) উল্লেখ করেছিলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবাসনই এই সংকটের একমাত্র সমাধান এবং জরুরি প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে যারা নতুন এসেছে, তাদের দ্রুত প্রত্যাবাসনের সুযোগ দিতে হবে। রোহিঙ্গা শরণার্থীরা দীর্ঘ দিন ধরে মিয়ানমারে নিজেদের বাড়িতে ফিরে যাওয়ার চূড়ান্ত লক্ষ্যের ওপর গুরুত্ব দিয়ে আসছেন। তবে ২০২৩ সালের শেষ পর্যায় থেকে শুরু করে আসা দেড় লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীসহ সব রোহিঙ্গার জন্যই মিয়ানমারের কোনো অংশই এখন স্বেচ্ছায়, মর্যাদাপূর্ণ ও টেকসই প্রত্যাবাসনের জন্য নিরাপদ নয়।
বাংলাদেশে বসবাসকারী সবার অধিকার ও স্বাধীনতা রক্ষার জন্য আমরা আপনাকে দ্রুত নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি—
জুলাই অভ্যুত্থান চলাকালে এবং বিগত ১৫ বছরে সংঘটিত গুরুতর নিপীড়নের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহি নিশ্চিত করুন। এসব অপরাধের মধ্যে গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও নির্যাতনের ঘটনা রয়েছে। গুম ও নির্যাতনের জন্য মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় র্যাব ও ডিজিএফআইয়ের কর্মকর্তাসহ সেনাবাহিনীর বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গ্রহণ ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি)। সেনাবাহিনীর সদস্যদের বিষয়ে বেসামরিক আদালত আইসিটির এখতিয়ারের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনসহ জবাবদিহির এসব প্রচেষ্টায় সেনাবাহিনীর পূর্ণ সহায়তা দেওয়া উচিত। প্রাতিষ্ঠানিক বা রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতানির্বিশেষে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচারিক প্রক্রিয়া যেন আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বজায় রেখে সম্পন্ন করতে পারে, তা নিশ্চিত করার জন্য আইসিটিকে প্রয়োজনীয় আইনি কাঠামো, সম্পদ ও স্বাধীনতা দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। আইসিটির অধীন মামলাগুলোসহ সব ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ড প্রদান স্থগিত রাখার বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষণা দেওয়া উচিত।
অতীতের ধারা ভেঙে ফেলতে এবং মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) বিলুপ্ত করা এবং ডাইরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্সের (ডিজিএফআই) ক্ষমতা সীমিত করাসহ নিরাপত্তা খাত সংস্কার করুন। দায়মুক্তি নিয়ে র্যাবের গুরুতর অপরাধ সংঘটনের রেকর্ড প্রতিষ্ঠানটিকে সংস্কারের বাইরে নিয়ে গেছে এবং সামরিক বাহিনীর সব কর্মীকে বেসামরিক আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো থেকে সরিয়ে দেওয়া উচিত। গুম ও অন্যান্য গুরুতর নিপীড়নে ডিজিএফআইয়ের সম্পৃক্ততা এর ভূমিকা ও ক্ষমতা কেবল সামরিক গোয়েন্দা কাজে সীমিত করার প্রয়োজনীয়তাকে তুলে ধরে। একই সঙ্গে এর কার্যক্রম সীমাবদ্ধ এবং স্পষ্ট আইনগত ম্যান্ডেট থাকা আবশ্যক।
গুমকে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী অপরাধ হিসেবে স্বীকৃতি দিন এবং গুমবিষয়ক তদন্ত কমিশনকে তাদের ম্যান্ডেট সম্পূর্ণ করতে সহায়তা দিন। অন্তর্বর্তী সরকারকে খসড়া ‘এনফোর্সড ডিজঅ্যাপিয়ারেন্স প্রিভেনশন অ্যান্ড রেড্রেস অর্ডিন্যান্স’ গ্রহণ করতে হবে, তবে এর আগে নিশ্চিত করতে হবে যে এটি ‘ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন ফর দ্য প্রোটেকশন অব অল পারসনস ফ্রম এনফোর্সড ডিজঅ্যাপিয়ারেন্স’সহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়েছে এবং এ ধরনের অপরাধের জন্য মৃত্যুদণ্ড বাদ দেওয়া হয়েছে। গুমবিষয়ক তদন্ত কমিশন যেন তাদের ম্যান্ডেট সম্পূর্ণ করতে পারে, সে জন্য তাদের পর্যাপ্ত সময় ও সম্পদ পাওয়াটা অন্তর্বর্তী সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে এবং নিরাপত্তা বাহিনীকে তদন্তে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করতে হবে, যার মধ্যে আটক কেন্দ্রগুলোতে অবাধ প্রবেশের নিশ্চয়তা এবং সব প্রাসঙ্গিক নথি দেখার–লাভের সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।
প্যারিস নীতির আলোকে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে (এনএইচআরসি) সংস্কার করতে হবে, যাতে এর কার্যকারিতা নিশ্চিত হয় এবং এর কার্যক্রম, সদস্য নির্বাচন ও অর্থায়নে রাজনৈতিক প্রভাব থেকে স্বাধীনতা বজায় থাকে। এনএইচআরসির স্বাধীনভাবে নিরাপত্তা বাহিনী এবং অন্যান্য রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ওঠা নিপীড়নের অভিযোগ স্বাধীনভাবে তদন্ত করার ক্ষমতা থাকতে হবে এবং এর ম্যান্ডেটকে শুধু দেশীয় আইন অনুযায়ী অধিকারগুলোর মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ড অনুযায়ী পরিচালিত করতে হবে।
সাইবার নিরাপত্তা অধ্যাদেশ ২০২৫ এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও অন্যান্য মৌলিক অধিকার সীমিত করতে ব্যবহৃত নিপীড়নমূলক আইনসমূহ; যার মধ্যে সন্ত্রাসবিরোধী আইন, বিশেষ ক্ষমতা আইন, অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট এবং দণ্ডবিধির আওতায় ফৌজদারি মানহানি—এসব আইন আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী বাতিল বা সংশোধন করুন। অন্তর্বর্তী সরকার সাইবার নিরাপত্তা আইন, ২০২৩ বাতিল করলেও এর জায়গায় আনা সাইবার নিরাপত্তা অধ্যাদেশ ২০২৫ আন্তর্জাতিক মান পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে এবং এতে বিভিন্ন অস্পষ্ট ধারা রয়েছে, যেগুলো রাষ্ট্রের অতিরিক্ত হস্তক্ষেপের গুরুতর ঝুঁকি তৈরি করেছে।
ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা অধ্যাদেশ এবং জাতীয় উপাত্ত ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশের আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী সংশোধন করুন। কারণ, এগুলোতে রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের জন্য বিরাট ছাড় থাকবে। এসব খসড়া যেন প্রকৃতপক্ষে ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা নিশ্চিত করে এবং রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন ও অযাচিত নজরদারি রোধ করা যায়, সে জন্য এগুলোর সংশোধন করতে হবে। অধ্যাদেশগুলো যেন অধিকারভিত্তিক হয় এবং এতে বিশ্বের সেরা চর্চাগুলোর প্রতিফলন থাকে, তা নিশ্চিত করতে অংশীজনদের সঙ্গে অর্থবহ সংলাপ আবশ্যক।
সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করুন এবং সাংবাদিকদের নির্বিচার গ্রেপ্তার ও আটক থেকে রক্ষা করুন, তাদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা যা–ই মনে করা হোক না কেন। বিশেষ করে যেখানে অভিযোগের পক্ষে গ্রহণযোগ্য প্রমাণ নেই অথবা যখন গ্রেপ্তার বা আটকের ঘটনা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বা অন্যান্য অধিকার লঙ্ঘন করে। আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি সাংবাদিকদের রাষ্ট্রীয় বাহিনী ও সংস্থা এবং তার বাইরের অন্যদের হয়রানি ও সহিংসতা থেকে রক্ষা করার এবং কোনো হামলার ক্ষেত্রে দ্রুত, স্বাধীন তদন্ত পরিচালনা করার আহ্বান জানাচ্ছি। পাশাপাশি সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা বিষয়ে আন্তর্জাতিক আইনের সামঞ্জস্যপূর্ণ যেসব সুপারিশ গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন করেছে, সেগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে।
নির্বিচার গ্রেপ্তার ও আটক রোধ করুন এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বা অন্যান্য মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করে এমন সব মামলা প্রত্যাহার বা খারিজ করার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার ব্যবস্থা করুন। অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা–নির্বিশেষে ২০২৪ সালের আগস্টের আগে ও পরে দায়ের করা ওই ধরনের সব মামলা পর্যালোচনা ও খারিজ করা। এসব মামলার মধ্যে আওয়ামী লীগের সদস্য ও সমর্থক যাঁরা অপরাধের সঙ্গে যুক্ত থাকার গ্রহণযোগ্য প্রমাণ ছাড়া দোষী অভিযুক্ত বা আটক রয়েছেন, তাদেরও অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় আওয়ামী লীগের কার্যক্রমের ওপর বিস্তৃত পরিসরে বিদ্যমান নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করুন। এ আইনের আওতায় সভা, সমাবেশ ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে অতিমাত্রায় সীমিত করা হয়েছে এবং তা শান্তিপূর্ণ কার্যক্রমে যুক্ত আওয়ামী লীগের সদস্য ও সমর্থক হিসেবে বিবেচিত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করতে ব্যবহার করা হচ্ছে। ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে দেওয়া জাতিসংঘের সত্য অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে যেমনটি সুপারিশ করা হয়েছিল, ওই প্রতিবেদনে আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়ার কথা বলা হয়—অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই রাজনৈতিক দলের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রদান থেকে বিরত থাকতে হবে। এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা প্রকৃত বহুদলীয় গণতন্ত্রে ফেরার পথ বাধাগ্রস্ত করবে এবং বাংলাদেশি ভোটারদের বড় অংশকে কার্যত বঞ্চিত করবে।
ছাত্রজনতার আন্দোলনের মুখে গত বছরের পাঁচ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা। এর মাধ্যমে ১৫ বছরের বেশি ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতার মসনদ হারায়।
এদিকে চলতি বছরের ১০মে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও তার নেতাদের বিচার কার্যসম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দলটির যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে অন্তর্বর্তী সরকার। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের সংশোধনী প্রস্তাবও অনুমোদন দেয়। যাতে ট্রাইব্যুনাল কোনো রাজনৈতিক দল, তার অঙ্গসংগঠন বা সমর্থক গোষ্ঠীকে শাস্তি দিতে পারে।
অন্যদিকে বাংলাদেশে মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে সংস্কারপ্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি নতুন করে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা রোধে একগুচ্ছ ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে চিঠি দিয়েছে ছয়টি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা।
রোববার যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ) ওয়েবসাইটে ওই চিঠি প্রকাশ করা হয়েছে।
ড. ইউনূসের উদ্দেশে চিঠিতে বলা হয়—আওয়ামী লীগের সদস্যদের বিরুদ্ধে দায়ের করা যেসব মামলা রয়েছে, যেগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে হয় এবং গ্রহণযোগ্য তথ্য–প্রমাণের ঘাটতি রয়েছে।
জাতিসংঘে রোহিঙ্গা বিষয়ে উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনে আপনি ড. (ইউনূস) উল্লেখ করেছিলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবাসনই এই সংকটের একমাত্র সমাধান এবং জরুরি প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে যারা নতুন এসেছে, তাদের দ্রুত প্রত্যাবাসনের সুযোগ দিতে হবে। রোহিঙ্গা শরণার্থীরা দীর্ঘ দিন ধরে মিয়ানমারে নিজেদের বাড়িতে ফিরে যাওয়ার চূড়ান্ত লক্ষ্যের ওপর গুরুত্ব দিয়ে আসছেন। তবে ২০২৩ সালের শেষ পর্যায় থেকে শুরু করে আসা দেড় লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীসহ সব রোহিঙ্গার জন্যই মিয়ানমারের কোনো অংশই এখন স্বেচ্ছায়, মর্যাদাপূর্ণ ও টেকসই প্রত্যাবাসনের জন্য নিরাপদ নয়।
বাংলাদেশে বসবাসকারী সবার অধিকার ও স্বাধীনতা রক্ষার জন্য আমরা আপনাকে দ্রুত নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি—
জুলাই অভ্যুত্থান চলাকালে এবং বিগত ১৫ বছরে সংঘটিত গুরুতর নিপীড়নের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহি নিশ্চিত করুন। এসব অপরাধের মধ্যে গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও নির্যাতনের ঘটনা রয়েছে। গুম ও নির্যাতনের জন্য মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় র্যাব ও ডিজিএফআইয়ের কর্মকর্তাসহ সেনাবাহিনীর বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গ্রহণ ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি)। সেনাবাহিনীর সদস্যদের বিষয়ে বেসামরিক আদালত আইসিটির এখতিয়ারের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনসহ জবাবদিহির এসব প্রচেষ্টায় সেনাবাহিনীর পূর্ণ সহায়তা দেওয়া উচিত। প্রাতিষ্ঠানিক বা রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতানির্বিশেষে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচারিক প্রক্রিয়া যেন আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বজায় রেখে সম্পন্ন করতে পারে, তা নিশ্চিত করার জন্য আইসিটিকে প্রয়োজনীয় আইনি কাঠামো, সম্পদ ও স্বাধীনতা দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। আইসিটির অধীন মামলাগুলোসহ সব ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ড প্রদান স্থগিত রাখার বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষণা দেওয়া উচিত।
অতীতের ধারা ভেঙে ফেলতে এবং মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) বিলুপ্ত করা এবং ডাইরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্সের (ডিজিএফআই) ক্ষমতা সীমিত করাসহ নিরাপত্তা খাত সংস্কার করুন। দায়মুক্তি নিয়ে র্যাবের গুরুতর অপরাধ সংঘটনের রেকর্ড প্রতিষ্ঠানটিকে সংস্কারের বাইরে নিয়ে গেছে এবং সামরিক বাহিনীর সব কর্মীকে বেসামরিক আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো থেকে সরিয়ে দেওয়া উচিত। গুম ও অন্যান্য গুরুতর নিপীড়নে ডিজিএফআইয়ের সম্পৃক্ততা এর ভূমিকা ও ক্ষমতা কেবল সামরিক গোয়েন্দা কাজে সীমিত করার প্রয়োজনীয়তাকে তুলে ধরে। একই সঙ্গে এর কার্যক্রম সীমাবদ্ধ এবং স্পষ্ট আইনগত ম্যান্ডেট থাকা আবশ্যক।
গুমকে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী অপরাধ হিসেবে স্বীকৃতি দিন এবং গুমবিষয়ক তদন্ত কমিশনকে তাদের ম্যান্ডেট সম্পূর্ণ করতে সহায়তা দিন। অন্তর্বর্তী সরকারকে খসড়া ‘এনফোর্সড ডিজঅ্যাপিয়ারেন্স প্রিভেনশন অ্যান্ড রেড্রেস অর্ডিন্যান্স’ গ্রহণ করতে হবে, তবে এর আগে নিশ্চিত করতে হবে যে এটি ‘ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন ফর দ্য প্রোটেকশন অব অল পারসনস ফ্রম এনফোর্সড ডিজঅ্যাপিয়ারেন্স’সহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়েছে এবং এ ধরনের অপরাধের জন্য মৃত্যুদণ্ড বাদ দেওয়া হয়েছে। গুমবিষয়ক তদন্ত কমিশন যেন তাদের ম্যান্ডেট সম্পূর্ণ করতে পারে, সে জন্য তাদের পর্যাপ্ত সময় ও সম্পদ পাওয়াটা অন্তর্বর্তী সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে এবং নিরাপত্তা বাহিনীকে তদন্তে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করতে হবে, যার মধ্যে আটক কেন্দ্রগুলোতে অবাধ প্রবেশের নিশ্চয়তা এবং সব প্রাসঙ্গিক নথি দেখার–লাভের সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।
প্যারিস নীতির আলোকে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে (এনএইচআরসি) সংস্কার করতে হবে, যাতে এর কার্যকারিতা নিশ্চিত হয় এবং এর কার্যক্রম, সদস্য নির্বাচন ও অর্থায়নে রাজনৈতিক প্রভাব থেকে স্বাধীনতা বজায় থাকে। এনএইচআরসির স্বাধীনভাবে নিরাপত্তা বাহিনী এবং অন্যান্য রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ওঠা নিপীড়নের অভিযোগ স্বাধীনভাবে তদন্ত করার ক্ষমতা থাকতে হবে এবং এর ম্যান্ডেটকে শুধু দেশীয় আইন অনুযায়ী অধিকারগুলোর মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ড অনুযায়ী পরিচালিত করতে হবে।
সাইবার নিরাপত্তা অধ্যাদেশ ২০২৫ এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও অন্যান্য মৌলিক অধিকার সীমিত করতে ব্যবহৃত নিপীড়নমূলক আইনসমূহ; যার মধ্যে সন্ত্রাসবিরোধী আইন, বিশেষ ক্ষমতা আইন, অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট এবং দণ্ডবিধির আওতায় ফৌজদারি মানহানি—এসব আইন আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী বাতিল বা সংশোধন করুন। অন্তর্বর্তী সরকার সাইবার নিরাপত্তা আইন, ২০২৩ বাতিল করলেও এর জায়গায় আনা সাইবার নিরাপত্তা অধ্যাদেশ ২০২৫ আন্তর্জাতিক মান পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে এবং এতে বিভিন্ন অস্পষ্ট ধারা রয়েছে, যেগুলো রাষ্ট্রের অতিরিক্ত হস্তক্ষেপের গুরুতর ঝুঁকি তৈরি করেছে।
ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা অধ্যাদেশ এবং জাতীয় উপাত্ত ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশের আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী সংশোধন করুন। কারণ, এগুলোতে রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের জন্য বিরাট ছাড় থাকবে। এসব খসড়া যেন প্রকৃতপক্ষে ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা নিশ্চিত করে এবং রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন ও অযাচিত নজরদারি রোধ করা যায়, সে জন্য এগুলোর সংশোধন করতে হবে। অধ্যাদেশগুলো যেন অধিকারভিত্তিক হয় এবং এতে বিশ্বের সেরা চর্চাগুলোর প্রতিফলন থাকে, তা নিশ্চিত করতে অংশীজনদের সঙ্গে অর্থবহ সংলাপ আবশ্যক।
সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করুন এবং সাংবাদিকদের নির্বিচার গ্রেপ্তার ও আটক থেকে রক্ষা করুন, তাদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা যা–ই মনে করা হোক না কেন। বিশেষ করে যেখানে অভিযোগের পক্ষে গ্রহণযোগ্য প্রমাণ নেই অথবা যখন গ্রেপ্তার বা আটকের ঘটনা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বা অন্যান্য অধিকার লঙ্ঘন করে। আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি সাংবাদিকদের রাষ্ট্রীয় বাহিনী ও সংস্থা এবং তার বাইরের অন্যদের হয়রানি ও সহিংসতা থেকে রক্ষা করার এবং কোনো হামলার ক্ষেত্রে দ্রুত, স্বাধীন তদন্ত পরিচালনা করার আহ্বান জানাচ্ছি। পাশাপাশি সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা বিষয়ে আন্তর্জাতিক আইনের সামঞ্জস্যপূর্ণ যেসব সুপারিশ গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন করেছে, সেগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে।
নির্বিচার গ্রেপ্তার ও আটক রোধ করুন এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বা অন্যান্য মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করে এমন সব মামলা প্রত্যাহার বা খারিজ করার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার ব্যবস্থা করুন। অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা–নির্বিশেষে ২০২৪ সালের আগস্টের আগে ও পরে দায়ের করা ওই ধরনের সব মামলা পর্যালোচনা ও খারিজ করা। এসব মামলার মধ্যে আওয়ামী লীগের সদস্য ও সমর্থক যাঁরা অপরাধের সঙ্গে যুক্ত থাকার গ্রহণযোগ্য প্রমাণ ছাড়া দোষী অভিযুক্ত বা আটক রয়েছেন, তাদেরও অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় আওয়ামী লীগের কার্যক্রমের ওপর বিস্তৃত পরিসরে বিদ্যমান নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করুন। এ আইনের আওতায় সভা, সমাবেশ ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে অতিমাত্রায় সীমিত করা হয়েছে এবং তা শান্তিপূর্ণ কার্যক্রমে যুক্ত আওয়ামী লীগের সদস্য ও সমর্থক হিসেবে বিবেচিত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করতে ব্যবহার করা হচ্ছে। ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে দেওয়া জাতিসংঘের সত্য অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে যেমনটি সুপারিশ করা হয়েছিল, ওই প্রতিবেদনে আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়ার কথা বলা হয়—অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই রাজনৈতিক দলের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রদান থেকে বিরত থাকতে হবে। এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা প্রকৃত বহুদলীয় গণতন্ত্রে ফেরার পথ বাধাগ্রস্ত করবে এবং বাংলাদেশি ভোটারদের বড় অংশকে কার্যত বঞ্চিত করবে।
মসজিদ ব্যবস্থাপনা ও নীতিমালা প্রণয়ন বিষয়ে কর্মশালা করেছে বাংলাদেশ মসজিদ মিশন। মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর কাটাবন সেন্ট্রাল পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে এ কর্মশালা সভাপতিত্ব করেন মিশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি অধ্যক্ষ মাওলানা যাইনুল আবেদীন।
২৬ মিনিট আগেতৌহিদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, প্রত্যেকে নিজ নিজ কাজ করবে- আমরা এটাই মনে করি। মানবাধিকার সংগঠনগুলো তাদের কাজ করবে। তবে সরকারের পক্ষে তাদের সবকিছু মেনে নেওয়া কখনোই সম্ভব হবে না।
৪৩ মিনিট আগেজুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের উপায় ও পদ্ধতি নিয়ে বিশেষ আদেশের খসড়া আজ বুধবার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে জমা দেবেন বিশেষজ্ঞরা।
২ ঘণ্টা আগেদেশে গত একযুগে ৬৭ হাজার ৮৯০টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে এক লাখ ১৬ হাজার ৭২৬ জন নিহত এবং এক লাখ ৬৫ হাজার ২১ জন আহত হয়েছেন। ২০১৪ থেকে ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হতাহতের এই পরিসংখ্যান জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।
৩ ঘণ্টা আগে