জোরালো হচ্ছে নির্যাতিতদের জন্য ক্ষতিপূরণের দাবি

সাইদুর রহমান রুমী
প্রকাশ : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১: ৫৩

ফ্যাসিস্ট হাসিনা এবং তার দোসরদের মাধ্যমে বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে বিএনপি চেয়ারপারসন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ রাষ্ট্রের যেসব নাগরিক জুলুম-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, তাদের প্রতি সহমর্মিতা দেখিয়ে বিচার বিভাগের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। এ ব্যাপারে উচ্চ আদালত অ্যামিকাস কিউরি নিয়োগ করে তাদের মতামত নিতে পারে।

গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে নির্বাচন কমিশনসংক্রান্ত এক মামলার শুনানিতে প্রধান বিচারপতি জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের কাছে জানতে চানÑ বুধবার একটি মামলায় প্রথমবার আপিল বিভাগের সামনে প্রশ্ন উঠানো হয় খালেদা জিয়াকে যে প্রক্রিয়ায় সাজা দেওয়া হয়েছে, তা বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে দেওয়া হয়েছে। কাজেই এখন কোন প্রক্রিয়ায় তাকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে, তা নিয়ে সিনিয়র আইনজীবীরা বলুক।

বিজ্ঞাপন

এ প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট মাহবুব উদ্দিন খোকন আমার দেশকে বলেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনা তিন তিনবারের প্রধানমন্ত্রী ও দেশের একজন সিনিয়র সিটিজেন বেগম জিয়াকে গত ১৬ বছর মিথ্যা মামলা দিয়ে জেল-জুলুম নির্যাতন করে আসছিল। এমনকি তাকে ন্যায্য চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিল। এটি কোনো সভ্য দেশে হতে পারে না। রাষ্ট্রীয় যন্ত্র ব্যবহার করে যেহেতু এটি করা হয়েছে, তাই রাষ্ট্রকে এর দায় নিতে হবে।

সিনিয়র আইনজীবী ও ঢাকা বারের সাবেক প্রেসিডেন্ট মাসুদ আহমেদ তালুকদার এ প্রসঙ্গে বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এবং তার মতো যেসব নাগরিক এত বছর ফ্যাসিস্ট সরকারের অবিচারের শিকার হয়েছেন, সেটির কোনো আর্থিক মূল্য হতে পারে না। তাই বিচার বিভাগ বিগত হাসিনার সময় পরাধীন ছিল মর্মে স্বীকার করে এজন্য দুঃখ প্রকাশ করা উচিত। যারা এসব অবিচারের সঙ্গে জড়িত, তাদের দায়ী করে বিচারের আওতায় আনা দরকার।

বিগত প্রায় দেড় যুগ রাষ্ট্রীয় মদতে খালেদা জিয়াসহ দেশের সাধারণ নাগরিকদের ওপর নির্যাতনকারীদের শাস্তির আওতায় আনা উচিত। প্রয়োজন হলে প্রধান বিচারপতি অ্যামিকাস কিউরি গঠন করে সবার মতামত নিয়ে পুরো সময়ে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা উচিত। তিনি বলেন, আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানসহ বহু অনেক গুণী দেশপ্রেমিককে ফ্যাসিস্ট হাসিনা জেল-জুলুম নির্যাতন চালিয়ে এসেছে। এখনই উপযুক্ত সময় জড়িতদের আইনের আওতায় এনে তাদের সম্পদ বিক্রি করে তা নির্যাতিতদের মধ্যে বিতরণ করতে হবে।

এর আগে বুধবার খালেদা জিয়ার সঙ্গে অবিচার করায় প্রথমবার আপিল বিভাগে প্রতীকী ক্ষতিপূরণ দাবি করেন সিনিয়র আইনজীবী সালাহ উদ্দিন দোলন। প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চে বিসিএস ও নির্বাচনসংক্রান্ত মামলার শুনানিতে তিনি এ ক্ষতিপূরণ দাবি করেন।

সে সময় বিচার বিভাগ কীভাবে শেখ হাসিনার ফ্যাসিজমের অংশ হয়েছিল তা তুলে ধরে আইনজীবী সালাহ উদ্দিন দোলন বলেন, খালেদা জিয়াকে প্রধানমন্ত্রী নন, একজন নারী মূল্যায়ন করলেও তার সঙ্গে যা করা হয়েছে, তা প্রকারান্তরে অবিচার। এজন্য জড়িতদের প্রতীকী একটি সাজা হলেও দেন। ইতিহাসে যা তোলা থাকুক।

একই দিন বুধবার বেগম জিয়াকে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ আলোচিত নাইকো মামলা থেকে খালাস দেয়। সব মিলিয়ে তার বিরুদ্ধে ৩৭টি মামলা চলমান ছিল। এগুলোর সবকটিই জামিনযোগ্য থাকলেও বেগম জিয়াকে জামিন দেওয়া হয়নি, বরং তার চিকিৎসা কার্যক্রমও বাধাগ্রস্ত করা হয়েছিল।

আদালতে দেওয়া বক্তব্য প্রসঙ্গে এ আইনজীবী বলেন, এ দেশে হাসিনা সরকার রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো যেভাবে নষ্ট করেছে এবং ফ্যাসিজম যেভাবে ডেভেলপ করেছে, তার অধিকাংশের দায় বিচার বিভাগের। বিচার বিভাগ কোনো অবস্থাতেই সে দায় এড়াতে পারে না।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিষয়:

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত