বাংলাদেশের মানুষ উগ্রবাদ, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ বিশ্বাসী নয় বলে জানিয়েছেন এন্টি টেররিজম ইউনিটের (এটিইউ) অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক মো.রেজাউল করমি। তিনি বলেন, কখনো কখনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কারণে বা ভেজাল কোনো ব্যক্তির খপ্পরে পরে কিংবা দেশি-বিদেশি চক্রান্তে পরে কেউ কেউ বিচ্যুতি হতে পারে এই আশংকা তো থেকেই যায়। সে কারণে এসব বিষয়কে আমরা নজরদারিতে রাখব,যাতে করে ভবিষ্যতে কোনো ধরনের সন্ত্রাস ও উগ্রবাদের কোনো সৃষ্টি না হতে পারে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে বেলা আড়াইটার দিকে রাজধানীর বারিধারা ডিপ্লোম্যাটিক জোনে এটিইউ এর সদর দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।
নবনিযুক্ত এই প্রধান বলেন, বাংলাদেশ একটি শান্তিপ্রিয়, সহনশীল মুসলিম দেশ, যা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে বিশ্বাসী। তিনি জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ, উগ্রবাদ, মাদক এবং বিশেষ করে যুবকদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান অনলাইন ও সাইবার অপরাধ থেকে দেশকে মুক্ত করার গুরুত্ব তুলে ধরেন।
তিনি আরও বলেন, দেশের মাটি ও মানুষ সবার—তাই এসব সমস্যা মোকাবিলায় ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা অপরিহার্য। এ ক্ষেত্রে বিশেষায়িত ইউনিটের ভূমিকা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি জনসাধারণের সহযোগিতা, বিশেষ করে গণমাধ্যমের ভূমিকা অনস্বীকার্য। সাধারণ মানুষকে সঠিক তথ্য দিয়ে সহায়তা করতে ‘ইনফোমেট’ অ্যাপ এবং একটি যোগাযোগ নম্বর চালু করা হয়েছে, যেখানে তথ্যদাতার গোপনীয়তা সর্বোচ্চ গুরুত্বে রাখা হবে। বক্তার মতে, পারস্পরিক সমন্বয় দ্রুত জনকল্যাণে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে সক্ষম।
তিনি আরও বলেন, একটি মাত্র সন্ত্রাসী ঘটনা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। স্বল্প-শিক্ষিত ও বিভ্রান্ত মানুষ কীভাবে ভুল আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়—২০০৫ সালের সিরিজ বোমা হামলার উদাহরণ দিয়ে তিনি তা ব্যাখ্যা করেন। তার ভাষ্যে, সব ধর্মই শান্তির শিক্ষা দেয়; কোনো ধর্মই উগ্রবাদ বা সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন করে না। এ প্রেক্ষাপটে গণমাধ্যমকে সঠিক বার্তা প্রচার এবং ধর্মকে অপব্যবহারকারী বিভিন্ন গোষ্ঠীকে চিহ্নিত করার আহ্বান জানান তিনি।
বিগত সরকারের জঙ্গি নাটকের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, পিছনে কি হয়েছে না হয়েছে আপনারাও (সাংবাদিক) আমরাও জানি। আমরা বলতে চাচ্ছি সত্য সত্যই আর মিথ্যা মিথ্যাই৷ সেই জায়গাটায় আমরা অবিচল থাকব। কেউ অপরাধ করে থাকলে সেই অপরাধের কোনো ছাড় নাই। আমরা জঙ্গিবাদ নিয়ে দেশে এ রকম কিছু এখনো দেখি নাই। কেউ যদি স্বপ্রণোদিত হয়ে কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কারণে বি-পথে চলে যায় সে জায়গায় আমাদের কাজ করার সুযোগ আছে। সেটাই আমরা নজরদারি করব কেউ হঠাৎ করে বিপথগামী হয়ে যাচ্ছে কিনা। পিছনে না যেয়ে আমরা ভবিষ্যতের দিকে এগোতে চাই। আমি সিলেটে মহানগরের কমিশনার থাকাকালীন কোথাও উগ্রবাদ কিংবা সন্ত্রাসবাদ দেখি নাই।
মালয়েশিয়াতে গ্রেপ্তার ৩৬ জনের বিষয়ে জানতে চাইলে এটিইউ জানান, প্রত্যেককে আমরা আলাদাভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তারা সবাই কিন্তু শ্রমিক শ্রেণির মানুষ। জিজ্ঞাসাবাদে আমরা জেনেছি তারা কেউ ঐ রকমভাবে জড়িত ছিলো না। তারা মনে করেছিলো দু:স্থ ও অসহায় আনুষজনকে সহযোগীতা করতে হবে। সেই জন্য মালোশিয়ার সরকারও তাদের ক্লিয়ার করে দিয়েছে। তবে এর পিছনে কারা এসব বিষয়ে জানতে আমাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলমান রয়েছে। মতবিনিময় সভায় এসময় অন্যানের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন এটিইউয়ের এসপি (মিডিয়া) ব্যারিস্টার মাহফুজুল আলম রাসেল প্রমুখ।

