৩০ বছরের জন্য বিদেশিদের হাতে যাচ্ছে লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল

আমার দেশ অনলাইন
প্রকাশ : ১২ নভেম্বর ২০২৫, ১৯: ৫৪
আপডেট : ১২ নভেম্বর ২০২৫, ১৯: ৫৭

চট্টগ্রাম বন্দরের আধুনিক লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনার জন্য ডেনমার্ক ভিত্তিক মায়ের্সক গ্রুপের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান এপিএম টার্মিনালস বি.ভির সঙ্গে ৩০ বছরের কনসেশন চুক্তি স্বাক্ষর করতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। এই চুক্তির বিষয়টি আজ অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের সভায় নীতিগতভাবে অনুমোদিত হয়েছে।

চুক্তির আওতায় একটি প্রকল্প পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের ভিত্তিতে বাস্তবায়ন হবে। প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে- এপিএম টার্মিনালস বিভি লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনালের ডিজাইন, অর্থায়ন, নির্মাণ এবং পরিচালনা করবে, তবে মালিকানা থাকবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের অধীনে, যা সরকারের মূলধনী ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করবে।

বিজ্ঞাপন

বুধবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, এপিএম টার্মিনালস বি.ভি. বিশ্বের ৩৩টি দেশ ও ৬০টির বেশি টার্মিনাল পরিচালনা করছে এবং শীর্ষ ২০টি বন্দরের মধ্যে ১০টির অপারেটর। ইউরোপ ছাড়াও এশিয়ার বিভিন্ন দেশে তাদের দীর্ঘমেয়াদি অভিজ্ঞতা রয়েছে। এই প্রকল্প বাংলাদেশের বন্দর খাতে বিশ্বমানের প্রযুক্তি, দক্ষতা ও কার্যকারিতা নিয়ে আসবে।

লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল দেশের প্রথম সবুজ ও স্মার্ট বন্দর হবে। এটি বর্তমান সক্ষমতার দ্বিগুণ আকারের জাহাজ ধারণ করতে পারবে এবং ২৪ ঘণ্টা রাতের নেভিগেশন সুবিধাসহ পরিচালিত হবে। সরাসরি বৈশ্বিক শিপিং সংযোগ এবং রপ্তানি-আমদানি ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে কমবে।

আশিক চৌধুরী বলেন, চুক্তি অনুযায়ী এপিএম টার্মিনালস পুরো মেয়াদকালে ৮০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি বিনিয়োগ করবে, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ ইউরোপীয় ইক্যুইটি বিনিয়োগ। এলসিটি চালু হলে বন্দরটির বার্ষিক কনটেইনার হ্যান্ডলিং সক্ষমতা ৮ লক্ষাধিক টিইইউ (প্রমিত একক) বৃদ্ধি পাবে, যা বর্তমান সক্ষমতার তুলনায় প্রায় ৪৪ শতাংশ বেশি। টার্মিনালটি ২০৩০ সালের মধ্যে চালু হওয়ার প্রত্যাশা করা হচ্ছে।

প্রকল্পটি রাজস্ব ভাগাভাগি ভিত্তিতে পরিচালিত হবে, যা সরকারের আয় বাড়াবে। নির্মাণ ও পরিচালনা পর্যায়ে ৫০০ থেকে ৭০০ জনের সরাসরি কর্মসংস্থান এবং ট্রাকিং, স্টোরেজ, লজিস্টিকস ও স্থানীয় ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা খাতেও কয়েক হাজার পরোক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। এপিএম টার্মিনালস আন্তর্জাতিক মানের স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা, সুরক্ষা ও পরিবেশ (এইচএসএসই) নীতি প্রয়োগ করবে এবং ডিজিটাল টার্মিনাল পরিচালনা ব্যবস্থা, লিন পদ্ধতি ও ফ্লো প্রসেস ফ্রেমওয়ার্ক ব্যবহার করবে, যা স্থানীয় প্রকৌশলী ও প্রযুক্তিবিদদের দক্ষতা বৃদ্ধি করবে।

দ্রুত জাহাজ টার্নঅ্যারাউন্ড সময় এবং কম কনটেইনার ডওয়েল টাইম এর মাধ্যমে রপ্তানিকারকরা, বিশেষ করে পোশাক, কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ ও হালকা প্রকৌশল খাতের উদ্যোক্তারা সময়মতো সরবরাহ দিতে সক্ষম হবেন। প্রকল্পের ফলে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক প্রবাহ, নতুন ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো, কোল্ড চেইন ও শিল্পাঞ্চলের প্রসার বৃদ্ধি পাবে। জ্বালানি দক্ষ প্রযুক্তি ও জলবায়ু অভিযোজন উদ্যোগের মাধ্যমে কার্বন নির্গমন হ্রাস পাবে এবং বাংলাদেশের প্যারিস চুক্তি (জাতীয় নির্ধারিত অবদান, এনডিসি) অর্জনে সহায়ক হবে।

আশিক চৌধুরী বলেন, ‘লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল প্রকল্পটি বাংলাদেশের বন্দর খাতকে বিশ্বমানের পর্যায়ে নিয়ে যাবে। এটি কেবল অবকাঠামো বিনিয়োগ নয়, দেশের লজিস্টিক খাতকে ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করবে এবং রপ্তানি, কর্মসংস্থান ও বৈদেশিক বিনিয়োগের জন্য নতুন যুগের সূচনা করবে।’

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত