টিসিবির পণ্য পাবেন ৬৪ শহরের দেড় লাখের বেশি ভোক্তা

সরদার আনিছ
প্রকাশ : ০৪ মার্চ ২০২৫, ২০: ২১
ছবি: সংগৃহীত

পবিত্র রমজানে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য বুধবার থেকে ৬৪ জেলা শহরে ট্রাকসেলের মাধ্যমে টিসিবির পণ্য বিক্রি শুরু হবে। সরকারের এ কার্যক্রম আগামী ২৮ মার্চ নাগাদ চলবে। এর ফলে রমজানে আরো অনেক ভোক্তা টিসিবি পণ্যের সুবিধা পাবেন বলে আশা প্রকাশ করছে টিসিবি কর্তৃপক্ষ।

এ প্রসঙ্গে সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবি আঞ্চলিক কার্যালয় ঢাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা যুগ্ম পরিচালক (অফিসপ্রধান) হুমায়ুন কবির বলেন, প্রায় ৬৩ লাখ কার্ডধারী সুবিধাভোগীর বাইরে টিসিবি সুবিধাভোগীর আওতা বাড়ানোর লক্ষ্যেই এই ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে সারা দেশের জেলা সদরে ভর্তুকি মূল্যে পণ্য বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

বিজ্ঞাপন

এই কর্মকর্তা আরো জানান, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ৫০, চট্টগ্রামে ২০, অন্যান্য বিভাগীয় শহরগুলোতে ১০ এবং ৫৬ জেলা শহরে ৫টি করে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে পণ্য বিক্রি করতে যাচ্ছে টিসিবি। প্রতিটি ট্রাকে ৪০০ জনের পণ্য থাকবে। সে হিসেবে প্রতিদিন ৪১০টি ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে করে এক লাখ ৬৪ হাজার মানুষের কাছে ভর্তুকি মূল্যে পণ্য বিক্রি করবে টিসিবি। এছাড়া প্রায় ৬৩ লাখ কার্ডধারী সুবিধাভোগী তো রয়েছেই।

প্রসঙ্গত, জুলাই বিপ্লবের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় গত ২৪ অক্টোবর থেকে ঢাকা মহানগরের ৫০টি ও চট্টগ্রাম মহানগরের ২০টি স্থানে ট্রাকের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি কার্যক্রম শুরু করে টিসিবি। গত ৩১ ডিসেম্বরের পর এ কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। এক মাস ৯ দিন বন্ধ থাকার পর ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে মাহে রমজান উপলক্ষে পাঁচ পণ্য ভর্তুকি মূল্যে বিক্রি করে আসছে টিসিবি। এ দফায় টিসিবির ট্রাক থেকে একজন ভোক্তা সর্বোচ্চ দুই লিটার ভোজ্যতেল (সয়াবিন), দুই কেজি মসুর ডাল, এক কেজি চিনি, দুই কেজি ছোলা ও ৫০০ গ্রাম খেজুর কিনতে পাচ্ছেন। এর মধ্যে প্রতি লিটার ভোজ্যতেলের দাম ১০০ টাকা। এ ছাড়া প্রতি কেজি মসুর ডাল ৬০, চিনি ৭০, ছোলা ৬০ ও আধাকেজি খেজুর ১৫৫ টাকায় বিক্রি করছে সংস্থাটি। মূলত রমজান মাস উপলক্ষে ছোলা ও খেজুর বিক্রি করা হচ্ছে।

গত ২ মার্চ জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে স্মার্টকার্ডের মাধ্যমে টিসিবির পণ্য বিক্রি সংক্রান্ত এক ভার্চুয়াল সভায় বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, ইতোমধ্যে দেশের ৮ জেলায় নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য ট্রাকসেলের মাধ্যমে টিসিবির পণ্য বিক্রি কার্যক্রম চলমান রয়েছে। নতুন করে ৫৬ জেলায় এ কার্যক্রম যুক্ত হবে।

জেলা প্রশাসকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ৫৭ লাখ উপকারভোগী স্মার্টকার্ডের মাধ্যমে পণ্য পাবেন। যাদের এখনো স্মার্টকার্ডের কার্যক্রম শেষ হয়নি; কিন্তু তালিকায় নাম আছেÑ তারাও পণ্য পাবেন। এছাড়া ৬৪ জেলায় ট্রাকসেলের মাধ্যমে সর্বসাধারণের মধ্যে ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে পণ্য বিক্রি করা হবে।

এদিকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের সামনে দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও পণ্য না পেয়ে খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে অনেককেই। ভুক্তভোগীরা বলছেন, চাহিদার তুলনায় টিসিবির সরবরাহ একেবারেই অপ্রতুল। যেখানে ৮০০ থেকে ৯০০ জনের মতো মানুষ পণ্য কিনতে লাইনে অপেক্ষা করছে, সেখানে মাত্র ৪০০ জনকে পণ্য দেওয়া হচ্ছে।

অভিযোগ উঠেছে, পণ্য বিক্রিতে সুনির্দিষ্ট কোনো নিয়মনীতি না থাকায় নিম্ন আয়ের লোকেরা এ পণ্য কিনতে পারছেন না।

এদিকে ভোগ্যপণ্যের উচ্চ মূল্যস্ফীতির প্রভাবে হিমশিম খাওয়া মানুষের কাছে টিসিবি পণ্যের ওপর আগ্রহ বাড়ছেই। আগে স্বল্প আয়ের মানুষ টিসিবির পণ্য কিনলেও এখন সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী সবাই এখান থেকে পণ্য কিনছেন।

অভিযোগ উঠেছে, ক্রেতাদের লাইনে শৃঙ্খলা আনতে কোনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য না থাকায় অনেকেই একাধিকবার পণ্য কিনে তা বেশি দামে বিক্রি করছেন।

জুলহাস মিয়া নামে এক ভোক্তা বলেন, বিশৃঙ্খলা এড়াতে সেনাবাহিনীর মাধ্যমে টিসিবির পণ্য বিক্রি করলে নিম্ন আয়ের লোকেরা পাবে; অন্যথায় সরকারের এই মহৎ কাজের সুফল পাবে না সাধারণ মানুষ। ঈমান আলী নামের অপর ভোক্তা বলেন, ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের সঙ্গে এক-দুজন পুলিশ সদস্য দেওয়া হলেও বিশৃঙ্খলা এড়ানো সম্ভব।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিষয়:

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত