বাপার সংবাদ সম্মেলন

রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণে চলনবিলের জীববৈচিত্র্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ : ২৮ আগস্ট ২০২৫, ১৫: ৪৯

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), চলনবিল রক্ষা আন্দোলন ও সহযোগী ২২টি সংগঠন রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের জন্য চলনবিল ভরাটের প্রক্রিয়ার তীব্র বিরোধিতা করছেন। তারা বলেছেন, চলনবিলের প্রাণপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত করে বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণ হলে দেশের অন্যতম বৃহৎ জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তবে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় হোক সেটি চায় তারা।

বৃহস্পতিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনগুলো জানায়, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার বুড়ি পোতাজিয়ায় প্রস্তাবিত ১০০ একর জমিতে ক্যাম্পাস নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অথচ এ স্থানই চলনবিলের একমাত্র পতন মুখ, যেখান দিয়ে যমুনার পানি চলনবিলে প্রবেশ করে এবং শুষ্ক মৌসুমে বেরিয়ে যায়। এ জায়গা ভরাট করলে পানিপ্রবাহ ব্যাহত হবে, চলনবিলে জলাবদ্ধতা দেখা দেবে, কৃষি, মৎস্য, জীববৈচিত্র্য ও বাঘাবাড়ী নৌবন্দর হুমকির মুখে পড়বে।

বিজ্ঞাপন

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ইতিমধ্যে ৪ একর জমি ভরাট করা হয়েছে এবং এর বিরূপ প্রভাব চোখে পড়ছে। পুরো ১০০ একর জমি ভরাট করতে হলে ৩.৬ মিলিয়ন ঘনমিটার বালু ব্যবহার করতে হবে, যা চলনবিল ও যমুনার পানির প্রবাহের জন্য এক বিশাল প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে।

বাপা ও সহযোগী সংগঠনগুলো জানিয়েছে, চলনবিল ভরাট করে বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণ ২০০০ সালের জলাশয় রক্ষা আইন, ২০১৩ সালের পানি আইন এবং সর্বোচ্চ আদালতের নদীকে জীবন্ত সত্তা ঘোষণার রায় সরাসরি লঙ্ঘনের শামিল।

সংগঠনগুলো বলেছে, তারা রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের বিরোধী নয়। তবে তা অবশ্যই পরিবেশ ও চলনবিল রক্ষা করে অন্যত্র হওয়া উচিত। উদাহরণ হিসেবে দুটি বিকল্প স্থানের প্রস্তাব দেন নেতৃবৃন্দ। শাহজাদপুরে রবীন্দ্রনাথের কাচারিবাড়ি সংলগ্ন এলাকা ও সিরাজগঞ্জ অর্থনৈতিক অঞ্চলের ১১৫৬ একর জমির একটি অংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বরাদ্দ করা যেতে পারে বলে জানান তারা।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ৯৬৭ কোটি টাকা বরাদ্দ আছে। এর মধ্যে ৪৪৮ কোটি টাকা ভরাট, সেতু নির্মাণ, পানিপ্রবাহ প্রতিরোধ ও বাঁধ নির্মাণ ব্যয়ে নির্ধারিত। যদি বিকল্প স্থানে ক্যাম্পাস নির্মাণ হয়, তাহলে সেই অর্থ সাশ্রয় করে আরও আধুনিক ও কার্যকর ক্যাম্পাস নির্মাণ সম্ভব।

সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনগুলো যৌথভাবে দাবি জানায়— চলনবিল ভরাট করে ক্যাম্পাস নির্মাণের পরিকল্পনা বাতিল করতে হবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বিকল্প স্থান নির্ধারণে সরকারকে দ্রুত উদ্যোগ নিতে হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে চলনবিল রক্ষায় একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান তারা।

বাপা সভাপতি অধ্যাপক ড. নুর মুহাম্মদ তালুকদার বলেন, রবীন্দ্রনাথ নদীকে ভালোবেসে জীবন কাটিয়েছেন। তাঁর নামে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয় যদি নদীর মুখ বন্ধ করে গড়ে ওঠে, তবে তা হবে এক চরম দুঃখজনক ঘটনা।

চলনবিলের কারণেই মাছে ও দুধে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠেছি জানিয়ে ড. নুর মুহাম্মদ বলেন, এই চলনবিলে হওয়া মাছ ও আশেপাশে গড়ে ওঠা খামার থেকে আসা দুধের উপরই আমরা নির্ভরশীল। সেই চলনবিলকে ধ্বংস ও অচল করার জন্য সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে চায়।

বিশ্ববিদ্যালয়টিতে কোন কোন ফ্যাকাল্টি থাকবে সরকার এখনও সেটি নির্ধারণ করেছে কি-না এমন প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, সেখানে দুনিয়ার সব বিষয় ফ্যাকাল্টি করে একটা বিশাল বিশ্ববিদ্যালয় করবে এর পক্ষে আমরা না। তবে আমরা রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় হোক সেটি চাই। আমরা চাই সেখানে সাহিত্য, সংস্কৃতি ও বিজ্ঞান বিষয়ক

এছাড়াও বাপা সভাপতি বলেন, ওখানে(সিরাজগঞ্জ) এবং কুষ্টিয়া দুই জায়গাতেই তার কাচারি বাড়ি আছে। তার বাড়ির দু’এক কিলোমিটারের মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়টি হোক। ১১ কিলোমিটার দূরে কেন করতে হবে? আশপাশে করলে শিক্ষার্থীরা, অভিভাবকরা ও আগমনকারীরা বাড়ি এবং বিশ্ববিদ্যালয় দু’টিতেই সময় কাটাতে পারবে।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত