মনে হতো দেশের সাড়ে ৭ কোটি মানুষই আমাদের সঙ্গে শ্বাস নিচ্ছে

জেনারেল এম এ জি ওসমানী
প্রকাশ : ২৬ মার্চ ২০২৫, ১৩: ২৩

‘১৯৫৪ সালেই আমার এই ধারণা বদ্ধমূল হয়েছিল যে, পাকিস্তানের কবল থেকে আমাদের পুরোপুরি মুক্ত হতে হবে। সে সময় থেকেই আমি বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণের কথা চিন্তা করতে থাকি এবং এ কারণেই বাঙালিদের দলে দলে সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করতে থাকি।

কারণ, সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে সামরিক ট্রেনিং লাভের সঙ্গে সঙ্গে একদিকে যেমন তাদের যথেষ্ট অভিজ্ঞতাও অর্জিত হবে, তেমনি বাঙালিদের প্রতি পাকিস্তানিদের বিশেষ করে পাঞ্জাবিদের মনোভাব সম্পর্কে তাদের চোখও খুলবে বলে আমার ধারণা ছিল। একাত্তরে পাকিস্তানিরা একটা অন্যায় যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিল। ওরা চালাচ্ছিল ব্যাপক হারে গণহত্যা, নারী নির্যাতন। পক্ষান্তরে বাঙালিরা ঝাঁপিয়ে পড়েছিল একটি ন্যায় যুদ্ধে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের জয় অবশ্যম্ভাবী।’

বিজ্ঞাপন

‘মুক্তিযুদ্ধকালে প্রবাসী বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার আমাকে সর্বাধিনায়ক হিসেবে নিয়োগ দেয়। তখন আমি সরকারের অনুমোদনে লে. কর্নেল (পরে মেজর জেনারেল) এম এ রবকে চিফ অব স্টাফ নিয়োগ করি। তিনি আমার পরে সবচেয়ে সিনিয়র ছিলেন। এরপর ১১টি সেক্টরের কমান্ডার নিয়োগ করি। আমাদের রণকৌশল অত্যন্ত ফলপ্রসূ বলে প্রমাণিত হয়। নিয়মিত পদ্ধতি এবং গেরিলা পদ্ধতিতে যুদ্ধ হয়েছে।

সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ শত্রু রক্তহীন হয়ে ওঠে। তার ২৫ হাজারের মতো সৈন্য বিনষ্ট হয়। বহু যানবাহন লোকসান হয়। ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত অবস্থা এমন দাঁড়ায় যে, একজন বক্সার রিঙে দ্বিতীয় রাউন্ডে ক্লান্ত হয়ে ঘুরছে এবং একটা কড়া ঘুসি খেলে পড়ে যাবে- তাদের যোগাযোগের অবস্থা সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল। তারা কোটি কোটি টাকা খরচ করে রি-ইনফোর্স কংক্রিটের বাংকার বানিয়েছিল।

যেগুলোর মধ্যে তারা ঢুকে থাকত। রাতের বেলায় বেরই হতো না। দিনের বেলায়ও বেশিসংখ্যক লোক ছাড়া বের হতো না। শত্রুর তখন এই অবস্থা দাঁড়িয়েছিল। ভারতীয় বাহিনী ৩ ডিসেম্বর যুদ্ধে নামে। মাত্র ১৩ দিন যুদ্ধ করে। তখন ভারতীয় বাহিনী ও মুক্তিবাহিনী মিলে সম্মিলিত বাহিনী এই যুদ্ধ চালায়।

মুক্তিযুদ্ধকালে বাংলাদেশের জনগণের কাছ থেকে আন্তরিক ও অকুণ্ঠ সমর্থন আমরা পেয়েছি। আমার, আমার অধিনায়ক ও মুক্তিবাহিনীর যোদ্ধাদের সব সময় এমন মনে হতো, বাংলাদেশের সাড়ে ৭ কোটি মানুষ আমাদের সঙ্গে শ্বাস নিচ্ছে।’

জেনারেল এম এ জি ওসমানী, (মুক্তিযুদ্ধের দলিল, দশম খণ্ড, পৃষ্ঠা-৭৯৮, দৈনিক বাংলায় বিশেষ সাক্ষাৎকার)

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিষয়:

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত