সঞ্চয়পত্র নিয়ে গ্রাহকের হয়রানি

সামসুল ইসলাম টুকু
প্রকাশ : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০: ৪৫

ছয়-সাত বছর আগেও সঞ্চয়পত্র অফিস ও পোস্ট অফিস থেকে খুব সহজ শর্তে সঞ্চয়পত্র কেনাবেচা হয়েছে । প্রায় তিন যুগ ধরে চলমান ছিল এ ব্যবস্থা। সঞ্চয়পত্রের টোকেনের মাধ্যমে সুদ গ্রহণে ও সঞ্চয়পত্র ভাঙানোর ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হয়নি । সময়ের কোনো অপচয় ছাড়াই দ্রুততম সময়ে হাজার হাজার গ্রাহকের লেনদেন সম্পন্ন হয়েছে । কিন্তু জটিলতা সৃষ্টি করা হলো ছয়-সাত বছর আগে সরকারের আয়কর বিভাগ থেকে । নির্দেশ হলো, যেকোনো সঞ্চয়পত্র ক্রেতাকে আয়কর অফিস থেকে টিন সার্টিফিকেট নিতে হবে, অন্যথায় সঞ্চয়পত্র কেনা যাবে না । জনসাধারণকে আয়কর জালে আটকানোই ছিল এর উদ্দেশ্য । অথচ দেশের সিংহভাগ অর্থ যাদের হাতে, তাদের কাছ থেকে এবং বড় বড় খেলাপির কাছ থেকে সরকার আয়কর আদায়ে ব্যর্থ হয়েছে । আর সেই ব্যর্থতার দায় সাধারণ মানুষের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়েছে সরকার।

বিজ্ঞাপন

সঞ্চয়পত্র ক্রেতারা তাদের তিল তিল করে সঞ্চিত অর্থ অন্য কোনো খাতে বিনিয়োগের ঝুঁকি আছে মনে করেই সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করেন। এ কারণে আয়কর বিভাগের নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে দলে দলে তারা ছুটলেন আয়কর অফিসে টিন সার্টিফিকেট সংগ্রহের জন্য । এর পরের বছর নির্দেশ এলো যারা টিন সংগ্রহ করেছেন, তাদের সবাইকে প্রতি বছর রিটার্ন দাখিল করতে হবে, বিশেষত সর্বনিম্ন পাঁচ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র ক্রেতাদের । এই রিটার্ন দাখিল করার যন্ত্রণায় বহু ক্রেতা সঞ্চয়পত্র কেনা ছেড়ে দিলেন । যেকোনো সঞ্চয় হিসাব হোক না কেন তার প্রাপ্ত সুদ থেকে কর্তৃপক্ষ রিটার্ন দাখিলকারীদের কাছ থেকে ১০ শতাংশ হারে এবং যারা রিটার্ন দেন না তাদের কাছ থেকে ১৫ শতাংশ হারে আয়কর কেটে নেওয়ার ব্যবস্থা করল । এর পরের বছর নির্দেশ এলো নগদ টাকায় সঞ্চয়পত্র কেনা যাবে না—ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে এবং সেই ব্যাংক থেকে চেক প্রদানের মাধ্যমে সঞ্চয়পত্র কেনা যাবে ।

এর ফলে অল্প টাকার সঞ্চয়পত্রের ক্রেতারা আরেক দফা সঞ্চয়পত্র কেনা বন্ধ করে দিলেন । এরপর সরকার আরও এক ধাক্কা দিল সঞ্চয়পত্রের সুদের হার প্রায় তিন শতাংশ কমিয়ে । ফলে অনেকে তাদের অর্থ অন্য কোনো খাতে বিনিয়োগ করা শুরু করলেন। তাদের অধিকাংশই প্রার্থিত লাভ না করতে পেরে পুঁজি হারাতে থাকলেন এবং সঞ্চয়পত্র বিক্রি আশঙ্কাজনক হারে কমে গেল । এ নিয়ে পত্রপত্রিকায় লেখালেখিও হলো । অন্যদিকে মোটা অঙ্কের সঞ্চয়পত্র ক্রেতারা তাদের অর্থে জায়গাজমি কেনা শুরু করলেন। ফলে জায়গাজমি ও দোকানপাটের দাম হু-হু করে বেড়ে গেল।

অর্থনীতির এই পরিবর্তনে জাতীয় অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ল । পরে নির্দেশ এলো পাঁচ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র ক্রেতাকে রিটার্ন দিতে হবে না এবং যৌথভাবে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত সঞ্চয়পত্র কেনা যাবে। এ সময় খেলাপি ব্যাংকগুলোর চেহারা প্রকটভাবে উন্মোচিত হলো । তারা ব্যাংকের আমানত বাড়াতে সুদের হার বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন চমকপ্রদ ও আকর্ষণীয় সঞ্চয় স্কিম চালু করল গ্রাহকদের আকৃষ্ট করার জন্য । এ প্রক্রিয়ায় কিছু মানুষ আকৃষ্ট হলেন। এসব খেলাপি ব্যাংক গ্রাহকের টাকা ব্যাংকে রেখে দিল আর গ্রাহকরা জরুরি প্রয়োজনেও তাদের জমাকৃত টাকা ওঠাতে গিয়ে বাধাপ্রাপ্ত হলেন এবং এখনো হচ্ছেন।

এদিকে সরকার সঞ্চয়পত্রের সুদের হার বৃদ্ধি করে আগের পর্যায়ে অর্থাৎ ১২ দশমিক ৫ শতাংশ দেওয়ার কথা ঘোষণা করল । কিন্তু তাতে কী হবে? সঞ্চয়পত্র কেনার জন্য যখন গ্রাহকরা ব্যাংকে চেক দিচ্ছেন, তখন তা ব্যাংকগুলো ডিজঅনার করছে, টাকা দিতে পারছে না। ফলে গ্রাহকরা সঞ্চয়পত্র কিনতে পারছেন না । লাল জোনে চিহ্নিত এসব ব্যাংক গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণা করছে। গ্রাহকদের প্রার্থিত অর্থ প্রদানে দিনের পর দিন ঘোরাচ্ছে । হাজার হাজার গ্রাহক আজ এই সংকটে নিপতিত । কোনো গ্রাহক ব্যাংকের এই আচরণে বিরক্ত ও চেঁচামেচি করলে তাকে ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ হয়রানি করা হচ্ছে ।

এসব খবর পত্রপত্রিকায় এলেও পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হচ্ছে না, যদিও সরকার তথা বাংলাদেশ ব্যাংক এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে বা খেলাপি ব্যাংকগুলোকে সচল রাখার জন্য বেশ কিছু অর্থ প্রদান করেছে এবং প্রয়োজনে নতুন টাকা ছাপিয়ে ব্যাংকগুলোক দেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ব্যাংকের গ্রাহকদের আশ্বস্ত করে বলা হয়েছে, তাদের অর্থ পাবেন, তবে ধীরে ধীরে । আর এ সুযোগ গ্রহণ করছে ব্যাংকগুলো, গ্রাহকদের টাকা দিতে গড়িমসি করছে । নিরুপায় গ্রাহকরা তা মেনে নিতে বাধ্য হচ্ছেন অনিচ্ছা সত্ত্বেও। অনেক গ্রাহক তাদের জমাকৃত টাকা আদৌ ফেরত পাবেন কি না, সেই আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন । এভাবেই গ্রাহকরা প্রিয় ও বিশ্বস্ত সঞ্চয়ী স্কিম খোলা থেকে বিরত থাকতে বাধ্য হচ্ছেন, যা কিনা সরকারের আপৎকালীন ফান্ড হিসেবে বহুকাল ধরে পরিচিত। এমন হাজার হাজার সঞ্চয়পত্র গ্রাহক সঞ্চয়পত্র কিনতে পারছেন না খেলাপি ব্যাংকগুলোর অন্যায় ও অবৈধ অসহযোগিতার কারণে।

এসব ব্যাংক-গ্রাহক কাকে এই অভিযোগগুলো জানাবেন, কে এর প্রতিকার করবে, তাদের অর্থের কী হবে—এমন অনেক প্রশ্নে গ্রাহকেরা নিজেরাই জর্জর। মুখ বন্ধ করে দাঁতে দাঁত চেপে তারা সহ্য করছেন ব্যাংকগুলোর দুর্ব্যবহার । একটা গুমোট অবস্থা বিরাজ করছে মাঠপর্যায়ে; বিস্ফোরিত হতে পারে যেকোনো সময়ে ।

শুক্র-শনিবারও চলবে বিমানবন্দরের শুল্কায়ন কার্যক্রম

প্রধান উপদেষ্টার আদেশে জুলাই সনদের আইনি রূপ দিতে হবে

নভেম্বরের মধ্যে তিস্তা মহাপরিকল্পনা শুরুর দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি

আইআরআই’র সঙ্গে নির্বাচনের প্রক্রিয়া ও ইসির নিরপেক্ষতা নিয়ে আলোচনা এনসিপির

দেশে মুক্তি পাচ্ছে জাপানি অ্যানিমে সিরিজ, শিশুদের দেখা নিষেধ

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত