বুদ্ধিবৃত্তিক ফ্যাসিবাদের স্বরূপ ও নতুন রাষ্ট্র বিনির্মাণ

ড. মো. খালেদ হোসেন
প্রকাশ : ৩০ আগস্ট ২০২৫, ১১: ০৭
ড. মো. খালেদ হোসেন

ফ্যাসিবাদ সাধারণত এমন এক রাজনৈতিক ব্যবস্থা, যেখানে ক্ষমতা একদল বা এক নেতার হাতে কেন্দ্রীভূত থাকে এবং ভিন্নমত দমন করা হয়। মুসোলিনির ইতালি থেকে হিটলারের জার্মানি, ফ্রাঙ্কোর স্পেন থেকে বাংলাদেশের হাসিনা—সব জায়গায় ফ্যাসিবাদের মূলমন্ত্র ছিল শ্রেষ্ঠত্ববাদ এবং বিরোধী দল ও ভিন্নমতকে নিশ্চিহ্ন করা। কিন্তু রাজনৈতিক ফ্যাসিবাদের পাশাপাশি আরেকটি সূক্ষ্ম অথচ ভয়ংকর রূপ আছে, যাকে আলবার্ট এলিস ‘ইন্টেলেকচুয়াল ফ্যাসিজম’ বা বুদ্ধিবৃত্তিক ফ্যাসিবাদ নামে অভিহিত করেছিলেন। এটি এমন এক বিশ্বাস, যেখানে কিছু মানুষকে তাদের শিক্ষা, বুদ্ধি বা সৃজনশীলতার কারণে প্রকৃতিগতভাবে শ্রেষ্ঠ ভাবা হয়। বাকিদের অযোগ্য বা তুচ্ছ মনে করা হয়। এই বিশ্বাস মূলত রাজনৈতিক ফ্যাসিবাদের দার্শনিক ভিত্তি তৈরি এবং ফ্যাসিবাদকে সমাজ ও রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠিত করে।

বিজ্ঞাপন

ঠিক এখানেই ফুকো প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠেন। তিনি দেখিয়েছিলেন, জ্ঞান শুধু তথ্য নয়, বরং কীভাবে বলা হচ্ছে এবং কার উদ্দেশে বলা হচ্ছে, এটাই মূল ডিসকোর্স। এই ডিসকোর্স নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমেই ক্ষমতার ভিত শক্তিশালী হয়। বাংলাদেশে বুদ্ধিবৃত্তিক ফ্যাসিবাদ হলো শিক্ষিত, প্রভাবশালী বা রাষ্ট্রকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সহায়তা করা বুদ্ধিজীবী ও জ্ঞানতাত্ত্বিক প্রতিষ্ঠান, যারা জনগণের পাশে দাঁড়ানোর বদলে ‘ঘৃণা ও শত্রু’ তৈরি করে রাষ্ট্রের দমননীতি ও একনায়কতন্ত্রকে বৈধতা দেয়। এটা ইতিহাসকে বিকৃত এবং বিরোধী মতকে দমন করার সম্মতি উৎপাদন করে।

এই লেখায় আমরা বাংলাদেশে বুদ্ধিবৃত্তিক ফ্যাসিবাদের বৈশিষ্ট্য ও স্বরূপ সন্ধানের চেষ্টা করব। বুদ্ধিবৃত্তিক ফ্যাসিবাদের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো রাষ্ট্রের দমননীতি ও একনায়কতন্ত্রকে বৈধতা দেওয়া। বাংলাদেশের ইতিহাসে ১৯৭৫ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের বাকশাল প্রতিষ্ঠা একদলীয় ও ফ্যাসিবাদী শাসনের প্রকৃষ্ট উদাহরণ। সে সময় বুদ্ধিজীবীদের একটি অংশ প্রকাশ্যে এই পদক্ষেপকে ‘জাতীয় স্বার্থে আবশ্যক’ বলে সমর্থন দিয়েছিলেন। একইভাবে পরবর্তী সময়ে সামরিক শাসক এরশাদকে ঘিরেও অনেক শিক্ষাবিদ ও সাংবাদিক তার ‘উন্নয়নশীল রাষ্ট্র মডেল’কে বৈধতা দিয়েছিলেন, যার ধারাবাহিকতায় আমরা দেখি, গত ১৫ বছর ধরে চলা শেখ হাসিনার নব্য বাকশালি শাসনের সময়।

এই প্রবণতা বিরাজমান ছিল দলীয় নেতা শেখ মুজিবকে জাতির একমাত্র নেতা হিসেবে চাপিয়ে দেওয়া এবং তার নামে হাজার হাজার বই লেখা ও ছাপানোর মধ্যে। ‘গণতন্ত্র থেকে উন্নয়ন বড়’ স্লোগানকে জোরালো করা, ক্ষমতাসীন নেতাকে অতিমানব বানিয়ে তোলা, তার ব্যর্থতাকে দোষারোপ করা, ‘দলের খারাপ লোকদের’ চাপে রাখা, ব্যক্তি বা দলের সমালোচনার বদলে ‘শোষক, রাষ্ট্র, শাসক, এলিট’ নানা নামে দায়মুক্তি দেওয়া, বিরোধী পক্ষে সমালোচনা বা কার্যক্রমকে প্রতিক্রিয়াশীল হিসেবে চিত্রিত করা প্রভৃতি প্রবণতার মধ্যে।

পরবর্তী বৈশিষ্ট্য হলো স্বাধীন মতপ্রকাশ দমনের বৈধতা। ২০০৯ সাল-পরবর্তী ফ্যাসিবাদী সময় থেকে ’২৪-এর আগস্ট পর্যন্ত সাংবাদিকদের ওপর চলা ব্যাপক দমননীতি, হামলা, মামলা, খুন ও তার সমর্থনে একশ্রেণির লেখক ও বুদ্ধিজীবীর সম্মতি বুদ্ধিবৃত্তিক ফ্যাসিবাদের চূড়ান্ত উদাহরণ। বিশ্ববিদ্যালয়, পত্রপত্রিকা বা রাষ্ট্রের যেকোনো পর্যায়ের ভিন্নমত প্রকাশ বা সমালোচনামূলক আলোচনা কিংবা বিরোধী দল বিএনপি-জামায়াত করাকে ‘রাষ্ট্রবিরোধী’ বা ‘মৌলবাদী’ বা ‘স্বাধীনতাবিরোধী’ বলে লেবেল দেওয়ার সরকারি প্রবৃত্তিকে ত্বরান্বিত করেছেন এক শ্রেণির বুদ্ধিজীবী।

আমার দেশ-এর সম্পাদক মাহমুদুর রহমান ও দৈনিক সংগ্রামের সম্পাদক আবুল আসাদের মতো বর্ষীয়ান সাংবাদিকের ওপর স্বাধীনতার চেতনার নামে হামলা করেছে লীগের গুন্ডারা। ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস! হামলার শিকার হয়েও বছরের পর বছর জেলে থাকতে হয়েছে এ দুজনকে। অথচ দেশের বুদ্ধিজীবী হিসেবে পরিচিত ব্যক্তিরা তখন নিশ্চুপ ছিলেন। বর্তমানে দুর্নীতির অভিযোগে জেলে থাকা অর্থনীতিবিদ আবুল বারাকাত জামায়াতপন্থি প্রতিষ্ঠানগুলোর দখল নিতে আবিষ্কার করেছেন ‘মৌলবাদের অর্থনীতি’, যার মাধ্যমে পরে এস আলম গ্রুপের হাত ধরে দেশের সবচেয়ে লাভজনক ইসলামী ব্যাংকগুলোর দখল নিয়েছিল সরকার। পরে জানতে পারা যায়, যার লাভের গুড় শেখ পরিবারে পর্যন্ত জমা পড়েছে।

এছাড়া ছাত্রলীগের দখলদারিতে থাকা হলগুলোয় ‘শিবির সন্দেহে’ হামলা, মামলা ও খুনকেও জায়েজ মনে করে নিশ্চুপ ছিলেন দেশের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। ডেইলি স্টার ও প্রথম আলোর মতো পত্রিকা হেফাজত আর জামায়াত সমর্থকদের ওপর সরকারের ম্যাসাকারের পর কর্তিত হওয়া গাছের জন্য দুঃখ জানিয়েছিল, কিংবা বীভৎসতার দায় দিয়েছিলে গণহত্যার শিকার হেফাজতের ওপর। এর বাইরে বহু গবেষক, লেখক ও কলামিস্ট নিরাপত্তার কারণে আত্মনিয়ন্ত্রণ বা সেলফ-সেন্সরশিপ বেছে নিয়েছিলেন। কেউ কেউ মুক্ত চিন্তার স্বার্থে কিংবা জীবন বাঁচাতে পাড়ি দিয়েছিলেন দেশের বাইরে।

অপর একটি বৈশিষ্ট্য হলো সরকারি আনুগত্যের বিনিময়ে রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ। গত ১৫ বছর রাষ্ট্রীয় পুরস্কার, পদক, বিদেশ সফর বা গবেষণা প্রকল্প বণ্টনে নির্দিষ্ট মতাদর্শের প্রতি আনুগত্য স্পষ্টভাবে দেখা যায়। উদাহরণস্বরূপ, রাষ্ট্রীয় পদক প্রদান বা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর নিয়োগ কিংবা ব্রিটিশ কমনওয়েলথ স্কলারশিপ বা একুশে পদক এবং স্বাধীনতা পদকে দলীয় আনুগত্যই ছিল একমাত্র যোগ্যতা। কেউ কেউ রেমিট্যান্স, ধারাবাহিক উন্নতায় পৌঁছা আরএমজি সেক্টর আর ডেটা ম্যানিপুলেশনের ফলে প্রবৃদ্ধি রেখায় তরতরে এগিয়ে যাওয়া অর্থনীতিকে ফিনল্যান্ডে গিয়ে আবিষ্কার করে বসেন ‘হাসিনাকোনমিক্স’-এর মতো হাস্যকর টার্ম।

এছাড়া অধিকাংশ পত্রিকার সাংবাদিক ও লেখকরা হাসিনাকে প্রশ্ন করার বদলে দিস্তার পর দিস্তা ভরে পত্রিকার হেডলাইন ও কলামে সরকার ও হাসিনার প্রশংসা করেছেন। টিভি ও পত্রিকার সিনিয়র সাংবাদিকরা সামনা-সামনি ক্যামেরায় সমালোচনা বা প্রশ্নের বদলে ‘নোবেল’ প্রাপ্তির মতো বিষয়কে নিয়ে হাস্যরস তোলার মতো প্রশংসা করে অতিমানব বানিয়েছে হাসিনাকে আর কাঁড়ি কাঁড়ি টিভি প্রোগাম বানিয়েছে শেখ হাসিনা, শেখ মুজিব ও সরকারের প্রশংসায়। পরে জানা যায়, এসব সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবী সরকারি ফ্ল্যাট ও দুর্নীতির ভাগীদার হয়েছেন মাঝে মাঝেই। এর ফলে যারা সরকার সমর্থক নয়, তাদের পক্ষে দু-একটি টিভি ছাড়া অন্য কোনো টিভি দেখা অসম্ভব হয়ে পড়েছিল।

এছাড়া ওয়ান টিভি, দিগন্ত টিভি, ইসলামিক টিভি ও পিস টিভি বন্ধ করে দেওয়া হয় তুচ্ছ কারণ দেখিয়ে, যাতে কলকাঠি নেড়েছিলেন একশ্রেণির সাংবাদিক নেতা এবং চুপ থেকে তাতে সম্মতি দিয়েছিলেন মিডিয়া ও বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের বড় অংশ। শিক্ষা ও সংস্কৃতি খাতেও ভিন্নমতকে অস্বীকার করে নতুন সত্য তৈরির প্রচেষ্টা চালানো হয়ে থাকে এ ধরনের ফ্যাসিবাদে। সরকার-সমর্থক বুদ্ধিজীবী ও শিক্ষাবিদরা বাংলাদেশের বিদ্যালয়গুলোর পাঠ্যপুস্তক ও সিলেবাস প্রণয়নে রাজনৈতিক দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি ঢুকিয়ে দেন। বিভিন্ন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় দখল নেন। তাদের পরামর্শে বন্ধ করে দেওয়া হয় অসংখ্য স্কুল-মাদরাসা। একদিকে শেখ মুজিবকে ‘জাতির ত্রাণকর্তা’ হিসেবে শেখানো হয়, অন্যদিকে বিকল্প বয়ান, যেমন বঙ্গ অঞ্চলের ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতাকে অস্বীকার করে ভারতপন্থি বয়ান লেখা হয়।

এছাড়া ’৪৭-এর পাকিস্তান আন্দোলনকে মুছে দেওয়া, ’৫২-র ভাষা আন্দোলন ও ’৭১-এর স্বাধীনতার সময়ে শেখ মুজিব ছাড়া বাকি সব অবদানকে অস্বীকার করা হয়। এই অঞ্চলের অধিকাংশ মানুষের মুসলিম সংস্কৃতিকে ‘মৌলবাদ’ বা ‘সন্ত্রাসবাদ’ আখ্যা দিয়ে দমন করা হলেও আমদানি করা নতুন নতুন উৎসবকে ‘উদার সংস্কৃতি’ হিসেবে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া হয়। এর বিরুদ্ধাচরণকারীদের বলা হয় ‘জঙ্গি’ কিংবা ‘রাজাকার’।

জনগণের অধিকার বাস্তবায়নে নিয়োজিত রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ধ্বংস ত্বরান্বিত করাও বুদ্ধিবৃত্তিক ফ্যাসিবাদের অংশ। গত ১৫ বছরে এই শ্রেণির বুদ্ধিজীবীরা নীরবে চেয়ে চেয়ে দেখেছে আমলাতন্ত্রের দলীয়করণ, বিচার বিভাগের দানবীয়করণ, ইলেকশন কমিশনসহ নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মানবাধিকার লঙ্ঘনসহ সব প্রতিষ্ঠানের ফ্যাসিবাদীকরণ। কেউ কেউ যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবির ব্যানারে বিরোধীদলীয় নেতাদের বিচারিক হত্যার লক্ষ্যে সরকারি সহযোগিতায় ২০১৩ সালে শাহবাগে বসা গণজাগরণ মঞ্চকে বলেছেন ‘দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ’।

আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সিপিবি নেতা এমএম আকাশের মতো (২০১৫) কেউ বলেছেন, বল প্রয়োগ করে হলেও যদি স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিকে (বিএনপি-জামায়াত) শেখ হাসিনার সরকার দুর্বল ও নিঃশেষিত করে, তাতে বাগড়া দেওয়া উচিত নয়। এছাড়া মানবাধিকার কমিশনের ড. মিজানুর রহমান, ড. কামালরা দেশের চরম মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে নিশ্চুপ থেকে মানবাধিকারকে দলীয় অধিকারে পরিণত করেছিলেন। সর্বোপরি নির্বাচন কমিশনের দলীয়করণ, কিংবা সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে ক্ষমতার কেন্দ্রীভূতকরণ—এ সবই বুদ্ধিজীবীদের একটি অংশের নীরব সমর্থন পেয়েছে। আন্তর্জাতিক মহলে এই ক্ষমতার বৈধতা প্রতিষ্ঠার জন্যও তারা গবেষণা রিপোর্ট, সেমিনার বা আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ‘অগ্রগতির গল্প’ শুনিয়েছেন ১৫ বছর ধরে।

তবে আশার কথা, ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করেই ফ্যাসিবাদী প্রশাসন, নিউজ, মিডিয়া, শিক্ষক ও বুদ্ধিজীবীদের বিরুদ্ধে একেকটা স্বাধীন মিডিয়া হয়ে অনলাইনে জেগেছিল দেশের ছাত্র-জনতা। ফলে কোটি কোটি মানুষ রাস্তায় নেমে এসে উপড়ে ফেলে হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসন, যা ছিল মূলত এই রাজনৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে এক প্রবল বিদ্রোহ। তবে রাজনৈতিক ফ্যাসিবাদকে উপড়ে ফেললেও সমাজে নানা উপকরণে আসীন থাকা বুদ্ধিবৃত্তিক ফ্যাসিবাদ অনেকটা বহাল রয়েছে। সরকারের দিক থেকে এর বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপও লক্ষণীয় নয়।

তাই আমাদের প্রয়োজন একটি নতুন বুদ্ধিবৃত্তিক জাগরণ, যেখানে জনগণের স্বার্থেই পুনর্মূল্যায়িত হবে ফ্যাসিবাদী ইতিহাস, সাংস্কৃতিক আচার-আচরণ, শিক্ষাব্যবস্থা, বুদ্ধিজীবী ও গণমাধ্যমের ভূমিকা। সুতরাং জুলাইয়ের অভ্যুত্থানে জাতির সামনে উন্মুক্ত হওয়া বুদ্ধিবৃত্তিক ফ্যাসিবাদ ও এর কাঠামোকে খারিজ করে বাংলাদেশপন্থি বুদ্ধিবৃত্তিক নবজাগরণই পারবে নতুন বাংলাদেশের নয়া মানস গড়ে দিতে।

লেখক : একাডেমিক ডিরেক্টর, সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স অ্যান্ড সিভিলাইজেশনাল স্টাডিজ

khaled.du502@gmail.com

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত