জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনা ও জনতার প্রত্যাশা

হাফেজ মুহাম্মদ আবুল মঞ্জুর
প্রকাশ : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯: ৩২

স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব আল্লাহ প্রদত্ত মহান এক নিয়ামত। এ দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের ওপর যখনই কোনো নগ্ন থাবা এসেছে, তা রুখে দাঁড়াতে প্রতিবার স্বাধিকার চেতনায় উজ্জীবিত, সৎ-সাহসী কেউ না কেউ এগিয়ে এসেছেন। দেশের আপামর জনগণ ঝাঁপিয়ে পড়েছেন স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার দুর্বার সংগ্রামে।

বিজ্ঞাপন

অনেক ত্যাগের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও আজ পর্যন্ত পূরণ হয়নি ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধে গণমানুষের স্বপ্ন-আকাঙ্ক্ষা। প্রতিবার জনতার মুক্তির আন্দোলন কঠোর হাতে দমন করেছে দেশের শাসক দল। বারবার রাজপথ রঞ্জিত হয়েছে অধিকারহারা মানুষের রক্তে। ক্ষমতায় চিরকাল টিকে থাকার জন্য ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা জনগণের টাকায় কেনা অস্ত্র দিয়ে হত্যা করেছেন দেশের মানুষ। গত দেড় দশকে বারবার চালিয়েছেন পৈশাচিক হত্যাকাণ্ড।

কিন্তু স্বাধিকার চেতনায় উজ্জীবিত, দেশপ্রেমিকরা কখনোই দমার নন। রক্তিম আত্মত্যাগ ও অবিরাম সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় প্রকৃত স্বাধীনতার স্বাদ পেতে তারা উদগ্রীব, দৃঢ়প্রত্যয়ী। এরই ফলে রচিত হলো জুলাই-আগস্ট রক্তাক্ত বিপ্লব।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের এ বিজয় আমাদের আবারও স্মরণ করিয়ে দিল দেশ ও জাতির কল্যাণে অধিকার আদায়ের সংগ্রামে ছাত্রসমাজই প্রাণশক্তি হিসেবে ভূমিকা রেখেছে যুগে যুগে। স্বাধিকার সংগ্রামে উজ্জীবিত ঐক্যবদ্ধ ছাত্র-জনতার তারুণ্যদীপ্ত আন্দোলনকে কখনো কোনোভাবেই দমানো যায়নি।

এবারও যেন ছাত্র-জনতার এই আত্মত্যাগ বৃথা না যায়, সে জন্য সবার সচেতন হতে হবে। এবারও যেন মানুষের মুক্তি আর অধিকার পাওয়ার স্বপ্ন-আকাঙ্ক্ষা অপূর্ণ থেকে না যায়, সে জন্য সদা সজাগ থাকতে হবে সবার। কারণ দেশ-বিদেশে সর্বত্র চলছে বড় ধরনের ষড়যন্ত্র জুলাই-আগস্ট বিপ্লবকে ব্যর্থ করে দেওয়ার জন্য। সর্বত্র এখনো রয়ে গেছে ফ্যাসিবাদের দোসররা। মানুষ এখনো নিরাপদ মনে করছে না তাদের থেকে। এত বড় বিপ্লবের পরও যদি সাধারণ মানুষ নিরাপত্তাবোধ না করতে পারে, তবে তা গভীর আশঙ্কাজনক। বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতি জুলাই-আগস্ট বিপ্লবী চেতনার পরিপন্থী। দেশের সর্বস্তর থেকে ফ্যাসিবাদের দোসরদের তাড়ানোর বিষয়ে সরকারকে আপসহীন ভূমিকায় দেখতে চায় দেশের মুক্তিকামী মানুষ।

বর্তমানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে রাষ্ট্র সংস্কারের পূর্বশর্ত হলো আত্মসংস্কার। আর এ জন্য প্রয়োজন ধর্মীয় মূল্যবোধসম্পন্ন একটি গ্রহণযোগ্য শিক্ষাব্যবস্থা এবং জনসাধারণের নৈতিক চরিত্রের উন্নয়নে কার্যকর উদ্যোগ। চাঁদাবাজি, দখলবাজি, কমিশন-বাণিজ্য, সুদ-ঘুষ, যৌতুকপ্রথাসহ যাবতীয় দুর্নীতি-অনিয়মের মূলোৎপাটন করতে হবে কঠোর হাতে। দারিদ্র্যবিমোচনে এখন প্রয়োজন সুদবিহীন বিকল্প কোনো উদ্যোগ। সমাজ থেকে নৈরাজ্য ও অশ্লীলতা বন্ধ করতে হবে। শিক্ষাঙ্গনসহ সারাদেশ থেকে দূর করতে হবে মাদকের সর্বগ্রাসী ছোবল। ইতিবাচক, আদর্শিক ছাত্ররাজনীতির ধারাকে বিকশিত করার ব্যবস্থা করা দরকার। সীমান্ত হত্যা বন্ধে জিরো টলারেন্স নীতি মেনে চলার কোনো বিকল্প নেই। সর্বোপরি বিভাজন, সংঘাত-সহিংসতাকে বিদায় দিয়ে ঐক্য ও সংহতির দুর্ভেদ্য প্রাচীর গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া উচিত।

লেখক : যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক

কক্সবাজার ইসলামি সাহিত্য ও গবেষণা পরিষদ

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত