সায়ন্থ সাখাওয়াৎ
আপনাদের সাদামাটা কয়েকটা প্রশ্ন করি; দেখেন, উত্তর জানেন কি না। ১. মুক্তিযুদ্ধের দলিল সংরক্ষণের কাজ শুরু হয় কার আমলে? ২. সাভারে যে স্মৃতিসৌধে গিয়ে আমরা মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের শ্রদ্ধা জানাই সেটি কার আমলে, কার তত্ত্বাবধানে নির্মিত হয়েছে?
৩. দেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কার ‘স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার’ কে চালু করেছেন? ৪. বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ-বিষয়ক মন্ত্রণালয় কার আমলে চালু হয়? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর জানা না থাকলে জ্ঞানী গুগলকে জিজ্ঞেস করুন, বিস্তারিত উত্তর দিয়ে দেবে। যারা অলস, তারা এখানেই সংক্ষিপ্ত উত্তরটি জেনে নিন। প্রথম তিনটি প্রশ্নের উত্তরে অবধারিতভাবে আসবে স্বাধীনতার ঘোষক সেক্টর কমান্ডার ও জেড ফোর্সের অধিনায়ক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের নাম। আর শেষ প্রশ্নটির উত্তরে আসবে শহীদ জিয়ার উত্তরসূরি সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নাম।
‘উই রিভোল্ট’ বলে প্রথম মুক্তিযুদ্ধ শুরু করে ফিল্ডে লড়াই করে দেশ স্বাধীন করেই থেমে থাকেননি জিয়াউর রহমান ও তার দল বিএনপি। মুক্তিযুদ্ধের বিষয়ে বড় সব পজিটিভ পদক্ষেপ নিয়েছেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও তার উত্তরসূরি বেগম খালেদা জিয়া। তাহলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ফেরিওয়ালা দল আওয়ামী লীগ কী করল?
হ্যাঁ, তারাও করেছে। কী করেছে দেখেন। তারা ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা বানিয়েছে বেশুমার। মুক্তিযুদ্ধের পরে জন্ম নিয়েও নাকি কেউ কেউ মুক্তিযোদ্ধা বনে গেছেন। সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমে এসেছে, সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকেরই মুক্তিযোদ্ধা সনদ ‘ভুয়া’ (কালের কণ্ঠ, ৩০ এপ্রিল ২০২৫)। শুধু মোজাম্মেল হকই নয়, সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, সাবেক আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আব্দুল মতিন খসরু, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী কর্নেল (অব.) ফারুক খান ও টিপু মুনশি এবং সাবেক সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মোজাম্মেল হোসেনের বিরুদ্ধে ‘ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা’ বলে যে অভিযোগ উঠেছে, তা তদন্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এই তালিকায় সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকসহ আওয়ামী লীগের দুই সংসদ সদস্য, সাবেক সচিব, আইজিপি, সেনা কর্মকর্তাসহ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আরো ১৫ বিশিষ্ট ব্যক্তির তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই শুরু করেছে তথ্য যাচাই-বাছাইকারী প্রতিষ্ঠান জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা)।
সম্প্রতি সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, মুক্তিযোদ্ধার তালিকা থেকে বাদ যাচ্ছেন ২ হাজার ১১১ জন। এ তথ্য জানিয়েছেন স্বয়ং মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক ই আজম। কারণ এরা ‘শিশু মুক্তিযোদ্ধা’। মুক্তিযোদ্ধাদের বয়স মন্ত্রণালয় থেকে ১২ বছর ৬ মাস নির্ধারণ করা আছে। অথচ এর চেয়ে কম বয়সি আছেন ২ হাজার ১১১ জন।
তবে সম্প্রতি যে খবরটি অনেককে অবাক করেছে তা হলো, গেজেট অনুযায়ী শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ৬ হাজার ৭৫৭ জন। এর মধ্যে ভাতা গ্রহণ করছেন ৫ হাজার ৩৫৮ জনের পরিবার। বাকি ১ হাজার ৩৯৯ জনের পরিবারের হদিস নেই। তাদের খুঁজতে মাঠ প্রশাসনকে কাজে লাগানোর উদ্যোগ নিয়েছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় (দৈনিক যুগান্তর, ৫ মে ২০২৫)।
মন্ত্রণালয় থেকে ভাতাপ্রাপ্ত মোট বীর মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ১ লাখ ৯৬ হাজার ৪৫৪ জন। এর মধ্যে বীরাঙ্গনা রয়েছেন ৪৬৪ জন, যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা ৫ হাজার ৮৯৫ জন, শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা ৫ হাজার ৩৩৩ জন ও খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ৩৬৮ জন। সব মিলিয়ে মোট ভাতাপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ২ লাখ ৮ হাজার ৫০ জন। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের সংখ্যা ৫৬০ জন। এটাই সরকারি হিসাব।
একটা বিষয় ভেবে দেখুন। ধরুন, একজন মানুষ মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে শহীদ হয়েছেন। আরেকজন গুরুতর পঙ্গু হয়ে ফিরে এসেছেন, কিন্তু কর্মক্ষমতা হারিয়েছেন। আরেকজন আহত হয়ে ফিরে এসেছেন এবং কর্মক্ষম আছেন। আরেকজন যুদ্ধ জয় করে বীরদর্পে স্বাধীন দেশে ফিরে এসেছেন। তারা সবাই দেশের জন্য জীবন বাজি রেখে যুদ্ধে গেছেন। কারো অবদান কারো থেকে কম নয়। কারো সম্মানও কম-বেশি নয়। দেশপ্রেমিক যোদ্ধা মানেই তিনি বীর, তিনি সম্মানের। কিন্তু স্যাক্রিফাইস বিবেচনা করলে যিনি শহীদ হলেন তার পরিবারের চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত আর কে হতে পারে! দেশের জন্য যিনি জীবন দিয়ে দিলেন, তার পরিবার যে কী হারাল তা ওই পরিবারের সদস্য ছাড়া আর কে বুঝবে! সম্মান-সম্মানী যা-ই বলেন, তা থেকে কি ওই সব শহীদ পরিবারের চেয়ে অন্য কেউ বেশি গুরুত্ব পেতে পারেন?
এবার একটা প্রশ্নের উত্তর ভেবে দেখুন—মাত্র ৫ হাজার ৩৫৮ শহীদের পরিবার কেন ভাতা পাচ্ছেন? বাকিরা গেল কোথায়? তাদের খুঁজে বের করা হলো না কেন ৫৪ বছরেও? একজন বলে গেছেন, মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা ৩০ লাখ। অমনি ওটা আইন হয়ে গেল? ওটাকে ধর্মগ্রন্থের বাণীর মতো মানতে হবে? ইতিহাসের প্রয়োজনে মুক্তিযুদ্ধে প্রকৃত শহীদ ও তার পরিবারকে যথাযথ সম্মান দেওয়ার প্রয়োজনে তো শহীদ মুক্তিযোদ্ধার একটা নির্মোহ ও সঠিক তালিকা হতে পারত, কিন্তু সেটা কেউ করেনি। এটা না করার পেছনে হয়তো এক ধরনের হীনম্মন্যতা অথবা বিষয়ের স্পর্শকাতরতা কাজ করেছে। মুক্তিযুদ্ধে শহীদের যে সংখ্যাটা আমরা জানি বা বলি, যদি প্রকৃত সংখ্যা তার চেয়ে বেশি বা কম হয়, তাতে কি মুক্তিযুদ্ধের মাহাত্ম্য একটুও কমে যায়? ১৯৭১ সালে এদেশে গণহত্যা হয়েছে, এটা তো মিথ্যা নয়। নির্বিচারে গুলি ও অগ্নিসংযোগ করে জানমালের ক্ষতিসাধন করা হয়েছে, অনেক নারীর সম্ভ্রমহানি হয়েছে, সেটাও তো মিথ্যা নয়। সর্বশেষ একটা রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন হয়েছে। সেখানে শহীদের সংখ্যা কম বা বেশি নিয়ে হীনম্মন্যতায় ভোগার কোনো কারণ নেই।
এখনো মুক্তিযুদ্ধের সময়ে প্রাপ্তবয়স্ক ছিলেন এমন বহু লোক বেঁচে আছেন। লোকশুমারির সময় তার সঙ্গে প্রত্যেক গ্রাম, পাড়া ও মহল্লা ধরে ধরে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রাথমিক পরিসংখ্যান বের করে তা ব্যাপকভাবে যাচাই-বাছাই করে সব পক্ষের জন্য উন্মুক্ত রেখে সঠিক কি না, তা যাচাইয়ের পরে প্রতিটা ইউনিয়ন পরিষদের সামনে ওই এলাকার শহীদদের তালিকার নামফলক দিলে তা দেখে শত শত বছর পরেও ওই শহীদ পরিবারের উত্তরসূরিরা গর্বিত হতে পারবেন।
মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা আবেগের বিষয় হলেও যুক্তি ও তথ্য-উপাত্তের বাইরে অতি আবেগ পরিহার করে কিছু ইতিহাসভিত্তিক কাজ হওয়া দরকার, যা ৫৪ বছরেও হয়নি। তাই বলে এখনো তো সময় ফুরিয়ে যায়নি।
লেখক : কবি, কলামিস্ট ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক
আপনাদের সাদামাটা কয়েকটা প্রশ্ন করি; দেখেন, উত্তর জানেন কি না। ১. মুক্তিযুদ্ধের দলিল সংরক্ষণের কাজ শুরু হয় কার আমলে? ২. সাভারে যে স্মৃতিসৌধে গিয়ে আমরা মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের শ্রদ্ধা জানাই সেটি কার আমলে, কার তত্ত্বাবধানে নির্মিত হয়েছে?
৩. দেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কার ‘স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার’ কে চালু করেছেন? ৪. বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ-বিষয়ক মন্ত্রণালয় কার আমলে চালু হয়? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর জানা না থাকলে জ্ঞানী গুগলকে জিজ্ঞেস করুন, বিস্তারিত উত্তর দিয়ে দেবে। যারা অলস, তারা এখানেই সংক্ষিপ্ত উত্তরটি জেনে নিন। প্রথম তিনটি প্রশ্নের উত্তরে অবধারিতভাবে আসবে স্বাধীনতার ঘোষক সেক্টর কমান্ডার ও জেড ফোর্সের অধিনায়ক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের নাম। আর শেষ প্রশ্নটির উত্তরে আসবে শহীদ জিয়ার উত্তরসূরি সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নাম।
‘উই রিভোল্ট’ বলে প্রথম মুক্তিযুদ্ধ শুরু করে ফিল্ডে লড়াই করে দেশ স্বাধীন করেই থেমে থাকেননি জিয়াউর রহমান ও তার দল বিএনপি। মুক্তিযুদ্ধের বিষয়ে বড় সব পজিটিভ পদক্ষেপ নিয়েছেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও তার উত্তরসূরি বেগম খালেদা জিয়া। তাহলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ফেরিওয়ালা দল আওয়ামী লীগ কী করল?
হ্যাঁ, তারাও করেছে। কী করেছে দেখেন। তারা ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা বানিয়েছে বেশুমার। মুক্তিযুদ্ধের পরে জন্ম নিয়েও নাকি কেউ কেউ মুক্তিযোদ্ধা বনে গেছেন। সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমে এসেছে, সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকেরই মুক্তিযোদ্ধা সনদ ‘ভুয়া’ (কালের কণ্ঠ, ৩০ এপ্রিল ২০২৫)। শুধু মোজাম্মেল হকই নয়, সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, সাবেক আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আব্দুল মতিন খসরু, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী কর্নেল (অব.) ফারুক খান ও টিপু মুনশি এবং সাবেক সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মোজাম্মেল হোসেনের বিরুদ্ধে ‘ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা’ বলে যে অভিযোগ উঠেছে, তা তদন্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এই তালিকায় সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকসহ আওয়ামী লীগের দুই সংসদ সদস্য, সাবেক সচিব, আইজিপি, সেনা কর্মকর্তাসহ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আরো ১৫ বিশিষ্ট ব্যক্তির তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই শুরু করেছে তথ্য যাচাই-বাছাইকারী প্রতিষ্ঠান জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা)।
সম্প্রতি সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, মুক্তিযোদ্ধার তালিকা থেকে বাদ যাচ্ছেন ২ হাজার ১১১ জন। এ তথ্য জানিয়েছেন স্বয়ং মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক ই আজম। কারণ এরা ‘শিশু মুক্তিযোদ্ধা’। মুক্তিযোদ্ধাদের বয়স মন্ত্রণালয় থেকে ১২ বছর ৬ মাস নির্ধারণ করা আছে। অথচ এর চেয়ে কম বয়সি আছেন ২ হাজার ১১১ জন।
তবে সম্প্রতি যে খবরটি অনেককে অবাক করেছে তা হলো, গেজেট অনুযায়ী শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ৬ হাজার ৭৫৭ জন। এর মধ্যে ভাতা গ্রহণ করছেন ৫ হাজার ৩৫৮ জনের পরিবার। বাকি ১ হাজার ৩৯৯ জনের পরিবারের হদিস নেই। তাদের খুঁজতে মাঠ প্রশাসনকে কাজে লাগানোর উদ্যোগ নিয়েছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় (দৈনিক যুগান্তর, ৫ মে ২০২৫)।
মন্ত্রণালয় থেকে ভাতাপ্রাপ্ত মোট বীর মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ১ লাখ ৯৬ হাজার ৪৫৪ জন। এর মধ্যে বীরাঙ্গনা রয়েছেন ৪৬৪ জন, যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা ৫ হাজার ৮৯৫ জন, শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা ৫ হাজার ৩৩৩ জন ও খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ৩৬৮ জন। সব মিলিয়ে মোট ভাতাপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ২ লাখ ৮ হাজার ৫০ জন। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের সংখ্যা ৫৬০ জন। এটাই সরকারি হিসাব।
একটা বিষয় ভেবে দেখুন। ধরুন, একজন মানুষ মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে শহীদ হয়েছেন। আরেকজন গুরুতর পঙ্গু হয়ে ফিরে এসেছেন, কিন্তু কর্মক্ষমতা হারিয়েছেন। আরেকজন আহত হয়ে ফিরে এসেছেন এবং কর্মক্ষম আছেন। আরেকজন যুদ্ধ জয় করে বীরদর্পে স্বাধীন দেশে ফিরে এসেছেন। তারা সবাই দেশের জন্য জীবন বাজি রেখে যুদ্ধে গেছেন। কারো অবদান কারো থেকে কম নয়। কারো সম্মানও কম-বেশি নয়। দেশপ্রেমিক যোদ্ধা মানেই তিনি বীর, তিনি সম্মানের। কিন্তু স্যাক্রিফাইস বিবেচনা করলে যিনি শহীদ হলেন তার পরিবারের চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত আর কে হতে পারে! দেশের জন্য যিনি জীবন দিয়ে দিলেন, তার পরিবার যে কী হারাল তা ওই পরিবারের সদস্য ছাড়া আর কে বুঝবে! সম্মান-সম্মানী যা-ই বলেন, তা থেকে কি ওই সব শহীদ পরিবারের চেয়ে অন্য কেউ বেশি গুরুত্ব পেতে পারেন?
এবার একটা প্রশ্নের উত্তর ভেবে দেখুন—মাত্র ৫ হাজার ৩৫৮ শহীদের পরিবার কেন ভাতা পাচ্ছেন? বাকিরা গেল কোথায়? তাদের খুঁজে বের করা হলো না কেন ৫৪ বছরেও? একজন বলে গেছেন, মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা ৩০ লাখ। অমনি ওটা আইন হয়ে গেল? ওটাকে ধর্মগ্রন্থের বাণীর মতো মানতে হবে? ইতিহাসের প্রয়োজনে মুক্তিযুদ্ধে প্রকৃত শহীদ ও তার পরিবারকে যথাযথ সম্মান দেওয়ার প্রয়োজনে তো শহীদ মুক্তিযোদ্ধার একটা নির্মোহ ও সঠিক তালিকা হতে পারত, কিন্তু সেটা কেউ করেনি। এটা না করার পেছনে হয়তো এক ধরনের হীনম্মন্যতা অথবা বিষয়ের স্পর্শকাতরতা কাজ করেছে। মুক্তিযুদ্ধে শহীদের যে সংখ্যাটা আমরা জানি বা বলি, যদি প্রকৃত সংখ্যা তার চেয়ে বেশি বা কম হয়, তাতে কি মুক্তিযুদ্ধের মাহাত্ম্য একটুও কমে যায়? ১৯৭১ সালে এদেশে গণহত্যা হয়েছে, এটা তো মিথ্যা নয়। নির্বিচারে গুলি ও অগ্নিসংযোগ করে জানমালের ক্ষতিসাধন করা হয়েছে, অনেক নারীর সম্ভ্রমহানি হয়েছে, সেটাও তো মিথ্যা নয়। সর্বশেষ একটা রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন হয়েছে। সেখানে শহীদের সংখ্যা কম বা বেশি নিয়ে হীনম্মন্যতায় ভোগার কোনো কারণ নেই।
এখনো মুক্তিযুদ্ধের সময়ে প্রাপ্তবয়স্ক ছিলেন এমন বহু লোক বেঁচে আছেন। লোকশুমারির সময় তার সঙ্গে প্রত্যেক গ্রাম, পাড়া ও মহল্লা ধরে ধরে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রাথমিক পরিসংখ্যান বের করে তা ব্যাপকভাবে যাচাই-বাছাই করে সব পক্ষের জন্য উন্মুক্ত রেখে সঠিক কি না, তা যাচাইয়ের পরে প্রতিটা ইউনিয়ন পরিষদের সামনে ওই এলাকার শহীদদের তালিকার নামফলক দিলে তা দেখে শত শত বছর পরেও ওই শহীদ পরিবারের উত্তরসূরিরা গর্বিত হতে পারবেন।
মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা আবেগের বিষয় হলেও যুক্তি ও তথ্য-উপাত্তের বাইরে অতি আবেগ পরিহার করে কিছু ইতিহাসভিত্তিক কাজ হওয়া দরকার, যা ৫৪ বছরেও হয়নি। তাই বলে এখনো তো সময় ফুরিয়ে যায়নি।
লেখক : কবি, কলামিস্ট ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক
এই বছর অর্থনীতির নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে উদ্ভাবন ও সৃজনশীল ধ্বংসের প্রক্রিয়া (creative destruction) কীভাবে দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে সেই গবেষণার ওপর। নতুন প্রযুক্তি ও ধারণা পুরোনো ব্যবস্থাকে প্রতিস্থাপন করে সমাজ যখন পরিবর্তনের জন্য উন্মুক্ত থাকে, তখনই টেক
১৮ ঘণ্টা আগে‘মনের তালা খুলল কে, চাবিওয়ালা, চাবিওয়ালা!’ প্রখ্যাত শিল্পী রুনা লায়লার সেই সুরেলা প্রশ্নের উত্তর আজও খুঁজে বেড়াচ্ছি! তবে ব্যক্তিগত জীবনে নয়, রাষ্ট্রীয় জীবনে। এই রাষ্ট্রের জীবনেও একটা বিশেষ তালা আছে, আর তার নাম আর্টিকেল ৭০! এই তালা লাগানো হয়েছিল সেই সব মাননীয়র জন্য, যাদের মধ্যে ‘ছাগলীয়’ প্রবৃত্তি রয়ে
১৮ ঘণ্টা আগেভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইসরাইলের যুদ্ধাপরাধী প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে প্রায়ই তার পরম বন্ধু বলে বেশ গৌরবের সঙ্গে প্রচার করে থাকেন। ভিন্ন দেশের এ দুই রাজনীতিবিদের প্রগাঢ় বন্ধুত্বের মূল সূত্র হলো মুসলমানদের প্রতি তাদের তীব্র ঘৃণা। বর্তমান বিশ্বে ইসলামোফোবিয়ায় আক্রান্ত শীর্ষ দুটি
১৮ ঘণ্টা আগেগাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে যখন হতাশা চরমে, তখনই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন এক নতুন ‘২০ দফার শান্তি পরিকল্পনা’। সেখানে তিনি নিজেকে বসিয়েছেন একটি তথাকথিত ‘বোর্ড অব পিস’-এর চেয়ারম্যান হিসেবে।
২ দিন আগে