মিনার রশীদ
বিদায় হজের ভাষণে রাসুলুল্লাহ (সা.) ইসলামের মৌলিক আদর্শ হিসেবে মানবাধিকার, ন্যায়বিচার, নারী অধিকার, সামাজিক সাম্য ও উম্মাহর ঐক্যের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। বিশেষ করে ধর্ম নিয়ে অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করা সম্পর্কে তিনি বলেছিলেন, ‘ধর্মের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি কোরো না, কারণ তোমাদের পূর্ববর্তী জাতিগুলো তাদের এই অতিরিক্ত কঠোরতার কারণেই ধ্বংস হয়েছে।’ (সুনান আন-নাসায়ি : ৩০৫৭, মুসনাদ আহমাদ : ১৮৫১)
আজ সবকিছু দেখে মনে হচ্ছে, আমরা প্রিয় নবীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনাগুলোর দিকেই বেশি অবজ্ঞা দেখাচ্ছি। যেসব করতে মানা করে গেছেন, সেসব কাজই বেশি করে করছি!
‘অল্প বিদ্যা ভয়ংকরী’ গোষ্ঠী দিয়েই আমাদের সমাজ, ধর্ম ও রাজনীতি সব ভরে গেছে! লক্ষ্মীপুরের জনৈক ধর্মরক্ষক দুই বেরোজদারের কানে ধরে উঠবস করিয়েছেন এবং সেই ছবি ভিডিও করে তার এই মহৎ কর্মটি সারাদেশের মানুষকে প্রদর্শন করেছেন । হ্যাডমসম্পন্ন লোকটার মুখে দাড়ি ও মাথায় টুপি থাকলেও ইসলামের আইন কিংবা দেশীয় আইন সম্পর্কে কতটুকু ওয়াকিবহাল, তা জানি না। তবে তিনি সেখানকার বণিক সমিতির সভাপতি! জানা গেছে, ওই দুই বয়স্ক লোক সামনে বসে খাবার খাননি, পাশের হিন্দু হোটেলে ঢুকে খাবার খাচ্ছিলেন। সেখান থেকে ধরে এনে এই মহাশক্তিধর ব্যক্তি তার ধার্মিকতা দেখিয়েছেন।
খবরে প্রকাশ, কয়েকজন মেয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ধূমপান করছিলেন। তা দেখে গুটিকয়েক পুরুষের পুরুষানুভূতিতে আঘাত হানে। বিষয়টি আসলে ধর্মীয় ইস্যু ছিল না, ছিল জেন্ডার ইস্যু। সেখানে কেমন করে যেন ধর্ম প্রবেশ করে ফেলল? তৌহিদি জনতার একটি অংশ নেহাত পুরুষের সমস্যাকে খামোখাই নিজেদের ঘাড়ে টেনে নিল? কারণ কোনো পুরুষ ধূমপান করলে ধর্মের যতটুকু ক্ষতি হয়, কোনো নারী ধূমপান করলেও ক্ষতির পরিমাণ সেই একই থাকে!
এখানেও ধর্মরক্ষক হিসেবে যিনি উদয় হয়েছেন, তিনি হাজী সেলিমের লেসপেন্সার ছিলেন। এই পাজি সেলিমের দল ধূমপানরত মেয়েগুলোকে চরমভাবে হিউমিলিয়েট বা নাজেহাল করে! সংগত কারণেই বিষয়টি দেশের নারী ব্রিগেডসহ সব নাগরিক সমাজকে চরমভাবে ক্ষেপিয়ে তোলে। হাজী সেলিমের লেসপেন্সার হলেও ঘটনাটি কিন্তু তৌহিদি জনতার অ্যাকাউন্টে রেকর্ড হয়েছে।
তৌহিদি জনতার এই লাইনের আরেকজন, যিনি নিজে অনলাইনে নোংরা ছবি দেখেন, তিনি এক মেয়েকে ওড়না সঠিক স্থানে রাখার পরামর্শ দিয়ে হইচই বাধিয়ে ফেলেছেন! আত্মপক্ষ সমর্থনে মিডিয়ার সামনে যে দু-একটা কথা বলেছেন, সেখানেও নিজের বিকৃত রুচির পরিচয় দিয়েছেন। তৌহিদি জনতার পক্ষ থেকে তাকে একটি ফুলের মালাও পরানো হয় এবং সেই ছবিও ছড়িয়ে দেওয়া হয়।
গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অতি উৎসাহী অংশ এই ঘটনাগুলো গরম মসলা হিসেবে ব্যবহারের চেষ্টা করে।
সুযোগ বুঝে রাস্তায় নামে হিযবুত তাহরীর। ‘মার্চ ফর খেলাফত’ নাম দিয়ে রাস্তায় নামে নিষিদ্ধ ঘোষিত এই সংগঠনটি । কিন্তু ওয়াকিবহাল মহলসহ সাধারণ জনতা এটাকে ‘মার্চ ফর আওয়ামী খেলাফত’ হিসেবেই ধরে নিয়েছে। নিজেদের এক ঝিলিক রাস্তায় দেখানোয় মূল সংগঠনটির কতটুকু অর্জন হয়েছে জানি না, তবে আওয়ামী খেলাফতের অর্জন অনেক বেশি হয়েছে!
আপাতদৃষ্টিতে এগুলোকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা মনে হলেও এগুলোকে একটি জায়গা থেকে রিমোটলি পরিচালনা করা হচ্ছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে! কেউ বুঝে আর কেউ না বুঝে তাদের পাতা ফাঁদে পা রাখছে।
আমাদের এই মুহূর্তে দরকার ডাক্তার জাকির নায়েকের মতো বিজ্ঞ কিছু ইসলামিক স্কলার! এমন স্কলার দরকার, যারা সমস্যার গভীরে গিয়ে একটা বোধগম্য সমাধান বের করে আনতে পারবেন!
বিশ্ববিখ্যাত টাইমস ম্যাগাজিন তখন সানিয়া মির্জাকে নিয়ে একটি প্রচ্ছদ প্রতিবেদন প্রকাশ করে! এটার একটা জুতসই জবাব দিয়েছিলেন ডাক্তার জাকির নায়েক!
মহিলা টেনিসে বিশ্বে এক নম্বর তারকা ছিলেন সেরিনা উইলিয়াম আর ৩৩ নম্বরের দিকে ছিলেন ইন্ডিয়ার মুসলিম তারকা সানিয়া মির্জা। সাংবাদিকদের তিনি জিজ্ঞাসা করেছিলেন, তালিকায় এক নম্বরে যিনি আছেন সেই সেরিনা উইলিয়ামসহ ওপরের আরো ৩১ জনের অধিকাংশই খ্রিষ্টান, তাদের পোশাক বাইবেলসম্মত কি না, এটা নিয়ে পোপ বা অন্য কোনো পাদরিকে কেন প্রশ্ন করো না?
কিন্তু সানিয়া মির্জা টেনিসে যে পোশাক পরেন, তা নিয়ে সেই ধর্মের আলেম-ওলামাকে অত্যন্ত উৎসাহভরে প্রশ্ন করা হয়। আমাদের আলেম-ওলামা দ্বিগুণ উৎসাহ নিয়ে সেসব প্রশ্নের জবাব দেন। সেই প্রশ্নের জবাব বা ফতোয়া নিয়ে টাইমসের মতো ম্যাগাজিন প্রচ্ছদ প্রতিবেদন প্রকাশ করে!
ডাক্তার জাকির নায়েক চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেন, বাইবেল, ত্রিপিটক, কিংবা বেদের কোন্ জায়গায় কোন্ বিষয়টি রয়েছে। তার স্বভাবসুলভ স্টাইলে ওই লেকচারের মধ্যেই দেখিয়ে দিয়েছিলেন, খোদ বাইবেলেই লেখা আছে—‘কোনো নারীর উচিত নয় কোনো পুরুষের অবয়ব ধারণ করা, তেমনি কোনো পুরুষের উচিত নয় কোনো নারীর অবয়ব ধারণ করা!’ এগুলো শুনলে তো এ দেশের প্রগতিবাদীরা মূর্ছা যাবে! কারণ এসব কথা তো শুধু কোরআনেই থাকার কথা!
বাইবেলের মতো কোরআনও চায় নারী-পুরুষের নিজ নিজ বৈশিষ্ট্য বা অবয়ব অক্ষুণ্ণ রাখতে! মানবজাতির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতেই প্রত্যেকটি আব্রাহামিক ধর্ম এই সুস্পষ্ট অবস্থানটি নিয়েছে। নারীকে পুরুষ বানিয়ে নয়, বরং নারীকে নারী হিসেবে রেখেই তার অধিকার ও সম্মান নিশ্চিত করতে চায়! নারীকে পুরুষ বানানোর অর্থই হলো নারীত্বের অবমাননা।
অথচ এই কাজটিকে একটি রেওয়াজ বানিয়ে গেছেন মাফিয়া রানি! প্রশাসনের কারো জন্য তাকে ম্যাডাম বলে সম্বোধন করার অনুমোদন ছিল না। খালেদা জিয়াকে সবাই ম্যাডাম ডাকতেন। এ কারণেও তিনি এই সম্বোধন পছন্দ করতেন না। চাটুকার এক মিনিস্টার বলেছিলেন, আমাদের মধ্যে পুরুষ এখন একজনই আছেন, তিনি শেখ হাসিনা! অহংকার ভরে তার হাঁটার এই ভঙ্গি ছোট ভাই কাদের সিদ্দিকীরও নজরে পড়েছিল! তাকে লক্ষ করে এই ছোট ভাই বলেছিলেন, ‘বইনদি, মাইয়া মানুষের ব্যাটা মানুষের মতো হাঁটা ঠিক না!’
বিশ্বের কিছু কিছু সেনাবাহিনীতে নারী কর্মকর্তাদের ‘স্যার’ হিসেবে সম্বোধনের এই রেওয়াজটি সীমিত আকারে চালু রয়েছে! তবে সেখানেও নারী অফিসারদের জন্য ‘ম্যাম’ শব্দটির ব্যবহার অধিক দেখা যায়। কিন্তু সিভিলিয়ান আবহে এই সম্বোধনটির জন্মদাতা আমাদের পলাতক দস্যুরানি। তাকে আমরা দেশছাড়া করেছি, কিন্তু তার বদ খাসলতটি এখনো সযত্নে লালন করে যাচ্ছি! বর্তমান মহিলা উপদেষ্টাদেরও নাকি ‘স্যার’ বলে সম্বোধন করা হয়।
একজন নারী হয়ে পুরুষের মতো ‘স্যার’ ডাক শোনার মজাই হয়তোবা আলাদা। যারা পুরুষদের বা পুরুষতন্ত্রকে প্রচণ্ড ঘৃণা করেন, দেখা যায় তারাই পুরুষের হাব-ভাব-হ্যাডম বেশি ধারণ করতে চান! পুরুষতন্ত্রের এই বিজয় দেখে অবাক হয়ে যখন ডাকি, হায় সেলুকাস! খেয়াল করে দেখি, সেও একজন পুরুষ!
একটু গভীরভাবে চিন্তা করলেই বুঝতে পারবেন এখানে যে মানবিক রসায়নটি কাজ করছে, তার নাম অহংকার। এই অহংকার ‘স্যার’ সম্বোধনটিতে যেভাবে অনুভূত হয়, ম্যাডাম বা ম্যামে তেমনভাবে প্রকাশ পায় না! এই রোগটি সমূলে উৎপাটনের জন্য মারাত্মক কিছু ওষুধ ইসলামে রয়েছে! হাদিসে বলা হয়েছে, যার অন্তরে সরিষা পরিমাণ অহংকার থাকবে, সে বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে না! হাদিসে আরো বলা হয়েছে, কেউ পেট ভরে খেলো আর প্রতিবেশী অভুক্ত থাকল, তবে সে মুসলমান নহে! অন্য আরেকটি হাদিসে বলা হয়েছে, যার জিহ্বা থেকে অন্য মুসলমান নিরাপদ নহে, সে মুসলমান নহে।
এসব কথা আমরা বেশি বেশি শোনাই মাদরাসার এতিম ও নিরীহ ছাত্রছাত্রীদের। কিন্তু ভবিষ্যতে যারা প্রধানমন্ত্রী হবে, রাষ্ট্রপতি হবে, প্রধান বিচারপতি কিংবা প্রধান সেনাপতি হবে, তাদের শোনাই না। এটাই আমাদের সামগ্রিক সামাজিক ব্যর্থতা।
নামাজ না পড়লে, রোজা না রাখলে বা জাকাত না দিলে সে পাপী মুসলমান হিসেবে থাকবে। দাঁড়ি না রাখলে, হিজাব পরিধান না করলেও পাপ হবে কিন্তু মুসলিম মিল্লাত থেকে নাম কাটা যাবে না। অথচ আমরা গুরুত্ব বেশি দিই পরেরগুলো।
মাফিয়া রানির মাফিয়াগং ষোলো বছরে দেশ থেকে লুট করেছে ২৯৩ বিলিয়ন ডলার, এর মধ্যে বিদেশে পাচার করেছে ১৫০ বিলিয়ন ডলার। এই টাকা রাষ্ট্রের হাতে থাকলে এ দেশের কোনো বনি আদমকে অভুক্ত পেটে ঘুমাতে যেতে হতো না! আমাদের নিজ নিজ জিহ্বাকে যদি ধর্মের নির্দেশমতো নিয়ন্ত্রণে রাখতাম, তবে এই সমাজটিতেই বেহেশতের শান্তি বিরাজ করত!
ঘরে ঘরে পটেনশিয়াল ধর্ষক তৈরি করে শুধু শক্ত আইন দিয়ে ধর্ষণ কমানো যাবে না
এক প্রবাসী বন্ধু তার স্ত্রীকে লাইনে রাখার জন্য একটি বোরকা কিনে পাঠান। সেই গল্পটি সন্তুষ্টচিত্তে আমাকে শোনাচ্ছিলেন। তা শুনে একটু মাথা ঝাঁকিয়ে বললাম, ব্রাদার! আপনি বছরের পর বছর বিদেশে পড়ে আছেন। আপনার স্ত্রীর প্রথম প্রয়োজন আপনাকে, স্বামীর সান্নিধ্য স্ত্রীর চরিত্রকে হেফাজত করবে, শুধু বোরকা নহে! এটা বেচারা বোরকার ওপর অতিরিক্ত দায়িত্ব চাপালে এক ধরনের জুলুম করা হবে!
ইসলাম বিয়েব্যবস্থাকে সহজ করেছে। আমরা এটাকে দিন দিন কঠিন করে তুলছি। ইন্ডিয়ান সিনেমা দেখে বিয়ের অনুষ্ঠানকে দিন দিন কালারফুল এবং সঙ্গে সঙ্গে ব্যয়বহুল করা হচ্ছে! গাড়ি-বাড়ি করা ছাড়া অনেক ছেলে বিয়ে করতে চান না। ছেলেদের সঙ্গে সঙ্গে মেয়েদেরও বিয়ের গড় বয়স বেড়ে যাচ্ছে! ফলে অনেক মেয়ের বাবা-মায়ের জীবনে জাহান্নামের যন্ত্রণা শুরু হয়েছে। যুবসমাজের বিরাট অংশ পর্নোগ্রাফিসহ নানা বিকৃত যৌনাচারের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। সুযোগ পেলে এরাই ধর্ষক হয়ে পড়ছে!
পরিণত বয়সের একজন যুবক বা যুবতীর শারীরিক চাহিদা মেটানোর ব্যবস্থা রাষ্ট্র, সমাজ বা পরিবারকে গ্রহণ করতে হবে। পর্নোগ্রাফি এবং অন্যান্য যৌন সুড়সুড়িমূলক চটি বা ভালগার উপায় উপকরণের প্রচার ও প্রসার বন্ধ করতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে এবং ব্যভিচার বা ধর্ষণের জন্য কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
‘কেউ যদি তার জিহ্বা এবং লজ্জাস্থান এই দুটো অঙ্গকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন, তবে আল্লাহ তাকে বেহেশতের নিশ্চয়তা দিয়েছেন।’ ইসলাম শুধু শুকনো কথাই বলে না, বরং এই অফারটি গ্রহণ করা যাতে একজন রক্ত-মাংসের মানুষের জন্য সহজ হয়, তার ব্যবস্থা করার তাগিদ ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজকে অনবরত দিতে থাকে!
কিন্তু তৌহিদি জনতার দাবিদার কেউ কেউ মূল জায়গায় ওষুধ সেবন না করে উল্টাপাল্টা তত্ত্ব দেন । ওনারা ইসলামের রুট কজ অ্যানালাইসিস এবং কারেকটিভ অ্যাকশনের মূল সুরটি ধরতে পারেন না। অনেকেই বলার চেষ্টা করেন, মেয়েদের অশালীন পোশাক ধর্ষণের জন্য দায়ী। অথচ এই শিকারদের বিরাট অংশ অপ্রাপ্ত বয়স্ক শিশু! ধনীর দুলালি যারা উগ্র পোশাক পরিধান করেন, তারা তেমন কেউ ধর্ষণের শিকার হন না। ওনারা ট্র্যাপে পড়ে যার শিকার হন, তার নাম মিউচুয়াল! তবে যারা আসল ধর্ষণের শিকার হন, এর অধিকাংশই সালোয়ার-কামিজ, শাড়িসহ শালীন পোশাকই পরেন।
ইসলামিক স্কলারদের একটা অংশ মেয়েদের পোশাক-আশাক নিয়ে রসিয়ে রসিয়ে আলোচনা করতে যতটুকু উৎসাহ দেখান, বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান, পর্নোগ্রাফির সর্বগ্রাসী কবল থেকে রক্ষা কিংবা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য রাষ্ট্রশক্তিকে তেমন চাপ দেন না। কিংবা বিয়েব্যবস্থাকে সহজ করার জন্য সামাজিক আন্দোলন শুরু করার কথা ভাবেন না।
অন্যদিকে বাম-রাম-শাহবাগিদের চিন্তার বিলাসিতা দিয়ে সমাজ থেকে ধর্ষণ নামক ব্যাধি দূর করা যাবে না! ধর্ষণ সংস্কৃতির এরাই মূল পৃষ্ঠপোষক। সেঞ্চুরিয়ান মানিকদের সঙ্গে এই বকবাজরা একই গোত্রের! খাও, দাও ফুর্তি করোÑ এদের সবার জীবনের মূলমন্ত্র! এরাই নিজের দলের ছাত্রীদের ধরে ধরে বড় নেতাদের মনোরঞ্জনের জন্য পাঠিয়েছে! এর একটু-আধটু ভাগ নিজেরাও পেয়েছে। এরা ইয়াসমিনের ধর্ষণের পর দীর্ঘকাল শীতনিদ্রায় চলে গিয়েছিল। মাঝখানের ১৫/১৬ বছর ছাত্রলীগ ধর্ষণের মচ্ছব করে ফেললেও এদের উচ্চকণ্ঠ হতে দেখা যায়নি। এরা খুঁজে শুধু দু-একজন ইয়াসমিন!
একদিকে শুধুই আবেগ, অন্যদিকে ইসলামোফোবিয়া, এই দুই রসায়ন মিলে জীবনমুখী একটা ধর্মকে জীবনের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। ধর্ষণসহ অনেক সামাজিক ব্যাধির আশ্চর্যজনক প্রতিরোধক রয়েছে আমাদের এই ইনস্টিটিউশনটির মধ্যে। ধর্ম রাজনৈতিক টুলের চেয়ে শক্তিশালী সামাজিক টুল বা সিভিল সোসাইটির শক্তিশালী পিলার হিসেবে এই কাজটি করতে পারে।
জাতির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে এই টুলটির যথাযথ ব্যবহার এখন জরুরি হয়ে পড়েছে!
বিদায় হজের ভাষণে রাসুলুল্লাহ (সা.) ইসলামের মৌলিক আদর্শ হিসেবে মানবাধিকার, ন্যায়বিচার, নারী অধিকার, সামাজিক সাম্য ও উম্মাহর ঐক্যের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। বিশেষ করে ধর্ম নিয়ে অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করা সম্পর্কে তিনি বলেছিলেন, ‘ধর্মের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি কোরো না, কারণ তোমাদের পূর্ববর্তী জাতিগুলো তাদের এই অতিরিক্ত কঠোরতার কারণেই ধ্বংস হয়েছে।’ (সুনান আন-নাসায়ি : ৩০৫৭, মুসনাদ আহমাদ : ১৮৫১)
আজ সবকিছু দেখে মনে হচ্ছে, আমরা প্রিয় নবীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনাগুলোর দিকেই বেশি অবজ্ঞা দেখাচ্ছি। যেসব করতে মানা করে গেছেন, সেসব কাজই বেশি করে করছি!
‘অল্প বিদ্যা ভয়ংকরী’ গোষ্ঠী দিয়েই আমাদের সমাজ, ধর্ম ও রাজনীতি সব ভরে গেছে! লক্ষ্মীপুরের জনৈক ধর্মরক্ষক দুই বেরোজদারের কানে ধরে উঠবস করিয়েছেন এবং সেই ছবি ভিডিও করে তার এই মহৎ কর্মটি সারাদেশের মানুষকে প্রদর্শন করেছেন । হ্যাডমসম্পন্ন লোকটার মুখে দাড়ি ও মাথায় টুপি থাকলেও ইসলামের আইন কিংবা দেশীয় আইন সম্পর্কে কতটুকু ওয়াকিবহাল, তা জানি না। তবে তিনি সেখানকার বণিক সমিতির সভাপতি! জানা গেছে, ওই দুই বয়স্ক লোক সামনে বসে খাবার খাননি, পাশের হিন্দু হোটেলে ঢুকে খাবার খাচ্ছিলেন। সেখান থেকে ধরে এনে এই মহাশক্তিধর ব্যক্তি তার ধার্মিকতা দেখিয়েছেন।
খবরে প্রকাশ, কয়েকজন মেয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ধূমপান করছিলেন। তা দেখে গুটিকয়েক পুরুষের পুরুষানুভূতিতে আঘাত হানে। বিষয়টি আসলে ধর্মীয় ইস্যু ছিল না, ছিল জেন্ডার ইস্যু। সেখানে কেমন করে যেন ধর্ম প্রবেশ করে ফেলল? তৌহিদি জনতার একটি অংশ নেহাত পুরুষের সমস্যাকে খামোখাই নিজেদের ঘাড়ে টেনে নিল? কারণ কোনো পুরুষ ধূমপান করলে ধর্মের যতটুকু ক্ষতি হয়, কোনো নারী ধূমপান করলেও ক্ষতির পরিমাণ সেই একই থাকে!
এখানেও ধর্মরক্ষক হিসেবে যিনি উদয় হয়েছেন, তিনি হাজী সেলিমের লেসপেন্সার ছিলেন। এই পাজি সেলিমের দল ধূমপানরত মেয়েগুলোকে চরমভাবে হিউমিলিয়েট বা নাজেহাল করে! সংগত কারণেই বিষয়টি দেশের নারী ব্রিগেডসহ সব নাগরিক সমাজকে চরমভাবে ক্ষেপিয়ে তোলে। হাজী সেলিমের লেসপেন্সার হলেও ঘটনাটি কিন্তু তৌহিদি জনতার অ্যাকাউন্টে রেকর্ড হয়েছে।
তৌহিদি জনতার এই লাইনের আরেকজন, যিনি নিজে অনলাইনে নোংরা ছবি দেখেন, তিনি এক মেয়েকে ওড়না সঠিক স্থানে রাখার পরামর্শ দিয়ে হইচই বাধিয়ে ফেলেছেন! আত্মপক্ষ সমর্থনে মিডিয়ার সামনে যে দু-একটা কথা বলেছেন, সেখানেও নিজের বিকৃত রুচির পরিচয় দিয়েছেন। তৌহিদি জনতার পক্ষ থেকে তাকে একটি ফুলের মালাও পরানো হয় এবং সেই ছবিও ছড়িয়ে দেওয়া হয়।
গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অতি উৎসাহী অংশ এই ঘটনাগুলো গরম মসলা হিসেবে ব্যবহারের চেষ্টা করে।
সুযোগ বুঝে রাস্তায় নামে হিযবুত তাহরীর। ‘মার্চ ফর খেলাফত’ নাম দিয়ে রাস্তায় নামে নিষিদ্ধ ঘোষিত এই সংগঠনটি । কিন্তু ওয়াকিবহাল মহলসহ সাধারণ জনতা এটাকে ‘মার্চ ফর আওয়ামী খেলাফত’ হিসেবেই ধরে নিয়েছে। নিজেদের এক ঝিলিক রাস্তায় দেখানোয় মূল সংগঠনটির কতটুকু অর্জন হয়েছে জানি না, তবে আওয়ামী খেলাফতের অর্জন অনেক বেশি হয়েছে!
আপাতদৃষ্টিতে এগুলোকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা মনে হলেও এগুলোকে একটি জায়গা থেকে রিমোটলি পরিচালনা করা হচ্ছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে! কেউ বুঝে আর কেউ না বুঝে তাদের পাতা ফাঁদে পা রাখছে।
আমাদের এই মুহূর্তে দরকার ডাক্তার জাকির নায়েকের মতো বিজ্ঞ কিছু ইসলামিক স্কলার! এমন স্কলার দরকার, যারা সমস্যার গভীরে গিয়ে একটা বোধগম্য সমাধান বের করে আনতে পারবেন!
বিশ্ববিখ্যাত টাইমস ম্যাগাজিন তখন সানিয়া মির্জাকে নিয়ে একটি প্রচ্ছদ প্রতিবেদন প্রকাশ করে! এটার একটা জুতসই জবাব দিয়েছিলেন ডাক্তার জাকির নায়েক!
মহিলা টেনিসে বিশ্বে এক নম্বর তারকা ছিলেন সেরিনা উইলিয়াম আর ৩৩ নম্বরের দিকে ছিলেন ইন্ডিয়ার মুসলিম তারকা সানিয়া মির্জা। সাংবাদিকদের তিনি জিজ্ঞাসা করেছিলেন, তালিকায় এক নম্বরে যিনি আছেন সেই সেরিনা উইলিয়ামসহ ওপরের আরো ৩১ জনের অধিকাংশই খ্রিষ্টান, তাদের পোশাক বাইবেলসম্মত কি না, এটা নিয়ে পোপ বা অন্য কোনো পাদরিকে কেন প্রশ্ন করো না?
কিন্তু সানিয়া মির্জা টেনিসে যে পোশাক পরেন, তা নিয়ে সেই ধর্মের আলেম-ওলামাকে অত্যন্ত উৎসাহভরে প্রশ্ন করা হয়। আমাদের আলেম-ওলামা দ্বিগুণ উৎসাহ নিয়ে সেসব প্রশ্নের জবাব দেন। সেই প্রশ্নের জবাব বা ফতোয়া নিয়ে টাইমসের মতো ম্যাগাজিন প্রচ্ছদ প্রতিবেদন প্রকাশ করে!
ডাক্তার জাকির নায়েক চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেন, বাইবেল, ত্রিপিটক, কিংবা বেদের কোন্ জায়গায় কোন্ বিষয়টি রয়েছে। তার স্বভাবসুলভ স্টাইলে ওই লেকচারের মধ্যেই দেখিয়ে দিয়েছিলেন, খোদ বাইবেলেই লেখা আছে—‘কোনো নারীর উচিত নয় কোনো পুরুষের অবয়ব ধারণ করা, তেমনি কোনো পুরুষের উচিত নয় কোনো নারীর অবয়ব ধারণ করা!’ এগুলো শুনলে তো এ দেশের প্রগতিবাদীরা মূর্ছা যাবে! কারণ এসব কথা তো শুধু কোরআনেই থাকার কথা!
বাইবেলের মতো কোরআনও চায় নারী-পুরুষের নিজ নিজ বৈশিষ্ট্য বা অবয়ব অক্ষুণ্ণ রাখতে! মানবজাতির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতেই প্রত্যেকটি আব্রাহামিক ধর্ম এই সুস্পষ্ট অবস্থানটি নিয়েছে। নারীকে পুরুষ বানিয়ে নয়, বরং নারীকে নারী হিসেবে রেখেই তার অধিকার ও সম্মান নিশ্চিত করতে চায়! নারীকে পুরুষ বানানোর অর্থই হলো নারীত্বের অবমাননা।
অথচ এই কাজটিকে একটি রেওয়াজ বানিয়ে গেছেন মাফিয়া রানি! প্রশাসনের কারো জন্য তাকে ম্যাডাম বলে সম্বোধন করার অনুমোদন ছিল না। খালেদা জিয়াকে সবাই ম্যাডাম ডাকতেন। এ কারণেও তিনি এই সম্বোধন পছন্দ করতেন না। চাটুকার এক মিনিস্টার বলেছিলেন, আমাদের মধ্যে পুরুষ এখন একজনই আছেন, তিনি শেখ হাসিনা! অহংকার ভরে তার হাঁটার এই ভঙ্গি ছোট ভাই কাদের সিদ্দিকীরও নজরে পড়েছিল! তাকে লক্ষ করে এই ছোট ভাই বলেছিলেন, ‘বইনদি, মাইয়া মানুষের ব্যাটা মানুষের মতো হাঁটা ঠিক না!’
বিশ্বের কিছু কিছু সেনাবাহিনীতে নারী কর্মকর্তাদের ‘স্যার’ হিসেবে সম্বোধনের এই রেওয়াজটি সীমিত আকারে চালু রয়েছে! তবে সেখানেও নারী অফিসারদের জন্য ‘ম্যাম’ শব্দটির ব্যবহার অধিক দেখা যায়। কিন্তু সিভিলিয়ান আবহে এই সম্বোধনটির জন্মদাতা আমাদের পলাতক দস্যুরানি। তাকে আমরা দেশছাড়া করেছি, কিন্তু তার বদ খাসলতটি এখনো সযত্নে লালন করে যাচ্ছি! বর্তমান মহিলা উপদেষ্টাদেরও নাকি ‘স্যার’ বলে সম্বোধন করা হয়।
একজন নারী হয়ে পুরুষের মতো ‘স্যার’ ডাক শোনার মজাই হয়তোবা আলাদা। যারা পুরুষদের বা পুরুষতন্ত্রকে প্রচণ্ড ঘৃণা করেন, দেখা যায় তারাই পুরুষের হাব-ভাব-হ্যাডম বেশি ধারণ করতে চান! পুরুষতন্ত্রের এই বিজয় দেখে অবাক হয়ে যখন ডাকি, হায় সেলুকাস! খেয়াল করে দেখি, সেও একজন পুরুষ!
একটু গভীরভাবে চিন্তা করলেই বুঝতে পারবেন এখানে যে মানবিক রসায়নটি কাজ করছে, তার নাম অহংকার। এই অহংকার ‘স্যার’ সম্বোধনটিতে যেভাবে অনুভূত হয়, ম্যাডাম বা ম্যামে তেমনভাবে প্রকাশ পায় না! এই রোগটি সমূলে উৎপাটনের জন্য মারাত্মক কিছু ওষুধ ইসলামে রয়েছে! হাদিসে বলা হয়েছে, যার অন্তরে সরিষা পরিমাণ অহংকার থাকবে, সে বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে না! হাদিসে আরো বলা হয়েছে, কেউ পেট ভরে খেলো আর প্রতিবেশী অভুক্ত থাকল, তবে সে মুসলমান নহে! অন্য আরেকটি হাদিসে বলা হয়েছে, যার জিহ্বা থেকে অন্য মুসলমান নিরাপদ নহে, সে মুসলমান নহে।
এসব কথা আমরা বেশি বেশি শোনাই মাদরাসার এতিম ও নিরীহ ছাত্রছাত্রীদের। কিন্তু ভবিষ্যতে যারা প্রধানমন্ত্রী হবে, রাষ্ট্রপতি হবে, প্রধান বিচারপতি কিংবা প্রধান সেনাপতি হবে, তাদের শোনাই না। এটাই আমাদের সামগ্রিক সামাজিক ব্যর্থতা।
নামাজ না পড়লে, রোজা না রাখলে বা জাকাত না দিলে সে পাপী মুসলমান হিসেবে থাকবে। দাঁড়ি না রাখলে, হিজাব পরিধান না করলেও পাপ হবে কিন্তু মুসলিম মিল্লাত থেকে নাম কাটা যাবে না। অথচ আমরা গুরুত্ব বেশি দিই পরেরগুলো।
মাফিয়া রানির মাফিয়াগং ষোলো বছরে দেশ থেকে লুট করেছে ২৯৩ বিলিয়ন ডলার, এর মধ্যে বিদেশে পাচার করেছে ১৫০ বিলিয়ন ডলার। এই টাকা রাষ্ট্রের হাতে থাকলে এ দেশের কোনো বনি আদমকে অভুক্ত পেটে ঘুমাতে যেতে হতো না! আমাদের নিজ নিজ জিহ্বাকে যদি ধর্মের নির্দেশমতো নিয়ন্ত্রণে রাখতাম, তবে এই সমাজটিতেই বেহেশতের শান্তি বিরাজ করত!
ঘরে ঘরে পটেনশিয়াল ধর্ষক তৈরি করে শুধু শক্ত আইন দিয়ে ধর্ষণ কমানো যাবে না
এক প্রবাসী বন্ধু তার স্ত্রীকে লাইনে রাখার জন্য একটি বোরকা কিনে পাঠান। সেই গল্পটি সন্তুষ্টচিত্তে আমাকে শোনাচ্ছিলেন। তা শুনে একটু মাথা ঝাঁকিয়ে বললাম, ব্রাদার! আপনি বছরের পর বছর বিদেশে পড়ে আছেন। আপনার স্ত্রীর প্রথম প্রয়োজন আপনাকে, স্বামীর সান্নিধ্য স্ত্রীর চরিত্রকে হেফাজত করবে, শুধু বোরকা নহে! এটা বেচারা বোরকার ওপর অতিরিক্ত দায়িত্ব চাপালে এক ধরনের জুলুম করা হবে!
ইসলাম বিয়েব্যবস্থাকে সহজ করেছে। আমরা এটাকে দিন দিন কঠিন করে তুলছি। ইন্ডিয়ান সিনেমা দেখে বিয়ের অনুষ্ঠানকে দিন দিন কালারফুল এবং সঙ্গে সঙ্গে ব্যয়বহুল করা হচ্ছে! গাড়ি-বাড়ি করা ছাড়া অনেক ছেলে বিয়ে করতে চান না। ছেলেদের সঙ্গে সঙ্গে মেয়েদেরও বিয়ের গড় বয়স বেড়ে যাচ্ছে! ফলে অনেক মেয়ের বাবা-মায়ের জীবনে জাহান্নামের যন্ত্রণা শুরু হয়েছে। যুবসমাজের বিরাট অংশ পর্নোগ্রাফিসহ নানা বিকৃত যৌনাচারের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। সুযোগ পেলে এরাই ধর্ষক হয়ে পড়ছে!
পরিণত বয়সের একজন যুবক বা যুবতীর শারীরিক চাহিদা মেটানোর ব্যবস্থা রাষ্ট্র, সমাজ বা পরিবারকে গ্রহণ করতে হবে। পর্নোগ্রাফি এবং অন্যান্য যৌন সুড়সুড়িমূলক চটি বা ভালগার উপায় উপকরণের প্রচার ও প্রসার বন্ধ করতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে এবং ব্যভিচার বা ধর্ষণের জন্য কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
‘কেউ যদি তার জিহ্বা এবং লজ্জাস্থান এই দুটো অঙ্গকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন, তবে আল্লাহ তাকে বেহেশতের নিশ্চয়তা দিয়েছেন।’ ইসলাম শুধু শুকনো কথাই বলে না, বরং এই অফারটি গ্রহণ করা যাতে একজন রক্ত-মাংসের মানুষের জন্য সহজ হয়, তার ব্যবস্থা করার তাগিদ ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজকে অনবরত দিতে থাকে!
কিন্তু তৌহিদি জনতার দাবিদার কেউ কেউ মূল জায়গায় ওষুধ সেবন না করে উল্টাপাল্টা তত্ত্ব দেন । ওনারা ইসলামের রুট কজ অ্যানালাইসিস এবং কারেকটিভ অ্যাকশনের মূল সুরটি ধরতে পারেন না। অনেকেই বলার চেষ্টা করেন, মেয়েদের অশালীন পোশাক ধর্ষণের জন্য দায়ী। অথচ এই শিকারদের বিরাট অংশ অপ্রাপ্ত বয়স্ক শিশু! ধনীর দুলালি যারা উগ্র পোশাক পরিধান করেন, তারা তেমন কেউ ধর্ষণের শিকার হন না। ওনারা ট্র্যাপে পড়ে যার শিকার হন, তার নাম মিউচুয়াল! তবে যারা আসল ধর্ষণের শিকার হন, এর অধিকাংশই সালোয়ার-কামিজ, শাড়িসহ শালীন পোশাকই পরেন।
ইসলামিক স্কলারদের একটা অংশ মেয়েদের পোশাক-আশাক নিয়ে রসিয়ে রসিয়ে আলোচনা করতে যতটুকু উৎসাহ দেখান, বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান, পর্নোগ্রাফির সর্বগ্রাসী কবল থেকে রক্ষা কিংবা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য রাষ্ট্রশক্তিকে তেমন চাপ দেন না। কিংবা বিয়েব্যবস্থাকে সহজ করার জন্য সামাজিক আন্দোলন শুরু করার কথা ভাবেন না।
অন্যদিকে বাম-রাম-শাহবাগিদের চিন্তার বিলাসিতা দিয়ে সমাজ থেকে ধর্ষণ নামক ব্যাধি দূর করা যাবে না! ধর্ষণ সংস্কৃতির এরাই মূল পৃষ্ঠপোষক। সেঞ্চুরিয়ান মানিকদের সঙ্গে এই বকবাজরা একই গোত্রের! খাও, দাও ফুর্তি করোÑ এদের সবার জীবনের মূলমন্ত্র! এরাই নিজের দলের ছাত্রীদের ধরে ধরে বড় নেতাদের মনোরঞ্জনের জন্য পাঠিয়েছে! এর একটু-আধটু ভাগ নিজেরাও পেয়েছে। এরা ইয়াসমিনের ধর্ষণের পর দীর্ঘকাল শীতনিদ্রায় চলে গিয়েছিল। মাঝখানের ১৫/১৬ বছর ছাত্রলীগ ধর্ষণের মচ্ছব করে ফেললেও এদের উচ্চকণ্ঠ হতে দেখা যায়নি। এরা খুঁজে শুধু দু-একজন ইয়াসমিন!
একদিকে শুধুই আবেগ, অন্যদিকে ইসলামোফোবিয়া, এই দুই রসায়ন মিলে জীবনমুখী একটা ধর্মকে জীবনের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। ধর্ষণসহ অনেক সামাজিক ব্যাধির আশ্চর্যজনক প্রতিরোধক রয়েছে আমাদের এই ইনস্টিটিউশনটির মধ্যে। ধর্ম রাজনৈতিক টুলের চেয়ে শক্তিশালী সামাজিক টুল বা সিভিল সোসাইটির শক্তিশালী পিলার হিসেবে এই কাজটি করতে পারে।
জাতির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে এই টুলটির যথাযথ ব্যবহার এখন জরুরি হয়ে পড়েছে!
এই বছর অর্থনীতির নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে উদ্ভাবন ও সৃজনশীল ধ্বংসের প্রক্রিয়া (creative destruction) কীভাবে দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে সেই গবেষণার ওপর। নতুন প্রযুক্তি ও ধারণা পুরোনো ব্যবস্থাকে প্রতিস্থাপন করে সমাজ যখন পরিবর্তনের জন্য উন্মুক্ত থাকে, তখনই টেক
৮ ঘণ্টা আগে‘মনের তালা খুলল কে, চাবিওয়ালা, চাবিওয়ালা!’ প্রখ্যাত শিল্পী রুনা লায়লার সেই সুরেলা প্রশ্নের উত্তর আজও খুঁজে বেড়াচ্ছি! তবে ব্যক্তিগত জীবনে নয়, রাষ্ট্রীয় জীবনে। এই রাষ্ট্রের জীবনেও একটা বিশেষ তালা আছে, আর তার নাম আর্টিকেল ৭০! এই তালা লাগানো হয়েছিল সেই সব মাননীয়র জন্য, যাদের মধ্যে ‘ছাগলীয়’ প্রবৃত্তি রয়ে
৮ ঘণ্টা আগেভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইসরাইলের যুদ্ধাপরাধী প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে প্রায়ই তার পরম বন্ধু বলে বেশ গৌরবের সঙ্গে প্রচার করে থাকেন। ভিন্ন দেশের এ দুই রাজনীতিবিদের প্রগাঢ় বন্ধুত্বের মূল সূত্র হলো মুসলমানদের প্রতি তাদের তীব্র ঘৃণা। বর্তমান বিশ্বে ইসলামোফোবিয়ায় আক্রান্ত শীর্ষ দুটি
৮ ঘণ্টা আগেগাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে যখন হতাশা চরমে, তখনই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন এক নতুন ‘২০ দফার শান্তি পরিকল্পনা’। সেখানে তিনি নিজেকে বসিয়েছেন একটি তথাকথিত ‘বোর্ড অব পিস’-এর চেয়ারম্যান হিসেবে।
১ দিন আগে