আমার দেশ জনপ্রিয় বাংলা নিউজ পেপার

শিক্ষা কমিশন গঠনের অপরিহার্যতা

ড. সিরাজুল আই. ভূঁইয়া
শিক্ষা কমিশন গঠনের অপরিহার্যতা
ড. সিরাজুল আই ভুইয়া

বাংলাদেশের ইতিহাসের এই সংকটময় সন্ধিক্ষণে জাতির ভবিষ্যৎ যাত্রাপথ নির্ভর করছে একটিমাত্র অখণ্ড সত্যের ওপর—কোনো দেশই তার শিক্ষাব্যবস্থার মানের ঊর্ধ্বে উঠতে পারে না। অবকাঠামো মেরামত করা যায়, অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করা যায়; কিন্তু কোনো কিছুই সেই বৌদ্ধিক ভিত্তির বিকল্প হতে পারে না, যা একটি জাতির চরিত্র, সক্ষমতা ও সামষ্টিক ভাগ্যকে নির্মাণ করে। আজ বাংলাদেশ এমন এক মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে, যেখানে গঠনে ভঙ্গুর এবং উদ্দেশ্যে রাজনৈতিকভাবে কলুষিত পুরোনো শিক্ষামডেল দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বের বাস্তব চাহিদার সঙ্গে ক্রমেই অসংগত হয়ে পড়ছে এবং জাতীয় অগ্রগতির ইঞ্জিন হিসেবে কার্যকরভাবে কাজ করতে পারছে না। নিজেদের ভবিষ্যৎ পুনর্গঠনের জন্য এখন আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে নতুন করে সাজানোর কাজ হাতে নেওয়া ছাড়া আর কোনো পথ খোলা নেই।

দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ এক উদ্বেগজনক বৈপরীত্যের সঙ্গে লড়াই করে আসছে। ভর্তি-সংক্রান্ত পরিসংখ্যান ধারাবাহিকভাবে উন্নত হয়েছে, কিন্তু শিক্ষার ফলাফল স্থবির হয়ে আছে; শিক্ষার্থীরা সনদ পাচ্ছে বটে, কিন্তু সেই সনদের মাধ্যমে প্রতিযোগিতামূলক বৈশ্বিক অর্থনীতিতে অর্থবহ অবদান রাখার মতো দক্ষতা অর্জন করতে পারছে না। নতুন নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলেও তার সমান্তরালে তৈরি হয়নি সমালোচনামূলক চিন্তাশীল, উদ্ভাবক, গবেষক এবং সৃজনশীল সমস্যা সমাধানকারীর প্রজন্ম। একদিকে এক তরুণ প্রজন্ম তাদের দেশকে সেবা করার জন্য উদগ্রীব, অন্যদিকে তারা নিজেকে খুঁজে পাচ্ছে এমন এক প্রযুক্তি ও জ্ঞাননির্ভর বিশ্ব বাস্তবতার সামনে, যার জন্য তাদের প্রস্তুতি অত্যন্ত অপর্যাপ্ত।

বিজ্ঞাপন

সুযোগ ও প্রস্তুতির এই ক্রমবর্ধমান ফাঁক আজ এক জাতীয় সংকটে রূপ নিয়েছে, যা আর বিচ্ছিন্ন কিছু নীতিসংশোধন বা রাজনৈতিক সুবিধাবাদী সমন্বয়ের মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব নয়। এখন বাংলাদেশের জরুরি প্রয়োজন একটি সর্বাঙ্গীণ, স্বশাসিত এবং উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন শিক্ষা সংস্কার কমিশন, যা দেশের শিক্ষাব্যবস্থার স্থাপত্যকে শেকড় থেকে পুনর্গঠন করতে সক্ষম।

এখন সময় এসেছে নোবেলবিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষ থেকে একটি শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠনের উদ্যোগ ও দায়িত্ব গ্রহণ করার; এমন একটি প্রচেষ্টা, যা আমাদের জাতির জন্য সর্বপ্রথম ও সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের বিষয় হওয়া উচিত এবং হওয়া আবশ্যক।

বহিরাগত নিয়ন্ত্রণের হাত থেকে শিক্ষাগত সার্বভৌমত্ব ফিরিয়ে আনা

দীর্ঘ সময় ধরে বাংলাদেশের শিক্ষাকাঠামো ও প্রক্রিয়া এমন এক শক্তির প্রভাবে দুলেছে, যা সবসময় আমাদের স্বার্থের পক্ষে কাজ করেনি। আগের শাসনামলে এই প্রবণতা আরো তীব্র হয়, যখন আমাদের পাঠ্যক্রমের ধারা ও শর্তাবলি ক্রমেই আমাদের সন্নিহিত এক গুরুত্বপূর্ণ দেশের পছন্দকে প্রতিফলিত করতে থাকে, যার মাধ্যমে আমাদের দেশের তরুণদের মানসিকতাকে এমনভাবে রূপ দেওয়া হয়েছে, যা আমাদের সাংস্কৃতিক ও উন্নয়নগত সার্বভৌমত্বের জন্য অনুকূল ছিল না।

এই প্রবণতা ত্বরান্বিত হয় শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের দায়িত্বকালীন সময়ে, যার শাসনামলে নানা সংশোধনের মাধ্যমে শিক্ষার অবকাঠামোই আমূল পরিবর্তিত হয়ে যায় এবং শেখার গুণগত বুনন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দেশের প্রত্যেক বিদ্যালয়ে এমসিকিউ-ভিত্তিক পরীক্ষার প্রসার, পাঠ্যসূচির মান হ্রাস এবং তার ফল হিসেবে দ্রুত বেড়ে যাওয়া জিপিএ-৫ প্রাপ্তির সংখ্যার মাধ্যমে এমন এক ভ্রান্ত সফলতার আবহ তৈরি হয়, যেখানে ফলাফলের বাহ্যিক চাকচিক্য আসল অর্জনকে ছাপিয়ে যায়; কারণ পরীক্ষার্থীরা ‘আমি জিপিএ-৫ পেয়েছি’ বলতে পারলেও বাস্তবে তাদের দক্ষতার ভিত্তি ছিল দুর্বল।

ঘটনাগুলো আরো উদ্বেগজনক মোড় নেয়, যখন ড. দীপু মনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে আসেন। তখন দেশের শিক্ষা খাতের ইতিহাস এক সংকটকালের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করে। পাঠ্যবই মুদ্রণের কাজ অন্য দেশে নিয়ে যাওয়া এবং বইয়ের পেছনের প্রচ্ছদে দুর্গার ছবি সংযোজনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা—এসবই বাংলাদেশের জনগণ, বিশেষ করে শিশুদের শিক্ষা প্রক্রিয়ার নিয়ন্ত্রণ ও উদ্দেশ্য নিয়ে গভীর প্রশ্ন তোলে।

তবে সবচেয়ে ক্ষতিকর প্রভাব সৃষ্টি হয় শুধু মুদ্রণ সিদ্ধান্তে নয়, বরং পাঠ্যবইয়ের বিষয়বস্তুর মধ্যেই। শিক্ষার্থীদের এমন সব তুচ্ছ বিষয় শেখানো হয়েছে—যেমন কুকুর ও শিয়ালের ডাক, যেখানে শেখার বুনিয়াদি ভিত্তিগুলোকে অবহেলা করা হয়েছে। দেশের অসংখ্য শ্রেণিকক্ষে এমন অবস্থা তৈরি হয়েছে যে, কিছু পর্যবেক্ষকের দৃষ্টিতে এটি যেন কেবল অবহেলা বা অদক্ষতার ফল নয়, বরং একটি সূক্ষ্ম পরিকল্পনার অংশ—যেখানে মৌলিক শিক্ষাকে ভেঙে দিয়ে শিশুকে ভবিষ্যতে কোনো গুরুতর উচ্চশিক্ষা, কর্মজীবন বা দায়িত্বশীল নাগরিকত্বের জন্য অযোগ্য করে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে।

এই প্রক্রিয়ার পেছনে সুস্পষ্ট উদ্দেশ্য ছিল—দীর্ঘ মেয়াদে বাংলাদেশের মানবসম্পদকে দুর্বল করে ফেলা এবং শিল্পজ্ঞান, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা ও জনসম্পদ উন্নয়নে তাকে বিশেষ করে একটি প্রতিবেশী দেশের ওপর ক্রমবর্ধমানভাবে নির্ভরশীল করে তোলা।

এভাবে শিক্ষায় ক্ষতি ডেকে আনা যেকোনো পন্থাই আসলে সার্বভৌমত্বের ওপর সরাসরি আঘাত হানে। কোনো দেশের শিশুদের কীভাবে শিক্ষা দেওয়া হবে, এ নিয়ে নিজের নিয়ন্ত্রণ হারানো মানেই দীর্ঘ মেয়াদে নিজের ভাগ্যের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারানোর পথে এগিয়ে যাওয়া। এই সূক্ষ্ম কিন্তু বিস্তৃত প্রভাবই বাংলাদেশকে একসময় নিয়ে গেছে বুদ্ধিবৃত্তিক ও কৌশলগত স্বাধীনতা হারানোর প্রান্তসীমায়।

স্বাধীনভাবে চিন্তা করতে পারে, প্রশ্ন করতে পারে, নতুন কিছু উদ্ভাবন করতে পারে—এমন শিক্ষার্থী তৈরি করার বদলে এই ব্যবস্থা তৈরি করেছে এমন এক শিখন-সমাজ, যারা মুখস্থ করে, মানিয়ে চলে এবং অনুগত থাকে। এটি একটি গর্বিত, স্বাধীন ও দূরদর্শী বাংলাদেশের প্রয়োজনের সম্পূর্ণ বিপরীত।

এই দুর্বলতাকেই এখন সংশোধন করার এক অসাধারণ সুযোগ হাতে পেয়েছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। শিক্ষাগত সার্বভৌমত্ব পুনঃস্থাপন, শিক্ষা সংস্কারকে দেশের নিজস্ব অগ্রাধিকারমূলক উন্নয়ন খাতগুলোর সঙ্গে যুক্ত করা এবং প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় স্তর পর্যন্ত পুরো পাঠ্যক্রমকে আধুনিকায়নের জন্য একটি জাতীয় শিক্ষা কমিশন গঠন—এসব ব্যবস্থার মাধ্যমে তিনি নিশ্চিত করতে পারবেন যে, শিক্ষাব্যবস্থার প্রতিটি স্তর সর্বাগ্রে বাংলাদেশের মানুষের স্বার্থে কাজ করবে। যদি ড. ইউনূস এই মিশনে সফল হন, তবে তিনি কেবল অতীতের কাঠামোগত ত্রুটিগুলোই দূর করবেন না, তিনি বহু বছরের জন্য মেধার স্বাধীনতাকে সুরক্ষিত করবেন। তার ছাপ কেবল ভবন আর প্রতিষ্ঠানের গায়ে নয়, পড়বে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মস্তিষ্ক ও সামর্থ্যের ভেতরে—এমন এক বিনিয়োগ হিসেবে, যা তার নির্ধারিত মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান অর্জনের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা একটি জাতিকে আরো শক্ত ভিত্তি দেবে।

দেশের ভবিষ্যৎ সুরক্ষায় প্রথম প্রয়োজন হচ্ছে শক্তিশালী, উচ্চমানের ও স্বাধীন চিন্তাশীল জাতীয় প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা এবং তার কেন্দ্রে থাকা উচিত একটি জাতীয় শিক্ষা কমিশন। কোনো দেশ যখন সমাজ-অর্থনীতিতে নিজেদের রূপান্তর ও পুনর্গঠন করার উচ্চাকাঙ্ক্ষা ধারণ করে, তখন তার শিক্ষা কর্মসূচির গতিপথ তার জাতীয় অস্তিত্বের প্রশ্নে রূপ নেয়।

দ্রুত পরিবর্তনশীল বৈশ্বিক অর্থনীতি

বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট আজ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তি এবং ডিজিটাল বিপ্লবের মাধ্যমে দ্রুত রূপান্তরিত হচ্ছে। যে দেশগুলো সৃজনশীল ও উচ্চদক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলতে পারবে, তারা এগিয়ে যাবে; আর যারা পুরোনো, মুখস্থবিদ্যানির্ভর শিক্ষাব্যবস্থার ওপর নির্ভর করে থাকবে, তারা পিছিয়ে পড়বে। বাংলাদেশের অর্থনীতি নির্ভর করছে তৈরি পোশাক, তথ্য ও যোগাযোগ সেবা, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, লজিস্টিকস এবং উদীয়মান শিল্পক্ষেত্রগুলোর ওপর। তাই এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি প্রয়োজন এমন কর্মী তৈরি করা, যারা নমনীয়, সৃজনশীল এবং সংস্থানপূর্ণ চিন্তাশক্তি নিয়ে কাজ করতে সক্ষম।

একটি জাতীয় শিক্ষা কমিশন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠদান ও শেখার প্রক্রিয়াকে আমূল পরিবর্তন করা সম্ভব, যাতে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা আগামী দিনের বাস্তবতা ও সম্ভাবনার জন্য প্রস্তুত হতে পারে—শুধু গতকালের বা আজকের চাকরির বাজারের জন্য নয়।

ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড সংকুচিত হয়ে আসছে

বাংলাদেশ বর্তমানে এক ঐতিহাসিক মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে—এটি একদিকে যেমন এক বিরাট সুযোগ, অন্যদিকে তেমনই সম্ভাব্য সংকটেরও পূর্বাভাস; কারণ দেশের এক-তৃতীয়াংশ মানুষের বয়স ৩০ বছরের নিচে। এই মুহূর্তে দেশটির হাতে দুটি পথ—এই বৃহৎ তরুণ জনগোষ্ঠীকে উপযুক্ত দক্ষতায় সজ্জিত করে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির চালিকাশক্তি হিসেবে গড়ে তোলা, অথবা তাদের বেকারত্ব, হতাশা ও বহির্মুখী অভিবাসনের মাধ্যমে এক ‘ডেমোগ্রাফিক ডিজাস্টার’-এ পরিণত হতে দেওয়া। এই অবস্থায় সরকারের হাতে একটি সম্ভাব্য উদ্ধারকাঠি হতে পারে একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ‘শিক্ষা কমিশন’।

সংস্কারের রাজনীতিকরণ

বহুদিন ধরেই পাঠ্যক্রম প্রণয়ন ও সংশোধনের প্রক্রিয়া, শিক্ষক নিয়োগ ও বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা, পাঠ্যবই পর্যালোচনা ও অনুমোদন, এমনকি ছাত্ররাজনীতি পর্যন্ত সবকিছুতেই রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ প্রবলভাবে প্রভাব বিস্তার করেছে। যোগ্যতার ভিত্তিতে অগ্রগতির যে নীতি, তা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়েছে; ফলে উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থার বিশ্বাসযোগ্যতা ও মান মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সম্মানিত ও নির্দল বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত একটি ‘শিক্ষা কমিশন’ এ খাতে এমন সব পরিবর্তনের প্রস্তাব দিতে পারে, যা একে কম রাজনৈতিক এবং অধিকতর জবাবদিহিমূলক ও পেশাদার করে তুলবে।

খণ্ডিত কাঠামোর কারণে দুর্বল সমন্বয়

বাংলাদেশের শিক্ষাকাঠামো বর্তমানে অসংখ্য মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর, বোর্ড ও বেসরকারি সংস্থার জটিল জালে জড়িয়ে আছে, যারা প্রায়ই পৃথক সত্তা হিসেবে কাজ করে, একে অপরের কাজের পুনরাবৃত্তি ঘটায় এবং একীভূত সংস্কারের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। একটি জাতীয় শিক্ষা কমিশন এই পুরো শাসন কাঠামোর ওপর একটি কৌশলগত ও সুসংহত দৃষ্টিভঙ্গি দিতে পারে এবং প্রয়োজনীয় সুপারিশ করতে পারে।

বাহ্যিক প্রভাব সমালোচনামূলক ও বিশ্লেষণধর্মী দক্ষতাকে ক্ষয় করেছে

দেশের অভ্যন্তরে সূক্ষ্ম কিছু শক্তি এবং বিশেষত একটি প্রতিবেশী রাষ্ট্রের চাপ এমনভাবে শিক্ষাব্যবস্থাকে প্রভাবিত করেছে, যা সমালোচনামূলক, বিশ্লেষণধর্মী এবং প্রয়োগযোগ্য চিন্তাশক্তিকে হ্রাস করেছে। এর ফলে এমন একটি প্রজন্ম তৈরি হয়েছে, যাদের শেখানো হয়েছে মুখস্থ রাখতে, কিন্তু প্রশ্ন করতে বা উদ্ভাবন করতে নয়। একটি জাতীয় শিক্ষা কমিশনের দায়িত্ব হবে উচ্চতর পর্যায়ের চিন্তাশক্তি বিকাশের ওপর জোর দেওয়া এবং শ্রেণিকক্ষে প্রয়োগভিত্তিক শিক্ষণকে উৎসাহিত করা।

ড. ইউনূসের মিশনের সঙ্গে একটি সেতুবন্ধ

এসব উপাদান একত্রে বিবেচনা করলে একটি বিষয় স্পষ্ট হয়ে ওঠে—একটি পরিবর্তিত শিক্ষাব্যবস্থা ছাড়া সমৃদ্ধ ও স্বাধীন বাংলাদেশ গঠন করা সম্ভব নয়। ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমে তার সাফল্য এবং তার কার্যক্রম ও দৃষ্টিভঙ্গির জন্য জনগণের আস্থা অর্জনের যে মাত্রা তিনি অর্জন করেছেন—এসব বিবেচনায় ইতিহাসের এই মুহূর্তে ড. মুহাম্মদ ইউনূস ছাড়া আর কেউ এ দায়িত্ব পালনে এতটা উপযুক্ত নন।

ইতিহাসের এই সংকটকালে বাংলাদেশের মতো একটি দেশের জন্য বিচ্ছিন্ন কিছু পরিবর্তন বা বিচ্ছিন্ন কয়েকটি সংস্কারমূলক প্রকল্প যথেষ্ট নয়। প্রয়োজন একটি দূরদর্শী কৌশলগত শিক্ষা কাঠামো, যা সাধারণ রাজনৈতিক মেয়াদের সীমা অতিক্রম করে দীর্ঘ মেয়াদে দেশকে বৈশ্বিক বাস্তবতার সঙ্গে সংযুক্ত রাখবে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মেধা ও সামর্থ্যের মাধ্যমে একটি শক্তিশালী, গর্বিত ও স্বাধীন জাতি গঠন করবে—এমন এক কাঠামো, যাকে সুপরিকল্পিত জাতীয় শিক্ষা কমিশন ধারণা ও বাস্তবতায় রূপ দেবে।

এটি শুধু কোনো নতুন কমিটি বা প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোয় বিনিয়োগ নয়, এটি আমাদের প্রজন্মের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জাতি-গঠনের প্রকল্পে বিনিয়োগ—একটি প্রাতিষ্ঠানিক স্তম্ভে বিনিয়োগ, যার ওপর বাংলাদেশের অন্যান্য সব খাতের উন্নয়ন নির্ভর করবে।

সমগ্র শিক্ষাব্যবস্থাকে শূন্য থেকে পুনর্বিবেচনা করে পাঠ্যক্রম, পাঠদানের পদ্ধতি, মূল্যায়নের ধরন, প্রশাসনিক ও শাসনকাঠামো—সবকিছু আমূল পরিবর্তনের লক্ষ্যে একটি শক্তিশালী ও অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা কমিশন গঠন করে ড. ইউনূস একটি নতুন বাংলাদেশের বুদ্ধিবৃত্তিক ও নৈতিক ভিত স্থাপন করতে পারেন।

লেখক : যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের সাভান্না স্টেট ইউনিভার্সিটিতে সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ বিষয়ে অধ্যাপক

Google News Icon

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন