কমডোর জসীম উদ্দীন ভূঁইয়া (অব.)
প্রাচীন আরাকান বর্তমানে রাখাইন ঐতিহাসিকভাবে বাংলারই অংশ ছিল। ১৫০০ ও ১৬০০ শতকে, যখন আরাকান মুসলিম শাসকদের অধীনে ছিল, তাদের সংস্কৃতি, ভাষা এবং ধর্ম পূর্ববঙ্গীয় ছিল। বঙ্গের সুলতানদের হটিয়ে এক জটিল রাজনৈতিক সন্ধিক্ষণে মধ্যযুগে প্রায় শতবছর চট্টগ্রামে কায়েম হয়েছিল মগদের রাজ! ফেনী নদী থেকে সমগ্র আরাকান পর্যন্ত বিস্তৃত এই রাজ্যটি আমাদের কাছে সাহিত্যের ভাষায় পরিচিত ‘মগের মুল্লুক’ নামে। চট্টগ্রাম এবং আরাকান একসময় একই বাণিজ্যিক অঞ্চল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল। সম্রাট আওরঙ্গজেবের নির্দেশ অনুযায়ী বাংলার উপকূল থেকে মঘ জলদস্যুদের উৎপাত বন্ধ এবং আরকানিদের কাছ থেকে চট্টগ্রাম পুনরুদ্ধার করার নিমিত্তে মোগল সুবেদার শায়েস্তা খান তার পুত্র বুজুর্গ উমেদ খানকে আদেশ দেন, যাতে তারা দস্যুপ্রবণ এ অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠা করে। মগ জলদস্যুদের ফেনী নদীর ওপার থেকে হটিয়ে উমেদ খান ও নৌবাহিনীর কমান্ডার হোসেন বেগসহ দুই বাহিনী মিলিত হয়ে ১৬৬৬ সালের ২৪ জানুয়ারি হামলা চালায় মগ- জলদস্যুদের শক্ত ঘাঁটি চাটগাঁ কিল্লায় (আন্দরকিল্লা) দুর্গে টানা তিন দিন রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর মোগল বাহিনী প্ৰবেশ করে চট্টগ্রাম শহরে। এরপর কক্সবাজারের রামু পর্যন্ত অঞ্চলটি মোগল শাসনের অধীনে নিয়ে আসেন। পরবর্তী সময়ে, শায়েস্তা খান চট্টগ্রামকে দস্যুমুক্ত করে এর নাম দেন ‘ইসলামাবাদ’, যা ছিল শান্তির প্রতীক।
তবে ঔপনিবেশিক ইতিহাস, ভারতীয় উপমহাদেশের বিভাজন এবং ভুল রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের কারণে পূর্ববঙ্গের নেতৃত্ব সম্পূর্ণ এ আরাকান অঞ্চলটি সংযুক্ত রাখতে ব্যর্থ হয়। কিন্তু ঐতিহাসিক, ভৌগোলিক এবং সাংস্কৃতিক দৃষ্টিকোণ থেকে আজও বাংলাদেশ এবং রাখাইন অপরিহার্যভাবে যুক্ত। দুর্ভাগ্যবশত, বর্তমান সময়ে এ অঞ্চলটি একটি সংঘর্ষের মঞ্চে পরিণত হচ্ছে, যার মূল কেন্দ্র রোহিঙ্গাসংকট। সেই সংকটের ভবিষ্যৎ এখন বহির্বিশ্বের শক্তির পরীক্ষার ক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
বাংলাদেশের নিরাপত্তা উপদেষ্টার সাম্প্রতিক বক্তব্য পরিস্থিতির বাস্তবতা সম্পর্কে আমাদের একটি স্পষ্ট ধারণা দেয়। তিনি স্পষ্টভাবে বলেছেন, বাংলাদেশ-সংলগ্ন রাখাইন সীমান্ত বর্তমানে সম্পূর্ণরূপে আরাকান আর্মি নিয়ন্ত্রণ করছে এবং বাংলাদেশকেই সীমান্ত রক্ষা ও শান্তিপূর্ণ রাখার দায়িত্ব নিতে হবে। তিনি আরো উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ আর কোনো নতুন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ চায় না এবং এই বার্তা জাতিসংঘের মাধ্যমে আরাকান আর্মিকে জানানো হয়েছে। এ সময় তিনি জানান, মিয়ানমার সেনাবাহিনী সীমান্ত নিয়ন্ত্রণে ফিরে এলে তাদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকবে।
বাংলাদেশ এখন কৌশলগতভাবে ‘ডুয়াল ট্র্যাক’ কূটনীতিতে প্রবেশ করেছে, যেখানে একদিকে সীমান্ত পরিস্থিতি বাস্তবতার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ রেখে শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা হচ্ছে, অন্যদিকে জাতিগত ন্যায্যতার প্রশ্নেও দৃঢ় বার্তা দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি, মিয়ানমারের সামরিক সরকারের সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে মানবিক সহায়তা এবং কৌশলগত সমন্বয় বজায় রাখার গুরুত্ব তুলে ধরা হচ্ছে। এই দৃষ্টিভঙ্গি বাংলাদেশকে ‘নিরপেক্ষ সক্রিয়তা’ হিসেবে একটি শক্তিশালী নীতিগত অবস্থানে তুলে ধরছে।
আমেরিকা ও চীনের দ্বন্দ্ব : আরাকানে নতুন কলোনিয়ালিজম
যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় তাদের কৌশলগত প্রভাব বিস্তারের লক্ষ্যে রাখাইনকে একটি কৌশলগত লঞ্চপ্যাডে পরিণত করতে চায়। বিশেষ করে আরাকান আর্মির মতো গোষ্ঠীগুলোকে তারা পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করছে, যারা রাখাইনকে মিয়ানমার থেকে বিচ্ছিন্ন করে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চায়। এই স্বাধীন আরাকান পরিণত হবে একটি মার্কিন-সহায়ক রাষ্ট্রে, যেখান থেকে বঙ্গোপসাগরের ওপর মার্কিন সামরিক এবং বাণিজ্যিক দৃষ্টি দীর্ঘ মেয়াদে প্রতিষ্ঠিত হবে।
অন্যদিকে চীনও বসে নেই। তাদের চীন-মিয়ানমার ইকোনমিক করিডোর (CMEC) এবং কিউকফিউ বন্দর থেকে ইউনান প্রদেশে সংযোগ এক কৌশলগত স্বপ্ন। তাই চীন চায় রাখাইন ও মিয়ানমারে স্থিতিশীলতা—তাদের গণতন্ত্র বা মানবাধিকার নয়, বরং ভূ-অর্থনীতি ও নিরাপত্তা মুখ্য। চীন চায় না আমেরিকান প্রভাব রাখাইনে প্রবেশ করুক। এই ভূরাজনৈতিক দ্বন্দ্বের মাঝখানে পড়ে গেছে বাংলাদেশ—যে একদিকে যেমন শরণার্থী সংকটে বিপর্যস্ত, অন্যদিকে কৌশলগত সিদ্ধান্ত গ্রহণে দ্বিধান্বিত।
রোহিঙ্গারা : সংকট না সম্ভাবনা?
রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী যুগ যুগ ধরে রাখাইনের বাসিন্দা হলেও মিয়ানমার সরকার এবং আরাকান আর্মি উভয়ই তাদের ‘বিদেশি’ বলে চিহ্নিত করে। ২০১৭ সালের পর থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা জনগণের সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়িয়েছে। বর্তমানে কক্সবাজারের ক্যাম্পগুলোয় বাস করছে একটি নতুন প্রজন্ম—যাদের মধ্যে ২০ বছর বয়সের তরুণরা আত্মমর্যাদায় বলীয়ান। এই তরুণদের অংশগ্রহণে একটি সংগঠিত, সুসজ্জিত ও কৌশলগতভাবে প্রশিক্ষিত রোহিঙ্গা প্রতিরোধ বাহিনী (Rohingya Defense Force) গঠন আজ শুধু বাস্তবসম্মত নয়, বরং প্রয়োজনীয়। যদি রোহিঙ্গারা নিজেদের ভবিষ্যতের জন্য রাখাইনে ন্যায্য প্রতিনিধিত্বের দাবিতে একত্র হয়, তাহলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও সেই আহ্বান এড়াতে পারবে না। তবে এর জন্য প্রয়োজন কার্যকর নেতৃত্ব, সুসংগঠিত কৌশল এবং অতীতের ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা।
আরসা : ব্যর্থতা থেকে শিখে সামনে এগোনোর সময়
আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি বা আরসা রোহিঙ্গাদের স্বার্থ রক্ষা ও আত্মরক্ষা করার লক্ষ্যে গঠিত হয়েছিল, তাদের কার্যক্রমে নেতৃত্বের অভাব ও লক্ষ্যহীনতা ছিল। এর কারণে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ভয়াবহ গণহত্যা ও জাতিগত নিধন চালিয়েছে। ভবিষ্যতে, রোহিঙ্গাদের প্রতিরোধ বাহিনী গঠন করতে হলে, তা হতে হবে নতুন দর্শন, স্বচ্ছ নেতৃত্ব এবং আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য তথা আরসার অতীত ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে।
জাতিসংঘ করিডোর চাইলে, ক্যাম্প চাই রাখাইনে
বাংলাদেশের সামনে এখন কৌশলগত একটি সুযোগ এসেছে—করিডোর ইস্যুতে ‘লিভারেজ’ তৈরি করার। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বিশেষত চীন, ভারত ও আমেরিকা চায় বাংলাদেশ করিডোর সুবিধা দিক। বাংলাদেশ স্পষ্টভাবে জানাতে পারে : রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ও করিডোর বাস্তবায়ন হবে সমান্তরাল প্রক্রিয়া।
জাতিসংঘ ও সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে বলতে হবে, রাখাইনের ভেতর একটি নির্ধারিত অঞ্চলকে আন্তর্জাতিক আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করতে হবে, যেখানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েন থাকবে এবং রোহিঙ্গাদের জন্য ঘরবাড়ি তৈরি করা হবে। এই ব্যবস্থা ছাড়া বাংলাদেশ যেন নতুন করে কোনো শরণার্থী গ্রহণ না করে এবং সীমান্তও খোলা না রাখে।
সেভেন সিস্টার্স ও ভারতের উদ্বেগ
রাখাইন ইস্যুতে ভারতের অবস্থান সন্দেহজনক। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের মন্তব্য—‘বাংলাদেশের অস্তিত্বই ভারতের নিরাপত্তার হুমকি’—এই অঞ্চলে বাংলাদেশের ভূরাজনৈতিক অবস্থানকে খাটো করে দেখার একটি কৌশল। অথচ ভারতের পূর্বাঞ্চলের সাতটি রাজ্য—‘সেভেন সিস্টার্স’—প্রতিনিয়ত বিচ্ছিন্নতাবাদ ও চীনা প্রভাবের শঙ্কায় জর্জরিত। রাখাইন-রোহিঙ্গাসংকট এই অঞ্চলে অস্থিরতা তৈরি করলে ভারত নিজেও প্রভাবিত হবে। তবে ভারতের ‘প্রক্সি ব্যালান্সিং’ নীতি বাংলাদেশকে সতর্ক হতে বাধ্য করছে।
সামরিক প্রস্তুতি ও সম্ভাব্য যুদ্ধক্ষেত্র
বাংলাদেশকে অবশ্যই এই অঞ্চলকে সম্ভাব্য যুদ্ধক্ষেত্র হিসেবে বিবেচনা করে গোপনে সামরিক প্রস্তুতি নিতে হবে। এই প্রস্তুতির মধ্যে থাকতে হবে সীমান্ত নিরাপত্তা, বিশেষ বাহিনী দ্বারা পাহাড়ি এলাকায় অভিযান চালানোর কৌশল, সাইবার গোয়েন্দা কার্যক্রম এবং সীমান্তবর্তী রোহিঙ্গা যুবকদের প্রতিরক্ষা প্রশিক্ষণ। মানবিক দৃষ্টিকোণ বজায় রেখেই তাদের একটি আত্মরক্ষামূলক কাঠামোর অংশ হিসেবে উন্নীত করা যেতে পারে। বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর মধ্যে সমন্বয় জোরদার করে একটি দ্রুত প্রতিক্রিয়াশীল রিজার্ভ ফোর্স তৈরি করা জরুরি।
জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার সাম্প্রতিক বক্তব্য এই কৌশলগত বাস্তবতাকে সরাসরি সমর্থন করে। তিনি বলেন, রাখাইনের ওপারে এখন আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণ এবং সেই কারণে বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষা ও শান্তিপূর্ণ রাখতে হলে আরাকান আর্মির সঙ্গেও বাস্তব প্রয়োজনেই যোগাযোগ রাখতে হবে। পাশাপাশি তিনি পরিষ্কার করে জানিয়েছেন, নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বাংলাদেশ কিছুতেই গ্রহণ করবে না এবং আরাকান আর্মিকে জাতিগত নিধনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে হবে—তা না হলে তাদের সঙ্গে কথাবার্তা চালিয়ে যাওয়াও কঠিন হয়ে পড়বে। জাতিসংঘের মাধ্যমেও এ বার্তা পাঠানো হয়েছে। মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর সঙ্গেও যোগাযোগ চালু রাখা হয়েছে, যেন যেকোনো পরিস্থিতিতে কৌশলগত বোঝাপড়া বজায় থাকে। এ অবস্থানই প্রমাণ করে—বাংলাদেশ এখন কৌশলগত ‘ডুয়াল ট্র্যাক’ (আনুষ্ঠানিক এবং অনানুষ্ঠানিক-বিরোধ বা সংঘাতে জড়িত পক্ষগুলোর মধ্যে যোগাযোগ) কূটনীতিতে প্রবেশ করেছে, যেখানে নিরপেক্ষতা বজায় রেখে সক্রিয়ভাবে জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করাই মুখ্য।
আন্তর্জাতিকভাবে ‘নিরপেক্ষতা’ ধরে রাখা ও সক্রিয় হওয়া
বাংলাদেশের একদিকে যেমন প্রকাশ্য নিরপেক্ষ ভূমিকায় থাকতে হবে, তেমনি আড়ালে ‘নীরব খেলোয়াড়’ হিসেবে সক্রিয় কূটনৈতিক এবং প্রতিরক্ষা কৌশল বাস্তবায়ন করতে হবে। আমেরিকা, চীন, ভারত ও জাতিসংঘ—সব পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হবে, তবে নিজেদের জাতীয় স্বার্থ অক্ষুণ্ণ রেখে। বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশকে অবশ্যই এই বার্তাটি জোরালোভাবে দিতে হবে : যদি রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধান না হয়, তবে তা শুধু দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া নয়, পুরো দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা ও মানবিক কাঠামো ভেঙে ফেলবে।
নতুন এক বাস্তবতার মুখোমুখি
ভবিষ্যতের ভূরাজনীতিতে যে বাস্তবতা আমরা দেখতে পাচ্ছি, তা হচ্ছে রাখাইনকে ঘিরে নতুন ঠান্ডা যুদ্ধ। সেখানে বাংলাদেশ যদি প্রস্তুত না থাকে, তাহলে রোহিঙ্গাদের মতো আরো বিপুলসংখ্যক শরণার্থী আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হবে আর করিডোরের মতো কৌশলগত সুবিধাগুলো হারাতে হবে, বিনিময়ে শুধু আশ্বাস ও চুক্তির কাগজপত্র।
কাগজের চুক্তি নয়, হাতে থাকা তাস দরকার
অতীতে বাংলাদেশ বহুবার আন্তর্জাতিক চুক্তির কাগজে স্বাক্ষর করেছে, কিন্তু বাস্তবায়ন দূরের কথা, সম্মানিতও হয়নি। আজ রোহিঙ্গাসংকটে বাংলাদেশের অবস্থান—দরজায় দরজায় সাহায্য চাওয়ার—এর স্পষ্ট প্রমাণ। এই পরিস্থিতি পুনরাবৃত্তি হওয়া উচিত নয়। চুক্তির বদলে বাংলাদেশের হাতে শক্তিশালী কৌশলগত কার্ড থাকা জরুরি—রোহিঙ্গা বাহিনী, সীমান্ত করিডোর নিয়ন্ত্রণ, জাতিসংঘ মিশন প্রতিষ্ঠা অথবা আঞ্চলিক জোট গঠন।
ইতিহাসের ক্ষত থেকে ভবিষ্যতের দায়িত্বে
আরাকান আমাদের ইতিহাসের অংশ ছিল, কিন্তু আমরা তা রাজনীতি ও অদূরদর্শিতায় হারিয়েছি। এখনো সময় আছে—এই ভূখণ্ড আবার আমাদের জাতীয় কৌশলের অংশ হতে পারে। যদি বাংলাদেশ সাহস, কৌশল এবং দূরদর্শিতা নিয়ে অগ্রসর হয়, তাহলে রোহিঙ্গাসংকট শুধু সমাধান নয়, বাংলাদেশের জন্য একটি কৌশলগত জয় হিসেবেও প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। যদি প্রস্তুত না থাকি, ইতিহাস নিজেই আবার প্রতিশোধ নেবে।
লেখক : সাবেক সহকারী নৌবাহিনীপ্রধান ও উপ-উপাচার্য বিইউপি
প্রাচীন আরাকান বর্তমানে রাখাইন ঐতিহাসিকভাবে বাংলারই অংশ ছিল। ১৫০০ ও ১৬০০ শতকে, যখন আরাকান মুসলিম শাসকদের অধীনে ছিল, তাদের সংস্কৃতি, ভাষা এবং ধর্ম পূর্ববঙ্গীয় ছিল। বঙ্গের সুলতানদের হটিয়ে এক জটিল রাজনৈতিক সন্ধিক্ষণে মধ্যযুগে প্রায় শতবছর চট্টগ্রামে কায়েম হয়েছিল মগদের রাজ! ফেনী নদী থেকে সমগ্র আরাকান পর্যন্ত বিস্তৃত এই রাজ্যটি আমাদের কাছে সাহিত্যের ভাষায় পরিচিত ‘মগের মুল্লুক’ নামে। চট্টগ্রাম এবং আরাকান একসময় একই বাণিজ্যিক অঞ্চল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল। সম্রাট আওরঙ্গজেবের নির্দেশ অনুযায়ী বাংলার উপকূল থেকে মঘ জলদস্যুদের উৎপাত বন্ধ এবং আরকানিদের কাছ থেকে চট্টগ্রাম পুনরুদ্ধার করার নিমিত্তে মোগল সুবেদার শায়েস্তা খান তার পুত্র বুজুর্গ উমেদ খানকে আদেশ দেন, যাতে তারা দস্যুপ্রবণ এ অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠা করে। মগ জলদস্যুদের ফেনী নদীর ওপার থেকে হটিয়ে উমেদ খান ও নৌবাহিনীর কমান্ডার হোসেন বেগসহ দুই বাহিনী মিলিত হয়ে ১৬৬৬ সালের ২৪ জানুয়ারি হামলা চালায় মগ- জলদস্যুদের শক্ত ঘাঁটি চাটগাঁ কিল্লায় (আন্দরকিল্লা) দুর্গে টানা তিন দিন রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর মোগল বাহিনী প্ৰবেশ করে চট্টগ্রাম শহরে। এরপর কক্সবাজারের রামু পর্যন্ত অঞ্চলটি মোগল শাসনের অধীনে নিয়ে আসেন। পরবর্তী সময়ে, শায়েস্তা খান চট্টগ্রামকে দস্যুমুক্ত করে এর নাম দেন ‘ইসলামাবাদ’, যা ছিল শান্তির প্রতীক।
তবে ঔপনিবেশিক ইতিহাস, ভারতীয় উপমহাদেশের বিভাজন এবং ভুল রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের কারণে পূর্ববঙ্গের নেতৃত্ব সম্পূর্ণ এ আরাকান অঞ্চলটি সংযুক্ত রাখতে ব্যর্থ হয়। কিন্তু ঐতিহাসিক, ভৌগোলিক এবং সাংস্কৃতিক দৃষ্টিকোণ থেকে আজও বাংলাদেশ এবং রাখাইন অপরিহার্যভাবে যুক্ত। দুর্ভাগ্যবশত, বর্তমান সময়ে এ অঞ্চলটি একটি সংঘর্ষের মঞ্চে পরিণত হচ্ছে, যার মূল কেন্দ্র রোহিঙ্গাসংকট। সেই সংকটের ভবিষ্যৎ এখন বহির্বিশ্বের শক্তির পরীক্ষার ক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
বাংলাদেশের নিরাপত্তা উপদেষ্টার সাম্প্রতিক বক্তব্য পরিস্থিতির বাস্তবতা সম্পর্কে আমাদের একটি স্পষ্ট ধারণা দেয়। তিনি স্পষ্টভাবে বলেছেন, বাংলাদেশ-সংলগ্ন রাখাইন সীমান্ত বর্তমানে সম্পূর্ণরূপে আরাকান আর্মি নিয়ন্ত্রণ করছে এবং বাংলাদেশকেই সীমান্ত রক্ষা ও শান্তিপূর্ণ রাখার দায়িত্ব নিতে হবে। তিনি আরো উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ আর কোনো নতুন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ চায় না এবং এই বার্তা জাতিসংঘের মাধ্যমে আরাকান আর্মিকে জানানো হয়েছে। এ সময় তিনি জানান, মিয়ানমার সেনাবাহিনী সীমান্ত নিয়ন্ত্রণে ফিরে এলে তাদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকবে।
বাংলাদেশ এখন কৌশলগতভাবে ‘ডুয়াল ট্র্যাক’ কূটনীতিতে প্রবেশ করেছে, যেখানে একদিকে সীমান্ত পরিস্থিতি বাস্তবতার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ রেখে শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা হচ্ছে, অন্যদিকে জাতিগত ন্যায্যতার প্রশ্নেও দৃঢ় বার্তা দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি, মিয়ানমারের সামরিক সরকারের সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে মানবিক সহায়তা এবং কৌশলগত সমন্বয় বজায় রাখার গুরুত্ব তুলে ধরা হচ্ছে। এই দৃষ্টিভঙ্গি বাংলাদেশকে ‘নিরপেক্ষ সক্রিয়তা’ হিসেবে একটি শক্তিশালী নীতিগত অবস্থানে তুলে ধরছে।
আমেরিকা ও চীনের দ্বন্দ্ব : আরাকানে নতুন কলোনিয়ালিজম
যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় তাদের কৌশলগত প্রভাব বিস্তারের লক্ষ্যে রাখাইনকে একটি কৌশলগত লঞ্চপ্যাডে পরিণত করতে চায়। বিশেষ করে আরাকান আর্মির মতো গোষ্ঠীগুলোকে তারা পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করছে, যারা রাখাইনকে মিয়ানমার থেকে বিচ্ছিন্ন করে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চায়। এই স্বাধীন আরাকান পরিণত হবে একটি মার্কিন-সহায়ক রাষ্ট্রে, যেখান থেকে বঙ্গোপসাগরের ওপর মার্কিন সামরিক এবং বাণিজ্যিক দৃষ্টি দীর্ঘ মেয়াদে প্রতিষ্ঠিত হবে।
অন্যদিকে চীনও বসে নেই। তাদের চীন-মিয়ানমার ইকোনমিক করিডোর (CMEC) এবং কিউকফিউ বন্দর থেকে ইউনান প্রদেশে সংযোগ এক কৌশলগত স্বপ্ন। তাই চীন চায় রাখাইন ও মিয়ানমারে স্থিতিশীলতা—তাদের গণতন্ত্র বা মানবাধিকার নয়, বরং ভূ-অর্থনীতি ও নিরাপত্তা মুখ্য। চীন চায় না আমেরিকান প্রভাব রাখাইনে প্রবেশ করুক। এই ভূরাজনৈতিক দ্বন্দ্বের মাঝখানে পড়ে গেছে বাংলাদেশ—যে একদিকে যেমন শরণার্থী সংকটে বিপর্যস্ত, অন্যদিকে কৌশলগত সিদ্ধান্ত গ্রহণে দ্বিধান্বিত।
রোহিঙ্গারা : সংকট না সম্ভাবনা?
রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী যুগ যুগ ধরে রাখাইনের বাসিন্দা হলেও মিয়ানমার সরকার এবং আরাকান আর্মি উভয়ই তাদের ‘বিদেশি’ বলে চিহ্নিত করে। ২০১৭ সালের পর থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা জনগণের সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়িয়েছে। বর্তমানে কক্সবাজারের ক্যাম্পগুলোয় বাস করছে একটি নতুন প্রজন্ম—যাদের মধ্যে ২০ বছর বয়সের তরুণরা আত্মমর্যাদায় বলীয়ান। এই তরুণদের অংশগ্রহণে একটি সংগঠিত, সুসজ্জিত ও কৌশলগতভাবে প্রশিক্ষিত রোহিঙ্গা প্রতিরোধ বাহিনী (Rohingya Defense Force) গঠন আজ শুধু বাস্তবসম্মত নয়, বরং প্রয়োজনীয়। যদি রোহিঙ্গারা নিজেদের ভবিষ্যতের জন্য রাখাইনে ন্যায্য প্রতিনিধিত্বের দাবিতে একত্র হয়, তাহলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও সেই আহ্বান এড়াতে পারবে না। তবে এর জন্য প্রয়োজন কার্যকর নেতৃত্ব, সুসংগঠিত কৌশল এবং অতীতের ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা।
আরসা : ব্যর্থতা থেকে শিখে সামনে এগোনোর সময়
আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি বা আরসা রোহিঙ্গাদের স্বার্থ রক্ষা ও আত্মরক্ষা করার লক্ষ্যে গঠিত হয়েছিল, তাদের কার্যক্রমে নেতৃত্বের অভাব ও লক্ষ্যহীনতা ছিল। এর কারণে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ভয়াবহ গণহত্যা ও জাতিগত নিধন চালিয়েছে। ভবিষ্যতে, রোহিঙ্গাদের প্রতিরোধ বাহিনী গঠন করতে হলে, তা হতে হবে নতুন দর্শন, স্বচ্ছ নেতৃত্ব এবং আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য তথা আরসার অতীত ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে।
জাতিসংঘ করিডোর চাইলে, ক্যাম্প চাই রাখাইনে
বাংলাদেশের সামনে এখন কৌশলগত একটি সুযোগ এসেছে—করিডোর ইস্যুতে ‘লিভারেজ’ তৈরি করার। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বিশেষত চীন, ভারত ও আমেরিকা চায় বাংলাদেশ করিডোর সুবিধা দিক। বাংলাদেশ স্পষ্টভাবে জানাতে পারে : রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ও করিডোর বাস্তবায়ন হবে সমান্তরাল প্রক্রিয়া।
জাতিসংঘ ও সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে বলতে হবে, রাখাইনের ভেতর একটি নির্ধারিত অঞ্চলকে আন্তর্জাতিক আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করতে হবে, যেখানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েন থাকবে এবং রোহিঙ্গাদের জন্য ঘরবাড়ি তৈরি করা হবে। এই ব্যবস্থা ছাড়া বাংলাদেশ যেন নতুন করে কোনো শরণার্থী গ্রহণ না করে এবং সীমান্তও খোলা না রাখে।
সেভেন সিস্টার্স ও ভারতের উদ্বেগ
রাখাইন ইস্যুতে ভারতের অবস্থান সন্দেহজনক। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের মন্তব্য—‘বাংলাদেশের অস্তিত্বই ভারতের নিরাপত্তার হুমকি’—এই অঞ্চলে বাংলাদেশের ভূরাজনৈতিক অবস্থানকে খাটো করে দেখার একটি কৌশল। অথচ ভারতের পূর্বাঞ্চলের সাতটি রাজ্য—‘সেভেন সিস্টার্স’—প্রতিনিয়ত বিচ্ছিন্নতাবাদ ও চীনা প্রভাবের শঙ্কায় জর্জরিত। রাখাইন-রোহিঙ্গাসংকট এই অঞ্চলে অস্থিরতা তৈরি করলে ভারত নিজেও প্রভাবিত হবে। তবে ভারতের ‘প্রক্সি ব্যালান্সিং’ নীতি বাংলাদেশকে সতর্ক হতে বাধ্য করছে।
সামরিক প্রস্তুতি ও সম্ভাব্য যুদ্ধক্ষেত্র
বাংলাদেশকে অবশ্যই এই অঞ্চলকে সম্ভাব্য যুদ্ধক্ষেত্র হিসেবে বিবেচনা করে গোপনে সামরিক প্রস্তুতি নিতে হবে। এই প্রস্তুতির মধ্যে থাকতে হবে সীমান্ত নিরাপত্তা, বিশেষ বাহিনী দ্বারা পাহাড়ি এলাকায় অভিযান চালানোর কৌশল, সাইবার গোয়েন্দা কার্যক্রম এবং সীমান্তবর্তী রোহিঙ্গা যুবকদের প্রতিরক্ষা প্রশিক্ষণ। মানবিক দৃষ্টিকোণ বজায় রেখেই তাদের একটি আত্মরক্ষামূলক কাঠামোর অংশ হিসেবে উন্নীত করা যেতে পারে। বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর মধ্যে সমন্বয় জোরদার করে একটি দ্রুত প্রতিক্রিয়াশীল রিজার্ভ ফোর্স তৈরি করা জরুরি।
জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার সাম্প্রতিক বক্তব্য এই কৌশলগত বাস্তবতাকে সরাসরি সমর্থন করে। তিনি বলেন, রাখাইনের ওপারে এখন আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণ এবং সেই কারণে বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষা ও শান্তিপূর্ণ রাখতে হলে আরাকান আর্মির সঙ্গেও বাস্তব প্রয়োজনেই যোগাযোগ রাখতে হবে। পাশাপাশি তিনি পরিষ্কার করে জানিয়েছেন, নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বাংলাদেশ কিছুতেই গ্রহণ করবে না এবং আরাকান আর্মিকে জাতিগত নিধনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে হবে—তা না হলে তাদের সঙ্গে কথাবার্তা চালিয়ে যাওয়াও কঠিন হয়ে পড়বে। জাতিসংঘের মাধ্যমেও এ বার্তা পাঠানো হয়েছে। মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর সঙ্গেও যোগাযোগ চালু রাখা হয়েছে, যেন যেকোনো পরিস্থিতিতে কৌশলগত বোঝাপড়া বজায় থাকে। এ অবস্থানই প্রমাণ করে—বাংলাদেশ এখন কৌশলগত ‘ডুয়াল ট্র্যাক’ (আনুষ্ঠানিক এবং অনানুষ্ঠানিক-বিরোধ বা সংঘাতে জড়িত পক্ষগুলোর মধ্যে যোগাযোগ) কূটনীতিতে প্রবেশ করেছে, যেখানে নিরপেক্ষতা বজায় রেখে সক্রিয়ভাবে জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করাই মুখ্য।
আন্তর্জাতিকভাবে ‘নিরপেক্ষতা’ ধরে রাখা ও সক্রিয় হওয়া
বাংলাদেশের একদিকে যেমন প্রকাশ্য নিরপেক্ষ ভূমিকায় থাকতে হবে, তেমনি আড়ালে ‘নীরব খেলোয়াড়’ হিসেবে সক্রিয় কূটনৈতিক এবং প্রতিরক্ষা কৌশল বাস্তবায়ন করতে হবে। আমেরিকা, চীন, ভারত ও জাতিসংঘ—সব পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হবে, তবে নিজেদের জাতীয় স্বার্থ অক্ষুণ্ণ রেখে। বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশকে অবশ্যই এই বার্তাটি জোরালোভাবে দিতে হবে : যদি রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধান না হয়, তবে তা শুধু দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া নয়, পুরো দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা ও মানবিক কাঠামো ভেঙে ফেলবে।
নতুন এক বাস্তবতার মুখোমুখি
ভবিষ্যতের ভূরাজনীতিতে যে বাস্তবতা আমরা দেখতে পাচ্ছি, তা হচ্ছে রাখাইনকে ঘিরে নতুন ঠান্ডা যুদ্ধ। সেখানে বাংলাদেশ যদি প্রস্তুত না থাকে, তাহলে রোহিঙ্গাদের মতো আরো বিপুলসংখ্যক শরণার্থী আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হবে আর করিডোরের মতো কৌশলগত সুবিধাগুলো হারাতে হবে, বিনিময়ে শুধু আশ্বাস ও চুক্তির কাগজপত্র।
কাগজের চুক্তি নয়, হাতে থাকা তাস দরকার
অতীতে বাংলাদেশ বহুবার আন্তর্জাতিক চুক্তির কাগজে স্বাক্ষর করেছে, কিন্তু বাস্তবায়ন দূরের কথা, সম্মানিতও হয়নি। আজ রোহিঙ্গাসংকটে বাংলাদেশের অবস্থান—দরজায় দরজায় সাহায্য চাওয়ার—এর স্পষ্ট প্রমাণ। এই পরিস্থিতি পুনরাবৃত্তি হওয়া উচিত নয়। চুক্তির বদলে বাংলাদেশের হাতে শক্তিশালী কৌশলগত কার্ড থাকা জরুরি—রোহিঙ্গা বাহিনী, সীমান্ত করিডোর নিয়ন্ত্রণ, জাতিসংঘ মিশন প্রতিষ্ঠা অথবা আঞ্চলিক জোট গঠন।
ইতিহাসের ক্ষত থেকে ভবিষ্যতের দায়িত্বে
আরাকান আমাদের ইতিহাসের অংশ ছিল, কিন্তু আমরা তা রাজনীতি ও অদূরদর্শিতায় হারিয়েছি। এখনো সময় আছে—এই ভূখণ্ড আবার আমাদের জাতীয় কৌশলের অংশ হতে পারে। যদি বাংলাদেশ সাহস, কৌশল এবং দূরদর্শিতা নিয়ে অগ্রসর হয়, তাহলে রোহিঙ্গাসংকট শুধু সমাধান নয়, বাংলাদেশের জন্য একটি কৌশলগত জয় হিসেবেও প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। যদি প্রস্তুত না থাকি, ইতিহাস নিজেই আবার প্রতিশোধ নেবে।
লেখক : সাবেক সহকারী নৌবাহিনীপ্রধান ও উপ-উপাচার্য বিইউপি
এই বছর অর্থনীতির নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে উদ্ভাবন ও সৃজনশীল ধ্বংসের প্রক্রিয়া (creative destruction) কীভাবে দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে সেই গবেষণার ওপর। নতুন প্রযুক্তি ও ধারণা পুরোনো ব্যবস্থাকে প্রতিস্থাপন করে সমাজ যখন পরিবর্তনের জন্য উন্মুক্ত থাকে, তখনই টেক
১১ ঘণ্টা আগে‘মনের তালা খুলল কে, চাবিওয়ালা, চাবিওয়ালা!’ প্রখ্যাত শিল্পী রুনা লায়লার সেই সুরেলা প্রশ্নের উত্তর আজও খুঁজে বেড়াচ্ছি! তবে ব্যক্তিগত জীবনে নয়, রাষ্ট্রীয় জীবনে। এই রাষ্ট্রের জীবনেও একটা বিশেষ তালা আছে, আর তার নাম আর্টিকেল ৭০! এই তালা লাগানো হয়েছিল সেই সব মাননীয়র জন্য, যাদের মধ্যে ‘ছাগলীয়’ প্রবৃত্তি রয়ে
১১ ঘণ্টা আগেভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইসরাইলের যুদ্ধাপরাধী প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে প্রায়ই তার পরম বন্ধু বলে বেশ গৌরবের সঙ্গে প্রচার করে থাকেন। ভিন্ন দেশের এ দুই রাজনীতিবিদের প্রগাঢ় বন্ধুত্বের মূল সূত্র হলো মুসলমানদের প্রতি তাদের তীব্র ঘৃণা। বর্তমান বিশ্বে ইসলামোফোবিয়ায় আক্রান্ত শীর্ষ দুটি
১২ ঘণ্টা আগেগাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে যখন হতাশা চরমে, তখনই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন এক নতুন ‘২০ দফার শান্তি পরিকল্পনা’। সেখানে তিনি নিজেকে বসিয়েছেন একটি তথাকথিত ‘বোর্ড অব পিস’-এর চেয়ারম্যান হিসেবে।
১ দিন আগে