আবদুল লতিফ মাসুম
সংবিধান সম্পর্কিত অনেকগুলো প্রস্তাবনা সম্পর্কে জাতীয় ঐক্য অর্জিত হলেও এখন বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে গোল বেধেছে। এতে করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের যে অর্জন, তা ভেস্তে যেতে বসেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রস্তাবগুলোর বাস্তবায়ন টেকসই করতে হলে জনগণের অভিপ্রায়ের ওপর নির্ভর করতে হবে। এ রকম নীতিগত বিষয়ে ভিন্নমত পোষণের কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু কীভাবে এই গণ-অভিপ্রায়ের বাস্তবায়ন ঘটবে, সেটি নিয়ে অনেক কথা আছে। এদিকে জুলাই জাতীয় সনদের বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে এক বৈঠকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বিশেষজ্ঞরা অভিমত দিয়েছেন, এটি যাচাই করার উপায় হলো গণভোট বা গণপরিষদ নির্বাচন। একে সংবিধান সংস্কার সভা বলে অভিহিত করতে চান উদ্যোক্তারা। বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের আলোচনায় যে মতামত এসেছে, তা হলোÑজাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে সংস্কার প্রশ্নে গণভোট করা যেতে পারে। জুলাই সনদ নিয়ে সাংবিধানিক আদেশ জারি করে সেটার ভিত্তিতে গণভোট হতে পারে। তাদের মতে গণপরিষদ বা সংবিধান সংস্কার সভা করা হলে সেটিও জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গেই করা যাবে। সে ক্ষেত্রে আগামী জাতীয় সংসদ একই সঙ্গে গণপরিষদ বা সংবিধান সংস্কার সভা এবং জাতীয় সংসদ উভয় হিসেবে কাজ করবে। এছাড়া জুলাই সনদ নিয়ে সংবিধান আদেশ জারি, জুলাই সনদের বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের মতামত চাওয়ার বিষয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। এর আগেও সনদ বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়েছিলেন। সেখানে তারা বলেছিলেন, জুলাই সনদ নিয়ে সংবিধান আদেশ জারি করা যেতে পারে। সেটি অবিলম্বে কার্যকর হবে। পরে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে এ আদেশ নিয়ে গণভোট করা যেতে পারে।
এখন পর্যন্ত সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে বৈঠকের পর বৈঠক চলছে। চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায়নি। তবে ছয়টি সংস্কার কমিশনের সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দুই পর্বের আলোচনায় ইতোমধ্যে ৮৪টি বিষয়ে ঐকমত্য অর্জিত হয়েছে। এগুলো নিয়ে তৈরি হয়েছে জুলাই জাতীয় সনদ। মূল বিতর্ক এখন সংবিধান সম্পর্কিত প্রস্তাবগুলোর বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে। দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি আগামী সংসদের মাধ্যমে সংবিধান সম্পর্কিত প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের পক্ষে। এর বাইরে অন্য কোনোভাবে সংবিধান সংস্কার সম্ভব কি না, তা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের মতামত চাওয়া যেতে পারে বলে মনে করে বিএনপি। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী চায় সংবিধান আদেশ জারি এবং গণভোটের মাধ্যমে এর বাস্তবায়ন। আর জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) চায় গণপরিষদ। দলটি মনে করে, গণপরিষদ একই সঙ্গে নিয়মিত সংসদ হিসেবেও কাজ করতে পারে। রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, গণসংহতি পরিষদ এবং আরো কোনো কোনো দল এ ধরনের সংবিধান সংস্কার সভা গঠন করার প্রস্তাব দিয়েছে। এর বাইরে কিছু দল সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের মতামত চাওয়ার পক্ষে।
সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে ১১ সেপ্টেম্বর থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, ঐকমত্য কমিশন জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের উপায় সম্পর্কে সরকারের কাছে একাধিক সুপারিশ উপস্থাপন করবে। এ লক্ষ্যে আলোচনা অব্যাহত থাকবে।
গণপরিষদ প্রস্তাবটি আলোচিত হতে পারে। গণপরিষদ হলো কিছু ব্যক্তির সমাবেশ, যারা কোনো দেশের সংবিধান বা গঠনতন্ত্র প্রণয়ন কিংবা সংস্কারের জন্য সমবেত হয়। সংবিধান সভার সদস্যরা সাধারণত জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়। কখনো কখনো এই গণপরিষদ জাতীয় পরিষদে রূপান্তরিত হতে পারে। সংবিধান সভার গুরুত্ব ও মর্যাদা অন্যরকমের। সাধারণত সংবিধান প্রবর্তনের মধ্য দিয়ে ওই সংবিধান প্রণয়নকারী সংবিধান সভা ভেঙে দেওয়া হয় এবং প্রবর্তিত সংবিধানের অধীনে নতুন আইনসভা গঠিত হয়। বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নের জন্য গণপরিষদ গঠিত হয়েছিল। ১৯৭০ সালে পাকিস্তানের জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে যারা এমএনএ ও এমপিএ হয়েছিলেন, তাদের একত্র করে সংবিধান প্রণয়নের জন্য গণপরিষদ গঠিত হয়। সংবিধান প্রণীত হওয়ার পর সাধারণভাবেই এর পরিসমাপ্তি ঘটে। এ পরিষদই রূপান্তরিত হয় জাতীয় সংসদ রূপে।
এই গণপরিষদ গঠন বিতর্কের ঊর্ধ্বে ছিল না। পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ বা প্রাদেশিক পরিষদ সাংবিধানিক পরিষদ হতে পারে কি না, তা নিয়ে তখনো বিরোধ চলছিল। মওলানা ভাসানী, আ স ম আবদুর রব, বদরুদ্দীন ওমর এবং ফরহাদ মাজহারের মতো রাজনীতিক ও বুদ্ধিজীবীরা এর বিরোধিতা করেন। ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর সংবিধান ঘোষিত হওয়ার পর এর কার্যকারিতা স্বাভাবিকভাবে রহিত হয়। তবে পরবর্তী সময়ের জন্য এটি জাতীয় সংসদ হিসেবে কাজ করে।
২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের পর সংবিধান সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। গণঅভ্যুত্থানের নেতারা এবং আরো কিছু রাজনৈতিক দল পুরোনো সংবিধান বাতিল করে নতুন সংবিধান রচনার পক্ষপাতী। কিন্তু পুরোনো রাজনৈতিক দলগুলো পুরোনো সংবিধান রাখার পক্ষে অবশেষে মতামত দিয়েছে। সবাই এই সংবিধানের ব্যাপক সংস্কারপ্রত্যাশী। কিন্তু বিতর্কটি হলো এই যে, সংবিধান বহাল রেখেই কি সংস্কারগুলো হবে, নাকি নতুন সংবিধান রচিত হবে? সংবিধান রচনার ব্যাপারে পাকিস্তানের উত্তরাধিকার সুখকর নয়। ৯ বছর লেগেছে পাকিস্তানের সংবিধান রচনা করতে। শাসকগোষ্ঠী তাদের সুবিধা ও অসুবিধা মোকাবিলায় ১৭ বার সংবিধানে অস্ত্রোপচার করেছে। যে রাজনৈতিক ঐক্য অর্জিত হয়েছে, তার মাধ্যমে সংবিধান সংস্কার করতে গিয়ে কী প্রক্রিয়ায় তা হবে, সেটি বর্তমানের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ও গুরুত্বপূর্ণ সংলাপ।
মনে রাখতে হবে, যেকোনো সংযোজন ও সংশোধনের সঙ্গে গণ অধিকারের প্রশ্নটি জড়িত। বাংলাদেশের সংবিধানে বলা হয়েছে, জনগণই ক্ষমতার উৎস। সুতরাং সংবিধানের যেকোনো পরিবর্তন গণ অধিকারের মাত্রাতেই নির্ধারিত হতে হবে। সংবিধানের মতো সংবেদনশীল বিষয়ের ক্ষেত্রে রাজনীতিবিদদের অতি অবশ্যই সাধারণ মানুষের সমষ্টিগত অধিকারের দিকে নজর দিতে হবে। কোনো ব্যক্তি, দল বা গোষ্ঠীর চেয়ে বাংলাদেশ জাতিরাষ্ট্রের জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার দিকে রাজনীতিকদের দৃষ্টি দিতে হবে। তবে সব মত ও পথের রাজনীতিকদের সংবিধান পরিবর্তন প্রক্রিয়ার প্রশ্নে ঐকমত্যে পৌঁছাতে হবে। জাতীয় ঐকমত্য পরিষদ এই কঠিন কর্তব্য সম্পাদনে সফল হবেন এই আশা সব মানুষের। মনে রাখতে হবে, ঐক্যেই মুক্তি, ঐক্যেই শক্তি।
লেখক: রাজনীতি বিশ্লেষক, সাবেক অধ্যাপক, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
সংবিধান সম্পর্কিত অনেকগুলো প্রস্তাবনা সম্পর্কে জাতীয় ঐক্য অর্জিত হলেও এখন বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে গোল বেধেছে। এতে করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের যে অর্জন, তা ভেস্তে যেতে বসেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রস্তাবগুলোর বাস্তবায়ন টেকসই করতে হলে জনগণের অভিপ্রায়ের ওপর নির্ভর করতে হবে। এ রকম নীতিগত বিষয়ে ভিন্নমত পোষণের কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু কীভাবে এই গণ-অভিপ্রায়ের বাস্তবায়ন ঘটবে, সেটি নিয়ে অনেক কথা আছে। এদিকে জুলাই জাতীয় সনদের বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে এক বৈঠকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বিশেষজ্ঞরা অভিমত দিয়েছেন, এটি যাচাই করার উপায় হলো গণভোট বা গণপরিষদ নির্বাচন। একে সংবিধান সংস্কার সভা বলে অভিহিত করতে চান উদ্যোক্তারা। বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের আলোচনায় যে মতামত এসেছে, তা হলোÑজাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে সংস্কার প্রশ্নে গণভোট করা যেতে পারে। জুলাই সনদ নিয়ে সাংবিধানিক আদেশ জারি করে সেটার ভিত্তিতে গণভোট হতে পারে। তাদের মতে গণপরিষদ বা সংবিধান সংস্কার সভা করা হলে সেটিও জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গেই করা যাবে। সে ক্ষেত্রে আগামী জাতীয় সংসদ একই সঙ্গে গণপরিষদ বা সংবিধান সংস্কার সভা এবং জাতীয় সংসদ উভয় হিসেবে কাজ করবে। এছাড়া জুলাই সনদ নিয়ে সংবিধান আদেশ জারি, জুলাই সনদের বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের মতামত চাওয়ার বিষয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। এর আগেও সনদ বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়েছিলেন। সেখানে তারা বলেছিলেন, জুলাই সনদ নিয়ে সংবিধান আদেশ জারি করা যেতে পারে। সেটি অবিলম্বে কার্যকর হবে। পরে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে এ আদেশ নিয়ে গণভোট করা যেতে পারে।
এখন পর্যন্ত সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে বৈঠকের পর বৈঠক চলছে। চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায়নি। তবে ছয়টি সংস্কার কমিশনের সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দুই পর্বের আলোচনায় ইতোমধ্যে ৮৪টি বিষয়ে ঐকমত্য অর্জিত হয়েছে। এগুলো নিয়ে তৈরি হয়েছে জুলাই জাতীয় সনদ। মূল বিতর্ক এখন সংবিধান সম্পর্কিত প্রস্তাবগুলোর বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে। দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি আগামী সংসদের মাধ্যমে সংবিধান সম্পর্কিত প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের পক্ষে। এর বাইরে অন্য কোনোভাবে সংবিধান সংস্কার সম্ভব কি না, তা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের মতামত চাওয়া যেতে পারে বলে মনে করে বিএনপি। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী চায় সংবিধান আদেশ জারি এবং গণভোটের মাধ্যমে এর বাস্তবায়ন। আর জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) চায় গণপরিষদ। দলটি মনে করে, গণপরিষদ একই সঙ্গে নিয়মিত সংসদ হিসেবেও কাজ করতে পারে। রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, গণসংহতি পরিষদ এবং আরো কোনো কোনো দল এ ধরনের সংবিধান সংস্কার সভা গঠন করার প্রস্তাব দিয়েছে। এর বাইরে কিছু দল সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের মতামত চাওয়ার পক্ষে।
সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে ১১ সেপ্টেম্বর থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, ঐকমত্য কমিশন জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের উপায় সম্পর্কে সরকারের কাছে একাধিক সুপারিশ উপস্থাপন করবে। এ লক্ষ্যে আলোচনা অব্যাহত থাকবে।
গণপরিষদ প্রস্তাবটি আলোচিত হতে পারে। গণপরিষদ হলো কিছু ব্যক্তির সমাবেশ, যারা কোনো দেশের সংবিধান বা গঠনতন্ত্র প্রণয়ন কিংবা সংস্কারের জন্য সমবেত হয়। সংবিধান সভার সদস্যরা সাধারণত জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়। কখনো কখনো এই গণপরিষদ জাতীয় পরিষদে রূপান্তরিত হতে পারে। সংবিধান সভার গুরুত্ব ও মর্যাদা অন্যরকমের। সাধারণত সংবিধান প্রবর্তনের মধ্য দিয়ে ওই সংবিধান প্রণয়নকারী সংবিধান সভা ভেঙে দেওয়া হয় এবং প্রবর্তিত সংবিধানের অধীনে নতুন আইনসভা গঠিত হয়। বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নের জন্য গণপরিষদ গঠিত হয়েছিল। ১৯৭০ সালে পাকিস্তানের জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে যারা এমএনএ ও এমপিএ হয়েছিলেন, তাদের একত্র করে সংবিধান প্রণয়নের জন্য গণপরিষদ গঠিত হয়। সংবিধান প্রণীত হওয়ার পর সাধারণভাবেই এর পরিসমাপ্তি ঘটে। এ পরিষদই রূপান্তরিত হয় জাতীয় সংসদ রূপে।
এই গণপরিষদ গঠন বিতর্কের ঊর্ধ্বে ছিল না। পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ বা প্রাদেশিক পরিষদ সাংবিধানিক পরিষদ হতে পারে কি না, তা নিয়ে তখনো বিরোধ চলছিল। মওলানা ভাসানী, আ স ম আবদুর রব, বদরুদ্দীন ওমর এবং ফরহাদ মাজহারের মতো রাজনীতিক ও বুদ্ধিজীবীরা এর বিরোধিতা করেন। ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর সংবিধান ঘোষিত হওয়ার পর এর কার্যকারিতা স্বাভাবিকভাবে রহিত হয়। তবে পরবর্তী সময়ের জন্য এটি জাতীয় সংসদ হিসেবে কাজ করে।
২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের পর সংবিধান সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। গণঅভ্যুত্থানের নেতারা এবং আরো কিছু রাজনৈতিক দল পুরোনো সংবিধান বাতিল করে নতুন সংবিধান রচনার পক্ষপাতী। কিন্তু পুরোনো রাজনৈতিক দলগুলো পুরোনো সংবিধান রাখার পক্ষে অবশেষে মতামত দিয়েছে। সবাই এই সংবিধানের ব্যাপক সংস্কারপ্রত্যাশী। কিন্তু বিতর্কটি হলো এই যে, সংবিধান বহাল রেখেই কি সংস্কারগুলো হবে, নাকি নতুন সংবিধান রচিত হবে? সংবিধান রচনার ব্যাপারে পাকিস্তানের উত্তরাধিকার সুখকর নয়। ৯ বছর লেগেছে পাকিস্তানের সংবিধান রচনা করতে। শাসকগোষ্ঠী তাদের সুবিধা ও অসুবিধা মোকাবিলায় ১৭ বার সংবিধানে অস্ত্রোপচার করেছে। যে রাজনৈতিক ঐক্য অর্জিত হয়েছে, তার মাধ্যমে সংবিধান সংস্কার করতে গিয়ে কী প্রক্রিয়ায় তা হবে, সেটি বর্তমানের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ও গুরুত্বপূর্ণ সংলাপ।
মনে রাখতে হবে, যেকোনো সংযোজন ও সংশোধনের সঙ্গে গণ অধিকারের প্রশ্নটি জড়িত। বাংলাদেশের সংবিধানে বলা হয়েছে, জনগণই ক্ষমতার উৎস। সুতরাং সংবিধানের যেকোনো পরিবর্তন গণ অধিকারের মাত্রাতেই নির্ধারিত হতে হবে। সংবিধানের মতো সংবেদনশীল বিষয়ের ক্ষেত্রে রাজনীতিবিদদের অতি অবশ্যই সাধারণ মানুষের সমষ্টিগত অধিকারের দিকে নজর দিতে হবে। কোনো ব্যক্তি, দল বা গোষ্ঠীর চেয়ে বাংলাদেশ জাতিরাষ্ট্রের জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার দিকে রাজনীতিকদের দৃষ্টি দিতে হবে। তবে সব মত ও পথের রাজনীতিকদের সংবিধান পরিবর্তন প্রক্রিয়ার প্রশ্নে ঐকমত্যে পৌঁছাতে হবে। জাতীয় ঐকমত্য পরিষদ এই কঠিন কর্তব্য সম্পাদনে সফল হবেন এই আশা সব মানুষের। মনে রাখতে হবে, ঐক্যেই মুক্তি, ঐক্যেই শক্তি।
লেখক: রাজনীতি বিশ্লেষক, সাবেক অধ্যাপক, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
এই বছর অর্থনীতির নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে উদ্ভাবন ও সৃজনশীল ধ্বংসের প্রক্রিয়া (creative destruction) কীভাবে দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে সেই গবেষণার ওপর। নতুন প্রযুক্তি ও ধারণা পুরোনো ব্যবস্থাকে প্রতিস্থাপন করে সমাজ যখন পরিবর্তনের জন্য উন্মুক্ত থাকে, তখনই টেক
৮ ঘণ্টা আগে‘মনের তালা খুলল কে, চাবিওয়ালা, চাবিওয়ালা!’ প্রখ্যাত শিল্পী রুনা লায়লার সেই সুরেলা প্রশ্নের উত্তর আজও খুঁজে বেড়াচ্ছি! তবে ব্যক্তিগত জীবনে নয়, রাষ্ট্রীয় জীবনে। এই রাষ্ট্রের জীবনেও একটা বিশেষ তালা আছে, আর তার নাম আর্টিকেল ৭০! এই তালা লাগানো হয়েছিল সেই সব মাননীয়র জন্য, যাদের মধ্যে ‘ছাগলীয়’ প্রবৃত্তি রয়ে
৮ ঘণ্টা আগেভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইসরাইলের যুদ্ধাপরাধী প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে প্রায়ই তার পরম বন্ধু বলে বেশ গৌরবের সঙ্গে প্রচার করে থাকেন। ভিন্ন দেশের এ দুই রাজনীতিবিদের প্রগাঢ় বন্ধুত্বের মূল সূত্র হলো মুসলমানদের প্রতি তাদের তীব্র ঘৃণা। বর্তমান বিশ্বে ইসলামোফোবিয়ায় আক্রান্ত শীর্ষ দুটি
৮ ঘণ্টা আগেগাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে যখন হতাশা চরমে, তখনই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন এক নতুন ‘২০ দফার শান্তি পরিকল্পনা’। সেখানে তিনি নিজেকে বসিয়েছেন একটি তথাকথিত ‘বোর্ড অব পিস’-এর চেয়ারম্যান হিসেবে।
১ দিন আগে