মাহমুদুর রহমান
মাসখানেক আগে আমার লেখা একটি মন্তব্য-প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল ‘ভারত সম্ভবত শোধরাবে না’। ভারত সরকারের প্রশ্রয়ে দিল্লিতে পালিয়ে থেকে শেখ হাসিনার দেশবিরোধী কার্যকলাপ এবং ভারতীয় মিডিয়ার তীব্র বাংলাদেশ ও ইসলামবিদ্বেষ প্রসঙ্গে আমার ওই মন্তব্য-প্রতিবেদনটি লিখেছিলাম। আর আজ লিখছি গত সপ্তাহে ব্যাংককে ড. ইউনূসের সঙ্গে নরেন্দ্র মোদির ৪০ মিনিটের দ্বিপক্ষীয় সাক্ষাৎ নিয়ে।
মহান জুলাই বিপ্লবের পর সাত মাসেরও বেশি সময় অতিক্রান্ত হলেও ভারতের প্রধানমন্ত্রী আমাদের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে কোনো দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসা তো দূরের কথা, আন্তর্জাতিক সভা-সেমিনারে সৌজন্যমূলক ফটো সেশন, হাত মেলানো প্রভৃতি বিষয়েও সম্মত হচ্ছিলেন না। নিউ ইয়র্কে গত সেপ্টেম্বরের জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের সময় বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ড. ইউনূস ও নরেন্দ্র মোদির মধ্যে সাক্ষাতের প্রস্তাব দিলেও দিল্লি তখন সাড়া দেয়নি।
অবশেষে ব্যাংককে বাংলাদেশের উদ্যোগে মোদি দেখা দিয়েছেন। গত কয়েক দিনে এই বিলম্বিত সাক্ষাৎ নিয়ে দেশি ও বিদেশি মিডিয়ায় প্রচুর লেখালেখি হয়েছে। আমি অবশ্য আমার বুধবারের নিয়মিত কলামের জন্য অপেক্ষা করছিলাম।
উপমহাদেশে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের অবসানের সময় থেকেই ভারতের দক্ষিণ এশিয়ায় হেজেমনি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা চলমান রয়েছে। সেই জওহরলাল নেহরু থেকে আজকের নরেন্দ্র মোদি পর্যন্ত ভারতের কোনো নেতাই আঞ্চলিক প্রভুত্ব বিস্তারের নেশা থেকে মুক্ত হতে পারেননি। সাম্রাজ্যবাদ-উত্তর বিশ্বেও দিল্লির এ যুগের শাসকরা সবাই একেকজন মোগল ও ব্রিটিশ সম্রাট হতে চেয়েছেন।
যেহেতু সাম্রাজ্যবাদ ও প্রকাশ্য উপনিবেশবাদের যুগ অতিক্রান্ত হয়েছে, তাই ভারত তার প্রতিবেশী রাষ্ট্রে অলিখিত উপনিবেশ গড়ে তুলতে আগ্রহী। ফলে সার্কের বাকি সাত দেশের কারো সঙ্গেই দিল্লির বন্ধুত্বমূলক সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি। ভারতের সঙ্গে তার প্রতিবেশী দেশগুলোর দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের একটি অতি সংক্ষিপ্ত চিত্র এখানে তুলে ধরার চেষ্টা করছি। উপমহাদেশের পশ্চিম অংশ থেকে শুরু করা যাক।
পাকিস্তান : ভারত ও পাকিস্তানের জন্মলগ্ন থেকেই তুলনামূলকভাবে ক্ষুদ্র পাকিস্তান ভারতীয় হেজেমনিকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে। ১৯৭১ সালে ভারতের সঙ্গে যুদ্ধে পাকিস্তানের শোচনীয় পরাজয় ঘটলে এবং পাকিস্তান দ্বিখণ্ডিত হয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় হলে বিশ্বব্যাপী এই ধারণার জন্ম নিয়েছিল যে, ভারতের প্রতি পাকিস্তানের চ্যালেঞ্জের অবসান হবে।
কিন্তু দুই দশকের মধ্যে ভারত ও পাকিস্তান উভয় রাষ্ট্রই পারমাণবিক অস্ত্র বানিয়ে ফেলতে সক্ষম হলে উপমহাদেশে পাকিস্তানও আবার সামরিক শক্তির ভারসাম্য প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হয়। ১৯৯৮ সালের পর থেকে বহুবার ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের যুদ্ধ বেধে যাওয়ার উপক্রম হলেও পারমাণবিক যুদ্ধের ভয়াবহতা উপলব্ধি করে দুই ‘চিরশত্রু’ দেশের রাজনৈতিক ও সামরিক নেতারা বুদ্ধিমানের মতো প্রতিবার পিছিয়ে গেছেন। অবশ্য উভয় পক্ষের তর্জনগর্জনে কোনো ভাটা পড়েনি। বাস্তবে না ঘটলেও বলিউডের সিনেমায় তো প্রতিদিন পাকিস্তান দখল করে ভারতের অধীনস্থ করে ফেলা হচ্ছে।
আফগানিস্তান : পাকিস্তানের পশ্চিমের প্রতিবেশী আফগানিস্তানের সঙ্গে ‘শত্রুর শত্রু আমার বন্ধু’ নীতিতে ভারতের সুসম্পর্ক গড়ে ওঠার সুযোগ থাকলেও ধর্ম সেখানে বিরাট বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইসলামবিদ্বেষী কট্টর হিন্দুরাষ্ট্র ভারতের পক্ষে কট্টর মুসলিম দেশ আফগানিস্তানের সঙ্গে প্রকৃত বন্ধুত্ব স্থাপন এক অসম্ভব প্রয়াস। সুতরাং এই দুই দেশের সম্পর্ক কেবল ভূরাজনৈতিক বিবেচনায় পাকিস্তানের ক্ষতিসাধনের যৌথ ইচ্ছার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। তা ছাড়া ভারত অতীতে সর্বদা তালেবানের বিরুদ্ধেই অবস্থান নিয়েছে।
অতীতে মোল্লা ওমরের তালেবান ও আহমেদ শাহ মাসুদের নর্দার্ন অ্যালায়েন্সের মধ্যকার যুদ্ধে ভারত নর্দার্ন অ্যালায়েন্সকে প্রচুর সহায়তা দিয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯৬ ও ২০২১ সালে তালেবান কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নিলে ভারতীয় কূটনীতিক ও গোয়েন্দাদের রাতারাতি সেখান থেকে পালাতে হয়েছিল। অবশ্য গত চার বছরে ভারত-তালেবান বৈরিতার দৃশ্যত অবসান ঘটেছে এবং পাকিস্তানের বেলুচিস্তান ও খাইবার পাখতুনখোয়া অঞ্চলে যে সশস্ত্র বিদ্রোহ চলছে, সেখানে ভারত ও আফগানিস্তানের যৌথ সমর্থনের অভিযোগ রয়েছে।
নেপাল : ২০০৮ সালে নেপালে রাজতন্ত্রের অবসান পর্যন্ত দেশটি সাংবিধানিকভাবে বিশ্বের একমাত্র হিন্দু রাষ্ট্র হলেও (ভারতে চরমপন্থি হিন্দুত্ববাদী শাসন চললেও সংবিধান অনুযায়ী দেশটি ধর্মনিরপেক্ষ) হিমালয়ের দেশটির জাতীয়তাবাদী ও লড়াকু জনগণ কখনো ভারতীয় হেজেমনির কাছে মাথা নত করেনি। নেপালি কংগ্রেসের ভারতের প্রতি দুর্বলতা থাকলেও জনমতের চাপে নেপালের নেতারা চীন ও ভারতের মধ্যে ভারসাম্যমূলক পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করেই চলেন। তা ছাড়া স্থলবেষ্টিত নেপালের বিরুদ্ধে সুযোগ পেলেই ভারতের বেআইনি ও অমানবিক অবরোধ আরোপের কারণে সে দেশের জনগণ সংগত কারণেই ভারতের প্রতি চরম ক্ষুব্ধ।
ভুটান : ব্রিটিশ শাসন অবসানের সঙ্গে সঙ্গেই ভারত হিমালয়ের অপর রাজ্য ভুটানের ওপর প্রভুত্ব কায়েম করে অদ্যাবধি তা অব্যাহত রেখেছে। আজ পর্যন্ত ভুটান স্বাধীনভাবে তাদের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। দিল্লির অনুমতি নিয়েই এই দুই বিষয়ে দেশটিকে চলতে হয়। ভুটানের শান্তিপ্রিয় জনগণের মধ্যে এ নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে এবং বেশ কিছু দিন ধরে দেশটির সরকার দিল্লিকে যথাসম্ভব না চটিয়ে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক বৃদ্ধির চেষ্টা চালাচ্ছে।
শ্রীলঙ্কা : শ্রীলঙ্কার ওপর একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আশির দশকে ইন্দিরা গান্ধী ভারত মহাসাগরের দ্বীপরাষ্ট্রে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী সিংহলি এবং হিন্দু ধর্মাবলম্বী তামিলদের মধ্যকার ধর্মীয় ও রাজনৈতিক বিরোধকে কাজে লাগিয়ে দীর্ঘ দুই দশকব্যাপী ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের প্রেক্ষাপট রচনা করেছিলেন। দীর্ঘ গৃহযুদ্ধে দেশটির লাখ লাখ মানুষের প্রাণহানি এবং সম্পদের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। অবশ্য প্রকৃতির নির্মম বিচারে ইন্দিরা গান্ধীসৃষ্ট সন্ত্রাসী সংগঠন তামিল টাইগারের আত্মঘাতী হামলাকারীরাই তার ছেলে রাজীব গান্ধীকে হত্যা করেছে। শ্রীলঙ্কার জনগণ ভারতের চরম শত্রুতামূলক আচরণকে কোনোদিন ভুলবে না বলেই আমার ধারণা। শ্রীলঙ্কা ভারত মহাসাগরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক চলাচলের স্থানে অবস্থিত হওয়ায় দেশটিতে প্রভাব বিস্তার নিয়ে ভারত, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতা চলছে।
মালদ্বীপ : ভারতের পক্ষ ও বিপক্ষ নিয়েই সার্কের ক্ষুদ্রতম সদস্যরাষ্ট্র মালদ্বীপের রাজনীতি প্রধানত নির্ধারিত হয়। ‘ভারত হটাও’ স্লোগান দিয়েই ২০২৩ সালের সর্বশেষ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মোহাম্মদ মুইজ্জু তার ভারতপন্থি প্রতিদ্বন্দ্বীকে পরাজিত করেছেন। নির্বাচিত হওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই প্রেসিডেন্ট মুইজ্জু নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ভারতীয় সেনাবাহিনীকে মালদ্বীপ ত্যাগে বাধ্য করেছেন। ১৯৮৯ সালে শ্রীলঙ্কা থেকে লজ্জাজনকভাবে ভারতীয় সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করতে বাধ্য হওয়ার পর সেই ভারত মহাসাগরেরই মাত্র পাঁচ লাখ জনসংখ্যার ক্ষুদ্র দেশ মালদ্বীপ থেকেও পরাশক্তির দাবিদার ভারতকে সৈন্য হটাতে হয়েছে।
বাংলাদেশ : এবার আসি বাংলাদেশে। মহান জুলাই বিপ্লবের স্মৃতি এখনো এ দেশের জনগণকে অনুপ্রাণিত করে চলেছে। এক দেশপ্রেম-বিবর্জিত দালাল, গণবিচ্ছিন্ন ও ফ্যাসিবাদী শাসকগোষ্ঠীকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় অনন্তকাল বসিয়ে রেখে বাংলাদেশে হেজেমনিক কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠার যে স্বপ্ন দিল্লির শাসকশ্রেণি দেখেছিল, তাকে আমাদের অসীম সাহসী তরুণরা ভেঙে দিয়েছে। বর্তমান শতাব্দীতে ভারতের সবচেয়ে বড় ভূরাজনৈতিক বিপর্যয় ঘটেছে ৩৬ দিনের বিস্ময়কর এই বর্ষা বিপ্লবে। বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের অবস্থা অনেকটা এলাকার আধিপত্য নিয়ে তরুণ সিংহের সঙ্গে যুদ্ধে পরাজিত সেই বৃদ্ধ আহত সিংহের মতো, যে শুধু অক্ষম ক্রোধে ক্ষতস্থান থেকে বেয়ে পড়া নিজের রক্ত চাটতে পারে।
ভারতের রাজনৈতিক নেতৃত্বের এই আগ্রাসী আচরণের জন্য দেশটির মিডিয়া ও বুদ্ধিজীবীরা বহুলাংশে দায়ী। ভারত তর্কাতীতভাবে দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ এবং সবচেয়ে শক্তিশালী অর্থনৈতিক ও সামরিক রাষ্ট্র হলেও দেশটির পরাশক্তি হয়ে উঠতে এখনো দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে। মুশকিল হলো ভারতীয় মিডিয়া ও বুদ্ধিজীবীদের এক বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ মনে করে, শক্তিমত্তায় তারা চীনকে ছাড়িয়ে এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে প্রায় ধরে ফেলেছে! এই ভ্রান্ত প্রচারণা দেশটির অতি জাতীয়তাবাদী হিন্দু জনগোষ্ঠী ও সরকারকে একপ্রকার মোহাচ্ছন্ন করে ফেলেছে। তারা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, ওয়াশিংটন যেভাবে তার ইচ্ছা সমস্ত পৃথিবীর ওপর চাপিয়ে দেয়, একইভাবে ভারত অন্তত দক্ষিণ এশিয়াকে তার ইচ্ছামতো পরিচালনা করার জন্মগত অধিকার রাখে। মাস খানেক আগে ঢাকায় পশ্চিমা দেশগুলোর কূটনীতিকদের সঙ্গে এক আলাপচারিতায় ভারতীয় রাজনীতিবিদদের মনস্তত্ত্ব সম্পর্কে আমার উপরোক্ত ব্যাখ্যা দিলে তারা বেশ চমৎকৃত হয়েছিলেন।
ভারতের পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা ডকট্রিন সম্পর্কে আমার বিশ্লেষণ সঠিক হলে ড. ইউনূস ও নরেন্দ্র মোদির ব্যাংকক বৈঠক নিয়ে অতি আশাবাদী হওয়ার কোনো কারণ নেই। ঢাকার এক ভারতপন্থি সুশীল ইংরেজি দৈনিক সেই বৈঠক নিয়ে উল্লসিত হয়ে বেশ ইতিবাচক শিরোনাম দিয়ে খবর ছেপেছে। আমি পত্রিকাটির চরিত্র জানি বলে একেবারেই অবাক হইনি। শুধু পাঠকদের সতর্ক করছি, ব্যাংকক বৈঠকের ফলে দিল্লির ‘ডিপ স্টেট’-এর বাংলাদেশ নীতিতে কোনো পরিবর্তন হবে বলে আমি মনে করি না।
গত সাত মাসে ভারতের সব কার্ড ব্যর্থ হওয়ার প্রেক্ষাপটে তারা আবার বহুল ব্যবহৃত ‘ইসলামিস্ট’ প্রচারণায় ফিরে গেছে। বাংলাদেশে ইসলামিস্ট পুনর্জাগরণের বায়বীয় অভিযোগ-সংবলিত নিউ ইয়র্ক টাইমসের সাম্প্রতিক নিবন্ধ ভারতের পুরোনো খেলার পুনরাবৃত্তি মাত্র। তবে আমি একাধিকবার লিখেছি, আমাদের অতি ইসলামিস্ট হঠকারিতা অবশ্যই পরিহার করতে হবে। বাংলাদেশের বর্তমান সরকারকে বিব্রত এবং দেশে অস্থিরতা সৃষ্টির জন্য দাড়ি-টুপির ছদ্মবেশধারী বিদেশি শক্তি ও ফ্যাসিবাদের এজেন্টদের কাজকারবারের দিকে নজর রেখে তাদের দ্রুত চিহ্নিত করা আমাদের সবার দায়িত্ব।
১৯৪৭ সাল-পরবর্তী দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা যাচ্ছে, ভারতের আগ্রাসী পররাষ্ট্রনীতির বিরুদ্ধে এই অঞ্চলের প্রতিটি দেশে বিভিন্ন সময়ে স্বতঃস্ফূর্ত গণপ্রতিরোধ গড়ে উঠলেও এবং সেসব প্রতিরোধের মুখে ভারতকে পিছু হটতে হলেও দিল্লির নীতিনির্ধারকরা যেন কিছুতেই ইতিহাস থেকে শিক্ষা গ্রহণ না করার পণ করে বসে আছেন। আমার মনে পড়ছে, ২০১০ সাল নাগাদ এক ভারতীয় জেনারেল বাংলাদেশকে আর কখনো দিল্লির রাডারের বাইরে না যেতে দেওয়ার দম্ভোক্তি করেছিলেন। বাংলাদেশের তরুণরা তাদের প্রাণের বিনিময়ে সেই জেনারেলের দম্ভোক্তিকে নস্যাৎ করে দিয়েছে। কিন্তু তারপরও ভারতের হুঁশে ফেরার আশা আমি অন্তত করি না।
মাসখানেক আগে আমার লেখা একটি মন্তব্য-প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল ‘ভারত সম্ভবত শোধরাবে না’। ভারত সরকারের প্রশ্রয়ে দিল্লিতে পালিয়ে থেকে শেখ হাসিনার দেশবিরোধী কার্যকলাপ এবং ভারতীয় মিডিয়ার তীব্র বাংলাদেশ ও ইসলামবিদ্বেষ প্রসঙ্গে আমার ওই মন্তব্য-প্রতিবেদনটি লিখেছিলাম। আর আজ লিখছি গত সপ্তাহে ব্যাংককে ড. ইউনূসের সঙ্গে নরেন্দ্র মোদির ৪০ মিনিটের দ্বিপক্ষীয় সাক্ষাৎ নিয়ে।
মহান জুলাই বিপ্লবের পর সাত মাসেরও বেশি সময় অতিক্রান্ত হলেও ভারতের প্রধানমন্ত্রী আমাদের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে কোনো দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসা তো দূরের কথা, আন্তর্জাতিক সভা-সেমিনারে সৌজন্যমূলক ফটো সেশন, হাত মেলানো প্রভৃতি বিষয়েও সম্মত হচ্ছিলেন না। নিউ ইয়র্কে গত সেপ্টেম্বরের জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের সময় বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ড. ইউনূস ও নরেন্দ্র মোদির মধ্যে সাক্ষাতের প্রস্তাব দিলেও দিল্লি তখন সাড়া দেয়নি।
অবশেষে ব্যাংককে বাংলাদেশের উদ্যোগে মোদি দেখা দিয়েছেন। গত কয়েক দিনে এই বিলম্বিত সাক্ষাৎ নিয়ে দেশি ও বিদেশি মিডিয়ায় প্রচুর লেখালেখি হয়েছে। আমি অবশ্য আমার বুধবারের নিয়মিত কলামের জন্য অপেক্ষা করছিলাম।
উপমহাদেশে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের অবসানের সময় থেকেই ভারতের দক্ষিণ এশিয়ায় হেজেমনি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা চলমান রয়েছে। সেই জওহরলাল নেহরু থেকে আজকের নরেন্দ্র মোদি পর্যন্ত ভারতের কোনো নেতাই আঞ্চলিক প্রভুত্ব বিস্তারের নেশা থেকে মুক্ত হতে পারেননি। সাম্রাজ্যবাদ-উত্তর বিশ্বেও দিল্লির এ যুগের শাসকরা সবাই একেকজন মোগল ও ব্রিটিশ সম্রাট হতে চেয়েছেন।
যেহেতু সাম্রাজ্যবাদ ও প্রকাশ্য উপনিবেশবাদের যুগ অতিক্রান্ত হয়েছে, তাই ভারত তার প্রতিবেশী রাষ্ট্রে অলিখিত উপনিবেশ গড়ে তুলতে আগ্রহী। ফলে সার্কের বাকি সাত দেশের কারো সঙ্গেই দিল্লির বন্ধুত্বমূলক সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি। ভারতের সঙ্গে তার প্রতিবেশী দেশগুলোর দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের একটি অতি সংক্ষিপ্ত চিত্র এখানে তুলে ধরার চেষ্টা করছি। উপমহাদেশের পশ্চিম অংশ থেকে শুরু করা যাক।
পাকিস্তান : ভারত ও পাকিস্তানের জন্মলগ্ন থেকেই তুলনামূলকভাবে ক্ষুদ্র পাকিস্তান ভারতীয় হেজেমনিকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে। ১৯৭১ সালে ভারতের সঙ্গে যুদ্ধে পাকিস্তানের শোচনীয় পরাজয় ঘটলে এবং পাকিস্তান দ্বিখণ্ডিত হয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় হলে বিশ্বব্যাপী এই ধারণার জন্ম নিয়েছিল যে, ভারতের প্রতি পাকিস্তানের চ্যালেঞ্জের অবসান হবে।
কিন্তু দুই দশকের মধ্যে ভারত ও পাকিস্তান উভয় রাষ্ট্রই পারমাণবিক অস্ত্র বানিয়ে ফেলতে সক্ষম হলে উপমহাদেশে পাকিস্তানও আবার সামরিক শক্তির ভারসাম্য প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হয়। ১৯৯৮ সালের পর থেকে বহুবার ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের যুদ্ধ বেধে যাওয়ার উপক্রম হলেও পারমাণবিক যুদ্ধের ভয়াবহতা উপলব্ধি করে দুই ‘চিরশত্রু’ দেশের রাজনৈতিক ও সামরিক নেতারা বুদ্ধিমানের মতো প্রতিবার পিছিয়ে গেছেন। অবশ্য উভয় পক্ষের তর্জনগর্জনে কোনো ভাটা পড়েনি। বাস্তবে না ঘটলেও বলিউডের সিনেমায় তো প্রতিদিন পাকিস্তান দখল করে ভারতের অধীনস্থ করে ফেলা হচ্ছে।
আফগানিস্তান : পাকিস্তানের পশ্চিমের প্রতিবেশী আফগানিস্তানের সঙ্গে ‘শত্রুর শত্রু আমার বন্ধু’ নীতিতে ভারতের সুসম্পর্ক গড়ে ওঠার সুযোগ থাকলেও ধর্ম সেখানে বিরাট বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইসলামবিদ্বেষী কট্টর হিন্দুরাষ্ট্র ভারতের পক্ষে কট্টর মুসলিম দেশ আফগানিস্তানের সঙ্গে প্রকৃত বন্ধুত্ব স্থাপন এক অসম্ভব প্রয়াস। সুতরাং এই দুই দেশের সম্পর্ক কেবল ভূরাজনৈতিক বিবেচনায় পাকিস্তানের ক্ষতিসাধনের যৌথ ইচ্ছার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। তা ছাড়া ভারত অতীতে সর্বদা তালেবানের বিরুদ্ধেই অবস্থান নিয়েছে।
অতীতে মোল্লা ওমরের তালেবান ও আহমেদ শাহ মাসুদের নর্দার্ন অ্যালায়েন্সের মধ্যকার যুদ্ধে ভারত নর্দার্ন অ্যালায়েন্সকে প্রচুর সহায়তা দিয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯৬ ও ২০২১ সালে তালেবান কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নিলে ভারতীয় কূটনীতিক ও গোয়েন্দাদের রাতারাতি সেখান থেকে পালাতে হয়েছিল। অবশ্য গত চার বছরে ভারত-তালেবান বৈরিতার দৃশ্যত অবসান ঘটেছে এবং পাকিস্তানের বেলুচিস্তান ও খাইবার পাখতুনখোয়া অঞ্চলে যে সশস্ত্র বিদ্রোহ চলছে, সেখানে ভারত ও আফগানিস্তানের যৌথ সমর্থনের অভিযোগ রয়েছে।
নেপাল : ২০০৮ সালে নেপালে রাজতন্ত্রের অবসান পর্যন্ত দেশটি সাংবিধানিকভাবে বিশ্বের একমাত্র হিন্দু রাষ্ট্র হলেও (ভারতে চরমপন্থি হিন্দুত্ববাদী শাসন চললেও সংবিধান অনুযায়ী দেশটি ধর্মনিরপেক্ষ) হিমালয়ের দেশটির জাতীয়তাবাদী ও লড়াকু জনগণ কখনো ভারতীয় হেজেমনির কাছে মাথা নত করেনি। নেপালি কংগ্রেসের ভারতের প্রতি দুর্বলতা থাকলেও জনমতের চাপে নেপালের নেতারা চীন ও ভারতের মধ্যে ভারসাম্যমূলক পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করেই চলেন। তা ছাড়া স্থলবেষ্টিত নেপালের বিরুদ্ধে সুযোগ পেলেই ভারতের বেআইনি ও অমানবিক অবরোধ আরোপের কারণে সে দেশের জনগণ সংগত কারণেই ভারতের প্রতি চরম ক্ষুব্ধ।
ভুটান : ব্রিটিশ শাসন অবসানের সঙ্গে সঙ্গেই ভারত হিমালয়ের অপর রাজ্য ভুটানের ওপর প্রভুত্ব কায়েম করে অদ্যাবধি তা অব্যাহত রেখেছে। আজ পর্যন্ত ভুটান স্বাধীনভাবে তাদের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। দিল্লির অনুমতি নিয়েই এই দুই বিষয়ে দেশটিকে চলতে হয়। ভুটানের শান্তিপ্রিয় জনগণের মধ্যে এ নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে এবং বেশ কিছু দিন ধরে দেশটির সরকার দিল্লিকে যথাসম্ভব না চটিয়ে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক বৃদ্ধির চেষ্টা চালাচ্ছে।
শ্রীলঙ্কা : শ্রীলঙ্কার ওপর একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আশির দশকে ইন্দিরা গান্ধী ভারত মহাসাগরের দ্বীপরাষ্ট্রে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী সিংহলি এবং হিন্দু ধর্মাবলম্বী তামিলদের মধ্যকার ধর্মীয় ও রাজনৈতিক বিরোধকে কাজে লাগিয়ে দীর্ঘ দুই দশকব্যাপী ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের প্রেক্ষাপট রচনা করেছিলেন। দীর্ঘ গৃহযুদ্ধে দেশটির লাখ লাখ মানুষের প্রাণহানি এবং সম্পদের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। অবশ্য প্রকৃতির নির্মম বিচারে ইন্দিরা গান্ধীসৃষ্ট সন্ত্রাসী সংগঠন তামিল টাইগারের আত্মঘাতী হামলাকারীরাই তার ছেলে রাজীব গান্ধীকে হত্যা করেছে। শ্রীলঙ্কার জনগণ ভারতের চরম শত্রুতামূলক আচরণকে কোনোদিন ভুলবে না বলেই আমার ধারণা। শ্রীলঙ্কা ভারত মহাসাগরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক চলাচলের স্থানে অবস্থিত হওয়ায় দেশটিতে প্রভাব বিস্তার নিয়ে ভারত, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতা চলছে।
মালদ্বীপ : ভারতের পক্ষ ও বিপক্ষ নিয়েই সার্কের ক্ষুদ্রতম সদস্যরাষ্ট্র মালদ্বীপের রাজনীতি প্রধানত নির্ধারিত হয়। ‘ভারত হটাও’ স্লোগান দিয়েই ২০২৩ সালের সর্বশেষ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মোহাম্মদ মুইজ্জু তার ভারতপন্থি প্রতিদ্বন্দ্বীকে পরাজিত করেছেন। নির্বাচিত হওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই প্রেসিডেন্ট মুইজ্জু নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ভারতীয় সেনাবাহিনীকে মালদ্বীপ ত্যাগে বাধ্য করেছেন। ১৯৮৯ সালে শ্রীলঙ্কা থেকে লজ্জাজনকভাবে ভারতীয় সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করতে বাধ্য হওয়ার পর সেই ভারত মহাসাগরেরই মাত্র পাঁচ লাখ জনসংখ্যার ক্ষুদ্র দেশ মালদ্বীপ থেকেও পরাশক্তির দাবিদার ভারতকে সৈন্য হটাতে হয়েছে।
বাংলাদেশ : এবার আসি বাংলাদেশে। মহান জুলাই বিপ্লবের স্মৃতি এখনো এ দেশের জনগণকে অনুপ্রাণিত করে চলেছে। এক দেশপ্রেম-বিবর্জিত দালাল, গণবিচ্ছিন্ন ও ফ্যাসিবাদী শাসকগোষ্ঠীকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় অনন্তকাল বসিয়ে রেখে বাংলাদেশে হেজেমনিক কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠার যে স্বপ্ন দিল্লির শাসকশ্রেণি দেখেছিল, তাকে আমাদের অসীম সাহসী তরুণরা ভেঙে দিয়েছে। বর্তমান শতাব্দীতে ভারতের সবচেয়ে বড় ভূরাজনৈতিক বিপর্যয় ঘটেছে ৩৬ দিনের বিস্ময়কর এই বর্ষা বিপ্লবে। বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের অবস্থা অনেকটা এলাকার আধিপত্য নিয়ে তরুণ সিংহের সঙ্গে যুদ্ধে পরাজিত সেই বৃদ্ধ আহত সিংহের মতো, যে শুধু অক্ষম ক্রোধে ক্ষতস্থান থেকে বেয়ে পড়া নিজের রক্ত চাটতে পারে।
ভারতের রাজনৈতিক নেতৃত্বের এই আগ্রাসী আচরণের জন্য দেশটির মিডিয়া ও বুদ্ধিজীবীরা বহুলাংশে দায়ী। ভারত তর্কাতীতভাবে দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ এবং সবচেয়ে শক্তিশালী অর্থনৈতিক ও সামরিক রাষ্ট্র হলেও দেশটির পরাশক্তি হয়ে উঠতে এখনো দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে। মুশকিল হলো ভারতীয় মিডিয়া ও বুদ্ধিজীবীদের এক বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ মনে করে, শক্তিমত্তায় তারা চীনকে ছাড়িয়ে এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে প্রায় ধরে ফেলেছে! এই ভ্রান্ত প্রচারণা দেশটির অতি জাতীয়তাবাদী হিন্দু জনগোষ্ঠী ও সরকারকে একপ্রকার মোহাচ্ছন্ন করে ফেলেছে। তারা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, ওয়াশিংটন যেভাবে তার ইচ্ছা সমস্ত পৃথিবীর ওপর চাপিয়ে দেয়, একইভাবে ভারত অন্তত দক্ষিণ এশিয়াকে তার ইচ্ছামতো পরিচালনা করার জন্মগত অধিকার রাখে। মাস খানেক আগে ঢাকায় পশ্চিমা দেশগুলোর কূটনীতিকদের সঙ্গে এক আলাপচারিতায় ভারতীয় রাজনীতিবিদদের মনস্তত্ত্ব সম্পর্কে আমার উপরোক্ত ব্যাখ্যা দিলে তারা বেশ চমৎকৃত হয়েছিলেন।
ভারতের পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা ডকট্রিন সম্পর্কে আমার বিশ্লেষণ সঠিক হলে ড. ইউনূস ও নরেন্দ্র মোদির ব্যাংকক বৈঠক নিয়ে অতি আশাবাদী হওয়ার কোনো কারণ নেই। ঢাকার এক ভারতপন্থি সুশীল ইংরেজি দৈনিক সেই বৈঠক নিয়ে উল্লসিত হয়ে বেশ ইতিবাচক শিরোনাম দিয়ে খবর ছেপেছে। আমি পত্রিকাটির চরিত্র জানি বলে একেবারেই অবাক হইনি। শুধু পাঠকদের সতর্ক করছি, ব্যাংকক বৈঠকের ফলে দিল্লির ‘ডিপ স্টেট’-এর বাংলাদেশ নীতিতে কোনো পরিবর্তন হবে বলে আমি মনে করি না।
গত সাত মাসে ভারতের সব কার্ড ব্যর্থ হওয়ার প্রেক্ষাপটে তারা আবার বহুল ব্যবহৃত ‘ইসলামিস্ট’ প্রচারণায় ফিরে গেছে। বাংলাদেশে ইসলামিস্ট পুনর্জাগরণের বায়বীয় অভিযোগ-সংবলিত নিউ ইয়র্ক টাইমসের সাম্প্রতিক নিবন্ধ ভারতের পুরোনো খেলার পুনরাবৃত্তি মাত্র। তবে আমি একাধিকবার লিখেছি, আমাদের অতি ইসলামিস্ট হঠকারিতা অবশ্যই পরিহার করতে হবে। বাংলাদেশের বর্তমান সরকারকে বিব্রত এবং দেশে অস্থিরতা সৃষ্টির জন্য দাড়ি-টুপির ছদ্মবেশধারী বিদেশি শক্তি ও ফ্যাসিবাদের এজেন্টদের কাজকারবারের দিকে নজর রেখে তাদের দ্রুত চিহ্নিত করা আমাদের সবার দায়িত্ব।
১৯৪৭ সাল-পরবর্তী দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা যাচ্ছে, ভারতের আগ্রাসী পররাষ্ট্রনীতির বিরুদ্ধে এই অঞ্চলের প্রতিটি দেশে বিভিন্ন সময়ে স্বতঃস্ফূর্ত গণপ্রতিরোধ গড়ে উঠলেও এবং সেসব প্রতিরোধের মুখে ভারতকে পিছু হটতে হলেও দিল্লির নীতিনির্ধারকরা যেন কিছুতেই ইতিহাস থেকে শিক্ষা গ্রহণ না করার পণ করে বসে আছেন। আমার মনে পড়ছে, ২০১০ সাল নাগাদ এক ভারতীয় জেনারেল বাংলাদেশকে আর কখনো দিল্লির রাডারের বাইরে না যেতে দেওয়ার দম্ভোক্তি করেছিলেন। বাংলাদেশের তরুণরা তাদের প্রাণের বিনিময়ে সেই জেনারেলের দম্ভোক্তিকে নস্যাৎ করে দিয়েছে। কিন্তু তারপরও ভারতের হুঁশে ফেরার আশা আমি অন্তত করি না।
এই বছর অর্থনীতির নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে উদ্ভাবন ও সৃজনশীল ধ্বংসের প্রক্রিয়া (creative destruction) কীভাবে দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে সেই গবেষণার ওপর। নতুন প্রযুক্তি ও ধারণা পুরোনো ব্যবস্থাকে প্রতিস্থাপন করে সমাজ যখন পরিবর্তনের জন্য উন্মুক্ত থাকে, তখনই টেক
১১ ঘণ্টা আগে‘মনের তালা খুলল কে, চাবিওয়ালা, চাবিওয়ালা!’ প্রখ্যাত শিল্পী রুনা লায়লার সেই সুরেলা প্রশ্নের উত্তর আজও খুঁজে বেড়াচ্ছি! তবে ব্যক্তিগত জীবনে নয়, রাষ্ট্রীয় জীবনে। এই রাষ্ট্রের জীবনেও একটা বিশেষ তালা আছে, আর তার নাম আর্টিকেল ৭০! এই তালা লাগানো হয়েছিল সেই সব মাননীয়র জন্য, যাদের মধ্যে ‘ছাগলীয়’ প্রবৃত্তি রয়ে
১১ ঘণ্টা আগেভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইসরাইলের যুদ্ধাপরাধী প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে প্রায়ই তার পরম বন্ধু বলে বেশ গৌরবের সঙ্গে প্রচার করে থাকেন। ভিন্ন দেশের এ দুই রাজনীতিবিদের প্রগাঢ় বন্ধুত্বের মূল সূত্র হলো মুসলমানদের প্রতি তাদের তীব্র ঘৃণা। বর্তমান বিশ্বে ইসলামোফোবিয়ায় আক্রান্ত শীর্ষ দুটি
১২ ঘণ্টা আগেগাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে যখন হতাশা চরমে, তখনই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন এক নতুন ‘২০ দফার শান্তি পরিকল্পনা’। সেখানে তিনি নিজেকে বসিয়েছেন একটি তথাকথিত ‘বোর্ড অব পিস’-এর চেয়ারম্যান হিসেবে।
১ দিন আগে