ভারতের দুই ফ্রন্টে যুদ্ধের কী হবে

এলাহী নেওয়াজ খান
প্রকাশ : ১৬ মে ২০২৫, ১১: ১৪

মাত্র চার দিনের সংক্ষিপ্ত একটি যুদ্ধ। কিন্তু এর প্রভাব ও গুরুত্ব সুদূরপ্রসারী এবং তাৎপর্যপূর্ণ। কেউ কারো সীমানা অতিক্রম না করে এমন এক যুদ্ধ দেখাল, যা বিশ্ববাসীকে অবাক করে দিয়েছে। বিশেষ করে পাকিস্তান বিমানবাহিনীর অভূতপূর্ব সাফল্য বিশ্বের তাবৎ সামরিক বিশেষজ্ঞদের কপালে ভাঁজ ফেলে দিয়েছে। কারণ ভারতের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে পাকিস্তান শুধু তড়িৎ প্রতিরোধ গড়ে শত্রুকে পরাস্ত করেনি : বরং ভারতের অভ্যন্তরে ভয়াবহ প্রত্যাঘাত করে চমকে দিয়েছে বিশ্বকে। সেই প্রত্যাঘাতের ধরনটা এতটাই ভয়ানক ছিল, তারা বুঝতেই পারেনি, আসলে কী ঘটে গেল। এতে দেশটি এতটাই কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ে, দ্রুততম সময়ের মধ্যে যুদ্ধবিরতি করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে অনুরোধ জানায়।

যেমনটা মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএনের করেসপন্ডেন্ট নিক রবার্টসন বলেছেন, ভারতের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের শক্তিশালী প্রতিশোধমূলক আক্রমণই ভারতকে পিছু হটতে বাধ্য করে, যা নিয়ে যায় যুদ্ধবিরতির দিকে। রবার্টসন আরো বলেন, ভারত পাকিস্তানের তিনটি বিমানঘাঁটিতে আঘাত হানলে পাকিস্তান প্রতি-উত্তরে ভারতের বিভিন্ন সামরিক স্থাপনা, বিমানঘাঁটি ও অস্ত্র গুদামে নিষ্করুণ মিসাইল রকেট হামলা করে, যা ভারতকে ব্যাগ ফুটে নিয়ে যায়।

বিশেষ করে পাকিস্তানের সাইবার যুদ্ধের সক্ষমতা খোদ পশ্চিমা বিশ্বকে হতবাক করে দিয়েছে। প্রদর্শিত হয়েছে আধুনিক ইলেকট্রনিক যুদ্ধের অসাধারণ সব কলাকৌশল। পাকিস্তানের পত্রপত্রিকায় সামরিক সূত্রের বরাত দিয়ে প্রকাশিত সব প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, পাকিস্তান সেদিন তার সাইবার সক্ষমতার মাত্র ১০ ভাগ ব্যবহার করেছে। তা যদি সত্যি হয় : তাহলে বলতে হবে, এত অল্পতেই যেখানে এ রকম অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে, সেখানে ৫০ ভাগ প্রয়োগ করলে পরিস্থিতিটা কী দাঁড়াত? জানা গেছে, এতেই ভারতের এতটা ক্ষতি হয়েছে, যা কাটিয়ে উঠতে আরো পাঁচ বছর সময় লাগবে। তবে কোনো কোনো সূত্র প্রায় ৮৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মতো ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে।

যাই হোক, ওই যুদ্ধে পাকিস্তানের বিজয়ে একদিকে যেমন ভূরাজনীতির অনেক হিসবনিকাস পাল্টে গেছে; তেমনি ভারতের দুই ফ্রন্টে যুদ্ধ করার আকাঙ্ক্ষাকেও গুঁড়িয়ে দিয়েছে। শুধু তা-ই নয়, ক্ষুদ্র প্রতিবেশীদের প্রতি ভারতের গণমাধ্যমের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের একটা বিরাট জবাব নিহিত রয়েছে এই বিজয়ে। মনে হলো, ভারতের মাস্তানির শিকার সব প্রতিবেশীর হয়ে পাকিস্তান প্রতিশোধটা নিয়েছে। তা ছাড়া ভারতের ক্ষুদ্র ও দুর্বল প্রতিবেশী দেশগুলোয় যারা ভারতকে পরাশক্তি ভেবে অন্যদের ওপর মাস্তানি, এমনকি গণহত্যার মতো জঘন্য কাণ্ড করে নির্দোষ ভাবতে ভালোবাসে, তাদেরও সবকিছু নতুন করে উপলব্ধি করার সময় এসেছে। একইভাবে প্রতিবেশী দেশগুলোর জনগণ ভারতের প্রতারণামূলক চাণক্যনীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর অনুপ্রেরণাও লাভ করেছে।

মূলত এই যুদ্ধ ভারতের সামরিক বিশারদদের টনক নাড়িয়ে দিয়েছে। কারণ চীনা ও পাকিস্তান একসঙ্গে ভারতের ওপর আক্রমণ চালাতে পারে, এই আশঙ্কায় ভারতের সামরিক নীতিনির্ধারকরা অনেক বছর ধরে দুই ফ্রন্টে যুদ্ধ করার কথা ভেবে আসছে, যা কেউ উল্লেখ করেছি। তবে দীর্ঘদিনের ভাবনা থাকলেও ২০১৮ সালে ভারতের তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল বিপন রাওয়াত হঠাৎ করে উচ্চ স্বরে দুই ফ্রন্টে যুদ্ধ করার ভারতীয় প্রস্তুতির কথা জোরালোভাবে ঘোষণা করেন। তখন জেনারেল রাওয়াতের দুই ফ্রন্টের যুদ্ধের কথা শুনে মনে হচ্ছিল সত্যিই ভারত পারমাণবিক দুই প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য প্রস্তুত হয়ে বসে আছে। কিন্তু গত শনিবার শুধু পাকিস্তান একাই ভারতের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে যে কঠিন জবাব দিয়েছে, তাতে দুই ফ্রন্টে যুদ্ধ করার ভারতের সক্ষমতা সম্পর্কে বিশ্ববাসী ভালোভাবে জেনে গেছে।

আর ভারতের দুই ফ্রন্টে যুদ্ধ করা সম্পর্কে সেখানের অনেক সামরিক বিশেষজ্ঞ ইসরাইলের ১৯৬৭ সালে নানা ফ্রন্টে যুদ্ধ করে সফল হওয়ার উদাহরণ দিয়ে থাকেন। কিন্তু ১৯৭৩ সালে শুধু মিসরের সঙ্গে যুদ্ধেই ইসরাইল প্রায় হেরে যেতে বসেছিল। যদি যুক্তরাষ্ট্র দ্রুত সাহায্য নিয়ে এগিয়ে না আসত, তাহলে ইতিহাস হয়তো অন্যভাবে লিখিত হতো। তবে ভারতের কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ মনে করেন, পাকিস্তান ও চীন যেভাবে সুদৃঢ় বন্ধুত্বের বন্ধনে আবদ্ধ, সেভাবে ইসরাইল ছাড়া ভারতের কোনো বন্ধু নেই। এবারের যুদ্ধে তাও নগ্নভাবে প্রকাশ হয়ে পড়েছে। একদা যে রাশিয়া ভারতের সব সময়ের বন্ধু ছিল, এবারের যুদ্ধে সেই রাশিয়াও সাহায্যের হাত নিয়ে এগিয়ে আসেনি। তাই ভারতীয় সামরিক বিশেষজ্ঞদের অভিমত হচ্ছে : দুই ফ্রন্টে যুদ্ধ করতে হলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তুলতে হবে। সম্ভবত সে কারণেই ভারত যুদ্ধবিরতিতে যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য কামনা করেছে। হয়তো এই সুযোগে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটা দৃঢ় সম্পর্ক গড়ে উঠতে পারে।

তবে এই যুদ্ধের পর সে সম্পর্ক আদৌ গড়ে উঠবে কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। যদিও যুক্তরাষ্ট্র অনেক বছর ধরে চীনের বিরুদ্ধে ভারতকে অতিকায় শক্তিশালী একটি দেশ হিসেবে দেখার চেষ্টা করেছে। সে কারণেই মার্কিন প্রশাসন চীনকে নিয়ন্ত্রণ করতে কোয়াড ও ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের জোটে ভারতকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। তবে এবারের যুদ্ধের ঘটনাপ্রবাহ যুক্তরাষ্ট্রকে ভিন্ন চিন্তা করতেও সহায়তা করতে পারে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সূত্র থেকে প্রাপ্ত একটি খবর সবাইকে চমকে দিয়েছে। কারণ মার্কিন মধ্যস্থতায় দ্রুততম সময়ের মধ্যে যে যুদ্ধবিরতি সম্পন্ন হয়েছে, তার নেপথ্যে ভয়ানক একটা মার্কিনিদের হাতে ছিল। আর সেটা হচ্ছে : শনিবারের হামলার চেয়ে আরো ভয়ানক হামলার প্রস্তুতি ছিল পাকিস্তানের, যা ভারতকে আরো বিপর্যয়ের মধ্যে ফেলে দিত। গোয়েন্দা সূত্র থেকে এ খবর পেয়েই মার্কিন প্রশাসন যুদ্ধবিরতির জন্য দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করে।

যুদ্ধের এই পটভূমিতে শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, যে পশ্চিমা দেশগুলো বহু বছর ধরে চীনের বিপরীতে কিংবা চীনকে মোকাবিলা করার জন্য ভারতকে একটি আদর্শ দেশ হিসেবে বিবেচনা করে আসছিল। শুধু একটি আদর্শগত দ্বন্দ্বের কারণে পশ্চিমারা চীনের বিরুদ্ধে ভারতকে বেছে নিয়েছিল। তারা ভাবত এশিয়া অঞ্চলে অর্থনৈতিক ও সামরিক দিক দিয়ে ভারত এমন এক পরাশক্তি হিসেবে আবির্ভূত হবে, যা চীনকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হবে। নিশ্চয়ই যুদ্ধের ফলাফল পশ্চিম বিশ্বকে প্রভাবিত করবে। একই সঙ্গে এই যুদ্ধে ভারতের কূটনীতির বিপর্যয় দারুণভাবে পরিলক্ষিত হয়েছে। সেটাও পশ্চিমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে বলে মনে হয়।

এ ছাড়া এটি উল্লেখ করতে হয়, পৃথিবীতে ভারত একমাত্র দেশ, যার রয়েছে প্রতিটি প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে কমবেশি তিক্ত সম্পর্ক। শুধু তা-ই নয়, এদেশটি তার পারমাণবিক ক্ষমতাসম্পন্ন দুই প্রতিবেশী চীন ও পাকিস্তানের সঙ্গে সীমানাবিরোধ নিয়ে দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয়ে আছে প্রায় আট দশক ধরে। এই দ্বন্দ্বের কারণে ৬২ সালের চীনের সঙ্গে তার ভয়াবহ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। সেই যুদ্ধে ভারতের শোচনীয় পরাজয়ের শোক কাটিয়ে উঠতে একাত্তর সাল পর্যন্ত ভারতকে অপেক্ষা করতে হয়েছিল। এ ছাড়া ১৯৪৮ সাল থেকে পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের তিনটি বড় যুদ্ধ সংঘটিত হয়। তাই অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলে থাকেন, ভারতের শত্রু পাকিস্তানি ও চীন কেউ নয়। ভারতের শত্রু হচ্ছে তার অহংকার, তার ঔদ্ধত্য ও তার অতিপ্রাকৃতিক শক্তির অলীক ভাবনা।

ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে ৪ অগ্রাধিকার: বিডা প্রধান

ড. ইউনূসের ওপর ফিনল্যান্ড সরকারের নিষেধাজ্ঞার দাবি ভুয়া: রিউমার স্ক্যানার

এআই গবেষণায় বিল গেটসের আস্থা অর্জন করেছেন বাংলাদেশের আরিফ

রাজধানীর হাজারীবাগে ট্যানারি গুদামে আগুন

শ্রীপুরে ‘মিথ্যা’ মামলা হতে অব্যাহতির জন্য মায়ের সংবাদ সম্মেলন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত