সরকারের ৫ মাসে সাফল্য কোথায়

এম আবদুল্লাহ
প্রকাশ : ০৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১১: ১১
আপডেট : ০৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১১: ২৪

মানুষ সহজাতভাবে সমালোচনাপ্রবণ। ইতিবাচকের চেয়ে নেতিবাচক কর্মকাণ্ড বা দোষত্রুটি বেশি চোখে পড়ে। ছিদ্রান্বেষণের বাতিকও এ জাতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য। অন্তহীন সমস্যা-সংকটে নিমজ্জিত তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশে সরকার পরিচালনায় যারা থাকেন, তাদের পক্ষে জনতুষ্টি অর্জন খুবই চ্যালেঞ্জের।

তথাপি ভঙ্গুর অর্থনীতি, নাজুক প্রশাসনিক কাঠামো ও সামাজিক-রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং বিশৃঙ্খলার মধ্যে কেউ দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পেলে তাদের ভীষণ রকম হিমশিম খেতে হয়।

বিজ্ঞাপন

ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের সাফল্য-ব্যর্থতা নিয়ে বিস্তর আলোচনা হচ্ছে। অনেকেই বলার চেষ্টা করছেন, দেশ ভালো চলছে না। যদিও সম্প্রতি বিআইজিডির এক জরিপের ফলাফলে জানানো হয়েছে, দেশের ৫৬ শতাংশ মানুষ মনে করে দেশ এখন ঠিকপথে চলছে।

একই জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, ৭৯ শতাংশ মানুষ আশা প্রকাশ করেছে, অন্তর্বর্তী সরকারের চেয়ে নির্বাচিত সরকার দেশ ভালো চালাবে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার সময় যাদের আস্থা ছিল, এমন ৮ শতাংশ মানুষের আস্থা এরই মধ্যে সরকার হারিয়েছে বলে জরিপের ফলাফল বলছে।

নোবেলজয়ী বিশ্বনন্দিত ব্যক্তিত্ব ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার পাঁচ মাস পূর্ণ করতে যাচ্ছে। দেড় শ দিন কোনো সরকারকে মূল্যায়নের জন্য যথেষ্ট সময় নয়। আবার অন্তর্বর্তী সরকার বিবেচনায় একেবারে কমও নয়। আকাশছোঁয়া প্রত্যাশার চাপ নিয়ে দায়িত্ব গ্রহণ করে সরকার।

শুরু থেকেই ১৮ কোটি মানুষের চোখ পর্যবেক্ষণে রেখেছে অরাজনৈতিক এই সরকারকে। সপ্তাহ, মাস, এক শ দিন, দেড় শ দিনÑ এমন মাইলফলক ধরে সরকারের সফলতা-ব্যর্থতার মূল্যায়ন হচ্ছে সংবাদমাধ্যমে। টিভি টকশোতে মুক্ত আলোচনা-পর্যালোচনা হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকেও সময়ে সময়ে সাফল্য ও অগ্রগতি জানানো হচ্ছে।

লক্ষণীয় দিক হচ্ছে, কোনো কোনো বিশ্লেষক সরকারের কোনো সাফল্যই দেখতে পাচ্ছেন না। তারা সরাসরি বলছেন, সরকার ব্যর্থ। দেশ চালাতে পারছে না। দ্রুত নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা দিয়ে তাদের চলে যাওয়া উচিত বলেও এই শ্রেণির পর্যবেক্ষক মত দিচ্ছে।

সরকারকে মূল্যায়নের ক্ষেত্রে সম্ভবত তারা বেমালুম ভুলে যাচ্ছে, কোন পরিস্থিতিতে সরকার দায়িত্ব নিয়েছে। আমলে নিচ্ছে না যে, কত বিচিত্র ও অভিনব ধরনের পরিস্থিতি তাদের সামলাতে হচ্ছে। কেমন বাংলাদেশ তারা পেয়েছে তা-ও অগ্রাহ্য হচ্ছে অনেক মূল্যায়ন ও বিশ্লেষণে।

দেড় সহস্রাধিক ছাত্র-জনতার আত্মদানের মধ্য দিয়ে সদ্য বিদায়ী ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ফ্যাসিবাদী শাসক শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান দাম্ভিক শেখ হাসিনা। এরপর ৮ আগস্ট নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়। এই পাঁচ মাসের অন্তর্বর্তী শাসনে সবচেয়ে বড় সাফল্য কোনটি, তা নিয়ে মতভিন্নতা অস্বাভাবিক নয়। বড় ব্যর্থতাও সামনে আনা যেতে পারে।

কিন্তু অকপটে স্বীকার করে নেওয়া ভালো, ১৫ বছরের লুটপাট থামিয়ে দেশের অর্থনীতিকে স্থিতিশীলতার দিকে নিয়ে যেতে পেরেছে সরকার। অর্থনীতির গভীর ক্ষত ধীরে হলেও শুকাতে শুরু করেছে। গণতন্ত্র, নির্ভয়ে মতপ্রকাশ ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ফিরেছে। বিচার বিভাগকে ফ্যাসিবাদমুক্ত করে ন্যায়বিচারের পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। রাষ্ট্রীয় বাহিনীর হাতে খুন, গুম, নিপীড়ন বন্ধ হয়েছে। নির্মোহ বিশ্লেষণে এসব বড় অর্জন হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে।

আলোচ্য সময়ে বাংলাদেশের মানুষের ভোটাধিকার ফেরত পাওয়ার নিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ও গণভোটের বিধান ফেরার মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের পথ অনেকটাই সুগম হয়েছে। এটিকে অবশ্য বিপ্লবী ছাত্র-জনতার অন্যতম আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হিসেবে দেখতে হবে।

আইনশৃঙ্খলা নিয়ে তীব্র সমালোচনার মুখে রয়েছে ড. ইউনূসের সরকার। কিন্তু অপরাধের পরিসংখ্যান আইনশৃঙ্খলার উদ্বেগজনক অবনতির অভিযোগ সমর্থন করছে না। এটা ঠিক, দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার মুখ্য দায়িত্ব পালনকারী পুলিশ বাহিনী এখনও পুরোপুরি সক্রিয় নয়। যে কারণে পুলিশ, বিডিআরসহ অন্যান্য বাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র বাহিনীও কাজ করছে।

গেল সপ্তাহে সেনাসদরের এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকের এক প্রশ্নের উত্তরে সেনাসদরের মিলিটারি অপারেশনস ডিরেক্টরেটের কর্নেল স্টাফ ইন্তেখাব হায়দার খান বলেন, ‘পরিসংখ্যানগত দিক থেকে আইনশৃঙ্খলার অবনতি হয়নি। তবে অনেক ঘটনা ঘটছে, সেগুলো নজরদারিতে আছে।’ আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে সরকার সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে কঠোর মনোভাব জানান দিয়েছে। আবার আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের নামে সাদা পোশাকে কাউকে গ্রেপ্তার না করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে। এটা সুশাসন, মানবাধিকার ও আইনের শাসনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

পাঠকদের স্মরণ থাকার কথা, এক নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি ড. ইউনূস সরকার দায়িত্ব নেয়। দেশজুড়ে বহুমাত্রিক সংকট মোকাবিলা করতে হয়। নানারূপে পতিত ফ্যাসিবাদ ফেরার অপচেষ্টা চালায়। সংখ্যালঘু কার্ড ব্যবহার করে অভ্যন্তরীণ সংঘাতের মুখে ঠেলে দেওয়ার চক্রান্ত দেখা গেছে।

সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রামের আদালতে চিন্ময় কৃষ্ণের সমর্থকদের তাণ্ডব ও আইনজীবী হত্যার পরও দেশজুড়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রতির পরিবেশ অটুট রাখা গেছে। এটা নতুন বাংলাদেশে রাজনৈতিক দল ও নাগরিকদের দায়িত্বশীলতার পরিচায়ক। ভারতীয় মিডিয়ার উসকানিমূলক অপপ্রচার এবং প্রতিবেশী দেশটির আগ্রাসী নীতির বিপরীতে জাতীয় ঐক্যের বার্তা দিতে প্রধান উপদেষ্টার ডাকে সর্বদলীয় সভা এবং জুলাই গণঅভ্যুত্থানের একটি ঘোষণাপত্র নিয়ে সৃষ্ট সংকটও সরকার ভালোভাব উতরেছে।

দায়িত্ব নেওয়ার পর সরকার রাজনৈতিক দল ও ছাত্রসমাজকে সঙ্গে নিয়ে দুই সপ্তাহের মধ্যেই দেশে বড় ধরনের মব জাস্টিস ও সহিংসতা নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সবচেয়ে বড় বাহিনী পুলিশ কার্যত নিষ্ক্রিয় থাকা সত্ত্বেও সরকার ও প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর দায়িত্বশীল ভূমিকায় বড় অঘটন এড়ানো সম্ভব হয়েছে। পাহাড়ে রক্তক্ষয়ী সংঘাতও নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী।

বছরের প্রথম দিনে শিক্ষার্থীদের হাতে সব বই দিতে না পারায় অনেকেই সমালোচনার ঝড় তুলছেন। ৪১ কোটি বইয়ের মধ্যে ছয় কোটি বিতরণের মধ্য দিয়ে নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হয়েছে। সমালোচকরা ভুলে যাচ্ছেন, দেশে বই মুদ্রণের প্রয়োজনীয় কাঠামো গত ১৫ বছরে ধ্বংস করে দিয়ে ভারত থেকে ছাপা হচ্ছিল। নিজেদের পাঠ্যবইটিও ছাপার সক্ষমতা ছিল না।

সেই গ্লানি মুছে দেশের ছাপাখানায় ফিরিয়ে আনা গেছে, এটাও কিন্তু একটা সাফল্য। উপরন্তু সব পাঠ্যবই এবার পরিমার্জন করতে হয়েছে ব্যাপকভাবে। ফলে সময় লেগেছে। মাত্র তিন মাসের প্রস্তুতিতে এতগুলো পাঠ্যবই পরিমার্জিত আকারে প্রকাশ কম চ্যালেঞ্জের নয়। অতীতেও ১ জানুয়ারি সব বই দিতে না পারার ঘটনা ঘটেছে বহুবার।

পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকার এখনও পর্যন্ত সফল হয়নি এটা ঠিক। বাজারে গিয়ে মানুষ নাকাল হচ্ছেন। যদিও মৌসুমি সবজি পর্যাপ্ত সরবরাহে এই মুহূর্তে কিছুটা স্বস্তি রয়েছে। তবে ভোজ্য তেল, চিনিসহ বিভিন্ন পণ্যের দামে অস্থিরতা ও উল্লম্ফন সরকারের সক্ষমতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।

নতুন বাণিজ্যমন্ত্রীও এখনও পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য সফলতা দেখাতে পারেননি। তেল, চালসহ কিছু পণ্যের শুল্ক কমিয়ে সরকার সদিচ্ছার জানান দিতে চেয়েছে। বাজার সিন্ডিকেট ভাঙার বিষয়টি ঘুরেফিরে এলেও তা এখনও অপ্রতিরোধ্য বলেই মনে হচ্ছে।

সর্বশেষ রেস্তোরাঁর খাবার, মিষ্টি, পোশাক, নন-এসি হোটেল, বিস্কুট, আচার, মেট্রেস, ট্রান্সফরমার, টিস্যু পেপারসহ ৪৩ ধরনের পণ্য ও সেবার ওপর ভ্যাট বাড়ানোর প্রস্তুতির খবরে নতুন উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। আইএমএফের শর্ত মানতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

আমদানি ও উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধি এবং ভ্রমণ কর বাড়ানোর সিদ্ধান্তটি একদিকে ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার করেছে, অন্যদিকে ভোক্তাপর্যায়ে অস্বস্তি এবং অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। পণ্যমূল্যে আরেক দফা প্রভাবের আশঙ্কা করা হচ্ছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের পাঁচ মাসে ইতিবাচক পদক্ষেপগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ কাঙ্ক্ষিত সংস্কারের সুপারিশ প্রণয়নে ১০টি কমিশন গঠন, সংবিধানের বহুল বিতর্কিত পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল, সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল পুনর্বহাল, সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩২-এ উন্নীত করা, আবেদনের ফি কমানো, সিভিল প্রশাসনে পতিত সরকারের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল; ফ্যাসিবাদী সরকারের মন্ত্রী, উপদেষ্টা ও হেভিওয়েট নেতাদের গ্রেপ্তার করে বিচার প্রক্রিয়া শুরু করা, সাবেক দুই আইজিপিসহ দলবাজ ও খুনি পুলিশ কর্মকর্তাদের চাকরিচ্যুত ও অনেককে গ্রেপ্তার, দখলকৃত সাতটি ব্যাংক লুটেরা এস আলমের কাছ থেকে পুনরুদ্ধার করে পরিচালনা বোর্ড পুনর্গঠন।

এক তরফা ও তামাশার নির্বাচনে গঠিত স্থানীয় সরকার পরিষদ থেকে ১৮৭৬ আওয়ামী প্রতিনিধিকে অপসারণ, বন্ধ হয়ে যাওয়া মেট্রোরেল চালু, জামায়াত ও শিবির নিষিদ্ধের আদেশ বাতিল, জ্বালানি তেলের দাম কিছুটা কমানো, জুলাই আন্দোলনে অংশগ্রহণের দায়ে আমিরাতে সাজাপ্রাপ্ত ৫৭ বাংলাদেশিকে সাধারণ ক্ষমার আওতায় মুক্ত করে আনা, শেখ পরিবারের সদস্যদের জন্ম-মৃত্যু, ভাষণসহ সংশ্লিষ্ট আটটি জাতীয় দিবস বাতিল করে সরকারি অর্থের অপচয় ও অপব্যয় রোধ, রাষ্ট্রের অর্থে শেখ পরিবারের নামে করা প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন, জয়বাংলা জাতীয় স্লোগান হিসেবে বাধ্যতামূলক করে দেওয়া রায় স্থগিত করা, ১৫ আগস্টের ছুটি বাতিল, হাইকোর্টের ১২ দলবাজ বিচারপতিকে বিচারকাজ থেকে বিরত রাখা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের লুটেরাদের দায়মুক্তি দিয়ে করা আইনের সংশ্লিষ্ট দুটি ধারা বাতিল, সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যা মামলা র‌্যাব থেকে পিবিআইতে স্থানান্তর এবং উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠন সংশ্লিষ্ট সবার মধ্যে আশার সঞ্চার করেছে।

এ ছাড়া জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন গঠন, জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে শহীদ পরিবার ও আহতদের মধ্যে অর্ধশত কোটি টাকা অনুদান বিতরণ, ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহা ও দুর্গাপূজায় ছুটি বৃদ্ধি, হজ প্যাকেজের ব্যয় কিছুটা কমানো, পণ্যমূল্যে লাগাম টানতে সয়াবিন ও পামওয়েলে শুল্কছাড়, চাল আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহার, ২০১২ সালের শিক্ষাক্রমে ফেরা এবং পাঠ্যবই পরিমার্জন, পাঠ্যসূচিতে এক ব্যক্তির সব কৃতিত্ব ও বন্দনার পরিবর্তে সব জাতীয় নেতাদের প্রাপ্য সম্মান নিশ্চিত করা, কবি কাজী নজরুল ইসলামকে জাতীয় কবির স্বীকৃতি দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি, ৭৭৮ প্রভাবশালীর অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল, কক্সবাজারে জনপ্রশাসন একাডেমির নামে ৭০০ একর বনভূমির বন্দোবস্ত বাতিলের মতো পদক্ষেপগুলো জনপ্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটিয়েছে।

আলোচ্য সময়ে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর পদত্যাগ, সিইসিসহ নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগ ও নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন, দুদক চেয়ারম্যান এবং কমিশনারদের পদত্যাগ ও নতুন চেয়ারম্যান-কমিশনার নিয়োগ করে দুর্নীতির তদন্ত এবং বিচারে গতি সঞ্চার, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি ও ইন্টারপোলকে চিঠি, জয়, পুতুল ও ববির হিসাব জব্দ, সংখ্যালঘু নির্যাতনের ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে ঘোষিত দেশজুড়ে সমাবেশ এবং ঢাকামুখী লংমার্চ ঠেকানো, নূর হোসেন দিবসে আওয়ামী লীগের ঢাকা মার্চ কর্মসূচি ভণ্ডুল করাও সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।

তবে ৪২তম বিসিএসের চূড়ান্ত নিয়োগে ২২৭ জনকে বাদ দেওয়া নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার মুখোমুখি হতে হচ্ছে সরকারকে। সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ অনুমোদনের পর এর কিছু ধারা নিয়ে অনেকে সমালোচনা করছেন। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে পদোন্নতিবঞ্চিত জনপ্রশাসনের ৭৬৪ কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েও পক্ষে-বিপক্ষে কথা হচ্ছে।

সর্বোপরি মানুষ দৈনন্দিন জীবনে আরও স্বস্তি চায়। নিত্যপণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে আরও দক্ষতা আশা করে। সামনের রমজান মাসে যাতে প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীর মূল্য সহনীয় পর্যায়ে থাকে, সে ব্যবস্থাটা এখনই নিশ্চিত করতে হবে। সামাজিক শৃঙ্খলা ও জীবনের নিরাপত্তাবোধ তৈরি করাও সরকারের কর্তব্য।

লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট

এমবি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত