ওয়াহিদুল ইসলাম
বাংলাদেশে যখনই কোনো খাতে জটিলতা দেখা দেয়, তখন সমাধান হিসেবে হয় একীভবন, নয় পৃথক্করণের প্রস্তাব ওঠে। কিন্তু কাঠামো পরিবর্তনের আগে বাস্তবতা না বোঝা বিপজ্জনক—যেমন রোগ নির্ণয় না করে ওষুধ দিলে রোগী বিপদে পড়ে, তেমনি প্রশাসনিক পুনর্গঠনও জটিলতা বাড়াতে পারে।
সম্প্রতি দুর্নীতিগ্রস্ত ইসলামী ব্যাংক একীভবনের প্রস্তাব এবং অডিট ও হিসাব সার্ভিস পৃথক করার চিন্তা—দুটি বিষয়ই বাংলাদেশের আর্থিক সুশাসনের পরীক্ষিত ভিত্তির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এই সুশাসনের তিন স্তম্ভ—স্বচ্ছতা, দক্ষতা ও জবাবদিহি রক্ষায় অডিট (নিরীক্ষা) ও অ্যাকাউন্টস (হিসাবরক্ষণ) সার্ভিসকে একই কর্তৃপক্ষ, অর্থাৎ কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলের (সিএজি) অধীনে রাখা সাংবিধানিকভাবে অপরিহার্য।
সংবিধানের ১২৮ ও ১৩১ অনুচ্ছেদে বলা আছে, সি অ্যান্ড এজি তার দায়িত্ব পালনে সম্পূর্ণ স্বাধীন এবং রাষ্ট্রীয় হিসাব কীভাবে রক্ষিত হবে, সেটি নির্ধারণের এখতিয়ার তারই। যদি হিসাবরক্ষণ নির্বাহী বিভাগের হাতে যায়, তবে এটি সংবিধানের লঙ্ঘন হবে, আর নিরীক্ষার স্বাধীনতা হারাবে ভিত্তি।
ভারত, পাকিস্তান ও কানাডার মতো কমনওয়েলথ দেশগুলোতেও অডিট ও হিসাব একই কাঠামোর অধীনে থাকে। এতে আর্থিক তথ্যপ্রবাহ স্বচ্ছ হয় এবং প্রাথমিক স্তরেই অনিয়ম ধরা যায়।
বাংলাদেশে অর্থ খরচের আগে বিলের বৈধতা যাচাই বা প্রি-অডিটই সবচেয়ে কার্যকর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা। এটি সক্রিয় নিয়ন্ত্রণ, যা দুর্নীতি ঘটার আগেই ঠেকায়। কিন্তু ব্যয়ের পর পোস্ট-অডিট হয় সীমিত পরিসরে; তখন অর্থ ফেরত আনা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।
যদি হিসাবরক্ষণ নির্বাহী বিভাগের অধীনে যায়, প্রি-অডিট বিলুপ্ত হবে। অর্থ অনুমোদনকারী কর্মকর্তারাই তখন বিল যাচাই করবেন—এটি হবে ক্লাসিক ‘স্বার্থের সংঘাত’। এতে আর্থিক অনিয়ম আরো প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নেবে।
অডিট ও হিসাব সার্ভিস আলাদা করলে কয়েকটি গুরুতর ঝুঁকি তৈরি হবে—
ক. স্বার্থের সংঘাত ও নির্বাহী প্রভাব : হিসাব বিভাগ অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে গেলে বিল তৈরি ও অনুমোদন একই হাতে পড়বে, চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স নষ্ট হবে।
খ. প্রশাসনিক বৈষম্য : অতীতে ইকোনমিক ক্যাডার প্রশাসন ক্যাডারের সঙ্গে একীভূত হওয়ার মতো ইতিহাস আবার পুনরাবৃত্তি হতে পারে, এতে অসন্তোষ বাড়বে।
গ. পূর্ব অভিজ্ঞতা : ২০১০-১১ সালে বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় এমন উদ্যোগ ব্যর্থ হয়, কারণ বাস্তবতা বিবেচনা করা হয়নি।
ঘ. সংসদীয় তদারকির দুর্বলতা : সি অ্যান্ড এজি দুর্বল হলে সংসদের পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটিও কার্যত নিষ্ক্রিয় হয়ে যাবে।
‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’-এ বলা হয়েছে, অডিট ও হিসাব পৃথক করলে নিরীক্ষকের স্বাধীনতা বাড়বে। কিন্তু বাংলাদেশের মতো উচ্চ দুর্নীতিপ্রবণ দেশে এর ফল হবে উল্টো।
অতএব, লক্ষ্য পূরণের পথ পৃথক্করণ নয়, বরং একীভূত কাঠামো সংস্কার ও আধুনিকীকরণ।
বাংলাদেশে আর্থিক সুশাসনের মূল চ্যালেঞ্জ দুর্নীতি, বিলম্বিত ব্যয় ও দুর্বল প্রকল্প ব্যবস্থাপনা। তাই প্রয়োজন একীভূত কাঠামোকে শক্তিশালী করা।
সংস্কারের দিকনির্দেশনা হতে পারে—
১. ডিজিটাল প্রি-অডিট : প্রতিটি বিল তাৎক্ষণিকভাবে সি অ্যান্ড এজি অফিসে যাচাই হবে।
২. প্রশাসনিক স্বায়ত্তশাসন : সি অ্যান্ড এজি অফিসকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখা।
৩. প্রশিক্ষণ : কর্মকর্তাদের তথ্যপ্রযুক্তি ও আধুনিক আর্থিক ব্যবস্থাপনা বিষয়ে দক্ষ করা।
৪. PAC শক্তিশালীকরণ : নিরীক্ষা প্রতিবেদনের বাস্তবায়নে সংসদীয় কমিটিকে বাড়তি ক্ষমতা দেওয়া।
এভাবেই ‘জুলাই সনদ’-এর লক্ষ্য স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক প্রশাসন বাস্তবায়িত হবে।
সংবিধান কেবল সি অ্যান্ড এজি’র (সিএজি) স্বাধীনতাই নয়, রাষ্ট্রীয় কোষাগারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতাও নিশ্চিত করে। এই ভারসাম্য রক্ষা সম্ভব একীভূত কাঠামো বজায় রাখলে।
হিসাবরক্ষণ নির্বাহী বিভাগের হাতে গেলে দুর্নীতি ও রাজনৈতিক প্রভাব বাড়বে, আর রাষ্ট্রের মৌলিক চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স ভেঙে পড়বে। তাই অডিট ও অ্যাকাউন্টস সার্ভিসকে একই কাঠামোয় রাখা সাংবিধানিক, বাস্তব ও নৈতিকভাবে অপরিহার্য।
পৃথক্করণের পথে না গিয়ে একীভূত কাঠামোকেই যুগোপযোগী করে সংস্কার করা—এটাই বাংলাদেশের আর্থিক সুশাসনের নিরাপদ ও কার্যকর পথ।
বাংলাদেশে যখনই কোনো খাতে জটিলতা দেখা দেয়, তখন সমাধান হিসেবে হয় একীভবন, নয় পৃথক্করণের প্রস্তাব ওঠে। কিন্তু কাঠামো পরিবর্তনের আগে বাস্তবতা না বোঝা বিপজ্জনক—যেমন রোগ নির্ণয় না করে ওষুধ দিলে রোগী বিপদে পড়ে, তেমনি প্রশাসনিক পুনর্গঠনও জটিলতা বাড়াতে পারে।
সম্প্রতি দুর্নীতিগ্রস্ত ইসলামী ব্যাংক একীভবনের প্রস্তাব এবং অডিট ও হিসাব সার্ভিস পৃথক করার চিন্তা—দুটি বিষয়ই বাংলাদেশের আর্থিক সুশাসনের পরীক্ষিত ভিত্তির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এই সুশাসনের তিন স্তম্ভ—স্বচ্ছতা, দক্ষতা ও জবাবদিহি রক্ষায় অডিট (নিরীক্ষা) ও অ্যাকাউন্টস (হিসাবরক্ষণ) সার্ভিসকে একই কর্তৃপক্ষ, অর্থাৎ কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলের (সিএজি) অধীনে রাখা সাংবিধানিকভাবে অপরিহার্য।
সংবিধানের ১২৮ ও ১৩১ অনুচ্ছেদে বলা আছে, সি অ্যান্ড এজি তার দায়িত্ব পালনে সম্পূর্ণ স্বাধীন এবং রাষ্ট্রীয় হিসাব কীভাবে রক্ষিত হবে, সেটি নির্ধারণের এখতিয়ার তারই। যদি হিসাবরক্ষণ নির্বাহী বিভাগের হাতে যায়, তবে এটি সংবিধানের লঙ্ঘন হবে, আর নিরীক্ষার স্বাধীনতা হারাবে ভিত্তি।
ভারত, পাকিস্তান ও কানাডার মতো কমনওয়েলথ দেশগুলোতেও অডিট ও হিসাব একই কাঠামোর অধীনে থাকে। এতে আর্থিক তথ্যপ্রবাহ স্বচ্ছ হয় এবং প্রাথমিক স্তরেই অনিয়ম ধরা যায়।
বাংলাদেশে অর্থ খরচের আগে বিলের বৈধতা যাচাই বা প্রি-অডিটই সবচেয়ে কার্যকর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা। এটি সক্রিয় নিয়ন্ত্রণ, যা দুর্নীতি ঘটার আগেই ঠেকায়। কিন্তু ব্যয়ের পর পোস্ট-অডিট হয় সীমিত পরিসরে; তখন অর্থ ফেরত আনা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।
যদি হিসাবরক্ষণ নির্বাহী বিভাগের অধীনে যায়, প্রি-অডিট বিলুপ্ত হবে। অর্থ অনুমোদনকারী কর্মকর্তারাই তখন বিল যাচাই করবেন—এটি হবে ক্লাসিক ‘স্বার্থের সংঘাত’। এতে আর্থিক অনিয়ম আরো প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নেবে।
অডিট ও হিসাব সার্ভিস আলাদা করলে কয়েকটি গুরুতর ঝুঁকি তৈরি হবে—
ক. স্বার্থের সংঘাত ও নির্বাহী প্রভাব : হিসাব বিভাগ অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে গেলে বিল তৈরি ও অনুমোদন একই হাতে পড়বে, চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স নষ্ট হবে।
খ. প্রশাসনিক বৈষম্য : অতীতে ইকোনমিক ক্যাডার প্রশাসন ক্যাডারের সঙ্গে একীভূত হওয়ার মতো ইতিহাস আবার পুনরাবৃত্তি হতে পারে, এতে অসন্তোষ বাড়বে।
গ. পূর্ব অভিজ্ঞতা : ২০১০-১১ সালে বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় এমন উদ্যোগ ব্যর্থ হয়, কারণ বাস্তবতা বিবেচনা করা হয়নি।
ঘ. সংসদীয় তদারকির দুর্বলতা : সি অ্যান্ড এজি দুর্বল হলে সংসদের পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটিও কার্যত নিষ্ক্রিয় হয়ে যাবে।
‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’-এ বলা হয়েছে, অডিট ও হিসাব পৃথক করলে নিরীক্ষকের স্বাধীনতা বাড়বে। কিন্তু বাংলাদেশের মতো উচ্চ দুর্নীতিপ্রবণ দেশে এর ফল হবে উল্টো।
অতএব, লক্ষ্য পূরণের পথ পৃথক্করণ নয়, বরং একীভূত কাঠামো সংস্কার ও আধুনিকীকরণ।
বাংলাদেশে আর্থিক সুশাসনের মূল চ্যালেঞ্জ দুর্নীতি, বিলম্বিত ব্যয় ও দুর্বল প্রকল্প ব্যবস্থাপনা। তাই প্রয়োজন একীভূত কাঠামোকে শক্তিশালী করা।
সংস্কারের দিকনির্দেশনা হতে পারে—
১. ডিজিটাল প্রি-অডিট : প্রতিটি বিল তাৎক্ষণিকভাবে সি অ্যান্ড এজি অফিসে যাচাই হবে।
২. প্রশাসনিক স্বায়ত্তশাসন : সি অ্যান্ড এজি অফিসকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখা।
৩. প্রশিক্ষণ : কর্মকর্তাদের তথ্যপ্রযুক্তি ও আধুনিক আর্থিক ব্যবস্থাপনা বিষয়ে দক্ষ করা।
৪. PAC শক্তিশালীকরণ : নিরীক্ষা প্রতিবেদনের বাস্তবায়নে সংসদীয় কমিটিকে বাড়তি ক্ষমতা দেওয়া।
এভাবেই ‘জুলাই সনদ’-এর লক্ষ্য স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক প্রশাসন বাস্তবায়িত হবে।
সংবিধান কেবল সি অ্যান্ড এজি’র (সিএজি) স্বাধীনতাই নয়, রাষ্ট্রীয় কোষাগারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতাও নিশ্চিত করে। এই ভারসাম্য রক্ষা সম্ভব একীভূত কাঠামো বজায় রাখলে।
হিসাবরক্ষণ নির্বাহী বিভাগের হাতে গেলে দুর্নীতি ও রাজনৈতিক প্রভাব বাড়বে, আর রাষ্ট্রের মৌলিক চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স ভেঙে পড়বে। তাই অডিট ও অ্যাকাউন্টস সার্ভিসকে একই কাঠামোয় রাখা সাংবিধানিক, বাস্তব ও নৈতিকভাবে অপরিহার্য।
পৃথক্করণের পথে না গিয়ে একীভূত কাঠামোকেই যুগোপযোগী করে সংস্কার করা—এটাই বাংলাদেশের আর্থিক সুশাসনের নিরাপদ ও কার্যকর পথ।
এই বছর অর্থনীতির নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে উদ্ভাবন ও সৃজনশীল ধ্বংসের প্রক্রিয়া (creative destruction) কীভাবে দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে সেই গবেষণার ওপর। নতুন প্রযুক্তি ও ধারণা পুরোনো ব্যবস্থাকে প্রতিস্থাপন করে সমাজ যখন পরিবর্তনের জন্য উন্মুক্ত থাকে, তখনই টেক
৪ ঘণ্টা আগে‘মনের তালা খুলল কে, চাবিওয়ালা, চাবিওয়ালা!’ প্রখ্যাত শিল্পী রুনা লায়লার সেই সুরেলা প্রশ্নের উত্তর আজও খুঁজে বেড়াচ্ছি! তবে ব্যক্তিগত জীবনে নয়, রাষ্ট্রীয় জীবনে। এই রাষ্ট্রের জীবনেও একটা বিশেষ তালা আছে, আর তার নাম আর্টিকেল ৭০! এই তালা লাগানো হয়েছিল সেই সব মাননীয়র জন্য, যাদের মধ্যে ‘ছাগলীয়’ প্রবৃত্তি রয়ে
৪ ঘণ্টা আগেভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইসরাইলের যুদ্ধাপরাধী প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে প্রায়ই তার পরম বন্ধু বলে বেশ গৌরবের সঙ্গে প্রচার করে থাকেন। ভিন্ন দেশের এ দুই রাজনীতিবিদের প্রগাঢ় বন্ধুত্বের মূল সূত্র হলো মুসলমানদের প্রতি তাদের তীব্র ঘৃণা। বর্তমান বিশ্বে ইসলামোফোবিয়ায় আক্রান্ত শীর্ষ দুটি
৪ ঘণ্টা আগেগাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে যখন হতাশা চরমে, তখনই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন এক নতুন ‘২০ দফার শান্তি পরিকল্পনা’। সেখানে তিনি নিজেকে বসিয়েছেন একটি তথাকথিত ‘বোর্ড অব পিস’-এর চেয়ারম্যান হিসেবে।
১ দিন আগে