এম আবদুল্লাহ
প্রতিবছরের মতো এবারও বছরের সেরা দেশ নির্বাচন করেছে দ্য ইকোনমিস্ট। সেই ফলাফল অনুযায়ী ২০২৪ সালের বর্ষসেরা দেশ বাংলাদেশ। বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে প্রকাশিত দ্য ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনে কোন বিবেচনায় বাংলাদেশ বর্ষসেরা তা জানানো হয়েছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রভাবশালী গণমাধ্যমটি ২০২৪ সালের জন্য সেরা দেশের তালিকা প্রকাশ করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, সবচেয়ে ধনী, সুখী বা নৈতিকভাবে শ্রেষ্ঠ স্থান অধিকারী কি না, সে হিসেবে নয়; বরং সেরা দেশ বেছে নেওয়া হয় আগের ১২ মাসে সবচেয়ে বেশি উন্নতি করেছে কি না, সেই বিচারে।
এবারের সেরা দেশ বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে চূড়ান্ত তালিকায় ছিল পাঁচটি দেশ। বাংলাদেশ ছাড়াও সিরিয়া, আর্জেন্টিনা, দক্ষিণ আফ্রিকা ও পোল্যান্ড রয়েছে এই তালিকায়। শেষ পর্যন্ত দ্য ইকোনমিস্টের সংবাদদাতাদের মধ্যে ‘উত্তপ্ত বিতর্কে’ বেছে নেওয়া হয় বাংলাদেশকে। রানারআপ বা দ্বিতীয় হয়েছে সিরিয়া।
প্রতিবেদনে বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘আমাদের এবারের বিজয়ী বাংলাদেশ, যারা এক স্বৈরশাসককে উৎখাত করেছে। আগস্টে ছাত্রদের নেতৃত্বে রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়, যিনি সাড়ে ১৭ কোটি জনসংখ্যার দেশটি ১৫ বছর ধরে শাসন করছিলেন। দেশের স্বাধীনতার হিরোর এক কন্যা হিসেবে তিনি একসময় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। কিন্তু পরে তিনি দমন শুরু করেন, নির্বাচনে কারচুপি করেন, বিরোধীদের কারাগারে পাঠান এবং নিরাপত্তা বাহিনীকে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালানোর নির্দেশ দেন। তার শাসনামলে বিশাল অঙ্কের অর্থ আত্মসাৎ করা হয়।’
এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদনে ইকোনমিস্ট আরও লেখে—‘... এখন পর্যন্ত তাদের (বাংলাদেশের) পরিবর্তন আশাব্যঞ্জক। শান্তিতে নোবেল পুরস্কারজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে সেখানে রয়েছে একটি অস্থায়ী সরকার, যা ছাত্র, সেনাবাহিনী, ব্যবসায়ী ও নাগরিক সমাজের সমর্থন পেয়েছে। এ সরকার শৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছে এবং অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করেছে।’
বৃহস্পতিবার যে সময়ে বর্ণিত প্রতিবেদনটি ইকোনমিস্টে প্রকাশিত হয়েছে, ঠিক তার কাছাকাছি সময়ে গভীর রাতে ঢাকায় সচিবালয়ে এক ভয়াবহ আগুন লাগে। প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনের পৃথক তিনটি স্থানে একসঙ্গে আগুন জ্বলে উঠতে দেখা যায়। বিশেষ করে ওই ভবনে থাকা অন্তর্বর্তী সরকারের দুই ছাত্র উপদেষ্টার মন্ত্রণালয়ের প্রায় সব কক্ষ ও নথিপত্র পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
ওই ভবনে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, আইসিটি এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দপ্তর রয়েছে। আগুনে ছয়, সাত ও আটতলার বড় অংশ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভবনের আটতলার পশ্চিম প্রান্তে রয়েছে জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সাহসী ও নির্যাতিত নেতা মো. নাহিদ ইসলামের আইসিটি মন্ত্রণালয়। এ মন্ত্রণালয়ে বিগত লুটেরা হাসিনা সরকারের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্তদের একজন জুনাইদ আহমেদ পলক ও হাসিনাপুত্র জয়ের লুটপাটের নথিপত্র যাচাই হচ্ছিল। বিপুল দুর্নীতির প্রমাণও পাওয়া যাচ্ছিল বলে সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে।
একই ভবনের অন্য অংশে রয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। যেটির দায়িত্বে রয়েছেন আগস্ট বিপ্লবের অন্যতম নায়ক উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার কার্যালয়। সেটিও পুরোপুরি ছাই হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ। তিনি জানান, স্থানীয় সরকার বিভাগে বিপুল দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছিলেন ফাইলপত্রে। তা নিয়ে কাজ করছিলেন তারা। তরুণ এই উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘সরকারকে অকার্যকর প্রমাণ করতেই এই আগুন লাগানো হয়েছে। যারাই আগুন লাগানোর ঘটনায় জড়িত থাকুক না কেন, তাদের ছাড় দেওয়া হবে না।
অগ্নিকাণ্ডটি নিছক দুর্ঘটনা না অন্তর্ঘাতমূলক— এ আলোচনা চলছে এখন জোরেশোরে। একই সঙ্গে পৃথক তিনটি স্থানে আগুনের সূত্রপাত, নির্দিষ্ট কয়েকটি মন্ত্রণালয়ে দ্রুত আগুনের বিস্তারসহ আরও কিছু লক্ষণ উল্লেখ করে বিশেষজ্ঞরা গভীরভাবে সন্দেহ করছেন আগুনটি নাশকতামূলক হওয়ার সম্ভাবনাই প্রবল। স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ যে ইঙ্গিত করেছেন, সেটাও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিতে হচ্ছে। অগ্নিনির্বাপণ দলের সহায়তাকারী নৌবাহিনীর একজন কর্মকর্তাও বলেছেন, এ ঘটনা পরিকল্পিতভাবে কেউ ঘটিয়ে থাকতে পারে। সচিবালয়ে যখন ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটল, তার আগে থেকে জনপ্রশাসনে অস্থিরতা চলে আসছিল বিভিন্ন ক্যাডারের মধ্যকার দ্বন্দ্বে। একের পর এক আলটিমেটাম ও হুংকার দেওয়া হচ্ছিল। বুধবার রাতের অগ্নিকাণ্ডের সঙ্গে তার কোনো যোগসূত্র আছে কি না, তা-ও আলোচিত হচ্ছে মানুষের মুখে মুখে।
প্রশাসনে এখনো যে পতিত সরকারের দোসর আমলারা বহাল তবিয়তে রয়েছেন, তা সবার জানা। বিগত ১৫ বছরে পুরো প্রশাসনযন্ত্রকে আওয়ামী লীগদলীয় ক্যাডার বাহিনীতে পরিণত করা হয়েছে। সব নিয়োগ হয়েছে, অতীতের দলীয় পদপদবি ও প্রশ্নাতীত আনুগত্যের বিবেচনায়। দলবাজ আমলারা জুলাই বিপ্লবকে এখনো পর্যন্ত যে মেনে নিতে পারেননি, তা সচিবালয় থেকে মাঠ পর্যন্ত না ঘটনা-অঘটনে এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
সচিবালয় দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। এর নিরাপত্তায় ঘাটতি থাকলে সরকারের সক্ষমতা ও দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। পতিত স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা যেখানে অন্তর্বর্তী সরকারকে উৎখাতের অব্যাহত হুংকার দিচ্ছেন, নানা ব্যানারে ফ্যাসিবাদের দোসররা যখন অস্থিরতা সৃষ্টি করে চলেছেন, তখন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোর ঝুঁকি সম্পর্কে সরকার উদাসীন থাকলে তা কোনোভাবে মেনে নেওয়ার মতো নয়। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও এখনো পর্যন্ত পতিত সরকারি দলের আনুগত্য পুরোপুরি ছাড়তে পারেনি। ফলে নাশকতামূলক তৎপরতার আগাম তথ্য পেতেও সরকারের নির্ভরতার জায়গায় ঘাটতি রয়েছে।
দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বিভিন্ন ধরনের হুমকি এবং অনেক ধরনের অনিশ্চয়তা রয়েছে বলে বৃহস্পতিবার এক ব্রিফিংয়ে জানিয়েছে সেনাসদর। সেনানিবাসের অফিসার্স মেস ‘এ’-তে সেনাসদর আয়োজিত ব্রিফিংয়ে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে সেনাসদরের মিলিটারি অপারেশনস ডিরেক্টরেটের কর্নেল স্টাফ ইন্তেখাব হায়দার খান বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজটি সহজ নয়। বর্তমান পরিস্থিতিতে বিভিন্ন ধরনের হুমকি আছে। অনেক ধরনের অনিশ্চয়তা আছে। বিভিন্ন ধরনের পরিস্থিতির উদ্ভব হচ্ছে। অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে সেই বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করছে সেনাবাহিনী; যাতে দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সহনশীল অবস্থায় থাকে।
সচিবালয়ের আগুন ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় নিরাপত্তার বিষয়ে এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, ‘গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, কেপিআইয়ের নিরাপত্তার বিষয়টি অবশ্যই আমাদের দায়িত্বভুক্ত। যখন থেকে সেনাবাহিনী মোতায়েন হয়েছে, তখন থেকেই প্রতিটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং কেপিআইয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সমন্বয় করে প্রতিটি হুমকি পর্যালোচনা করা হয়, সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।’
সাম্প্রতিক নানা ঘটনায় দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে জনমনে কিছুটা হতাশা সৃষ্টি হতে দেখা যাচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক নাগরিক উদ্বেগ প্রকাশ করে পতিত স্বৈরাচারের দোসরদের আরও কঠোরভাবে দমনের পক্ষে মত দিচ্ছেন। বিপ্লবোত্তর বাংলাদেশে পরাজিত শক্তির বিরুদ্ধে নমনীয়তা প্রদর্শনের অভিযোগও তুলছেন অনেকে। বিপ্লবে নেতৃত্বদানকারী কোনো কোনো ছাত্রনেতাও ক্ষোভ জানাচ্ছেন সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে। এসব বিষয়েও সেনাসদরের ব্রিফিংয়ে অবস্থান জানানো হয়েছে। আশ্বস্তও করা হয়েছে।
কর্নেল ইন্তেখাব হায়দার এ বিষয়ে ব্রিফিংয়ে বলেন, পরিসংখ্যানগত দিক থেকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়নি। তবে অনেক ঘটনা ঘটছে। সেগুলো নজরদারিতে আছে। এটা নিয়ে পুলিশ কাজ করছে, সেনাবাহিনীও কাজ করছে। এলাকাভিত্তিক সমন্বয় সেল আছে। যেখানে পুলিশ, সেনাবাহিনীসহ অন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলো সমন্বয় করে কাজ করে। সেনাসদর পর্যায়ে এবং উপদেষ্টা পর্যায়েও সমন্বয় করা হয়। দেশে যত ধরনের আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত হুমকি উঠে আসে, সেগুলো নিয়ে আলোচনা হয় এবং পরবর্তী সময়ে কী করা হবে, তা নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়। এভাবে অনেক অপরাধীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সেনাবাহিনীর এই কর্মকর্তা বলেন, ‘অপরাধীদের সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করতে পারব কি না বলতে পারি না, তবে এটাকে (অপরাধ) সহনশীল পর্যায়ে রাখার বিষয়ে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত আছে।’
অন্তর্ঘাত বা নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে পতিত আওয়ামী লীগের সমকক্ষ কোনো দল বা গোষ্ঠী বাংলাদেশ কেন, জগতে মিলবে কি না সংশয় আছে। এ দলটি ক্ষমতায় থেকেও বিরোধীদের ফাঁসাতে নাশকতামূলক কাণ্ড ঘটায় নিয়মিত। ক্ষমতার বাইরে থাকলে সরকার ও রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে সরকারের ভেতরে থাকা অনুসারী ও দোসরদের মাধ্যমে অন্তর্ঘাতমূলক ঘটনা ঘটিয়ে থাকে। আর পতিত শেখ হাসিনার আক্রোশের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন জুলাই বিপ্লবের নায়করা। যেসব ছাত্রনেতা অসম সাহসিকতা নিয়ে, জীবনকে তুচ্ছ করে গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাদের বিব্রত করতে মরিয়া হয়ে অপচেষ্টা চালাচ্ছেন।
ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনে বাংলাদেশকে বর্ষসেরা নির্বাচনের ক্ষেত্রে যাদের কৃতিত্ব দেওয়া হয়েছে, সেই বিপ্লবীদের ব্যর্থ করাই এখন দেশবিরোধী হাসিনা চক্রের প্রধান টার্গেট। সচিবালয়ে ছাত্র উপদেষ্টাদের মন্ত্রণালয়ে আগুন দেওয়ার মধ্য দিয়ে দুর্নীতি, দুঃশাসন ও অপকর্মের বিচারকে বাধাগ্রস্ত করার পাশাপাশি মনোবল ভেঙে দেওয়াও অন্যতম লক্ষ হওয়া অস্বাভাবিক নয়। এ ক্ষেত্রে পারস্পরিক দোষারোপ না করে বিপ্লবের পক্ষের সব শক্তিকে ঐক্যবদ্ধভাবে নাশকতামূলক সব তৎপরতা প্রতিহত করতে হবে। তা না হলে, চড়া মূল্য চুকাতে হবে সবাইকে।
লেখক: এম আবদুল্লাহ, সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট
প্রতিবছরের মতো এবারও বছরের সেরা দেশ নির্বাচন করেছে দ্য ইকোনমিস্ট। সেই ফলাফল অনুযায়ী ২০২৪ সালের বর্ষসেরা দেশ বাংলাদেশ। বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে প্রকাশিত দ্য ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনে কোন বিবেচনায় বাংলাদেশ বর্ষসেরা তা জানানো হয়েছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রভাবশালী গণমাধ্যমটি ২০২৪ সালের জন্য সেরা দেশের তালিকা প্রকাশ করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, সবচেয়ে ধনী, সুখী বা নৈতিকভাবে শ্রেষ্ঠ স্থান অধিকারী কি না, সে হিসেবে নয়; বরং সেরা দেশ বেছে নেওয়া হয় আগের ১২ মাসে সবচেয়ে বেশি উন্নতি করেছে কি না, সেই বিচারে।
এবারের সেরা দেশ বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে চূড়ান্ত তালিকায় ছিল পাঁচটি দেশ। বাংলাদেশ ছাড়াও সিরিয়া, আর্জেন্টিনা, দক্ষিণ আফ্রিকা ও পোল্যান্ড রয়েছে এই তালিকায়। শেষ পর্যন্ত দ্য ইকোনমিস্টের সংবাদদাতাদের মধ্যে ‘উত্তপ্ত বিতর্কে’ বেছে নেওয়া হয় বাংলাদেশকে। রানারআপ বা দ্বিতীয় হয়েছে সিরিয়া।
প্রতিবেদনে বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘আমাদের এবারের বিজয়ী বাংলাদেশ, যারা এক স্বৈরশাসককে উৎখাত করেছে। আগস্টে ছাত্রদের নেতৃত্বে রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়, যিনি সাড়ে ১৭ কোটি জনসংখ্যার দেশটি ১৫ বছর ধরে শাসন করছিলেন। দেশের স্বাধীনতার হিরোর এক কন্যা হিসেবে তিনি একসময় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। কিন্তু পরে তিনি দমন শুরু করেন, নির্বাচনে কারচুপি করেন, বিরোধীদের কারাগারে পাঠান এবং নিরাপত্তা বাহিনীকে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালানোর নির্দেশ দেন। তার শাসনামলে বিশাল অঙ্কের অর্থ আত্মসাৎ করা হয়।’
এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদনে ইকোনমিস্ট আরও লেখে—‘... এখন পর্যন্ত তাদের (বাংলাদেশের) পরিবর্তন আশাব্যঞ্জক। শান্তিতে নোবেল পুরস্কারজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে সেখানে রয়েছে একটি অস্থায়ী সরকার, যা ছাত্র, সেনাবাহিনী, ব্যবসায়ী ও নাগরিক সমাজের সমর্থন পেয়েছে। এ সরকার শৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছে এবং অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করেছে।’
বৃহস্পতিবার যে সময়ে বর্ণিত প্রতিবেদনটি ইকোনমিস্টে প্রকাশিত হয়েছে, ঠিক তার কাছাকাছি সময়ে গভীর রাতে ঢাকায় সচিবালয়ে এক ভয়াবহ আগুন লাগে। প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনের পৃথক তিনটি স্থানে একসঙ্গে আগুন জ্বলে উঠতে দেখা যায়। বিশেষ করে ওই ভবনে থাকা অন্তর্বর্তী সরকারের দুই ছাত্র উপদেষ্টার মন্ত্রণালয়ের প্রায় সব কক্ষ ও নথিপত্র পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
ওই ভবনে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, আইসিটি এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দপ্তর রয়েছে। আগুনে ছয়, সাত ও আটতলার বড় অংশ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভবনের আটতলার পশ্চিম প্রান্তে রয়েছে জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সাহসী ও নির্যাতিত নেতা মো. নাহিদ ইসলামের আইসিটি মন্ত্রণালয়। এ মন্ত্রণালয়ে বিগত লুটেরা হাসিনা সরকারের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্তদের একজন জুনাইদ আহমেদ পলক ও হাসিনাপুত্র জয়ের লুটপাটের নথিপত্র যাচাই হচ্ছিল। বিপুল দুর্নীতির প্রমাণও পাওয়া যাচ্ছিল বলে সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে।
একই ভবনের অন্য অংশে রয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। যেটির দায়িত্বে রয়েছেন আগস্ট বিপ্লবের অন্যতম নায়ক উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার কার্যালয়। সেটিও পুরোপুরি ছাই হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ। তিনি জানান, স্থানীয় সরকার বিভাগে বিপুল দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছিলেন ফাইলপত্রে। তা নিয়ে কাজ করছিলেন তারা। তরুণ এই উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘সরকারকে অকার্যকর প্রমাণ করতেই এই আগুন লাগানো হয়েছে। যারাই আগুন লাগানোর ঘটনায় জড়িত থাকুক না কেন, তাদের ছাড় দেওয়া হবে না।
অগ্নিকাণ্ডটি নিছক দুর্ঘটনা না অন্তর্ঘাতমূলক— এ আলোচনা চলছে এখন জোরেশোরে। একই সঙ্গে পৃথক তিনটি স্থানে আগুনের সূত্রপাত, নির্দিষ্ট কয়েকটি মন্ত্রণালয়ে দ্রুত আগুনের বিস্তারসহ আরও কিছু লক্ষণ উল্লেখ করে বিশেষজ্ঞরা গভীরভাবে সন্দেহ করছেন আগুনটি নাশকতামূলক হওয়ার সম্ভাবনাই প্রবল। স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ যে ইঙ্গিত করেছেন, সেটাও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিতে হচ্ছে। অগ্নিনির্বাপণ দলের সহায়তাকারী নৌবাহিনীর একজন কর্মকর্তাও বলেছেন, এ ঘটনা পরিকল্পিতভাবে কেউ ঘটিয়ে থাকতে পারে। সচিবালয়ে যখন ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটল, তার আগে থেকে জনপ্রশাসনে অস্থিরতা চলে আসছিল বিভিন্ন ক্যাডারের মধ্যকার দ্বন্দ্বে। একের পর এক আলটিমেটাম ও হুংকার দেওয়া হচ্ছিল। বুধবার রাতের অগ্নিকাণ্ডের সঙ্গে তার কোনো যোগসূত্র আছে কি না, তা-ও আলোচিত হচ্ছে মানুষের মুখে মুখে।
প্রশাসনে এখনো যে পতিত সরকারের দোসর আমলারা বহাল তবিয়তে রয়েছেন, তা সবার জানা। বিগত ১৫ বছরে পুরো প্রশাসনযন্ত্রকে আওয়ামী লীগদলীয় ক্যাডার বাহিনীতে পরিণত করা হয়েছে। সব নিয়োগ হয়েছে, অতীতের দলীয় পদপদবি ও প্রশ্নাতীত আনুগত্যের বিবেচনায়। দলবাজ আমলারা জুলাই বিপ্লবকে এখনো পর্যন্ত যে মেনে নিতে পারেননি, তা সচিবালয় থেকে মাঠ পর্যন্ত না ঘটনা-অঘটনে এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
সচিবালয় দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। এর নিরাপত্তায় ঘাটতি থাকলে সরকারের সক্ষমতা ও দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। পতিত স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা যেখানে অন্তর্বর্তী সরকারকে উৎখাতের অব্যাহত হুংকার দিচ্ছেন, নানা ব্যানারে ফ্যাসিবাদের দোসররা যখন অস্থিরতা সৃষ্টি করে চলেছেন, তখন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোর ঝুঁকি সম্পর্কে সরকার উদাসীন থাকলে তা কোনোভাবে মেনে নেওয়ার মতো নয়। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও এখনো পর্যন্ত পতিত সরকারি দলের আনুগত্য পুরোপুরি ছাড়তে পারেনি। ফলে নাশকতামূলক তৎপরতার আগাম তথ্য পেতেও সরকারের নির্ভরতার জায়গায় ঘাটতি রয়েছে।
দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বিভিন্ন ধরনের হুমকি এবং অনেক ধরনের অনিশ্চয়তা রয়েছে বলে বৃহস্পতিবার এক ব্রিফিংয়ে জানিয়েছে সেনাসদর। সেনানিবাসের অফিসার্স মেস ‘এ’-তে সেনাসদর আয়োজিত ব্রিফিংয়ে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে সেনাসদরের মিলিটারি অপারেশনস ডিরেক্টরেটের কর্নেল স্টাফ ইন্তেখাব হায়দার খান বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজটি সহজ নয়। বর্তমান পরিস্থিতিতে বিভিন্ন ধরনের হুমকি আছে। অনেক ধরনের অনিশ্চয়তা আছে। বিভিন্ন ধরনের পরিস্থিতির উদ্ভব হচ্ছে। অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে সেই বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করছে সেনাবাহিনী; যাতে দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সহনশীল অবস্থায় থাকে।
সচিবালয়ের আগুন ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় নিরাপত্তার বিষয়ে এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, ‘গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, কেপিআইয়ের নিরাপত্তার বিষয়টি অবশ্যই আমাদের দায়িত্বভুক্ত। যখন থেকে সেনাবাহিনী মোতায়েন হয়েছে, তখন থেকেই প্রতিটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং কেপিআইয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সমন্বয় করে প্রতিটি হুমকি পর্যালোচনা করা হয়, সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।’
সাম্প্রতিক নানা ঘটনায় দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে জনমনে কিছুটা হতাশা সৃষ্টি হতে দেখা যাচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক নাগরিক উদ্বেগ প্রকাশ করে পতিত স্বৈরাচারের দোসরদের আরও কঠোরভাবে দমনের পক্ষে মত দিচ্ছেন। বিপ্লবোত্তর বাংলাদেশে পরাজিত শক্তির বিরুদ্ধে নমনীয়তা প্রদর্শনের অভিযোগও তুলছেন অনেকে। বিপ্লবে নেতৃত্বদানকারী কোনো কোনো ছাত্রনেতাও ক্ষোভ জানাচ্ছেন সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে। এসব বিষয়েও সেনাসদরের ব্রিফিংয়ে অবস্থান জানানো হয়েছে। আশ্বস্তও করা হয়েছে।
কর্নেল ইন্তেখাব হায়দার এ বিষয়ে ব্রিফিংয়ে বলেন, পরিসংখ্যানগত দিক থেকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়নি। তবে অনেক ঘটনা ঘটছে। সেগুলো নজরদারিতে আছে। এটা নিয়ে পুলিশ কাজ করছে, সেনাবাহিনীও কাজ করছে। এলাকাভিত্তিক সমন্বয় সেল আছে। যেখানে পুলিশ, সেনাবাহিনীসহ অন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলো সমন্বয় করে কাজ করে। সেনাসদর পর্যায়ে এবং উপদেষ্টা পর্যায়েও সমন্বয় করা হয়। দেশে যত ধরনের আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত হুমকি উঠে আসে, সেগুলো নিয়ে আলোচনা হয় এবং পরবর্তী সময়ে কী করা হবে, তা নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়। এভাবে অনেক অপরাধীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সেনাবাহিনীর এই কর্মকর্তা বলেন, ‘অপরাধীদের সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করতে পারব কি না বলতে পারি না, তবে এটাকে (অপরাধ) সহনশীল পর্যায়ে রাখার বিষয়ে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত আছে।’
অন্তর্ঘাত বা নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে পতিত আওয়ামী লীগের সমকক্ষ কোনো দল বা গোষ্ঠী বাংলাদেশ কেন, জগতে মিলবে কি না সংশয় আছে। এ দলটি ক্ষমতায় থেকেও বিরোধীদের ফাঁসাতে নাশকতামূলক কাণ্ড ঘটায় নিয়মিত। ক্ষমতার বাইরে থাকলে সরকার ও রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে সরকারের ভেতরে থাকা অনুসারী ও দোসরদের মাধ্যমে অন্তর্ঘাতমূলক ঘটনা ঘটিয়ে থাকে। আর পতিত শেখ হাসিনার আক্রোশের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন জুলাই বিপ্লবের নায়করা। যেসব ছাত্রনেতা অসম সাহসিকতা নিয়ে, জীবনকে তুচ্ছ করে গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাদের বিব্রত করতে মরিয়া হয়ে অপচেষ্টা চালাচ্ছেন।
ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনে বাংলাদেশকে বর্ষসেরা নির্বাচনের ক্ষেত্রে যাদের কৃতিত্ব দেওয়া হয়েছে, সেই বিপ্লবীদের ব্যর্থ করাই এখন দেশবিরোধী হাসিনা চক্রের প্রধান টার্গেট। সচিবালয়ে ছাত্র উপদেষ্টাদের মন্ত্রণালয়ে আগুন দেওয়ার মধ্য দিয়ে দুর্নীতি, দুঃশাসন ও অপকর্মের বিচারকে বাধাগ্রস্ত করার পাশাপাশি মনোবল ভেঙে দেওয়াও অন্যতম লক্ষ হওয়া অস্বাভাবিক নয়। এ ক্ষেত্রে পারস্পরিক দোষারোপ না করে বিপ্লবের পক্ষের সব শক্তিকে ঐক্যবদ্ধভাবে নাশকতামূলক সব তৎপরতা প্রতিহত করতে হবে। তা না হলে, চড়া মূল্য চুকাতে হবে সবাইকে।
লেখক: এম আবদুল্লাহ, সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট
এই বছর অর্থনীতির নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে উদ্ভাবন ও সৃজনশীল ধ্বংসের প্রক্রিয়া (creative destruction) কীভাবে দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে সেই গবেষণার ওপর। নতুন প্রযুক্তি ও ধারণা পুরোনো ব্যবস্থাকে প্রতিস্থাপন করে সমাজ যখন পরিবর্তনের জন্য উন্মুক্ত থাকে, তখনই টেক
৮ ঘণ্টা আগে‘মনের তালা খুলল কে, চাবিওয়ালা, চাবিওয়ালা!’ প্রখ্যাত শিল্পী রুনা লায়লার সেই সুরেলা প্রশ্নের উত্তর আজও খুঁজে বেড়াচ্ছি! তবে ব্যক্তিগত জীবনে নয়, রাষ্ট্রীয় জীবনে। এই রাষ্ট্রের জীবনেও একটা বিশেষ তালা আছে, আর তার নাম আর্টিকেল ৭০! এই তালা লাগানো হয়েছিল সেই সব মাননীয়র জন্য, যাদের মধ্যে ‘ছাগলীয়’ প্রবৃত্তি রয়ে
৮ ঘণ্টা আগেভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইসরাইলের যুদ্ধাপরাধী প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে প্রায়ই তার পরম বন্ধু বলে বেশ গৌরবের সঙ্গে প্রচার করে থাকেন। ভিন্ন দেশের এ দুই রাজনীতিবিদের প্রগাঢ় বন্ধুত্বের মূল সূত্র হলো মুসলমানদের প্রতি তাদের তীব্র ঘৃণা। বর্তমান বিশ্বে ইসলামোফোবিয়ায় আক্রান্ত শীর্ষ দুটি
৮ ঘণ্টা আগেগাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে যখন হতাশা চরমে, তখনই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন এক নতুন ‘২০ দফার শান্তি পরিকল্পনা’। সেখানে তিনি নিজেকে বসিয়েছেন একটি তথাকথিত ‘বোর্ড অব পিস’-এর চেয়ারম্যান হিসেবে।
১ দিন আগে