জাভেদ নাকভি
কবি ও গীতিকার কাইফি আজমি সিনেমার গান লেখার একটা অদ্ভুত পদ্ধতির কথা বলেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী মোদির পররাষ্ট্রনীতির সঙ্গে এই পদ্ধতির বেশ মিল আছে। অন্য অনেক বিখ্যাত গীতিকারের মতো কাইফি আজমিকেও গানের ওপর সুরারোপ না করে, উল্টো সুরের ওপর গান আরোপ করতে হতো। এর মধ্যে বেশ কিছু গান বিখ্যাতও হয়েছিল। তিনি বলতেন, ‘এটা আগে কবর খুঁড়ে পরে কবরের মাপ অনুসারে লাশ খোঁজার মতো ব্যাপার।’
মোদির পররাষ্ট্রনীতিও এমন। আগে থেকে ঠিক করে রাখা কিছু দক্ষিণপন্থি রীতিনীতি দিয়ে তিনি সব পরিস্থিতি সামাল দিতে চান। অথচ একজন ঝানু কূটনীতিবিদের সৃজনশীল এবং নমনীয় হওয়ার কথা। তিনি শুধু সেই বিষয়গুলো নিয়েই মাথা ঘামাবেন, যেগুলো তার জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। কিন্তু মোদির কার্যক্রম দেখলে মনে হয়, পররাষ্ট্রনীতি নয়, বরং গেরুয়া এজেন্ডা বাস্তবায়ন করাই প্রধান কাজ।
মোদি যখন বিদেশ সফরে যান, তখন তার আশপাশে হিন্দুত্ববাদের সমর্থকরা জড়ো হন। মোদির ধারণা, তিনি বিদেশের মাটি যতবেশি হিন্দুত্ববাদী সমর্থক জড়ো করতে পারবেন, তার জাতীয় স্বার্থ ততবেশি সুরক্ষিত। মোদির আমলে কূটনীতির সুযোগ-সুবিধা মূলত নিয়ে নিচ্ছেন শীর্ষ নেতাদের পরিচিত কিছু ধান্দাবাজ ব্যবসায়ীরা। এরা ভারতীয় বংশোদ্ভূত, কিন্তু দেশের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক রাখেন না। কাজের সময় এদের খুঁজে পাওয়া যায় না।
পাকিস্তানের সঙ্গে সাম্প্রতিক সংঘর্ষের ক্ষেত্রে একই ঘটনা ঘটেছে। ফ্যাসিস্ট ইসরাইল ছাড়া আর কোনো রাষ্ট্র কি ভারতের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে? কিংবা কোনো রাষ্ট্র কি ভারতকে তার বন্ধু মনে করে সংহতি জানিয়েছে? ভারত সরকার এখন দেশে দেশে সংসদ সদস্য পাঠিয়ে নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করছে। অবস্থা কি এতটাই শোচনীয়?
শোনা যায়, ভারতের সামরিক বাহিনী এতদিন পর্যন্ত একটা সেক্যুলার মেজাজ ধরে রেখেছিল। এসব বাহিনীকে এখন বুঝিয়ে-সুঝিয়ে মোদির মতাদর্শের অনুসারী বানানোর চেষ্টা চলছে।
প্রতিরক্ষাবিশ্লেষক প্রবীণ সাওনি বহু বছর ধরে বলছেন, মোদি কাশ্মীর নিয়ে রাজনীতি করতে গিয়ে ভারতীয় বাহিনীগুলো প্রতিরক্ষা বাহিনীর স্তর থেকে নামিয়ে শুধু একটি সন্ত্রাসবাদবিরোধী বাহিনীতে পরিণত করেছেন। এই ফাঁকে প্রযুক্তির যুদ্ধে চীনের তুলনায় বহুগুণ পিছিয়ে গেছে ভারত।
এটা ছিল কূটনৈতিক বিবেচনা জলাঞ্জলি দিয়ে স্রেফ হিন্দুত্ববাদের মতাদর্শিক বিজয় অর্জনের চেষ্টার ফল। মোদি ব্যাপারটিকে এতটাই খারাপ জায়গায় নিয়ে গিয়েছেন, জম্মু-কাশ্মীরের মতো একটি বিষয় রাজনৈতিকভাবে সমাধা না করে এটাকে মতাদর্শ দিয়ে সমাধা করতে চাইলেন।
এর ফলাফল হলো অত্যন্ত বাজে। ভারত-পাকিস্তানে সমর-কূটনীতির ক্যানভাসে চায়না ঢুকে পড়ার সুযোগ পেল। অথচ এ বিষয়টিকে এতদিন ধরে দ্বিপক্ষীয়ভাবেই সমাধা করে আসা হচ্ছিল। ইন্দিরা গান্ধী ও ভুট্টো বহু যত্নের সঙ্গে সিমলা চুক্তিটি করে নিজেদের মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছিলেন । ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে মধ্যস্থতা করে সে আসনটি এখন ডোনাল্ড ট্রাম্প কেড়ে নিলেন। মোদির পররাষ্ট্রনীতি এখন এতটাই দুর্বল হয়ে গেছে যে সে আর দ্বিপক্ষীয় সমস্যাগুলো কূটনৈতিকভাবে সমাধা করতে পারছে না।
রাষ্ট্রপ্রধানের পদে থেকে মোদি ট্রাম্পের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর মতো বাজে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন। আদর্শিক এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে নিজের ও দেশের মর্যাদা জলাঞ্জলি দিতেও পিছপা হননি মোদি। মজার ব্যাপার হলো, সেই নির্বাচনে জো বাইডেন জিতেছিলেন।
ট্রাম্প এখন পাকিস্তান ও ভারতকে সমমর্যাদার বন্ধুরাষ্ট্র হিসেবে উল্লেখ করছেন। অথচ কূটনৈতিক পরিসরে ভারত-পাকিস্তান শব্দ দুটি একত্রে উচ্চারিত হওয়াকে ভারত তার নিজের জন্য অবমাননাকর বলে মনে করে। ট্রাম্পের হয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর প্রতিদান ভালোই পাচ্ছেন মোদি!
অবস্থা হয়েছে পুরোনো সেই গানের মতো : ‘না খুদা হি মিলা, না বিসাল-এ-সানাম; না ইধার কে রাখে, না উধার কে রাখে।’ (একই সঙ্গে কাম ও মোক্ষ খুঁজতে গিয়ে বোকার মতো দুটোই হারালাম।)
আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্ককে প্রাধান্য দিতে গিয়ে এশিয়ার সুপার পাওয়ার রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে গেলেন মোদি। তিনি এখন বিরোধী লীয় নেতা শশী থারুরকে এখন ডিপ্লোম্যাটিক মিশনগুলোয় পাঠাচ্ছেন। এতেই বোঝা যায়, মোদির অধীনে ভারতীয় পররাষ্ট্রনীতির কী হাল হয়েছে। কিন্তু শশী থারুর তার কঠিন কঠিন ইংরেজি দিয়ে কি এমন অর্জন করে ফেলবেন, যা পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর পারছেন না?
এদিকে, বিশ্বদরবারে পাকিস্তানকে ভিলেন হিসেবে উপস্থাপন করে ভারতের যে কোনো লাভ হয়নি, সেসব নিয়ে মোদির কোনো ভাবনা নেই। বিজেপি এখন ব্যস্ত আছে বিহারের নির্বাচনি প্রচারণা নিয়ে। সেখানে তারা মোদিকে বিজয়ী ঘোষণা করে ফিরছেন। অথচ বিশ্বের কোনো ফোরাম থেকেই মোদিকে বিজয়ীর তকমা দেওয়া হয়নি। আসল কথা হচ্ছে, বিশ্ব এখন মোদির জয়-পরাজয় নিয়ে মাথাই ঘামাচ্ছে না। বিশ্ব যদি আদৌ কিছু নিয়ে মাথা ঘামিয়ে থাকে, তা হচ্ছে : সেদিনকার যুদ্ধে আসলেই কয়টা বিমান ভূপাতিত হয়েছিল।
দেশগুলো এই যুদ্ধ থেকে শিক্ষা নিচ্ছে। আর ভবিষ্যতের যুদ্ধ কেমন হতে পারে, তা অনুমান করে যুদ্ধকৌশল নির্ধারণ করছে। এটাই বোধহয় গ্লোবাল সাউথের কপালের লিখন। বড় শক্তিগুলোর যুদ্ধাস্ত্র পরীক্ষার গিনিপিগ হয়ে থাকা।
এখন তাহলে উপায় কী?
মোদি যতই তার হিন্দুত্ববাদ আর মান্ধাতা আমলের চিন্তাভাবনা নিয়ে পথ চলুন না কেন, দিনশেষে তাকে লিবারেল ডেমোক্রেসির প্রতিরোধের মুখে পড়তেই হবে। কারণ এই রাষ্ট্রটি গান্ধী, নেহরু, সুভাষবোস ও ভগত সিংদের গড়ে তোলা।
ভারত ছিল বহু সংস্কৃতি এবং যুক্তিবুদ্ধির মিশ্রণে গঠিত একটি জাতি। একসময় এ দেশকে বিশ্ব ঈর্ষার চোখে দেখত। চার্চিল পর্যন্ত ভারতকে দমিয়ে রাখতে সাহস করেননি। ভারতের আবার সেই পথে হাঁটা উচিত। ভারত বর্তমানে যেদিকে এগিয়ে চলছে, ঠিক তার উল্টোপথে।
হিন্দুত্ববাদ এখন অচল হয়ে পড়ছে। একে সচল রাখতে হলে সমস্ত গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে কবর দিয়ে ফেলতে হবে। কাইফি আজমির গানের মতো যেনতেন কবর হলে চলবে না। গণকবর খুঁড়তে হবে।
কিন্তু দুনিয়া বদলে গেছে। আমেরিকা হোক আর ইসরাইল হোক, দক্ষিণপন্থিরা সর্বত্র প্রতিরোধের মুখে পড়ছে। ভারতেও হিন্দুত্ববাদ আর কখনোই জাতীয় স্বার্থের সমার্থক হয়ে উঠবে নাÑনা ঘরে, না বাইরে।
তাহলে পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে ভারত এখন কী করতে পারে? মোদি সম্ভবত তার ভেঙে যাওয়া সম্পর্কগুলো এখন জোড়া দিতে চাইবেন। আটলান্টিক কিংবা প্যাসিফিকের কোল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে নয়, বরং ভারতের পাশের দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করবে।
এই দেশগুলো একসময় তাকে চোখ রাঙানো বড় ভাই হিসেবে না, দেখত বন্ধু ও সহযাত্রী হিসেবে। ভারতকে সেই আস্থার জায়গাটি ফিরিয়ে আনতে হবে।
চীন এখন তার পাশের দেশগুলোর ব্যাপারে এই নীতিই গ্রহণ করেছে। জাপান ও ভিয়েতনামের মতো দেশগুলোর প্রতি সে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। সাগরে নৌশক্তি বৃদ্ধির আগে সে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করে নিচ্ছে। কৌশলগত ভুল করে কোনো তৃতীয় পক্ষকে চীন সুবিধা করে দিচ্ছে না।
ভারত এখন সার্ককে সক্রিয় করার কথা ভাবতে পারে। সাউথ এশিয়ান দেশগুলো যাতে নিজেদের সমস্যা নিজেরাই সমাধা করতে পারে, সে উদ্দেশ্যে এই মহৎ প্রতিষ্ঠানটি ১৯৮৫ সালে ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। প্রথমে এর মেম্বার ছিল সাতটি দেশ। পরে আফগানিস্তান এর সঙ্গে যুক্ত হয়। মোদি প্রথমে তার অভিষেক অনুষ্ঠানে সার্কভুক্ত দেশগুলোর প্রধানদের ডাকতেন। পরে সম্ভবত মনে করেছেন, তিনি একাই এক শ, তার পাশে অন্যদের দরকার নেই। মনে রাখতে হবে, নিচের শক্ত ভিত ছাড়া কোনো রকেটই মহাকাশে যাত্রা করতে পারে না।
ডন থেকে ভাষান্তরÑএইচ এম নাজমুল হুদা
কবি ও গীতিকার কাইফি আজমি সিনেমার গান লেখার একটা অদ্ভুত পদ্ধতির কথা বলেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী মোদির পররাষ্ট্রনীতির সঙ্গে এই পদ্ধতির বেশ মিল আছে। অন্য অনেক বিখ্যাত গীতিকারের মতো কাইফি আজমিকেও গানের ওপর সুরারোপ না করে, উল্টো সুরের ওপর গান আরোপ করতে হতো। এর মধ্যে বেশ কিছু গান বিখ্যাতও হয়েছিল। তিনি বলতেন, ‘এটা আগে কবর খুঁড়ে পরে কবরের মাপ অনুসারে লাশ খোঁজার মতো ব্যাপার।’
মোদির পররাষ্ট্রনীতিও এমন। আগে থেকে ঠিক করে রাখা কিছু দক্ষিণপন্থি রীতিনীতি দিয়ে তিনি সব পরিস্থিতি সামাল দিতে চান। অথচ একজন ঝানু কূটনীতিবিদের সৃজনশীল এবং নমনীয় হওয়ার কথা। তিনি শুধু সেই বিষয়গুলো নিয়েই মাথা ঘামাবেন, যেগুলো তার জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। কিন্তু মোদির কার্যক্রম দেখলে মনে হয়, পররাষ্ট্রনীতি নয়, বরং গেরুয়া এজেন্ডা বাস্তবায়ন করাই প্রধান কাজ।
মোদি যখন বিদেশ সফরে যান, তখন তার আশপাশে হিন্দুত্ববাদের সমর্থকরা জড়ো হন। মোদির ধারণা, তিনি বিদেশের মাটি যতবেশি হিন্দুত্ববাদী সমর্থক জড়ো করতে পারবেন, তার জাতীয় স্বার্থ ততবেশি সুরক্ষিত। মোদির আমলে কূটনীতির সুযোগ-সুবিধা মূলত নিয়ে নিচ্ছেন শীর্ষ নেতাদের পরিচিত কিছু ধান্দাবাজ ব্যবসায়ীরা। এরা ভারতীয় বংশোদ্ভূত, কিন্তু দেশের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক রাখেন না। কাজের সময় এদের খুঁজে পাওয়া যায় না।
পাকিস্তানের সঙ্গে সাম্প্রতিক সংঘর্ষের ক্ষেত্রে একই ঘটনা ঘটেছে। ফ্যাসিস্ট ইসরাইল ছাড়া আর কোনো রাষ্ট্র কি ভারতের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে? কিংবা কোনো রাষ্ট্র কি ভারতকে তার বন্ধু মনে করে সংহতি জানিয়েছে? ভারত সরকার এখন দেশে দেশে সংসদ সদস্য পাঠিয়ে নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করছে। অবস্থা কি এতটাই শোচনীয়?
শোনা যায়, ভারতের সামরিক বাহিনী এতদিন পর্যন্ত একটা সেক্যুলার মেজাজ ধরে রেখেছিল। এসব বাহিনীকে এখন বুঝিয়ে-সুঝিয়ে মোদির মতাদর্শের অনুসারী বানানোর চেষ্টা চলছে।
প্রতিরক্ষাবিশ্লেষক প্রবীণ সাওনি বহু বছর ধরে বলছেন, মোদি কাশ্মীর নিয়ে রাজনীতি করতে গিয়ে ভারতীয় বাহিনীগুলো প্রতিরক্ষা বাহিনীর স্তর থেকে নামিয়ে শুধু একটি সন্ত্রাসবাদবিরোধী বাহিনীতে পরিণত করেছেন। এই ফাঁকে প্রযুক্তির যুদ্ধে চীনের তুলনায় বহুগুণ পিছিয়ে গেছে ভারত।
এটা ছিল কূটনৈতিক বিবেচনা জলাঞ্জলি দিয়ে স্রেফ হিন্দুত্ববাদের মতাদর্শিক বিজয় অর্জনের চেষ্টার ফল। মোদি ব্যাপারটিকে এতটাই খারাপ জায়গায় নিয়ে গিয়েছেন, জম্মু-কাশ্মীরের মতো একটি বিষয় রাজনৈতিকভাবে সমাধা না করে এটাকে মতাদর্শ দিয়ে সমাধা করতে চাইলেন।
এর ফলাফল হলো অত্যন্ত বাজে। ভারত-পাকিস্তানে সমর-কূটনীতির ক্যানভাসে চায়না ঢুকে পড়ার সুযোগ পেল। অথচ এ বিষয়টিকে এতদিন ধরে দ্বিপক্ষীয়ভাবেই সমাধা করে আসা হচ্ছিল। ইন্দিরা গান্ধী ও ভুট্টো বহু যত্নের সঙ্গে সিমলা চুক্তিটি করে নিজেদের মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছিলেন । ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে মধ্যস্থতা করে সে আসনটি এখন ডোনাল্ড ট্রাম্প কেড়ে নিলেন। মোদির পররাষ্ট্রনীতি এখন এতটাই দুর্বল হয়ে গেছে যে সে আর দ্বিপক্ষীয় সমস্যাগুলো কূটনৈতিকভাবে সমাধা করতে পারছে না।
রাষ্ট্রপ্রধানের পদে থেকে মোদি ট্রাম্পের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর মতো বাজে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন। আদর্শিক এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে নিজের ও দেশের মর্যাদা জলাঞ্জলি দিতেও পিছপা হননি মোদি। মজার ব্যাপার হলো, সেই নির্বাচনে জো বাইডেন জিতেছিলেন।
ট্রাম্প এখন পাকিস্তান ও ভারতকে সমমর্যাদার বন্ধুরাষ্ট্র হিসেবে উল্লেখ করছেন। অথচ কূটনৈতিক পরিসরে ভারত-পাকিস্তান শব্দ দুটি একত্রে উচ্চারিত হওয়াকে ভারত তার নিজের জন্য অবমাননাকর বলে মনে করে। ট্রাম্পের হয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর প্রতিদান ভালোই পাচ্ছেন মোদি!
অবস্থা হয়েছে পুরোনো সেই গানের মতো : ‘না খুদা হি মিলা, না বিসাল-এ-সানাম; না ইধার কে রাখে, না উধার কে রাখে।’ (একই সঙ্গে কাম ও মোক্ষ খুঁজতে গিয়ে বোকার মতো দুটোই হারালাম।)
আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্ককে প্রাধান্য দিতে গিয়ে এশিয়ার সুপার পাওয়ার রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে গেলেন মোদি। তিনি এখন বিরোধী লীয় নেতা শশী থারুরকে এখন ডিপ্লোম্যাটিক মিশনগুলোয় পাঠাচ্ছেন। এতেই বোঝা যায়, মোদির অধীনে ভারতীয় পররাষ্ট্রনীতির কী হাল হয়েছে। কিন্তু শশী থারুর তার কঠিন কঠিন ইংরেজি দিয়ে কি এমন অর্জন করে ফেলবেন, যা পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর পারছেন না?
এদিকে, বিশ্বদরবারে পাকিস্তানকে ভিলেন হিসেবে উপস্থাপন করে ভারতের যে কোনো লাভ হয়নি, সেসব নিয়ে মোদির কোনো ভাবনা নেই। বিজেপি এখন ব্যস্ত আছে বিহারের নির্বাচনি প্রচারণা নিয়ে। সেখানে তারা মোদিকে বিজয়ী ঘোষণা করে ফিরছেন। অথচ বিশ্বের কোনো ফোরাম থেকেই মোদিকে বিজয়ীর তকমা দেওয়া হয়নি। আসল কথা হচ্ছে, বিশ্ব এখন মোদির জয়-পরাজয় নিয়ে মাথাই ঘামাচ্ছে না। বিশ্ব যদি আদৌ কিছু নিয়ে মাথা ঘামিয়ে থাকে, তা হচ্ছে : সেদিনকার যুদ্ধে আসলেই কয়টা বিমান ভূপাতিত হয়েছিল।
দেশগুলো এই যুদ্ধ থেকে শিক্ষা নিচ্ছে। আর ভবিষ্যতের যুদ্ধ কেমন হতে পারে, তা অনুমান করে যুদ্ধকৌশল নির্ধারণ করছে। এটাই বোধহয় গ্লোবাল সাউথের কপালের লিখন। বড় শক্তিগুলোর যুদ্ধাস্ত্র পরীক্ষার গিনিপিগ হয়ে থাকা।
এখন তাহলে উপায় কী?
মোদি যতই তার হিন্দুত্ববাদ আর মান্ধাতা আমলের চিন্তাভাবনা নিয়ে পথ চলুন না কেন, দিনশেষে তাকে লিবারেল ডেমোক্রেসির প্রতিরোধের মুখে পড়তেই হবে। কারণ এই রাষ্ট্রটি গান্ধী, নেহরু, সুভাষবোস ও ভগত সিংদের গড়ে তোলা।
ভারত ছিল বহু সংস্কৃতি এবং যুক্তিবুদ্ধির মিশ্রণে গঠিত একটি জাতি। একসময় এ দেশকে বিশ্ব ঈর্ষার চোখে দেখত। চার্চিল পর্যন্ত ভারতকে দমিয়ে রাখতে সাহস করেননি। ভারতের আবার সেই পথে হাঁটা উচিত। ভারত বর্তমানে যেদিকে এগিয়ে চলছে, ঠিক তার উল্টোপথে।
হিন্দুত্ববাদ এখন অচল হয়ে পড়ছে। একে সচল রাখতে হলে সমস্ত গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে কবর দিয়ে ফেলতে হবে। কাইফি আজমির গানের মতো যেনতেন কবর হলে চলবে না। গণকবর খুঁড়তে হবে।
কিন্তু দুনিয়া বদলে গেছে। আমেরিকা হোক আর ইসরাইল হোক, দক্ষিণপন্থিরা সর্বত্র প্রতিরোধের মুখে পড়ছে। ভারতেও হিন্দুত্ববাদ আর কখনোই জাতীয় স্বার্থের সমার্থক হয়ে উঠবে নাÑনা ঘরে, না বাইরে।
তাহলে পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে ভারত এখন কী করতে পারে? মোদি সম্ভবত তার ভেঙে যাওয়া সম্পর্কগুলো এখন জোড়া দিতে চাইবেন। আটলান্টিক কিংবা প্যাসিফিকের কোল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে নয়, বরং ভারতের পাশের দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করবে।
এই দেশগুলো একসময় তাকে চোখ রাঙানো বড় ভাই হিসেবে না, দেখত বন্ধু ও সহযাত্রী হিসেবে। ভারতকে সেই আস্থার জায়গাটি ফিরিয়ে আনতে হবে।
চীন এখন তার পাশের দেশগুলোর ব্যাপারে এই নীতিই গ্রহণ করেছে। জাপান ও ভিয়েতনামের মতো দেশগুলোর প্রতি সে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। সাগরে নৌশক্তি বৃদ্ধির আগে সে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করে নিচ্ছে। কৌশলগত ভুল করে কোনো তৃতীয় পক্ষকে চীন সুবিধা করে দিচ্ছে না।
ভারত এখন সার্ককে সক্রিয় করার কথা ভাবতে পারে। সাউথ এশিয়ান দেশগুলো যাতে নিজেদের সমস্যা নিজেরাই সমাধা করতে পারে, সে উদ্দেশ্যে এই মহৎ প্রতিষ্ঠানটি ১৯৮৫ সালে ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। প্রথমে এর মেম্বার ছিল সাতটি দেশ। পরে আফগানিস্তান এর সঙ্গে যুক্ত হয়। মোদি প্রথমে তার অভিষেক অনুষ্ঠানে সার্কভুক্ত দেশগুলোর প্রধানদের ডাকতেন। পরে সম্ভবত মনে করেছেন, তিনি একাই এক শ, তার পাশে অন্যদের দরকার নেই। মনে রাখতে হবে, নিচের শক্ত ভিত ছাড়া কোনো রকেটই মহাকাশে যাত্রা করতে পারে না।
ডন থেকে ভাষান্তরÑএইচ এম নাজমুল হুদা
এই বছর অর্থনীতির নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে উদ্ভাবন ও সৃজনশীল ধ্বংসের প্রক্রিয়া (creative destruction) কীভাবে দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে সেই গবেষণার ওপর। নতুন প্রযুক্তি ও ধারণা পুরোনো ব্যবস্থাকে প্রতিস্থাপন করে সমাজ যখন পরিবর্তনের জন্য উন্মুক্ত থাকে, তখনই টেক
১৩ ঘণ্টা আগে‘মনের তালা খুলল কে, চাবিওয়ালা, চাবিওয়ালা!’ প্রখ্যাত শিল্পী রুনা লায়লার সেই সুরেলা প্রশ্নের উত্তর আজও খুঁজে বেড়াচ্ছি! তবে ব্যক্তিগত জীবনে নয়, রাষ্ট্রীয় জীবনে। এই রাষ্ট্রের জীবনেও একটা বিশেষ তালা আছে, আর তার নাম আর্টিকেল ৭০! এই তালা লাগানো হয়েছিল সেই সব মাননীয়র জন্য, যাদের মধ্যে ‘ছাগলীয়’ প্রবৃত্তি রয়ে
১৩ ঘণ্টা আগেভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইসরাইলের যুদ্ধাপরাধী প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে প্রায়ই তার পরম বন্ধু বলে বেশ গৌরবের সঙ্গে প্রচার করে থাকেন। ভিন্ন দেশের এ দুই রাজনীতিবিদের প্রগাঢ় বন্ধুত্বের মূল সূত্র হলো মুসলমানদের প্রতি তাদের তীব্র ঘৃণা। বর্তমান বিশ্বে ইসলামোফোবিয়ায় আক্রান্ত শীর্ষ দুটি
১৪ ঘণ্টা আগেগাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে যখন হতাশা চরমে, তখনই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন এক নতুন ‘২০ দফার শান্তি পরিকল্পনা’। সেখানে তিনি নিজেকে বসিয়েছেন একটি তথাকথিত ‘বোর্ড অব পিস’-এর চেয়ারম্যান হিসেবে।
২ দিন আগে