ড. হাসানুজ্জামান চৌধুরী
‘নাটক কম করো পিও।’ ঢাকার দেয়ালে গ্রাফিতি এরূপ। ৩৬-এর স্পিরিট দ্বিতীয় দফা তীব্র কশাঘাত দ্বারা ৩২-কে গুঁড়িয়ে দিয়ে এর ফ্যাসিবাদী হিন্দুত্ববাদী হিন্দুস্তানি দালালদের ও তাদের প্রভুদের ‘কামব্যাক’ করার দিবাস্বপ্ন ও কৃত্রিম ধান্ধাতাড়িত মাতমকে উলঙ্গ করে দিয়েছে।
এই বিষয়টির আরেকটি অতি সম্পৃক্ত মাত্রা উন্মোচিত হয় হিন্দুত্ববাদী আধিপত্যবাদী মিডিয়া, সরকার, প্রতিনিধি, খুনি আরএসএস ও বিজেপির লোকজন ও সাঙাতদের ভূমিকা থেকে। তারা একদিকে দুঃখে ভেঙে পড়ে যাচ্ছে। কুম্ভীরাশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে, উলঙ্গ গোপালি নৃত্য করছে। তাদের বচন হচ্ছে—গেল গেল সব গেল, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও স্মৃতি সব গেল ৩২ নাম্বার ধ্বংসের মাধ্যমে।
বলে কী এসব? বলে কী এসব, বদমাশগুলো? এগুলো বাংলাদেশের জনগণের ক্ষোভ, প্রতিবাদের আওয়াজ, জীবনকাঁপানো উচ্চারণ, সমষ্টিচেতনা, ঐক্য, ফ্যাসিবাদ মোকাবিলা, গণশক্তির উত্থান ও সম্মিলিত প্রতিরোধ। তাই সীমান্তের ওপারের প্যাঁচারা, চাপাবাজি বন্ধ করো। আমরা ‘সূর্যের নিচে শয়তান’কে থাকতে দেব না কোনোমতেই।
হিন্দুস্তানি ব্রাহ্মণ্যবাদীরা যখন ৫৫০ বছরের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী বাবরি মসজিদ ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়, যখন জ্ঞানবাপি মসজিদ গুঁড়িয়ে দেয়, যখন তাজমহলসহ প্রায় ৫০০ মুসলিম স্থাপত্যের নিচে রামের জন্ম কিংবা শিবলিঙ্গ গল্প আবিষ্কারের ঘোষণা দেয়, যখন তারা হিন্দুস্তানের সর্বত্র মুসলিম নাম ও ঐতিহ্য ধ্বংস করে এবং হিন্দু নাম রাখে সব ক্ষেত্রে মুসলিম নাম বদলে দিয়ে, যখন মুঘলসরাই হয়ে যায় দীনদয়াল, যখন এলাহাবাদ হয়ে যায় প্রয়াগরাজ, যখন গান্ধীর বদলে আরএসএসের নাথুরাম গডসে-কে হিরো বানিয়ে মূর্তি বানায় বঙ্কিমি ও সাভারকারীয় আরএসএস বদমাশিকে মেনে নিয়ে, যখন কয়েক দশকে কয়েক হাজার বার দাঙ্গা ঘটিয়ে লাখ লাখ মুসলিমকে জবাই করে হত্যা করে, তখন ইতিহাস-ঐতিহ্য-নৈতিকতা-মানবতা-সভ্যতা কোথায় থাকে?
যোগী আদিত্যনাথ ও দামোদর মোদির লেট লুজ করা পুলিশ ও সন্ত্রাসী হিন্দুত্ববাদী গেরুয়া বাহিনী যখন ‘জয় শ্রী-রাম’ ‘জয় হিন্দ’ স্লোগান দিয়ে মুসলিমদের মসজিদ, ঘরবাড়ি, দোকানপাট ও ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান গুঁড়িয়ে দেয় হাজারে হাজারে ভারতের সর্বত্র, তখন সেই ‘বুলডোজার’ কোন মানবিকতার বহিঃপ্রকাশ ঘটায়? সেই সময় কি বিজেপি, কি কংগ্রেস, কি তৃণমূল, কি ভারতের অন্যান্য ছোট-বড় দল ও তাদের নেতারা সবাই এক হয়ে একই সুরে শেয়ালের হুক্কা হুয়া ডাক দেয়। তারা কী করে চরম ভণ্ডামি করে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও গৌরব সংরক্ষণের জন্য আওয়াজ তোলে ৩২ নাম্বার নিয়ে? আর তা হলে আমরা বাংলাদেশিরাও হিন্দুত্ববাদী ভারতের যাবতীয় ইতরামি-অসভ্যতার বিরুদ্ধে পাল্টা আওয়াজ তুলব।
কিন্তু তোমাদের আশ্রয়ে থেকে, তোমাদেরই জোরে-আসকারায় লম্ফঝম্প করছে পলাতক লীগ ও খুনি হাসিনাসহ তোমাদেরই হিন্দুত্ববাদী রাজনৈতিক পাণ্ডারা। বাংলাদেশ কি হিন্দুত্ববাদী সম্পত্তি? হিন্দুত্ববাদী মিডিয়া, হিন্দুত্ববাদী শ্বাপদরা কী ভেবেছে নিজেদের? তারা এদেশি গণশত্রু কিংকরদের নিয়ে পুতুল নাচ চালাচ্ছে। এদেরই সমর্থনে হিন্দুস্তানে হিন্দুত্ববাদীরা নর্তন-কুর্দন করছে। অথচ এই অবিশ্বাসী হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকারের আশকারায় বিএসএফ প্রায় প্রতিদিন গুলি করে মারছে বাংলাদেশি মুসলিম নাগরিকদের। তারা জিরো পয়েন্ট অতিক্রম করে নো ম্যানস ল্যান্ডের দিকে ৫০ গজ বা তারও কাছে একেবারে বাংলাদেশঘেঁষে চা বাগান করেছে, চাষাবাদ করতে শুরু করেছে। ইজরাইলের অনুকরণে কাঁটাতারের বেড়া দিচ্ছে সীমান্তজুড়ে। এক্ষেত্রে তারা নো ম্যানস ল্যান্ডের আইনও যেমন মানছে না, তেমনি আন্তর্জাতিক সভ্য রীতিকেও অস্বীকার করছে। এগুলো কি মানবতা, সার্বভৌমত্ব, সমতা, ফার্স্ট ডোর নেইবার বা প্রতিবেশীর অধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন? এগুলো কোন্ ধরনের মানবিকতা?
আর মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭২ সাল থেকে ইতিহাস বদলে দিয়েছে ব্রাহ্মণ্যবাদীরা। এরা প্রতি বছর ১৬ ডিসেম্বর ইস্টার্ন কমান্ড দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সত্যতাকে সম্পূর্ণ অস্বীকার করে এটাকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের যুদ্ধ ও ভারতের বিজয় বলে ঘোষণা দেয়। কি প্রাক্তন, কি বর্তমান ভারতীয় জেনারেলরা বলেন যে, ১৯৭১ ছিল পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধে ভারতের বিজয়। অসভ্য মোদি নিজেই না কত হাজার হাজার মুসলিমের রক্তে হাত রাঙিয়েছেন এবং এখনো রাঙাচ্ছেন।
তিনি নিজেই গত বছর ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শব্দটি পর্যন্ত উচ্চারণ না করে এটাকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের বিজয় বলে ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি এতই বেপরোয়া যে, বাংলাদেশের নামটি পর্যন্ত উচ্চারণ করেননি। ভারতের পত্রপত্রিকা, ইলেকট্রনিক মিডিয়া ও সোশ্যাল মিডিয়া কীভাবে বাংলাদেশের ১৯৭১ সালের বীরোচিত মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকার করছে? অথচ এই তারাই ৩২ নাম্বারের জন্য মায়াকান্না চালাচ্ছে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অতি পূতিগন্ধময় হিন্দুত্ববাদী অপপ্রচার চালিয়ে। মুক্তিযুদ্ধকে তারা শুধু অস্বীকারই করছে না। বহু বছর আগে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সব ‘ক্লাসিফাইড ডকুমেন্টস’ যা বাংলাদেশের হক পাওনা, তা বাংলাদেশকে না দিয়ে পুড়িয়ে ফেলেছে।
১৯৭১ আমাদের বাংলাদেশের হাজার বছরের জীবনকালের শ্রেষ্ঠতম ঘটনা। হিন্দুত্ববাদী রামপন্থিরা তাকে সাহায্য করার নামে নিজেদের বহুমুখী স্বার্থ ও ধান্ধা উদ্ধার করেছে। এ জন্যই কুমিল্লার কংগ্রেস নেতা আশরাফ উদ্দিনের চিঠির জবাবে নেহেরু বলেছিলেন, অখণ্ড ভারত প্রতিষ্ঠা করব বলেই পার্টিশনকে মেনে নিয়েছি। বাংলাদেশ হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক বাংলাদেশি হয়েও এদেশের বুকে বসে উচ্চারণ করতে পারে যে, মোদির নেতৃত্বেই তারা অখণ্ড ভারত প্রতিষ্ঠা করতে চায়। তারপরও তারা বুক ফুলিয়ে নিরাপদে থাকে।
একই উদ্দেশ্যে ইন্দিরা গান্ধী ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরের পর বলেছিলেন, ‘হাজার সালকা বাদলা লে লিয়া।’ অর্থাৎ হাজার বছরের মুসলিম শাসনের প্রতিশোধ নিয়েছি। এজন্যই রাহুল গান্ধী একবার আমেথীতে এক রাজনৈতিক সভায় প্রকাশ্যে বলেছিলেন, ‘কংগ্রেস যা চায় তা করেই ছাড়ে, পাকিস্তানকে ভাঙতে চেয়েছিল, ভেঙেই ছেড়েছে।’ একই কারণে ভারতের সামরিক কর্তাব্যক্তিরা একের পর এক গত ৫৪ বছরে বারংবার ঘোষণা দিয়েছেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করা ভুল হয়েছে। তারা বাংলাদেশকে ‘ওভার-রান’ করা তথা পায়ে মাড়িয়ে যাওয়ার দাবি করেছেন। কী ভয়ংকর উদগ্র বাসনা হিন্দুত্ববাদীদের। জেনারেল থেকে সামরিক বিশেষজ্ঞ সবাই হুক্কা-হুয়া গেয়েছেন।
বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশকে ভারতের রাডারের বাইরে যেতে দেবেন না বলে আস্ফালন করেছে ভারতীয় শত্রুরা। ১৯৭১ সালে ১৬ ডিসেম্বরের পর বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানি ৯৫ হাজার সৈন্যের ফেলে যাওয়া যাবতীয় অস্ত্রশস্ত্র, গোলাবারুদ, ওয়ারলেস সেট, ক্যান্টনমেন্টগুলো ও হাসপাতালসহ সব স্থাপনা থেকে যা পেয়েছে প্রকাশ্যে ওয়াগন ও কনভয় ভরে লুট করে নিয়ে গেছে। সব আর্মার্ড কার ও ভেহিকেলগুলো ডাকাতি করে নিয়ে গেছে। তৎকাল পর্যন্ত বিশ্ব ইতিহাসে প্রাপ্ত নজিরবিহীন আর্থিক সহায়তা ভারত আত্মসাৎ করেছে। ট্র্যানশিপমেন্ট ও মাল্টি মোডাল করিডোর নিয়েছে। বাংলাদেশের আকাশপথ, স্থলপথ, নৌপথ ও বন্দর একচেটিয়া ব্যবহার করেছে, কব্জায় রাখতে পেরেছে বাংলাদেশে সেবাদাস মুজিব ও সেবাদাসী হাসিনাকে ক্ষমতায় বসিয়ে রেখে। অথচ তাদের ইস্টার্ন ফ্রন্টে কোনো সৈন্যবাহিনী রাখতে হচ্ছে না এবং খরচও বহন করতে হচ্ছে না।
তারা বাংলাদেশসহ পূর্বাঞ্চলের সেভেন সিস্টার্সকে বাংলাদেশকে ব্যবহার করে লুটপাট করছে। তারা পানি সন্ত্রাস, প্রচার সন্ত্রাস, তথ্য সন্ত্রাস, গোয়েন্দা সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মৌলবাদ, হিন্দুকার্ড ও ইসকনি কার্ড খেলে চলেছে। বাংলাদেশের পরিস্থিতিকে বিপর্যস্ত করে তারা পেরেছে বাংলাদেশকে বাজার বানাতে, বাংলাদেশের জনগণকে দাস বানাতে। প্রতিষ্ঠান, সরকার, আমলাতন্ত্র, পুলিশ, বিজিবি, সশস্ত্র বাহিনী—সবকিছুকে কব্জা করেছে তারা। ২০২৪ সালের ৩৬ জুলাইয়ের বর্ষা বিপ্লবের মাঝ দিয়ে বাংলাদেশের তাওহিদি জনতা রুখে দাঁড়িয়েছে নিকৃষ্টতম হিন্দুত্ববাদী অনাচার। কয়েক হাজার হত্যার পর ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পরাজয়ের পরও ভারত সংযত হয়নি। আওয়ামীদের আশ্রয়-প্রশ্রয়, আশকারা, প্রত্যক্ষ সাহায্য ও সর্বাত্মক সমর্থন দিচ্ছে ভারতীয় হিন্দুত্ববাদীরা বাংলাদেশকে ডিস্ট্যাবিলাইজ করতে। তাই হিন্দুত্ববাদী ভারতের প্রধান এজেন্ডা হচ্ছে আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন। নির্বাচনের চোরাগলিতে সেটা পারছে না বলেই তাদের আঁতে ঘা লেগেছে।
এবার অন্য একটি অবিচ্ছেদ্য বিষয়ের প্রতীকী ব্যাখ্যা তুলতে চাই। আমাদের যুদ্ধ হয়েছে ২০২৪ সালে ঠিক ১৯৭১ সালের মতো সার্বিক মুক্তির আকাঙ্ক্ষা নিয়ে। কিন্তু যুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি। সমগ্র বিষয়কে বুঝতে এবং আমাদের বিজয়কে গণ-আকাঙ্ক্ষার লক্ষ্যপানে এগিয়ে নিয়ে যেতে সেটিকে গণঐক্য, গণপ্রহারা, গণ-উদ্যোগ ও প্রচেষ্টা দ্বারা রক্ষা করে যেতে হবে। আমরা বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা আত্মপ্রসাদ লাভ করে ঘুমিয়ে গেলে চলবে না। তা হলে পরাজয় আসবে ভিন্ন পথে, ঘুর পথে। একটা সূক্ষ্মতম বিষয় তুলে ধরছি। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরের ঠিক পরে জুমাহ বারে মসজিদে মসজিদে লোক ছিল না বলতে গেলে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন নীলক্ষেত এলাকায় তখন অনেক গাছ ছিল। তাতে মাইক বেঁধে গান বাজানো হচ্ছিল।
ওই এলাকা ও আশেপাশের এলাকা লোকে লোকারণ্য হয়ে গিয়েছিল। তারা শুনছিল ওই সংগীত একেবারে আত্মভোলা হয়ে। আমার উল্লেখ্য গানটি ছিল—‘নিঝুম সন্ধ্যায় পান্থপাখিরা বুঝিবা পথ ভুলে যায়।’ এই লেখকের মনে তখন কেন যেন গভীর আশঙ্কা জেগেছিল—বাংলাদেশ এত লাশ, এত রক্ত দিয়ে স্বাধীন হয়ে কি নিঝুম সন্ধ্যায়, রাতের আঁধারে ডুবে গেছে? অর্থাৎ পথে-প্রান্তরে জনতা কি পথ ভুলে গেছে? ১৯৭১ তো ছিল বদলে যাওয়া নতুন এক কুলা গড়ার, নয়া এক ডেরা গড়ার, গণ-আকাঙ্ক্ষ অনুযায়ী নতুন এক সমাজ ও রাষ্ট্র বন্দোবস্ত নির্মাণের উন্মেষকাল। তা তো ছিল মুসলিম জনতাসহ বাংলাদেশিদের তাওহিদভিত্তিক স্বপ্নে উচ্চকিত জীবন অভিমুখে এগোনোর দিশানির্দেশক। তারপরও আমরা পথ হারিয়ে ৫৩ বছর পার করলাম।
১৯২৯ সালের ‘পার্টিং অব দ্য ওয়েজ’, ১৯৩৯ সালের ‘ডে অব ডেলিভারেন্স’, ১৯৪৬ সালের ‘ডাইরেক্ট অ্যাকশন’সহ ১৯৪০ সালের লাহোর রেজ্যুলেশন এবং ১৯৪৭ সালের মুসলিম রাষ্ট্র ও ইসলাম ভাবনার পথ ধরেই ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ এসেছে। ২০২৪ সালের বর্ষা বিপ্লবেও একই সত্য উচ্চকিত—কি সংগঠনকারী সমন্বয়কদের পরিচয়, কি প্রাণদানকারী বনি আদমের পরিচয়ের দিক দিয়ে। মুসলিম পূর্ব পাকিস্তানই বদলে গিয়ে হয়েছে বাংলাদেশ।
আর এই বাংলাদেশ কেনা হয়েছে অনেক বেশি রক্তের দামে এবং সেক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি এবং নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের জীবন গেছে যাদের, তারা প্রায় সবাই মুসলিম। এভাবে যে ইতিহাস পরম্পরার মাঝ দিয়ে আমরা আজকের দিনে পৌঁছেছি, সেটার অন্তর্নিহিত সত্য, নির্যাস, তাৎপর্য ও নির্দেশনা যেন কখনো ভুলে না যাই। ৫৩ বছরের অনাচার ও অন্ধকারের অভিজ্ঞতার পর ২০২৪ সালের ৩৬ বিপ্লব আমাদের সে কথাই স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। এবার এগোনোর পালা আল্লাহর জমিনে আল্লাহর হুকুম ও আল্লাহর দ্বীন কায়েম করার লক্ষ্যে আস্ সিরাত আল মুস্তাকিমের পথে।
তাই তো দেখি, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান তথা ২০২৪ সালের মনসুন রেভ্যুলেশন বা বর্ষা বিপ্লবের সেই ৫ আগস্ট, যা প্রতীকী উচ্চারণে ৩৬। অনিবার্যভাবে সেটি স্বাধীনতার ঘাতক ও ফ্যাসিবাদের আইকন ৩২-এর বিরুদ্ধে বিজয়ী হবেই। কিন্তু ‘প্রশ্ন হচ্ছে এবারও কি আমরা ভুল ইতোমধ্যে করেছি এবং আরো করে যাব? আমরা কি ভুলে যাব বেদি, সোপান ও বলিদানের সঙ্গে আমাদের ৯২ দশমিক ৫ ভাগ জনগণের দ্বীন, জীবনদৃষ্টি, জীবনব্যবস্থা, লক্ষ্য, মঞ্জিল-মকসুদের ১০০ ভাগ বিরোধিতা রয়েছে। আমরা কি ভুলে যাব আমাদের মহাবৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি? আমরা কি আমাদের স্বরূপজিজ্ঞাসা থেকে সরে যাব? আমরা কি ভুলে যাব তাওহিদকে? আমরা কি এর পরিবর্তে গ্রহণ করব তাগুত, বাতিল ও কুফরকে? আমরা কি ভুলে যাব যে, ৩২ থেকে ৩৬-এ পৌঁছাতে কী প্রচণ্ড পরিমাণ ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে? যদি এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজি, তা হলে আমরা কোনোভাবেই ৩৬-এর স্বপ্ন ও স্পিরিট থেকে সরে যাব না।
আমাদের নতুন রাষ্ট্র, সংবিধান ও নাগরিক স্যোশাল কন্ট্রাক্ট ও বন্দোবস্তে যেতেই হবে, তা যতই বন্ধুর, কঠিন ও চ্যালেঞ্জিং হোক না কেন। সিদ্ধান্ত নিতে হবে অযুত ছাত্র-জনতাকে। কোনো অবস্থাতেই পরগাছা তঞ্চক মধ্যস্বত্বভোগীদের মাতব্বরি করতে দেওয়া যাবে না। হয় স্বাধীনতা, দ্বীন, গণসম্মতি; নয় পরাধীনতা, তাগুত, বাতিল আর বিবর চেপে বসা। বাছাইটি জনগণকেই করতে হবে। তাদেরই ঠিক করতে হবে ৩২ আবার ফিরে আসবে, নাকি আমরা জনগণ ৩৬-কে নিয়েই নতুন দিগন্তপানে এগিয়ে যাব।
প্রফেসর (অব.), রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
‘নাটক কম করো পিও।’ ঢাকার দেয়ালে গ্রাফিতি এরূপ। ৩৬-এর স্পিরিট দ্বিতীয় দফা তীব্র কশাঘাত দ্বারা ৩২-কে গুঁড়িয়ে দিয়ে এর ফ্যাসিবাদী হিন্দুত্ববাদী হিন্দুস্তানি দালালদের ও তাদের প্রভুদের ‘কামব্যাক’ করার দিবাস্বপ্ন ও কৃত্রিম ধান্ধাতাড়িত মাতমকে উলঙ্গ করে দিয়েছে।
এই বিষয়টির আরেকটি অতি সম্পৃক্ত মাত্রা উন্মোচিত হয় হিন্দুত্ববাদী আধিপত্যবাদী মিডিয়া, সরকার, প্রতিনিধি, খুনি আরএসএস ও বিজেপির লোকজন ও সাঙাতদের ভূমিকা থেকে। তারা একদিকে দুঃখে ভেঙে পড়ে যাচ্ছে। কুম্ভীরাশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে, উলঙ্গ গোপালি নৃত্য করছে। তাদের বচন হচ্ছে—গেল গেল সব গেল, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও স্মৃতি সব গেল ৩২ নাম্বার ধ্বংসের মাধ্যমে।
বলে কী এসব? বলে কী এসব, বদমাশগুলো? এগুলো বাংলাদেশের জনগণের ক্ষোভ, প্রতিবাদের আওয়াজ, জীবনকাঁপানো উচ্চারণ, সমষ্টিচেতনা, ঐক্য, ফ্যাসিবাদ মোকাবিলা, গণশক্তির উত্থান ও সম্মিলিত প্রতিরোধ। তাই সীমান্তের ওপারের প্যাঁচারা, চাপাবাজি বন্ধ করো। আমরা ‘সূর্যের নিচে শয়তান’কে থাকতে দেব না কোনোমতেই।
হিন্দুস্তানি ব্রাহ্মণ্যবাদীরা যখন ৫৫০ বছরের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী বাবরি মসজিদ ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়, যখন জ্ঞানবাপি মসজিদ গুঁড়িয়ে দেয়, যখন তাজমহলসহ প্রায় ৫০০ মুসলিম স্থাপত্যের নিচে রামের জন্ম কিংবা শিবলিঙ্গ গল্প আবিষ্কারের ঘোষণা দেয়, যখন তারা হিন্দুস্তানের সর্বত্র মুসলিম নাম ও ঐতিহ্য ধ্বংস করে এবং হিন্দু নাম রাখে সব ক্ষেত্রে মুসলিম নাম বদলে দিয়ে, যখন মুঘলসরাই হয়ে যায় দীনদয়াল, যখন এলাহাবাদ হয়ে যায় প্রয়াগরাজ, যখন গান্ধীর বদলে আরএসএসের নাথুরাম গডসে-কে হিরো বানিয়ে মূর্তি বানায় বঙ্কিমি ও সাভারকারীয় আরএসএস বদমাশিকে মেনে নিয়ে, যখন কয়েক দশকে কয়েক হাজার বার দাঙ্গা ঘটিয়ে লাখ লাখ মুসলিমকে জবাই করে হত্যা করে, তখন ইতিহাস-ঐতিহ্য-নৈতিকতা-মানবতা-সভ্যতা কোথায় থাকে?
যোগী আদিত্যনাথ ও দামোদর মোদির লেট লুজ করা পুলিশ ও সন্ত্রাসী হিন্দুত্ববাদী গেরুয়া বাহিনী যখন ‘জয় শ্রী-রাম’ ‘জয় হিন্দ’ স্লোগান দিয়ে মুসলিমদের মসজিদ, ঘরবাড়ি, দোকানপাট ও ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান গুঁড়িয়ে দেয় হাজারে হাজারে ভারতের সর্বত্র, তখন সেই ‘বুলডোজার’ কোন মানবিকতার বহিঃপ্রকাশ ঘটায়? সেই সময় কি বিজেপি, কি কংগ্রেস, কি তৃণমূল, কি ভারতের অন্যান্য ছোট-বড় দল ও তাদের নেতারা সবাই এক হয়ে একই সুরে শেয়ালের হুক্কা হুয়া ডাক দেয়। তারা কী করে চরম ভণ্ডামি করে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও গৌরব সংরক্ষণের জন্য আওয়াজ তোলে ৩২ নাম্বার নিয়ে? আর তা হলে আমরা বাংলাদেশিরাও হিন্দুত্ববাদী ভারতের যাবতীয় ইতরামি-অসভ্যতার বিরুদ্ধে পাল্টা আওয়াজ তুলব।
কিন্তু তোমাদের আশ্রয়ে থেকে, তোমাদেরই জোরে-আসকারায় লম্ফঝম্প করছে পলাতক লীগ ও খুনি হাসিনাসহ তোমাদেরই হিন্দুত্ববাদী রাজনৈতিক পাণ্ডারা। বাংলাদেশ কি হিন্দুত্ববাদী সম্পত্তি? হিন্দুত্ববাদী মিডিয়া, হিন্দুত্ববাদী শ্বাপদরা কী ভেবেছে নিজেদের? তারা এদেশি গণশত্রু কিংকরদের নিয়ে পুতুল নাচ চালাচ্ছে। এদেরই সমর্থনে হিন্দুস্তানে হিন্দুত্ববাদীরা নর্তন-কুর্দন করছে। অথচ এই অবিশ্বাসী হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকারের আশকারায় বিএসএফ প্রায় প্রতিদিন গুলি করে মারছে বাংলাদেশি মুসলিম নাগরিকদের। তারা জিরো পয়েন্ট অতিক্রম করে নো ম্যানস ল্যান্ডের দিকে ৫০ গজ বা তারও কাছে একেবারে বাংলাদেশঘেঁষে চা বাগান করেছে, চাষাবাদ করতে শুরু করেছে। ইজরাইলের অনুকরণে কাঁটাতারের বেড়া দিচ্ছে সীমান্তজুড়ে। এক্ষেত্রে তারা নো ম্যানস ল্যান্ডের আইনও যেমন মানছে না, তেমনি আন্তর্জাতিক সভ্য রীতিকেও অস্বীকার করছে। এগুলো কি মানবতা, সার্বভৌমত্ব, সমতা, ফার্স্ট ডোর নেইবার বা প্রতিবেশীর অধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন? এগুলো কোন্ ধরনের মানবিকতা?
আর মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭২ সাল থেকে ইতিহাস বদলে দিয়েছে ব্রাহ্মণ্যবাদীরা। এরা প্রতি বছর ১৬ ডিসেম্বর ইস্টার্ন কমান্ড দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সত্যতাকে সম্পূর্ণ অস্বীকার করে এটাকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের যুদ্ধ ও ভারতের বিজয় বলে ঘোষণা দেয়। কি প্রাক্তন, কি বর্তমান ভারতীয় জেনারেলরা বলেন যে, ১৯৭১ ছিল পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধে ভারতের বিজয়। অসভ্য মোদি নিজেই না কত হাজার হাজার মুসলিমের রক্তে হাত রাঙিয়েছেন এবং এখনো রাঙাচ্ছেন।
তিনি নিজেই গত বছর ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শব্দটি পর্যন্ত উচ্চারণ না করে এটাকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের বিজয় বলে ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি এতই বেপরোয়া যে, বাংলাদেশের নামটি পর্যন্ত উচ্চারণ করেননি। ভারতের পত্রপত্রিকা, ইলেকট্রনিক মিডিয়া ও সোশ্যাল মিডিয়া কীভাবে বাংলাদেশের ১৯৭১ সালের বীরোচিত মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকার করছে? অথচ এই তারাই ৩২ নাম্বারের জন্য মায়াকান্না চালাচ্ছে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অতি পূতিগন্ধময় হিন্দুত্ববাদী অপপ্রচার চালিয়ে। মুক্তিযুদ্ধকে তারা শুধু অস্বীকারই করছে না। বহু বছর আগে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সব ‘ক্লাসিফাইড ডকুমেন্টস’ যা বাংলাদেশের হক পাওনা, তা বাংলাদেশকে না দিয়ে পুড়িয়ে ফেলেছে।
১৯৭১ আমাদের বাংলাদেশের হাজার বছরের জীবনকালের শ্রেষ্ঠতম ঘটনা। হিন্দুত্ববাদী রামপন্থিরা তাকে সাহায্য করার নামে নিজেদের বহুমুখী স্বার্থ ও ধান্ধা উদ্ধার করেছে। এ জন্যই কুমিল্লার কংগ্রেস নেতা আশরাফ উদ্দিনের চিঠির জবাবে নেহেরু বলেছিলেন, অখণ্ড ভারত প্রতিষ্ঠা করব বলেই পার্টিশনকে মেনে নিয়েছি। বাংলাদেশ হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক বাংলাদেশি হয়েও এদেশের বুকে বসে উচ্চারণ করতে পারে যে, মোদির নেতৃত্বেই তারা অখণ্ড ভারত প্রতিষ্ঠা করতে চায়। তারপরও তারা বুক ফুলিয়ে নিরাপদে থাকে।
একই উদ্দেশ্যে ইন্দিরা গান্ধী ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরের পর বলেছিলেন, ‘হাজার সালকা বাদলা লে লিয়া।’ অর্থাৎ হাজার বছরের মুসলিম শাসনের প্রতিশোধ নিয়েছি। এজন্যই রাহুল গান্ধী একবার আমেথীতে এক রাজনৈতিক সভায় প্রকাশ্যে বলেছিলেন, ‘কংগ্রেস যা চায় তা করেই ছাড়ে, পাকিস্তানকে ভাঙতে চেয়েছিল, ভেঙেই ছেড়েছে।’ একই কারণে ভারতের সামরিক কর্তাব্যক্তিরা একের পর এক গত ৫৪ বছরে বারংবার ঘোষণা দিয়েছেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করা ভুল হয়েছে। তারা বাংলাদেশকে ‘ওভার-রান’ করা তথা পায়ে মাড়িয়ে যাওয়ার দাবি করেছেন। কী ভয়ংকর উদগ্র বাসনা হিন্দুত্ববাদীদের। জেনারেল থেকে সামরিক বিশেষজ্ঞ সবাই হুক্কা-হুয়া গেয়েছেন।
বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশকে ভারতের রাডারের বাইরে যেতে দেবেন না বলে আস্ফালন করেছে ভারতীয় শত্রুরা। ১৯৭১ সালে ১৬ ডিসেম্বরের পর বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানি ৯৫ হাজার সৈন্যের ফেলে যাওয়া যাবতীয় অস্ত্রশস্ত্র, গোলাবারুদ, ওয়ারলেস সেট, ক্যান্টনমেন্টগুলো ও হাসপাতালসহ সব স্থাপনা থেকে যা পেয়েছে প্রকাশ্যে ওয়াগন ও কনভয় ভরে লুট করে নিয়ে গেছে। সব আর্মার্ড কার ও ভেহিকেলগুলো ডাকাতি করে নিয়ে গেছে। তৎকাল পর্যন্ত বিশ্ব ইতিহাসে প্রাপ্ত নজিরবিহীন আর্থিক সহায়তা ভারত আত্মসাৎ করেছে। ট্র্যানশিপমেন্ট ও মাল্টি মোডাল করিডোর নিয়েছে। বাংলাদেশের আকাশপথ, স্থলপথ, নৌপথ ও বন্দর একচেটিয়া ব্যবহার করেছে, কব্জায় রাখতে পেরেছে বাংলাদেশে সেবাদাস মুজিব ও সেবাদাসী হাসিনাকে ক্ষমতায় বসিয়ে রেখে। অথচ তাদের ইস্টার্ন ফ্রন্টে কোনো সৈন্যবাহিনী রাখতে হচ্ছে না এবং খরচও বহন করতে হচ্ছে না।
তারা বাংলাদেশসহ পূর্বাঞ্চলের সেভেন সিস্টার্সকে বাংলাদেশকে ব্যবহার করে লুটপাট করছে। তারা পানি সন্ত্রাস, প্রচার সন্ত্রাস, তথ্য সন্ত্রাস, গোয়েন্দা সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মৌলবাদ, হিন্দুকার্ড ও ইসকনি কার্ড খেলে চলেছে। বাংলাদেশের পরিস্থিতিকে বিপর্যস্ত করে তারা পেরেছে বাংলাদেশকে বাজার বানাতে, বাংলাদেশের জনগণকে দাস বানাতে। প্রতিষ্ঠান, সরকার, আমলাতন্ত্র, পুলিশ, বিজিবি, সশস্ত্র বাহিনী—সবকিছুকে কব্জা করেছে তারা। ২০২৪ সালের ৩৬ জুলাইয়ের বর্ষা বিপ্লবের মাঝ দিয়ে বাংলাদেশের তাওহিদি জনতা রুখে দাঁড়িয়েছে নিকৃষ্টতম হিন্দুত্ববাদী অনাচার। কয়েক হাজার হত্যার পর ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পরাজয়ের পরও ভারত সংযত হয়নি। আওয়ামীদের আশ্রয়-প্রশ্রয়, আশকারা, প্রত্যক্ষ সাহায্য ও সর্বাত্মক সমর্থন দিচ্ছে ভারতীয় হিন্দুত্ববাদীরা বাংলাদেশকে ডিস্ট্যাবিলাইজ করতে। তাই হিন্দুত্ববাদী ভারতের প্রধান এজেন্ডা হচ্ছে আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন। নির্বাচনের চোরাগলিতে সেটা পারছে না বলেই তাদের আঁতে ঘা লেগেছে।
এবার অন্য একটি অবিচ্ছেদ্য বিষয়ের প্রতীকী ব্যাখ্যা তুলতে চাই। আমাদের যুদ্ধ হয়েছে ২০২৪ সালে ঠিক ১৯৭১ সালের মতো সার্বিক মুক্তির আকাঙ্ক্ষা নিয়ে। কিন্তু যুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি। সমগ্র বিষয়কে বুঝতে এবং আমাদের বিজয়কে গণ-আকাঙ্ক্ষার লক্ষ্যপানে এগিয়ে নিয়ে যেতে সেটিকে গণঐক্য, গণপ্রহারা, গণ-উদ্যোগ ও প্রচেষ্টা দ্বারা রক্ষা করে যেতে হবে। আমরা বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা আত্মপ্রসাদ লাভ করে ঘুমিয়ে গেলে চলবে না। তা হলে পরাজয় আসবে ভিন্ন পথে, ঘুর পথে। একটা সূক্ষ্মতম বিষয় তুলে ধরছি। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরের ঠিক পরে জুমাহ বারে মসজিদে মসজিদে লোক ছিল না বলতে গেলে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন নীলক্ষেত এলাকায় তখন অনেক গাছ ছিল। তাতে মাইক বেঁধে গান বাজানো হচ্ছিল।
ওই এলাকা ও আশেপাশের এলাকা লোকে লোকারণ্য হয়ে গিয়েছিল। তারা শুনছিল ওই সংগীত একেবারে আত্মভোলা হয়ে। আমার উল্লেখ্য গানটি ছিল—‘নিঝুম সন্ধ্যায় পান্থপাখিরা বুঝিবা পথ ভুলে যায়।’ এই লেখকের মনে তখন কেন যেন গভীর আশঙ্কা জেগেছিল—বাংলাদেশ এত লাশ, এত রক্ত দিয়ে স্বাধীন হয়ে কি নিঝুম সন্ধ্যায়, রাতের আঁধারে ডুবে গেছে? অর্থাৎ পথে-প্রান্তরে জনতা কি পথ ভুলে গেছে? ১৯৭১ তো ছিল বদলে যাওয়া নতুন এক কুলা গড়ার, নয়া এক ডেরা গড়ার, গণ-আকাঙ্ক্ষ অনুযায়ী নতুন এক সমাজ ও রাষ্ট্র বন্দোবস্ত নির্মাণের উন্মেষকাল। তা তো ছিল মুসলিম জনতাসহ বাংলাদেশিদের তাওহিদভিত্তিক স্বপ্নে উচ্চকিত জীবন অভিমুখে এগোনোর দিশানির্দেশক। তারপরও আমরা পথ হারিয়ে ৫৩ বছর পার করলাম।
১৯২৯ সালের ‘পার্টিং অব দ্য ওয়েজ’, ১৯৩৯ সালের ‘ডে অব ডেলিভারেন্স’, ১৯৪৬ সালের ‘ডাইরেক্ট অ্যাকশন’সহ ১৯৪০ সালের লাহোর রেজ্যুলেশন এবং ১৯৪৭ সালের মুসলিম রাষ্ট্র ও ইসলাম ভাবনার পথ ধরেই ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ এসেছে। ২০২৪ সালের বর্ষা বিপ্লবেও একই সত্য উচ্চকিত—কি সংগঠনকারী সমন্বয়কদের পরিচয়, কি প্রাণদানকারী বনি আদমের পরিচয়ের দিক দিয়ে। মুসলিম পূর্ব পাকিস্তানই বদলে গিয়ে হয়েছে বাংলাদেশ।
আর এই বাংলাদেশ কেনা হয়েছে অনেক বেশি রক্তের দামে এবং সেক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি এবং নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের জীবন গেছে যাদের, তারা প্রায় সবাই মুসলিম। এভাবে যে ইতিহাস পরম্পরার মাঝ দিয়ে আমরা আজকের দিনে পৌঁছেছি, সেটার অন্তর্নিহিত সত্য, নির্যাস, তাৎপর্য ও নির্দেশনা যেন কখনো ভুলে না যাই। ৫৩ বছরের অনাচার ও অন্ধকারের অভিজ্ঞতার পর ২০২৪ সালের ৩৬ বিপ্লব আমাদের সে কথাই স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। এবার এগোনোর পালা আল্লাহর জমিনে আল্লাহর হুকুম ও আল্লাহর দ্বীন কায়েম করার লক্ষ্যে আস্ সিরাত আল মুস্তাকিমের পথে।
তাই তো দেখি, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান তথা ২০২৪ সালের মনসুন রেভ্যুলেশন বা বর্ষা বিপ্লবের সেই ৫ আগস্ট, যা প্রতীকী উচ্চারণে ৩৬। অনিবার্যভাবে সেটি স্বাধীনতার ঘাতক ও ফ্যাসিবাদের আইকন ৩২-এর বিরুদ্ধে বিজয়ী হবেই। কিন্তু ‘প্রশ্ন হচ্ছে এবারও কি আমরা ভুল ইতোমধ্যে করেছি এবং আরো করে যাব? আমরা কি ভুলে যাব বেদি, সোপান ও বলিদানের সঙ্গে আমাদের ৯২ দশমিক ৫ ভাগ জনগণের দ্বীন, জীবনদৃষ্টি, জীবনব্যবস্থা, লক্ষ্য, মঞ্জিল-মকসুদের ১০০ ভাগ বিরোধিতা রয়েছে। আমরা কি ভুলে যাব আমাদের মহাবৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি? আমরা কি আমাদের স্বরূপজিজ্ঞাসা থেকে সরে যাব? আমরা কি ভুলে যাব তাওহিদকে? আমরা কি এর পরিবর্তে গ্রহণ করব তাগুত, বাতিল ও কুফরকে? আমরা কি ভুলে যাব যে, ৩২ থেকে ৩৬-এ পৌঁছাতে কী প্রচণ্ড পরিমাণ ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে? যদি এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজি, তা হলে আমরা কোনোভাবেই ৩৬-এর স্বপ্ন ও স্পিরিট থেকে সরে যাব না।
আমাদের নতুন রাষ্ট্র, সংবিধান ও নাগরিক স্যোশাল কন্ট্রাক্ট ও বন্দোবস্তে যেতেই হবে, তা যতই বন্ধুর, কঠিন ও চ্যালেঞ্জিং হোক না কেন। সিদ্ধান্ত নিতে হবে অযুত ছাত্র-জনতাকে। কোনো অবস্থাতেই পরগাছা তঞ্চক মধ্যস্বত্বভোগীদের মাতব্বরি করতে দেওয়া যাবে না। হয় স্বাধীনতা, দ্বীন, গণসম্মতি; নয় পরাধীনতা, তাগুত, বাতিল আর বিবর চেপে বসা। বাছাইটি জনগণকেই করতে হবে। তাদেরই ঠিক করতে হবে ৩২ আবার ফিরে আসবে, নাকি আমরা জনগণ ৩৬-কে নিয়েই নতুন দিগন্তপানে এগিয়ে যাব।
প্রফেসর (অব.), রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
এই বছর অর্থনীতির নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে উদ্ভাবন ও সৃজনশীল ধ্বংসের প্রক্রিয়া (creative destruction) কীভাবে দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে সেই গবেষণার ওপর। নতুন প্রযুক্তি ও ধারণা পুরোনো ব্যবস্থাকে প্রতিস্থাপন করে সমাজ যখন পরিবর্তনের জন্য উন্মুক্ত থাকে, তখনই টেক
১৩ ঘণ্টা আগে‘মনের তালা খুলল কে, চাবিওয়ালা, চাবিওয়ালা!’ প্রখ্যাত শিল্পী রুনা লায়লার সেই সুরেলা প্রশ্নের উত্তর আজও খুঁজে বেড়াচ্ছি! তবে ব্যক্তিগত জীবনে নয়, রাষ্ট্রীয় জীবনে। এই রাষ্ট্রের জীবনেও একটা বিশেষ তালা আছে, আর তার নাম আর্টিকেল ৭০! এই তালা লাগানো হয়েছিল সেই সব মাননীয়র জন্য, যাদের মধ্যে ‘ছাগলীয়’ প্রবৃত্তি রয়ে
১৩ ঘণ্টা আগেভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইসরাইলের যুদ্ধাপরাধী প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে প্রায়ই তার পরম বন্ধু বলে বেশ গৌরবের সঙ্গে প্রচার করে থাকেন। ভিন্ন দেশের এ দুই রাজনীতিবিদের প্রগাঢ় বন্ধুত্বের মূল সূত্র হলো মুসলমানদের প্রতি তাদের তীব্র ঘৃণা। বর্তমান বিশ্বে ইসলামোফোবিয়ায় আক্রান্ত শীর্ষ দুটি
১৪ ঘণ্টা আগেগাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে যখন হতাশা চরমে, তখনই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন এক নতুন ‘২০ দফার শান্তি পরিকল্পনা’। সেখানে তিনি নিজেকে বসিয়েছেন একটি তথাকথিত ‘বোর্ড অব পিস’-এর চেয়ারম্যান হিসেবে।
২ দিন আগে