নিরুপমা সুব্রাম্মনিয়ান
অধিকৃত কাশ্মীরে বড় ধরনের সন্ত্রাসী হামলাগুলোকে পুঁজি করে প্রায় এক দশক ধরেই ভারত চেষ্টা করছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পাকিস্তানকে কোণঠাসা ও বিচ্ছিন্ন করে ফেলার। এই লক্ষ্য অর্জনে ভারতে সন্ত্রাসী হামলায় মদতদাতা রাষ্ট্র হিসেবে পাকিস্তানকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে তুলে ধরার জন্য নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে আসছে দিল্লি। ভারতের পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছে, পাকিস্তান আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি। কিন্তু এখন এটা স্পষ্ট যে, ভারতের এই চেষ্টা সফল হয়নি, পুরোপুরিই ব্যর্থ হয়েছে।
ভারতের এই চেষ্টার বিরুদ্ধে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে পাকিস্তান একটি অভ্যুত্থানই ঘটিয়ে ফেলেছে বলা যায়। ভারতের সব অপপ্রচারকে ব্যর্থ করে পাকিস্তান ২০২৫-২৬ সালের জন্য জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে শুধু অস্থায়ী সদস্যই নির্বাচিত হয়নি, দেশটিকে তালেবানের ওপর নিষেধাজ্ঞা-সংক্রান্ত জাতিসংঘ কমিটির চেয়ারম্যান এবং একইসঙ্গে নিরাপত্তা পরিষদের সন্ত্রাসবিরোধী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যানও নির্বাচিত করা হয়েছে। এসব কমিটির চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান দেশগুলো সাধারণত এক বছরের জন্য নির্বাচিত হয়। কিন্তু কমিটির যেকোনো সিদ্ধান্ত অনুমোদনের জন্য নিরাপত্তা পরিষদের ১৫ সদস্যেরই সম্মতি বা অনুমোদনের প্রয়োজন হয়।
নিরাপত্তা পরিষদে পাকিস্তানের এই অভ্যুত্থানটি এমন এক সময়ে সংঘটিত হয়েছে, যখন ভারতের সর্বদলীয় একটি প্রতিনিধিদল সারা বিশ্ব ভ্রমণ করছে পাকিস্তানবিরোধী প্রচারণার টার্গেট নিয়ে। এই প্রতিনিধিদলের পক্ষ থেকে পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে এই বার্তা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে যে, পাকিস্তানের ভূখণ্ড থেকে যে সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে, সেজন্য দেশটিকে অবশ্যই জবাবদিহির আওতায় আনা উচিত পশ্চিমাদের।
পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশে ও আজাদ কাশ্মীরে লস্কর-ই-তৈয়েবা ও জইশ-ই-মোহাম্মদ নামের দুটি সংগঠনের কথিত সদর দপ্তরসহ বিভিন্ন স্থানে গত ৭ মে বিমান হামলা চালানোর পরবর্তী মাস খানেকের মধ্যে নিরাপত্তা পরিষদে এসব ঘটনা ঘটেছে, যদিও পাকিস্তানে ওই হামলার পক্ষে বিশ্বের কোনো দেশেরই সমর্থন আদায় করতে পারেনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার।
পাকিস্তান জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের এমন দুটি গুরুত্বপূর্ণ কমিটির নেতৃত্বের আসনে বসেছে, যেগুলোর উৎপত্তি হয়েছে আল কায়েদা ও ওসামা বিন লাদেনের বিরুদ্ধে জাতিসংঘে গৃহীত দুটি প্রস্তাব থেকে। এর একটি গৃহীত হয় ১৯৯৮ সালে এবং অন্যটি নেওয়া হয় ৯/১১-এর হামলার পর। মার্কিন বাহিনী ওসামা বিন লাদেনকে প্রায় এক দশক ধরে অনুসন্ধানের পর পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে তার সন্ধান পায় এবং তাকে হত্যা করে। তালেবানও পাকিস্তানের সৃষ্টি। অথচ এর পরও পাকিস্তান জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের দুটি গুরুত্বপূর্ণ কমিটির নেতৃত্বের আসনে বসে। এটা জাতিসংঘের ভঙ্গুর ব্যবস্থারই ফল। জাতিসংঘ পাকিস্তানকেই দায়িত্ব দিয়েছে বিশ্বকে সন্ত্রাসী ও সন্ত্রাসবাদ মুক্ত করার। অথচ দেশটি তার নিজের ভূখণ্ডকেই সন্ত্রাসমুক্ত করতে আগ্রহী নয়।
তালেবান বর্তমানে আফগানিস্তান শাসন করছে, কিন্তু জাতিসংঘ এখনো তাদের দেশটির বৈধ শাসক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। পাকিস্তানে ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে যে সামরিক অভিযান চালিয়েছিল ভারত, তাতে মাত্র তিনটি দেশের সমর্থন পেয়েছিল তারা। এই তিনটি দেশের একটি তালেবানশাসিত আফগানিস্তান, অন্য দুটি হলো তাইওয়ান ও ইসরাইল। যুক্তরাষ্ট্র ঘরে-বাইরে আল কায়েদার সন্ত্রাসী হামলার শিকার হওয়ার পর জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে সন্ত্রাসবিরোধী এই দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। এই কমিটিই তালেবানের অনেক নেতার নাম জাতিসংঘের করা সন্ত্রাসী তালিকা থেকে বাদ দিয়েছে।
জাতিসংঘের আল কায়েদা ও দায়েশ নিষেধাজ্ঞা কমিটি ২০১৩ সালে সিরিয়ার বর্তমান প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল সারাকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী হিসেবে ঘোষণা করেছিল। অথচ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আজ তার সঙ্গেই হ্যান্ডশেক করেন, কোলাকুলি করেন। অন্যদিকে পাকিস্তান আগামী পহেলা জুলাই থেকে এক মাসের জন্য নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করবে। এটি হবে দেশটির জন্য একটি আন্তর্জাতিক দায়িত্ব। এই সুযোগকে ব্যবহার করে তালেবান নিষেধাজ্ঞা কমিটির প্রধান হিসেবে পাকিস্তান কাবুলের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করবে। একইসঙ্গে বেলুচিস্তানে ভারতের ভূমিকা নিয়ে যেসব অভিযোগ করে থাকে পাকিস্তান, সেক্ষেত্রে নিরাপত্তা পরিষদে দেশটি তার সভাপতির পদ ব্যবহার করে সেগুলোকে সামনে নিয়ে আসবে।
ভারতের জনগণকে এক দশক ধরেই এ কথা শোনানো হয়েছে যে, নরেন্দ্র মোদি তার ‘আগ্রাসী পররাষ্ট্রনীতি’র মাধ্যমে সব শত্রুকে সাইজ করে ফেলেছেন। তিনি তার ভূমিকা দিয়ে সারা বিশ্বে রাষ্ট্রনায়কোচিত মর্যাদার আসনে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। কিন্তু পাকিস্তানে অপারেশন সিঁদুরের পর বিশ্বের উল্লেখযোগ্য কোনো দেশের সমর্থন না পাওয়ায় মোদির বিশ্বনেতা হওয়ার এতদিনের গালগল্প সব ফিকে হয়ে গেছে। ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতি এতটাই বদলে গেছে যে, এখন আরএসএস নেতাদের কিছু সার্কেলে এই আলোচনাও চলছে যে, ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন তার নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রকে অপ্রাসঙ্গিক করে তুলছেন, তখন ভারতের উচিত চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে হাত মিলিয়ে বিশ্বের নেতৃত্ব নেওয়া।
পাকিস্তানে হামলার পর সেটাকে সমর্থন করার পরিবর্তে রাশিয়া, ইউক্রেনসহ বিভিন্ন দেশের পক্ষ থেকে ভারতকে পরামর্শ দেওয়া হয় পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনায় বসার জন্য। ভারতের প্রতিবেশীরাও এ ব্যাপারে ছিল নিশ্চুপ। এমনকি নেপাল, পেহেলগাম হামলায় যাদের একজন নাগরিক নিহত হয়েছে, তারাও অপারেশন সিঁদুর নিয়ে কোনো বিবৃতি দেয়নি।
যুক্তরাষ্ট্র যে বিশ্বে এখনো প্রাসঙ্গিক একটি শক্তি, তা দেখানোর জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্প বলতে থাকেন, তার মধ্যস্থতার কারণেই ১০ মে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়েছে। একাধিকবার তিনি এ কথাটি উচ্চারণ করেছেন। এমনকি তিনি এ কথাও বলেছেন, যুদ্ধবিরতিতে রাজি হলে তিনি দুই দেশের ওপর বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকিও দিয়েছিলেন। যুদ্ধবিরতির পর ট্রাম্প কাশ্মীর বিরোধ নিরসনে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে মধ্যস্থতা করবেন বলেও জানান। পাকিস্তান দীর্ঘদিন ধরে এটাই চাইছে, কাশ্মীর নিয়ে ভারত যেন আলোচনার টেবিলে বসতে বাধ্য হয়।
তবে ভারতের পক্ষ থেকে প্রথম প্রতিক্রিয়া হিসেবে ট্রাম্পের মধ্যস্থতার প্রস্তাবকে নাকচ করা হয়। এমনকি এ কথাও বলা হয়, পাকিস্তানের সঙ্গে অস্ত্রবিরতি কোনো অস্ত্রবিরতিই নয়, কেবল ‘গুলি বন্ধ করা হয়েছে’। প্রয়োজনে আবার তা শুরু করা হবে। মোদি নিজেও জানান, অপারেশন সিঁদুর এখনো শেষ হয়নি, পাকিস্তানের অনুরোধে কেবল তাতে ‘বিরতি’ দেওয়া হয়েছে।
ভারতের দ্বিতীয় প্রতিক্রিয়া হিসেবে সর্বদলীয় প্রতিনিধিদল পাঠানো হয় সারা বিশ্বে। এই প্রতিনিধিদল বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে এই বার্তা পৌঁছে দেবে যে, দক্ষিণ এশিয়ায় নিজের কৌশলগত স্বার্থ হাসিলে সন্ত্রাসবাদকে একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে পাকিস্তান। এই প্রতিনিধিদল সারা বিশ্ব ঘুরে কী সাফল্য অর্জন করেছে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে এই মিশনে সরকারের অঘোষিত কিছু স্বার্থ ঠিকই হাসিল হয়েছে। এর একটি হচ্ছে, দেশে বিরোধী দলগুলোর সমালোচনাকে ভোঁতা করে দেওয়া এবং শশী থারুরকে কংগ্রেস থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখে দলটিকে একটি ঝামেলায় ফেলা।
বস্তুতপক্ষে, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলার ভারতের সব চেষ্টাই ব্যর্থ হয়েছে। চীনের ছায়ায় ঢাকা পড়ে গেছে ভারতের অপারেশন সিঁদুর। বর্তমানে চীনের ব্যাপারে ভারত কী নীতি অনুসরণ করছে, তা অনেকের পক্ষেই অনুমান করা কঠিন। ভারতের বন্ধু রাশিয়া করাচিতে পুরোনো একটি স্টিল কারখানা আবার চালু করার জন্য পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে। অন্যদিকে বাণিজ্যনীতি নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে ভারতের আলোচনা এখনো চুক্তি স্বাক্ষরের পর্যায়ে পৌঁছেনি।
অথচ ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক বর্তমানে অনেকটাই সৌহার্দ্যপূর্ণ। ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবসায় পাকিস্তানের এক তরুণ উদ্যোক্তা ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে চুক্তি করার অনেকটাই কাছাকাছি পৌঁছে গেছেন। উদীয়মান অর্থনীতির দেশ হিসেবে জি-৭ সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী অংশগ্রহণ করে আসছেন মনমোহন সিংয়ের সময় থেকেই। কিন্তু এবার কানাডায় জি-৭ সম্মেলনে ভারতকে এখনো আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। সবকিছু দেখে এখন এটাই প্রতীয়মান হচ্ছে, পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করতে গিয়ে ভারতই এখন বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
লেখক : ভারতীয় সাংবাদিক
ডেকান হেরাল থেকে অনুবাদ : মোতালেব জামালী
অধিকৃত কাশ্মীরে বড় ধরনের সন্ত্রাসী হামলাগুলোকে পুঁজি করে প্রায় এক দশক ধরেই ভারত চেষ্টা করছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পাকিস্তানকে কোণঠাসা ও বিচ্ছিন্ন করে ফেলার। এই লক্ষ্য অর্জনে ভারতে সন্ত্রাসী হামলায় মদতদাতা রাষ্ট্র হিসেবে পাকিস্তানকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে তুলে ধরার জন্য নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে আসছে দিল্লি। ভারতের পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছে, পাকিস্তান আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি। কিন্তু এখন এটা স্পষ্ট যে, ভারতের এই চেষ্টা সফল হয়নি, পুরোপুরিই ব্যর্থ হয়েছে।
ভারতের এই চেষ্টার বিরুদ্ধে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে পাকিস্তান একটি অভ্যুত্থানই ঘটিয়ে ফেলেছে বলা যায়। ভারতের সব অপপ্রচারকে ব্যর্থ করে পাকিস্তান ২০২৫-২৬ সালের জন্য জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে শুধু অস্থায়ী সদস্যই নির্বাচিত হয়নি, দেশটিকে তালেবানের ওপর নিষেধাজ্ঞা-সংক্রান্ত জাতিসংঘ কমিটির চেয়ারম্যান এবং একইসঙ্গে নিরাপত্তা পরিষদের সন্ত্রাসবিরোধী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যানও নির্বাচিত করা হয়েছে। এসব কমিটির চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান দেশগুলো সাধারণত এক বছরের জন্য নির্বাচিত হয়। কিন্তু কমিটির যেকোনো সিদ্ধান্ত অনুমোদনের জন্য নিরাপত্তা পরিষদের ১৫ সদস্যেরই সম্মতি বা অনুমোদনের প্রয়োজন হয়।
নিরাপত্তা পরিষদে পাকিস্তানের এই অভ্যুত্থানটি এমন এক সময়ে সংঘটিত হয়েছে, যখন ভারতের সর্বদলীয় একটি প্রতিনিধিদল সারা বিশ্ব ভ্রমণ করছে পাকিস্তানবিরোধী প্রচারণার টার্গেট নিয়ে। এই প্রতিনিধিদলের পক্ষ থেকে পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে এই বার্তা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে যে, পাকিস্তানের ভূখণ্ড থেকে যে সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে, সেজন্য দেশটিকে অবশ্যই জবাবদিহির আওতায় আনা উচিত পশ্চিমাদের।
পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশে ও আজাদ কাশ্মীরে লস্কর-ই-তৈয়েবা ও জইশ-ই-মোহাম্মদ নামের দুটি সংগঠনের কথিত সদর দপ্তরসহ বিভিন্ন স্থানে গত ৭ মে বিমান হামলা চালানোর পরবর্তী মাস খানেকের মধ্যে নিরাপত্তা পরিষদে এসব ঘটনা ঘটেছে, যদিও পাকিস্তানে ওই হামলার পক্ষে বিশ্বের কোনো দেশেরই সমর্থন আদায় করতে পারেনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার।
পাকিস্তান জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের এমন দুটি গুরুত্বপূর্ণ কমিটির নেতৃত্বের আসনে বসেছে, যেগুলোর উৎপত্তি হয়েছে আল কায়েদা ও ওসামা বিন লাদেনের বিরুদ্ধে জাতিসংঘে গৃহীত দুটি প্রস্তাব থেকে। এর একটি গৃহীত হয় ১৯৯৮ সালে এবং অন্যটি নেওয়া হয় ৯/১১-এর হামলার পর। মার্কিন বাহিনী ওসামা বিন লাদেনকে প্রায় এক দশক ধরে অনুসন্ধানের পর পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে তার সন্ধান পায় এবং তাকে হত্যা করে। তালেবানও পাকিস্তানের সৃষ্টি। অথচ এর পরও পাকিস্তান জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের দুটি গুরুত্বপূর্ণ কমিটির নেতৃত্বের আসনে বসে। এটা জাতিসংঘের ভঙ্গুর ব্যবস্থারই ফল। জাতিসংঘ পাকিস্তানকেই দায়িত্ব দিয়েছে বিশ্বকে সন্ত্রাসী ও সন্ত্রাসবাদ মুক্ত করার। অথচ দেশটি তার নিজের ভূখণ্ডকেই সন্ত্রাসমুক্ত করতে আগ্রহী নয়।
তালেবান বর্তমানে আফগানিস্তান শাসন করছে, কিন্তু জাতিসংঘ এখনো তাদের দেশটির বৈধ শাসক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। পাকিস্তানে ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে যে সামরিক অভিযান চালিয়েছিল ভারত, তাতে মাত্র তিনটি দেশের সমর্থন পেয়েছিল তারা। এই তিনটি দেশের একটি তালেবানশাসিত আফগানিস্তান, অন্য দুটি হলো তাইওয়ান ও ইসরাইল। যুক্তরাষ্ট্র ঘরে-বাইরে আল কায়েদার সন্ত্রাসী হামলার শিকার হওয়ার পর জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে সন্ত্রাসবিরোধী এই দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। এই কমিটিই তালেবানের অনেক নেতার নাম জাতিসংঘের করা সন্ত্রাসী তালিকা থেকে বাদ দিয়েছে।
জাতিসংঘের আল কায়েদা ও দায়েশ নিষেধাজ্ঞা কমিটি ২০১৩ সালে সিরিয়ার বর্তমান প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল সারাকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী হিসেবে ঘোষণা করেছিল। অথচ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আজ তার সঙ্গেই হ্যান্ডশেক করেন, কোলাকুলি করেন। অন্যদিকে পাকিস্তান আগামী পহেলা জুলাই থেকে এক মাসের জন্য নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করবে। এটি হবে দেশটির জন্য একটি আন্তর্জাতিক দায়িত্ব। এই সুযোগকে ব্যবহার করে তালেবান নিষেধাজ্ঞা কমিটির প্রধান হিসেবে পাকিস্তান কাবুলের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করবে। একইসঙ্গে বেলুচিস্তানে ভারতের ভূমিকা নিয়ে যেসব অভিযোগ করে থাকে পাকিস্তান, সেক্ষেত্রে নিরাপত্তা পরিষদে দেশটি তার সভাপতির পদ ব্যবহার করে সেগুলোকে সামনে নিয়ে আসবে।
ভারতের জনগণকে এক দশক ধরেই এ কথা শোনানো হয়েছে যে, নরেন্দ্র মোদি তার ‘আগ্রাসী পররাষ্ট্রনীতি’র মাধ্যমে সব শত্রুকে সাইজ করে ফেলেছেন। তিনি তার ভূমিকা দিয়ে সারা বিশ্বে রাষ্ট্রনায়কোচিত মর্যাদার আসনে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। কিন্তু পাকিস্তানে অপারেশন সিঁদুরের পর বিশ্বের উল্লেখযোগ্য কোনো দেশের সমর্থন না পাওয়ায় মোদির বিশ্বনেতা হওয়ার এতদিনের গালগল্প সব ফিকে হয়ে গেছে। ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতি এতটাই বদলে গেছে যে, এখন আরএসএস নেতাদের কিছু সার্কেলে এই আলোচনাও চলছে যে, ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন তার নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রকে অপ্রাসঙ্গিক করে তুলছেন, তখন ভারতের উচিত চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে হাত মিলিয়ে বিশ্বের নেতৃত্ব নেওয়া।
পাকিস্তানে হামলার পর সেটাকে সমর্থন করার পরিবর্তে রাশিয়া, ইউক্রেনসহ বিভিন্ন দেশের পক্ষ থেকে ভারতকে পরামর্শ দেওয়া হয় পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনায় বসার জন্য। ভারতের প্রতিবেশীরাও এ ব্যাপারে ছিল নিশ্চুপ। এমনকি নেপাল, পেহেলগাম হামলায় যাদের একজন নাগরিক নিহত হয়েছে, তারাও অপারেশন সিঁদুর নিয়ে কোনো বিবৃতি দেয়নি।
যুক্তরাষ্ট্র যে বিশ্বে এখনো প্রাসঙ্গিক একটি শক্তি, তা দেখানোর জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্প বলতে থাকেন, তার মধ্যস্থতার কারণেই ১০ মে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়েছে। একাধিকবার তিনি এ কথাটি উচ্চারণ করেছেন। এমনকি তিনি এ কথাও বলেছেন, যুদ্ধবিরতিতে রাজি হলে তিনি দুই দেশের ওপর বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকিও দিয়েছিলেন। যুদ্ধবিরতির পর ট্রাম্প কাশ্মীর বিরোধ নিরসনে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে মধ্যস্থতা করবেন বলেও জানান। পাকিস্তান দীর্ঘদিন ধরে এটাই চাইছে, কাশ্মীর নিয়ে ভারত যেন আলোচনার টেবিলে বসতে বাধ্য হয়।
তবে ভারতের পক্ষ থেকে প্রথম প্রতিক্রিয়া হিসেবে ট্রাম্পের মধ্যস্থতার প্রস্তাবকে নাকচ করা হয়। এমনকি এ কথাও বলা হয়, পাকিস্তানের সঙ্গে অস্ত্রবিরতি কোনো অস্ত্রবিরতিই নয়, কেবল ‘গুলি বন্ধ করা হয়েছে’। প্রয়োজনে আবার তা শুরু করা হবে। মোদি নিজেও জানান, অপারেশন সিঁদুর এখনো শেষ হয়নি, পাকিস্তানের অনুরোধে কেবল তাতে ‘বিরতি’ দেওয়া হয়েছে।
ভারতের দ্বিতীয় প্রতিক্রিয়া হিসেবে সর্বদলীয় প্রতিনিধিদল পাঠানো হয় সারা বিশ্বে। এই প্রতিনিধিদল বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে এই বার্তা পৌঁছে দেবে যে, দক্ষিণ এশিয়ায় নিজের কৌশলগত স্বার্থ হাসিলে সন্ত্রাসবাদকে একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে পাকিস্তান। এই প্রতিনিধিদল সারা বিশ্ব ঘুরে কী সাফল্য অর্জন করেছে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে এই মিশনে সরকারের অঘোষিত কিছু স্বার্থ ঠিকই হাসিল হয়েছে। এর একটি হচ্ছে, দেশে বিরোধী দলগুলোর সমালোচনাকে ভোঁতা করে দেওয়া এবং শশী থারুরকে কংগ্রেস থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখে দলটিকে একটি ঝামেলায় ফেলা।
বস্তুতপক্ষে, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলার ভারতের সব চেষ্টাই ব্যর্থ হয়েছে। চীনের ছায়ায় ঢাকা পড়ে গেছে ভারতের অপারেশন সিঁদুর। বর্তমানে চীনের ব্যাপারে ভারত কী নীতি অনুসরণ করছে, তা অনেকের পক্ষেই অনুমান করা কঠিন। ভারতের বন্ধু রাশিয়া করাচিতে পুরোনো একটি স্টিল কারখানা আবার চালু করার জন্য পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে। অন্যদিকে বাণিজ্যনীতি নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে ভারতের আলোচনা এখনো চুক্তি স্বাক্ষরের পর্যায়ে পৌঁছেনি।
অথচ ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক বর্তমানে অনেকটাই সৌহার্দ্যপূর্ণ। ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবসায় পাকিস্তানের এক তরুণ উদ্যোক্তা ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে চুক্তি করার অনেকটাই কাছাকাছি পৌঁছে গেছেন। উদীয়মান অর্থনীতির দেশ হিসেবে জি-৭ সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী অংশগ্রহণ করে আসছেন মনমোহন সিংয়ের সময় থেকেই। কিন্তু এবার কানাডায় জি-৭ সম্মেলনে ভারতকে এখনো আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। সবকিছু দেখে এখন এটাই প্রতীয়মান হচ্ছে, পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করতে গিয়ে ভারতই এখন বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
লেখক : ভারতীয় সাংবাদিক
ডেকান হেরাল থেকে অনুবাদ : মোতালেব জামালী
সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ফ্রান্সিস ফুকুয়ামা এ ঘটনাকে ‘ইতিহাসের সমাপ্তি’ ঘোষণা করে বলেছিলেন, এটা শুধু সোভিয়েতের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের বিজয়
১ ঘণ্টা আগেআমাদের এবং আমাদের পূর্ব পুরুষদের ইতিহাস মূলত জালিম ও জুলুমের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ইতিহাস। যুগে যুগেই এই মাটির সন্তানরা বুক চিতিয়ে লড়াই করেছে মুক্তির জন্য।
১ ঘণ্টা আগেএ পদ্ধতির সুবিধা হলো, সরকারের নিজস্ব বাজেট থেকে বিপুল অর্থ খরচ না করে বৈশ্বিক সহযোগিতার মাধ্যমে দ্রুত মামলা পরিচালনা করা সম্ভব।
১ ঘণ্টা আগেদুনিয়ার সব স্বৈরশাসকদের পাশে থাকে কিছু পোষা ব্যবসায়ী। ধনবান ও প্রভাবশালী এই ব্যবসায়ীরা ক্ষমতার কেন্দ্রে অবস্থান করে রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করে থাকে।
১ ঘণ্টা আগে