‘বিশ্বাসঘাতক’ ও ‘প্রতারক’ সরকারের অধীনে নির্বাচন কীভাবে

এম আবদুল্লাহ
প্রকাশ : ০২ নভেম্বর ২০২৫, ০৮: ৫৭
এম আবদুল্লাহ

বড়ই খোশ খবর! নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেছেন, এখন পর্যন্ত তিনি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে বড় কোনো চ্যালেঞ্জ দেখছেন না। শুক্রবার পটুয়াখালীতে বক্তৃতায় ডিসেম্বরের প্রথম দিকে নির্বাচনি তফসিল ঘোষণার কথাও জানান তিনি। অবশ্য প্রধান নির্বাচন কমিশনার আগেই জানিয়েছিলেন, ডিসেম্বরের শুরুতে তফসিল ঘোষণা করবেন। নির্বাচন পরিচালনা করবে নির্বাচন কমিশন। তারা যদি সুষ্ঠু, অবাধ, শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য একটি জাতীয় নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ দেখতে পায় এবং কোনো চ্যালেঞ্জ না দেখে, তা অবশ্যই স্বস্তিদায়ক।

বিজ্ঞাপন

যদিও রাজনৈতিক অঙ্গনে হঠাৎ লু-হাওয়া বইছে। উত্তাপ দেখা যাচ্ছে। যুদ্ধংদেহি মনোভাব নিয়ে রাজনৈতিক পক্ষগুলো একে অপরের বিরুদ্ধে তোপ দাগাচ্ছে। সরকারকে বেঈমান, প্রতারক ও বিশ্বাসঘাতক অভিহিত করে তিরবিদ্ধ করছে। বাকি আছে কেবল পদত্যাগ বা অপসারণ দাবি। নির্বাচনের মাঠ সব সময়ই উত্তপ্ত তাওয়ার মতো। প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলো পরস্পরকে ঘায়েল করে ভোটের রাজনীতিতে একে অপরের চেয়ে এগিয়ে থাকার চেষ্টা করবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু যে বিরোধ ভোটকেই হুমকিতে ফেলার পটভূমি রচনা করে, তা তো অবশ্যই উদ্বেগের।

নির্বাচন কমিশনার আত্মবিশ্বাসী হলেও সরকার কিন্তু অতটা নিরুদ্বেগ নয়। খোদ প্রধান উপদেষ্টা আশঙ্কা ব্যক্ত করছেন, ‘নির্বাচন বানচালের জন্য ভেতর থেকে বাইরে থেকে অনেক শক্তি কাজ করবে।’ সরকারের আইন উপদেষ্টা হতাশা প্রকাশ করে বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলো এভাবে বিরোধে জড়িয়ে পড়লে সরকার কী করতে পারে? তার ভাষায়—‘প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর বক্তব্যের মধ্যে যে অনৈক্যের সুর দেখছি, এটা হতাশাব্যঞ্জক। এই তীব্র বিরোধের মধ্যে কীভাবে সমঝোতার দলিল পাস হবে? এটা খুব দুরূহ একটা চ্যালেঞ্জ আমাদের সামনে এনে দিয়েছে।’

পক্ষান্তরে অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপির অভিযোগও গুরুতর। সরকার জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে বলে অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেছেন, জনগণের সঙ্গে তারা প্রতারণা করেছে। আমরা যে বিশ্বাসযোগ্যতা আশা করেছিলাম, তারা তা রাখেনি। বিশেষ করে জুলাই সনদে আমরা যে ‘নোট অব ডিসেন্ট’গুলো দিয়েছিলাম, সেগুলো উল্লেখ করা হয়নি। তাই আমরা বলেছি, ‘ইটস এ ব্রিচ অব ট্রাস্ট।’ অথচ তারা সেই আস্থার সেতু ভেঙে দিয়েছে। জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। তাই বর্তমান রাজনৈতিক সংকটের দায় অন্তর্বর্তী সরকারের। লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, বিএনপি সরকারকে বিশ্বাসঘাতক ও প্রতারক বলছে, ঐকমত্য কমিশনকে নয়। সুপারিশ চূড়ান্ত করে জমা দিয়েছে কমিশন।

সামনের নির্বাচনে আরেক বড় স্টেকহোল্ডার জামায়াত। তারাও সরকারকে চোখ রাঙাচ্ছে; বলছে, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ অবিলম্বে জারি করতে হবে। দলটির নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের শুক্রবার বলেছেন, ‘সরকার সিদ্ধান্ত থেকে যদি সরে যায়, তাহলে এটা পরিষ্কার হবে যে, সরকার আর নিরপেক্ষ নেই। এ সরকার যদি নিরপেক্ষতা হারায় এবং কোনো দলের প্রতি যদি তাদের আনুগত্য প্রকাশ করে, তাহলে এ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন না হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হবে।’

খুব কঠিন কথা। সরকার বিএনপির কাছে বিশ্বাসঘাতক ও প্রতারক। জামায়াতের কাছে নিরপেক্ষ নয়। এনসিপিও সরকারকে বড় দুই দলের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট বলে অভিযুক্ত করে আসছে। তাহলে এ সরকারের অধীনে নির্বাচন কীভাবে হবে? প্রশ্নটি তো জোরালোভাবে সামনে চলে আসে। জনমনে আরো প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে—দেশ কোন পথে যাচ্ছে? সামনে কি সরকার পরিবর্তনের দাবি উঠবে? পর্দার অন্তরালে কি অন্য কোনো খেলোয়াড় সক্রিয়? সে ধরনের কোনো খেলা সফল হলে কার লাভ, কার ক্ষতি? রাজনৈতিক দলগুলো কি তাতে লাভবান হবে?

নির্বাচন নিয়ে সংশয় তৈরির ক্ষেত্রে কেউ কম যাচ্ছেন না। জামায়াত নেতা ডা. তাহের বলেছেন, কোনো কারণে তো সঠিক সময়ে নির্বাচন নাও হতে পারে, তবে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করতে হবে। গণভোট নভেম্বরে দিতে হবে। লেভেল প্লেইং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে। পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবিতে তো দলটি আন্দোলনেই আছে। অন্যদিকে ‘হ্যাঁ’ আর ‘না’-এর এক অন্তর্জাল যুদ্ধ দেখল বাংলাদেশ। আকস্মিকভাবে ভার্চুয়াল এ যুদ্ধ চলেছে রাত-দিন। ফলাফল কী তা অবশ্য অস্পষ্টই রয়ে গেছে। ঘরে-ঘরে পরিবারে-পরিবারে ও অফিসে-আড্ডায় বিতর্ক-বিভক্তি শুরু হয়েছে। এক বাসায় পাশাপাশি কক্ষে শুয়ে-বসে কেউ ‘না’ আর কেউ ‘হ্যাঁ’ মত দিচ্ছেন। কীসে ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ দিচ্ছেন, অনেকে ভালোভাবে জানেনও না। কেউ দিচ্ছেন বুঝে, কেউবা হুজুগে। নানামুখী চাপে সরকার কি বেকায়দায়? অনেকে বলছেন, ড. ইউনূসের সরকার আসলেই বেকায়দায়। কাকে সন্তুষ্ট করতে কাকে চটাবে? কঠিন পরীক্ষাই বটে!

নবসৃষ্ট সংকটের গোড়ায় যে জুলাই সনদ তার ভাগ্যে কী ঘটবে তা এখনো স্পষ্ট নয়। বিরোধের একটি দিক হচ্ছে, জুলাই সনদ কোন পদ্ধতিতে পাস ও সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হবে; আরেকটা হচ্ছে গণভোট কবে হবে। জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে গত মঙ্গলবার সরকারের কাছে সুপারিশ জমা দেয় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এতে জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ জারির কথা বলা হয়। পাশাপাশি তা বাস্তবায়নে দুটো বিকল্প প্রস্তাব দেওয়া হয়। প্রথম প্রস্তাবে বলা হয়েছে, গণভোটের আগে সরকার জাতীয় সনদের ভিত্তিতে একটি খসড়া বিল প্রস্তুত করবে, যা গণভোটে উপস্থাপন করা হবে। ফলাফল ইতিবাচক হলে নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যরা একযোগে এমপি ও সংবিধান সংস্কার পরিষদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। তারা প্রথম অধিবেশন থেকে ২৭০ দিনের মধ্যে সংস্কার সম্পন্ন করবেন। কিন্তু নির্ধারিত সময় পার হলে বিলটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে কার্যকর হবে। দ্বিতীয় প্রস্তাবে বিলের কথা বলা নেই। এ ক্ষেত্রে সংবিধান সংস্কার পরিষদকে গাঠনিক ক্ষমতা দেওয়া হলেও প্রথম অধিবেশন শুরুর ২৭০ দিনের মধ্যে জুলাই সনদ অনুসারে সংবিধান সংস্কার শেষ করার কথা বলা হয়।

পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপি ও জামায়াত বাস্তবায়ন পদ্ধতি এবং গণভোটের সময় নিয়ে তীব্র বিরোধে জড়িয়েছে। জুলাই সনদের বাস্তবায়ন আদেশ দ্রুত জারির দাবি করে জামায়াত। তারা সময়ও বেঁধে দিয়েছিল। সে সময় অবশ্য অতিক্রান্ত হয়েছে। জামায়াতের মতো সনদ বাস্তবায়নে দ্রুত আদেশ জারির পক্ষে জাতীয় নাগরিক পার্টিও (এনসিপি)। দলটির দাবি, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসই এই আদেশে স্বাক্ষর করবেন, রাষ্ট্রপতি নন।

তবে বিএনপি বলেছে, সরকারের এমন আদেশ জারির এখতিয়ার নেই। এ ছাড়া গণভোট নিয়েও দলগুলোর মধ্য মতভেদ তীব্র হয়েছে। বিএনপি সংসদ নির্বাচনের দিনই গণভোটের পক্ষে। একই মত গণঅধিকার পরিষদেরও। তবে জামায়াতে ইসলামীর দাবি, নভেম্বরেই গণভোট হতে হবে।

অন্যদিকে জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোটের দাবিকে ‘অযৌক্তিক’ আখ্যা দিয়ে বিএনপির নীতিনির্ধারকেরা বলছেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট অনুষ্ঠান সম্ভব নয়। সময়স্বল্পতা, নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য বিপুল অঙ্কের ব্যয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ ব্যাপক লোকবল নিয়োগ এবং একটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের মতো বিশাল আয়োজনের বিবেচনায় নির্বাচনের আগে গণভোট অনুষ্ঠান অপ্রয়োজনীয়, অযৌক্তিক ও অবিবেচনাপ্রসূত। একই আয়োজনে এবং একই ব্যয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনই গণভোট অনুষ্ঠান করা বাঞ্ছনীয়।

উদ্ভূত সংকট নিরসনে ‘রিলে রেইসের’ কাঠি আসলে কার হাতে? নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্নার মতে, বিএনপির হাতে। শুক্রবার প্রেস ক্লাবের অনুষ্ঠানে উদ্বেগ জানিয়ে তিনি বলেন, দেশ এক ‘বিরাট সংকটে’ পড়েছে, যা থেকে উদ্ধারের ক্ষমতা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেই। তিনি এও মনে করেন, এই সংকট থেকে উদ্ধারে এখন বিএনপিকেই ভূমিকা নিতে হবে। এ সময় অনুষ্ঠান মঞ্চে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলও ছিলেন। মান্না তাকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘এখন নির্ভর করবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ভাইয়েরা কী করেন?’ তিনি যোগ করেন, ‘আমি বলি, আজ সব দায়িত্ব বিএনপির ওপরে। আমি বিএনপি করি না, বিএনপির সব প্রস্তাব মানিও না, বিএনপি সবচাইতে ভালো দল—আমি তাও বলি না; কিন্তু এখন ‘রিলে রেইসের’ কাঠি বিএনপির হাতে। তাদের সেই ভূমিকা পালন করতে পারতে হবে।’

আমরা জানি ‘রিলে রেইস’ হচ্ছে দলভিত্তিক এমন একটি প্রতিযোগিতা, যেখানে দলের সদস্যরা একে একে একটি নির্দিষ্ট দূরত্ব অতিক্রম করেন এবং পরবর্তী সদস্যের কাছে একটি কাঠি হস্তান্তর করেন। দৌড়, সাঁতার ও বায়াথলনসহ বিভিন্ন খেলায় ‘রিলে রেস’ হয়। দলগত সমন্বয় এবং সুচারুরূপে কাঠি হস্তান্তর করা এই খেলার জয়-পরাজয়ের মূল সূচক। অলিম্পিক গেমসে ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডের অংশ হিসেবে বিভিন্ন ধরনের রিলে রেস অন্তর্ভুক্ত থাকে। রিলে রেসের শেষ দৌঁড়বিদকে অ্যাংকর বলা হয়। তাহলে মান্নার বর্ণিত রিলে রেসের সমন্বয় ও কার্যকর যোগাযোগ কতটা হয় এবং অ্যাংকর কে, সেটাই দেখার বিষয়।

বিএনপি ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সিরিজ বৈঠকে মোটামুটি ইতিবাচক ভূমিকাই রেখেছিল। জুলাই সনদে স্বাক্ষরের দিনেও ফুরফুরে ছিল। হঠাৎ কেন চটে গেল? ব্যাখ্যাটি মির্জা ফখরুল দিয়েছেন এভাবে—‘যেদিন ঐকমত্যের নথি জমা দেওয়া হলো, মনে আছে সেদিন বৃষ্টি হচ্ছিল। তার আগে আবার সবকিছু এলোমেলো হয়ে গিয়েছিল। আমরা আবার ঠিকঠাক করে সব রাজনৈতিক দল একমত হয়ে বৃষ্টির মধ্যে ছাতা ধরে সেখানে স্বাক্ষর করলাম। কিন্তু যখন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে সেটা উপস্থাপন করা হলো, তখন দেখা গেল অনেক পার্থক্য।’

জামায়াতের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা নির্বাচন পেছাতে চায়। রাজনৈতিক সমীকরণ হচ্ছে, নির্বাচন পেছালে জামায়াতের ভোট বাড়ার সম্ভাবনা আছে। যদি তাই হয়, জামায়াত তো নির্বাচন পেছাতে চাইবেই। কথা হচ্ছে, সে সুযোগ করে দিচ্ছেন কারা? জামায়াতের ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বিএনপিকে পাল্টা অভিযুক্ত করে বলেছেন, ‘বিএনপি যদি সংস্কার প্রস্তাব না মানে, তবে এটা তাদের দায়িত্বহীনতার পরিচয়। এটি নতুন করে রাজনৈতিক সংকট তৈরির অপপ্রয়াস, ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় নির্বাচন সম্পর্কে জনগণের মাঝে সংশয় তৈরির অপপ্রয়াস।’ তাহের বলেন, ‘যদি নির্বাচন না হয়, তাহলে যারা পালিয়ে গিয়ে ভারতে বসে ষড়যন্ত্র করছে, তারাই একটা সুযোগ নেবে। বিগত সরকারের যে বাংলাদেশ, সংস্কারবিহীন যে বাংলাদেশ, মনে হয় বিএনপি সেই জায়গায় ফিরে যেতে চায়। এ দেশের মানুষ বাংলাদেশকে আওয়ামী জাহেলিয়াতের দিকে ফিরে যেতে দেবে না।’

দুই দলের কথাতেই আপাতদৃষ্টিতে কিছু যুক্তি আছে, সঙ্গে আছে অন্তর্নিহিত কিছু স্বার্থ। সে স্বার্থ দলীয়। তা থেকে ঊর্ধ্বে উঠতে পারছেন না কেউই। গণঅভ্যুত্থানের সরকার অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাকে সমীহ করবে, এটাই প্রত্যাশিত। সংস্কারের কিছু কাজ এগিয়ে রেখে নির্বাচন দিয়ে বিদায় নিতে চায় সরকার। সেখানে রাজনৈতিক গোলযোগ সৃষ্টির ফল কি রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষে যাবে? সম্ভবত না। তার পরও যেন মাঝে মাঝে খেই হারিয়ে ফেলছে অভ্যুত্থানের পক্ষের রাজনৈতিক শক্তিগুলো। মানুষ কিন্তু এখন অনেক সচেতন—কোন মতলবে কে কোন দাবি তুলছেন, কী করতে চাচ্ছেন বা করছেন, তা বুঝে যাচ্ছে। তরুণরা তো চৌকস। রাজনীতি-সচেতন মানুষও এখন বোদ্ধা। তারা সময়-সুযোগমতো সব হাতে-হাতে গুনে-গুনে বুঝিয়ে দেবে।

রাজনৈতিক বাগ্‌যুদ্ধে ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন নিয়ে জনমনে নতুন করে সংশয়-শঙ্কার মধ্যে সরকারের মুখপাত্র প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম শুক্রবার ফের আশ্বস্ত করে বলেছেন, নির্বাচন ১৫ ফেব্রুয়ারির আগে হবে। কোনো শক্তি এটিকে পেছাতে পারবে না। গণভোট ইস্যুতে প্রধান উপদেষ্টা সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানিয়ে তিনি বলেন, যে সিদ্ধান্তই নেওয়া হোক না কেন, ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে তার প্রভাব পড়বে না।

ঘোষিত সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকারের এ দৃঢ় অবস্থান আশাব্যঞ্জক। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলো যদি মতভিন্নতাকে তীব্র বিরোধে রূপ দিয়ে ‘পয়েন্ট অব নো রিটার্নে’ থাকেন, তাহলে সরকার ও নির্বাচন কমিশন চাইলেও নির্ধারিত সময়ে নির্বাচনের পথে এগুনো কঠিন হবে। নির্বাচনকালীন সরকারের সঙ্গে আস্থার সেতু ভেঙে যাওয়া ভালো লঙ্ক্ষণ নয়। যে ইস্যুগুলো নিয়ে পারস্পরিক সম্পর্কে টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়েছে, তা সমাধানে এক টেবিলে বসে যুক্তি-তর্কের নিরিখে সমঝোতায় আসা অসম্ভব নয়।

সরকার সবাইকে সন্তুষ্ট করতে পারবে না। সিদ্ধান্ত যার বিপক্ষে যাবে তারা বেঈমানি ও বিশ্বাসঘকতা দেখবেন। বরং রাজনীতিকেরা দেড় হাজার জুলাই শহীদ, তাদের বিপন্ন পরিবার ও অঙ্গ হারানো মানুষগুলোর চেহারা সামনে রাখলে ভালো করবেন। নিজেদের দলীয় ও কোটারি স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে উদার মনোভাব নিয়ে কথা বলুন। সমাধানে আসুন। মানুষ একগুঁয়েমি পছন্দ করে না। বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থে ছাড় দেওয়ার মানসিকতা থাকা চাই। জাতীয় ঐক্যের স্বার্থে, গণতন্ত্রের স্বার্থে ও স্থিতিশীলতার প্রয়োজনে ছাড় দিয়ে কেউ ছোট হয় না।

লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক, কলামিস্ট ও রাজনীতি বিশ্লেষক

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত